নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরাধ : কলঙ্ক কাটে না বগা তেঁতুলেরই বিষে

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০১

একটি দেশের গল্প বলি। অনেক অ-নে-ক দিন আগের কথা। প্রায় সত্তর বছর আগের! চমৎকার একটা দেশ। সুন্দর একটি পতাকা আছে তার। সেই পতাকার জমিন সাজাতে আকাশ থেকে ছিনিয়ে আনা হলো একফালি চাঁদ। তারপর...কেটে গেলো বহুদিন। কিন্তু কোথায় যেনো একটু অপূর্ণতার আড়ালে মলিন হয়ে থাকে চাঁদের পৃথিবী। কিছুতেই যেনো তাল মিলছে না। দেশের শিল্পী-আঁকিয়েরা ভেবে বললেন, একটা তারার অভাবেই চাঁদকে বেমানান লাগছে। রাজা শুনলেন এবং বুঝলেন। হুকুম দিলেন চাঁদের কোলে একটি শুভ্র তারকা বসিয়ে পতাকার জমিন যথার্থ সুন্দর করা হোক। হ্যাঁ, তাই হয়েছে। আর এর ফলেই সেদেশের পতাকা হয়েছে, সুন্দর। ভয়াবহ সুন্দর।

এই সুন্দর পতাকার অধিকারীরা একবার এক কাণ্ড করে বসলো। কেউ জানে না, সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। এমন সময় নিজেদেরই পূর্বদিকের একটি ভূখণ্ডের ওপর বড়ই নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। সুন্দরের ভেলকিতে চেতনাহীন মানুষ জেগে উঠতে উঠতেই নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে তাদেরকে অভিনব কৌশলে। সঙ্গে সমান তালে চলতে থাকে মানবীদের অঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইজ্জতের লুণ্ঠন। কেন? এর উত্তর পেতে সময় লেগেছে দীর্ঘ নয়টি মাস। হয়তো তারা ভেবেছিলো, তারা পশ্চিমের আর তাদের পতাকা সুন্দর বলে সবকিছুকেই সুন্দর মেনে নেবে সবাই। তাদের শোষণ, তাদের অধিকার হরণ, তাদের ভাষা, তাদের জাতীয়তা- সব।
এই অনধিকার বলপ্রয়োগ, এই অমানবিক সৌন্দর্যবোধের বিরুদ্ধে বেঁকে বসেছিলো তাদেরই অপর অংশ, পূর্বভূখণ্ড; চাঁদ-তারা খচিত সুন্দর পতাকায় যাদেরও অংশ ছিলো। তাই নিদারুণ মাশুল গুণতে হয় ‘অসুন্দর’ বলে দমিয়ে রাখা এই ভূখণ্ডের মানুষকে।

তারপর, কী হয়! তা বোধ হয় আর না বললেও চলে। অবিকল্পিত যুদ্ধ। সেই নয় মাস। যদিও সে দীর্ঘ সময়ে কেবল অন্ধকার ছেয়ে থাকা রাতই এসেছিলো। আর রাতগুলোতে অনেকবার চাঁদও উঠেছে আকাশে। তারাও ছড়িয়েছে জোছনা। তবু নয়মাস পর দেখা গেলো সে দেশের গল্পের যবনিকা হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে অন্য এক দেশের গল্পকথা।

কেননা, রাতের দীর্ঘপথ পেরিয়ে সূর্যের উদয় হয়েছে ততদিনে। প্রভাতের রক্তরাঙা সূর্য। সেই নতুন দেশের জন্যও একটি পতাকার প্রয়োজন ছিলো। তবে না, সেই দেশের পতাকাটি আকাশ থেকে কেড়ে আনা তারায় সাজানো হয় নি। বাঁকা চাঁদ বসিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টাও করা হয়নি। সেই দেশের পতাকা তৈরি হল সবুজ ঘাসের মধ্যে রক্তলাল একটি বড় বৃত্ত দিয়ে। এই বৃত্তটা কেন? এটা হলো নয়মাস ধরে ক্ষরিত রক্তের রঙ এবং পূবাকাশের সূর্য। কেন পূবাকাশের সূর্য? কারণ, পশ্চিম দেশের লোকেরা যদি পশ্চিমাকাশের প্রথম উদিত হওয়া ক্ষীণ চাঁদ কেড়ে নিয়ে ওদের পতাকায় বসিয়ে দিতে পারে, তবে তারা কেন পূব দেশের মানুষ হয়ে ভোরের উদীয়মান পূবাকাশের সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে পারবে না? হ্যাঁ, পেরেছে তারা। তারা মানে কিন্তু আমরা। আমরা মানে কিন্তু বাংলাদেশিরা। মানে যারা পশ্চিম পাকিস্তানের চাঁদ-তারার বিরুদ্ধে লড়াই করে লাল-সবুজের পতাকার স্বত্ব পেয়েছি, তারা। তাইতো আজ আমাদের পতাকা আরো সুন্দর। আরো মর্মস্পর্শী। চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি আলোময়।...

যতবারই রাস্তায় কোনো পতাকাঅলার সঙ্গে দেখা হয়, ততবারই এই গল্পটার উদয় হয় মনে। কেউ জানে না, নিজে নিজেই মনে মনে আওড়াই। একটা পতাকা, নয়তো ছোট একটা ব্যাজ, কিংবা পতাকা আঁকা ব্যান্ড আমাকে কিনতেই হয়। আজও এড়াতে পারলাম না। বউ বলে, যত্তসব কাণ্ড তোমার। ওই কয়টা টাকা খয়রাতিরে দিলেও কাজে কামে লাগতো। আমি তো এড়াতে পারি না।

(বি.দ্র. এই গল্প দেখে আমাকে ভুলেও কিন্তু দেশপ্রেমিক ভাবা চলবে না। কারণ মনে রাখতে হবে, আমি লীগের কেউ না, এমনকি সুশীল সমাজের অংশও নই। কেননা, কারো নিজস্ব সম্পত্তিতে ভাগ বসানোর খায়েশ আমার নেই। আমি নিতান্তই আলাভোলা হুজুর মানুষ। হুজুরদের দেশপ্রেম থাকা অপরাধ। হুজুরদের অপরাধী হওয়াও অপরাধ। আমি অপরাধী হতে চাই না। সুতরাং ‘দেশপ্রেমিক হজুর’ বলে ভিন্ন কোনো জনগোষ্ঠীকে যেনো ইঙ্গিত করা না হয়, সেই জন্যে ব্র্যাকেটে অগ্রীম সংশোধনী দিলাম।)

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৩

মাকড়সাঁ বলেছেন: চমৎকার কথামালা মুগ্ধ হয়ে পুরোটা পড়লাম।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, পড়েছেন বলে।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪১

কল্লোল পথিক বলেছেন: গল্প পাঠে মুগ্ধ হলাম।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ।...

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৩

প্রামানিক বলেছেন: খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও...

৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৬

তুষার কাব্য বলেছেন: চমৎকার লাগলো গল্প ।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ...

৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩০

সুমন কর বলেছেন: একদম ভিন্ন রকম উপস্থাপন, বিশেষ করে শুরুটা।

দারুণ এবং ভালো লাগা রইলো।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮

মনযূরুল হক বলেছেন: আপনার জন্যে শুভেচ্ছা রইলো...

৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১২

উল্টা দূরবীন বলেছেন: বেশ লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে এবং সেই সাথে আমার ব্লগে আমন্ত্রণ।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

মনযূরুল হক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ । ফলো করে রেখেছি, সময় করে সব পড়বো...

৭| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২২

নামহীন ভবঘুরে বলেছেন: মনে দাগ কেটে গেল।।।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০০

মনযূরুল হক বলেছেন: শুনে ভালো লাগলো...

৮| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৯

সুলতানা রহমান বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০০

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ...

৯| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৫

মাহমুদ মাহাদী বলেছেন: আমাগো দেশটা কি থেকে যেনো কি হয়ে গেলো। |-)
এতো রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া দেশটাকে ভালোবাসতে কেনো বিশেষায়িত দেশপ্রেমিক
হতে হয়!!!
আমাগো দেশটা কেন এমন হইলো |-) কেন আমাগো দেশের কোনো নাগরিক ব্লগার লেখতে হলে
তাকে ব্র্যাকেটে অগ্রীম জানাতে হয় যে সে কি? সে কোন ক্যাটাগরীর দেশপ্রেমিক???? দেশ কেনো কারো নিজস্ব সম্পত্তি!!
দেশটা সবার হবে কবে?

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩

মনযূরুল হক বলেছেন: দেশ মানে শুধু মাটি নয়; আমরা সবাই মিলেই দেশ। যখন আমরা সবাই সবার জন্যে হবো, তখন দেশটাও আমাদের সবার হয়ে উঠবে...।

১০| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

কেউ নেই বলে নয় বলেছেন: পোস্টের কথাগুলো ভাল্লাগছে। কিছু কিছু ব্যাপারে অজানা কারনে বুক ভার হ্যে আসে। জাতীয় সঙ্গিত কিংবা পতাকাও এমন কিছু। এজন্য দেখবেন কোন খেলা শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গিত বাজানর সময় প্লেয়ারদের চোখে পানি কিংবা আনন্দের মুহুর্তে পতাকা গায়ে জড়িয়ে রাখে মানুষ। আইন পরিপন্থী কাজ, কিন্তু এইটাও যে দেশের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসার উদাহরন তা বলা যায়। দেশপ্রেম ট্যাগ দিয়ে হয় না, চেহারা দিয়ে হয় না দলের বদৌলতে হয় না, মন থেকেই হয়।

শভকামনা রইলো। :)

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮

মনযূরুল হক বলেছেন: যুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ বলে একটা আফসোস রয়েই যায়। কেনো আরো কয়েকটা বছর আগে আমার জন্ম হলো না। কেনো পতাকার লাল রক্তের মধ্যে আমার রক্তটাও মিশে গেলো না।

তবু মাঝেমধ্যে বড় অসহায় লাগে। সৎ, ধর্মনিষ্ঠ, আদর্শ নিয়ে থাকতে গেলে মনে হয় নিজের প্রতিই অবিচার করছি।

আপনার জন্যেও শুভ কামনা রইলো।

১১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনার বলা একটা দেশের গল্প শুনতে শুনতে ইতিহাসের পাতা ঘুরে অনাবিল আনন্দধারায় স্নাত হয়ে আমি ভীষণ তৃপ্ত।

সবুজ ঘাসের মধ্যে রক্তলাল একটি বড় বৃত্ত দিয়ে তৈরী পতাকার জন্য আপনার আকুতি হৃদয় ছুঁয়েছেঃ

//যতবারই রাস্তায় কোনো পতাকাঅলার সঙ্গে দেখা হয়, ততবারই এই গল্পটার উদয় হয় মনে। কেউ জানে না, নিজে নিজেই মনে মনে আওড়াই। একটা পতাকা, নয়তো ছোট একটা ব্যাজ, কিংবা পতাকা আঁকা ব্যান্ড আমাকে কিনতেই হয়। আজও এড়াতে পারলাম না। বউ বলে, যত্তসব কাণ্ড তোমার। ওই কয়টা টাকা খয়রাতিরে দিলেও কাজে কামে লাগতো। আমি তো এড়াতে পারি না।//

বিজয়ের শুভেচ্ছা।

ভাল থাকুন। সবসময়।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১০

মনযূরুল হক বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো আপনার প্রতিও। ভালো থাকুন...।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.