নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারপাশের সব অসাধারণ প্রতিভাবানদের ভিড়ে অতি সাধারন একজন। ভালোবাসি বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিকে অনুভব করতে, ভালোবাসি কোন এক জোছনা রাতে আঁধারে মিশে যেতে, ভালোবাসি বন্ধুত্ব, প্রান খোলা হাসি, গান, কবিতা আর আঁধারে হারিয়ে যাওয়া একাকী।

শূন্যভুবনের মেহেদী

অজস্র শব্দমালার বিবর্ণ এপিটাফের ছোট্ট এক বিন্দু

শূন্যভুবনের মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাজের একটু ভালো করার ঘুণে ধরা ইচ্ছেগুলো শেষ পর্যন্ত ঘুণপোকা খেয়েই ফেললো ।

০১ লা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩২

ক'দিন আগের কথা। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে প্লাবিত সব কিছু। ভার্সিটি নেই, টিউশনি নেই, হাতে কাজও নেই। সারাদিন ঘরে বসে বৃষ্টি দেখি। দেখি কিভাবে ২ দিনের বৃষ্টিতে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের সব ভেসে যাচ্ছে। কি কারণে যেন একদিন ঘর থেকে বের হলাম। পানি হাঁটুর উপর উঠে যায় । আমাদের ইয়াং জেনারেশনের কাছে এই পানি ব্যাপারই না। আমাদের আছে ৩-কোয়ার্টার অথবা ২-কোয়ার্টার প্যান্ট । কাপড়ে পানি লাগার প্রশ্নই আসে না । যাই হোক, পানি ভেঙ্গে হাঁটছি আমি। দুপুর বেলাতেই মনে হচ্ছিল সন্ধ্যা হয়ে গেছে । কেউ কোথাও নেই । মেঘের ভয়ঙ্কর আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল একটু পরপর । হঠাৎ আমি খুব মৃদু শব্দ পেলাম আমার পিছনে । কেউ এমনভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে অনেক কষ্ট হচ্ছিল কথা বলতে । পিছে তাকিয়ে দেখি খুব বৃদ্ধ একজন মানুষ লাঠিতে ভর দিয়ে এক হাতে মুড়ির মোয়া নিয়ে আসছে । তার শত ছিন্ন লুঙ্গিটা বারবার ময়লা পানিতে পরে যাচ্ছে । সে সোজা হয়ে হাঁটতে পারছে না। করুন সুরে বারবার বলে যাচ্ছে, ''মুড়ির মোয়া নিবেন, মুড়ির মোয়া!'' তার সেই করুণ আওয়াজ মনে হয় তাকে অতিক্রম করে অন্য কারো কানে যাচ্ছে না । জীবন তাকে এমন কঠিন মোড়ে এনে দাড় করিয়েছে যে এমন বিভীষিকার মুহূর্তেও সে জীবিকার জন্য বের হয়েছে । আমি এক কোনে দাড়িয়ে তার একঘেয়ে কান্নার সুর শুনলাম ।। তাকিয়ে দেখছি সে তার এই করুণ আওয়াজ নিয়ে রাস্তার মোড়ে হারিয়ে গেলো . . . তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিইবা করার আছে ?!!
আমাদের এলাকায় একটা লোক 'প্রেটিস' বিক্রি করে । সন্ধ্যা বেলায় তার 'এই হট প্রেটিস' আওয়াজটা প্রায় সব সময়ই পেতাম। কবের থেকে তাও জানি না । রোদ, বৃষ্টি সব উপেক্ষা করে হাতে একটা বক্স নিয়ে সে আসতো। বক্সটার ওজনে সে সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না। আমরা যেখানে আড্ডা দেই আজ সেখানে এসে সে বসলো হঠাৎ করেই । তার জাদুর বক্সটা থেকে সে কয়লা বের করে ফুঁ দিয়ে কয়লার আগুন উস্কে দিচ্ছে । কতক্ষণ হল সে আর উঠছে না বসার থেকে । আমি গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, ''কি হইছে কাকা, এমনে বইসা আছেন ?!'' উনি আমারে বললেন, ''বাবা, কোমরে প্রচণ্ড ব্যাথা হয় মাঝে মাঝে, একটু না জিরাইলে হাঁটতে পারি না, আর না হাঁটলে ঘরে খাবার যাইব না, বউ-বাচ্চা আর বুড়া বাপ না খাইয়া থাকবো!'' এইটা বলে উনি উঠে গেলেন । উনার মুখটা কেমন যেন কুঁচকে গেলো । হয়তো কোমরের ব্যাথায়, হয়তোবা অন্তহীন হাঁটার ভয়ে । উনার সাথে কতক্ষণ হাঁটলাম । আমার হাঁটা হয়তো ৫/১০ মিনিটেই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু উনার হাঁটা সীমাহীন। আকাশ যেখানে মিশেছে, তার হাঁটা হয়তো সেই পর্যন্তই । হয়তোবা তার হাঁটা আরও দূরে, অন্তহীন কোন এক পথে . . . . .
প্রায় সময়ই এমন অনেক কিছু দেখি । যেগুলো দেখি খুব সাধারণভাবে পাশ কাটিয়ে এসে পড়ি, যেগুলো দেখেও দেখি না । কিন্তু মাঝে মাঝে আমার সাব-কনশাস মাইন্ড কেন যেন আমাকে অনেক শাসন করে, এই দৃশ্যগুলি জোর করে হলেও দেখায় । দেখা না দেখা দৃশ্যগুলো কয় দিনের জন্য আমার স্মৃতির অস্তিত্বে খুব গাড় ভাবে ছাপ রেখে যায় । দৃশ্যগুলো কোন না কোন সময়, স্লো-মোশন মুভির মতো চোখের সামনে ভাসে । হয়তোবা এই স্ট্যাটাস দিয়েই কথাগুলি ভুলে যাবো, জীবনে কষ্টে সিক্ত এই মানুষগুলোর সামান্য কিছু টাকার দরকার কোনদিনই আমাদের চোখে পরবে না, কালকেই হয়তো বন্ধুদের মাঝে বেনসন আর গোল্ডলিফের জন্য বাচ্চাদের মতো মারামারি হবে, কেউ হয়তো গর্ব করে বলবে দিনে তার ২০টার নিচে সিগারেট না হলে তার দিনই যায় না, কেউ বা আবার ক্ষণিকের একটু সুখের আশায় সিগারেটের চেয়ে একটু উপরের লেভেলে যাবে কিন্তু এই মানুষগুলি আমাদের পাশ দিয়ে গেলেও আমরা ফিরে তাকাবো না। জীবনে কোন না কোন একদিন আমাদের বিবেক তো আমাদের প্রশ্ন করতেই পারে, ''তুমি দিনে ২০০ টাকা নষ্ট করেছো আর এই টাকা দিয়ে কোন একটি পরিবারের একদিনের খরচ হয়ে যেত না ? তুমি তাদের একটু ভালো থাকাকে গলা টিপে হত্যা করেছো না ? মানুষগুলো তাদের আশা ভালোবাসা হয়তো তোমার জন্যই কখনো মুখ ফুটে বলতে পারে নি, তাই না ?''

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫

কৃষ্ণবিবর বলেছেন: লেখাটার জন্য ধন্যবাদ

২| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৯

শূন্যভুবনের মেহেদী বলেছেন: সুস্বাগতম ! :)

৩| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫৯

মহাকাল333 বলেছেন: সহমত। লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু কথাগুলো চরম সত্য। আসলেই এ ধরনের গরিব মানুষগুলো আমাদের চারপাশে রয়েছে কিন্তু আমরা অনেক সময় তাদের দেখে ও না দেখার ভান করি।অথচ আমাদের সামান্য একটু সাহায্য তাদের জীবন কে অনেক বদলে দিতে পারে। লেখক কে ধন্যবাদ চমৎকার লেখাটির জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.