নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এম আর জান্নাত স্বপন, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে খুব ভালবাসি। ব্লগিং করা উপভোগ করি
প্রস্তাবিত চিলমারী সুন্দরগঞ্জ তিস্তা সেতুতে রেলপথ সংযোগ ও চরম অবহেলিত বর্তমান রুটে’র আধুনিকায়ন ঢাকা গামী ‘ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস’ চালুর দাবীতে আমরা এসেছি, আপনি’ও আসুন ? শীতের রাতে ষ্টেশনে…..
* চারদিক ঘন কালো অন্ধকার’ একদম চুপচাপ’ শব্দ শূন্য’ প্রচন্ড শীত। যবুথবু’ সস্তা মোটা চাদরে মোঁড়া বৃদ্ধ একজন রেল’ষ্টেশনের ধারে চঁটি’র দোকানে কাঁপতে কাঁপতে আগন্তুক যাত্রীদের উদ্দেশ্যে চায়ের কাপে পরিস্কারের মন্ত্র গুঁড়া সাবান ছিটিয়ে- চক্ চকে করার শেষ চেষ্টা করছেন। পাশে দু’এক জন চাদর মুঁড়ে বেঞ্চ দখল করে ধোঁয়া ত্যাগে ব্যাস্ত।
* আঁধার ভেদ করে ডিম করে রাখা ষ্টেশন মাষ্টারের কৃপায় লন্ঠনের সামান্য আলো ষ্টেশনের অস্তিত্ব প্রকাশ করছে। পাশেই যাত্রীদের বিশ্রাম ঘরের ভাঙ্গা কপাটে’র বদৌলতে যাত্রীদের ইয়ে’র গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে আছে। গন্ধ ঘরের পাশে কুলির ঠেলাগাড়িতে মস্ত বড় পানের গোলক, কতো গুলো বস্তায় ভরা মজাঁ সুপারি- ওর কাছে ‘ইয়ের’ গন্ধ’ও যেন পরাজয় মানছে !!
* কাঁঠাল গাছের সারি-চুপ’চাপ আবহ ভেঙ্গে গোমড়া মুখ- প্যাঁচা ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে এ গাছ থেকে ও’গাছে স্থান বিনিময় করছে। ষ্টেশনের বারান্দা’য় এক খন্ড লাইনের টুকরো পোক্ত তারে ঝোলানো। পাশেই গুঁজে রাখা বাঁশের কাঁঠি’তে ছোট্ট লাল সবুজ ‘বঙ্গ’ পতাকা।
* প্লাটফর্মের কোনায় বেশ কিছু পেঁয়াজের বস্তা’র উপরে বস্তা’ বাতাসে যেনো তার জাত চেনাচ্ছে। ওর- উপরে বসা ব্যাপারী মহোদয় চাদর মুঁড়ে শীত তাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টায় ব্যাস্ত । রেল’গাড়ী কখন আসবে, কখন তার ব্যবসার ঝাঁঝ রংপুর’ বগুড়া’ আর’ও কত স্থানে ছাড়িয়ে দিতে।
* উলের মোটা গাঁথুনি’র কান মোঁড়া টুপি পরা এক জন- গলার গভীরের অতিরিক্ত বর্জ্য- আরও গভীর থেকে টেনে বাইরে আনার চেষ্টা করছেন, উনিই ষ্টেশনে ঘন্টা বাদক- কর্তা। হঠাৎ বারান্দা’য় বিজলী বাতি’ জ্বলে উঠে কিছু’টা আঁধার সরিয়ে দিল। দু’চার জন আছেন যেনো তা- বুঝাতে’ই- কেউ কাঁসি, কেউ নাকের ইয়ে’ ঝেড়ে- অবস্থান প্রকাশ করছেন।
* ঝোলানো লাইনের খন্ড’ লোহার বারি- খেয়ে টংটং আওয়াজ চারদিক ছাড়ালো, প্যাঁচা’ গুলো ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে এ গাছ- থেকে ও’গাছে উড়ে রেলগাড়ী’র আগমন যেনো একটু পরেই- সেটা বোঝাল। যাত্রী বর’যাত্রী ব্যবসায়ী একে একে দু’চার জন থেকে দু’চার’শতে মুখরিত হলো। বর যাত্রী’র দুষ্ট ঢোল বাদক’ ঢোলে দু’চার ঘাঁ বসালেন- ঢোলের ‘ডুম ডুমা ডুম’ শব্দ দূর বহু’দূর ছাড়ালো। মূহুর্তেই যেন শব্দ শুন্য ছোট্ট ষ্টেশনটা- শব্দ মুখর’ চটুল ব্যস্ত হয়ে উঠলো।
* রেলগাড়ী আসছে- ‘ঝকাৎ ঝক্ ঝকাৎ’ শব্দ আস্তে আস্তে কাছে মনে হচ্ছে। পুঁ পুঁ বিকট শব্দ ত্যাগ করতে করতে ষ্টেশনের পাটাতন ঘেঁষে থামল। ব্যাপারী’ বর’যাত্রী দুষ্ট ঢোল বাদক’ কুলী’ ঘন্টা বাদক কর্তা’ যাত্রী- সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। কেউ’বা নামছেন আবার কেউ’ ওঠার জন্যে ব্যাস্ত। কতো মানুষ’কে ঐ বিশাল যন্ত্র দানব ওর পেঁটে গিলে- ঢোকাচ্ছে’ আবার অন্য’দের ত্যাগ করছে’ তার হিসাব নেই !!
* এসব দেখে মাথা ভন ভন করছে- গনি’ মামা’ নাম ধরে ডাকতে’ই ‘বাবার’ চেনা কন্ঠ কানে এলো। নারিকেল চারা হাতে এক গন্ডা, হাত বাড়িয়ে গনি মামা বাবার ক্লান্তি কিছু’টা কমালেন। আমি কাছে যেতেই বুঝলাম- এমন কন কনে শীতে সাহস করায়- বাবা’ বিরক্ত। রাতের ষ্টেশন’ রেল’গাড়ী দেখার লোভ, প্রথম হাত ঘড়ি (ক্যাসিও) পাবার স্বপ্ন’ মাকে না বলে মামার সাথে ষ্টেশনে আসা- বাবা যেন সব বুঝে নিয়ে- আদর করে মাথায়’ হাত বোলালেন।
* আমার মাথার মাফলার ঠিক করে দিয়ে, ফিস ফিস করে বললেন- হ্যাঁরে তোর মা জানে ? না বলতেই- তোর ঘড়ি এনেছি- বাবার হাসি’র সাথে আমার’ও হাসি’র সংক্রমণ হলো- প্রাপ্তির আনন্দে। গনি ব্যাগ নে- চল, বাবা’ আমি এক রিক্সায় মামা অন্য’টায়। বাড়ী’র পথে চলতে’ই- এই রেলপথ, রেলগাড়ী নিয়ে- অজানা অনেক প্রশ্ন মুখে’ মাথায়’ কিল বিল করতে লাগলো।
* বাবা এ রেলপথ কোথায় গিয়ে শেষ-? উত্তরে বললেন-অনেক দূর। “যে পথ তোমাকে নিয়ে যাবে বহুদূর”- এই সেই নিরাপদ- রেলপথ’ রেলগাড়ী।
* পিছনে- ‘পুঁ পুঁ ঝকাৎ ঝক্ ঝকাৎ’ শব্দ করে রেলগাড়ী চিলমারী’র উদ্দেশ্যে- যাচ্ছে। ওখানে কিছু ত্যাগ করে, কিছু গিলে নিয়ে, আবার উলিপুরে এ ছোট্ট ষ্টেশন হয়ে- ‘জেলা থেকে জেলায়’ ছুটে চলবে। ঘড়ি’র ভাবনা’ এ রেলপথ রেলগাড়ী’র ভাবনা- বাড়ী’র গেঁটে এসে থামল। মা’কে বুঝতে না দিয়ে, ঘুম থেকে জেগে ওঠার ভান করে- মান বাঁচালাম।
* বাবা ডেকে ঘড়ি দিলেন, নে’ সুন্দর না ? – খুব সুন্দর। এখন আর রেলগাড়ীর মতো ৬টার গাড়ী ৯টায়- হবেনা, সময় এখন হাতে’ই- স্কুলে দেড়ি, স্যারের বকা, সব ধোঁকা খাবে, এই ছোট্ট যন্ত্রের কাছে !!
* রাত ১:৪৮ এ এম, রেলগাড়ী’টা ফিরছে ‘পুঁ পুঁ- ঝকাৎ ঝক্ ঝকাৎ’ শব্দ কানে আসছে। দুষ্ট ঢোল ‘বাদক’ বরযাত্রী’ ব্যাপারী’ এবার সবাই উঠে বসবে। ছোট্ট মনে অনেক ভাবনা, ঘুমের কানে যেনো- দুষ্ট বাদক ‘ডুম ডুমা ডুম’ ঢোল বাজাচ্ছে। ভাবনায়- ঘুমও যেন ঘুম’ আসবেনা ! রেলগাড়ী’টা কোথায় যায়, এ রেলপথ’টা কোথায় গিয়ে শেষ ?
* বাবা আজ আর নেই’ ঘড়ি’টাও অনেক আগে ‘দম’ ছেড়ে দিয়েছে। কেউ আর বাবার মতো হাত ঘড়ি- আনার নেই’ আদর করে মাথায়’ হাত বোলাতে চায়’না কেউ”- কিন্তু ঐ রেলপথ’ সেই রেলগাড়ী আজও আছে। অনেক বার যাত্রী হয়েছি- এ রেলগাড়ী’ রেলপথে। তবে আজ এ রেলপথের শেষ’টা কোথায়- জানি।
* তবে আশ্চর্য লাগে- সেই ১৭/১৮ বৎসর আগে এ রেলপথ’ সেই রেলগাড়ী এক’দম একই আছে !! এখনও বাদাম বিক্রেতা চলার পথে তার বাড়ীর কাছে এলে’ই আয়েস করে নামে !! ইচ্ছে হলে’ই আবার উঠে বসে !! যেন নিজেই ওর বাড়ীটা’কে ষ্টেশন বানিয়ে নিয়েছে !!
* ফেলে আসা ১৭/১৮ বৎসরে সারা দুনিয়া’টাই পরিবর্তনের চাকা’য় ছুটেছে’ আজও ছুটছে। একে অন্য’কে- যেনো ধরতে না পারে- সে জন্যে’ই যেনো এ ছুটে চলা। পৃথিবীতে’ মহাকাশে’ কে কতো গতিতে ছুটবে- এ নিয়ে চলছে ওদের চরম প্রতিযোগিতা। সময়’কে বস্ করার মন্ত্র ওরা’ জেনে নিয়েছে। আমরা সেই- ৬টার গাড়ী ৯টায়’ আয়েস করে ধরছি !! ওরা শব্দের গতিবেগ ছাড়িয়ে- ছুটছে’ আমরা কেঁচো, কচ্ছপের গতিতে চলছি!!
* বৃটিশ রেলওয়ে যেখানে- শুরু থেকে আজ পর্যন্ত শুধু এগিয়েছে’ আর আমরা সেখানে পন করেছি পিছনে’ থাকার। ওরা ছোটে গতির সাথে, আমরা এখনও কচ্ছপ সাজি, দু’এক মূহুর্ত দেরি হলে’ই ওরা জবাবদিহি করে, আমাদের ওনারা যান্ত্রিক ত্রুটি বলে মান বাঁচায়। ওদের গতি যেখানে- ৩৫০/৪০০ কি: মি: প্রতি ঘন্টায়, আমাদের গর্ব ৪০/৮০ কি: মি: ঘন্টায় !! ওরা জনসাধারণ নিয়ে ভাবেন, এখানে কালো বিড়াল’ নিজের আখের গোছানো- নিয়ে ব্যাস্ত !!
* জাপান’ জার্মানি’ ইটালি’ ফ্রান্স’ চায়না’ নতুন নতুন গতির রেলগাড়ী’ উন্নত রেলপথ আবিস্কার করে !! আমরা এখনও রেলওয়ে’র কালো বিড়াল’ ছ্যাঁচোর’ চোর লালন পালনে ব্যাস্ত। অবাক হই- ওদের সামান্য ত্রুটি’তে ‘কর্তা’ পদত্যাগ করে !! আমাদের কালো বেড়াল স্ব’সন্মানে হাত বেহাত নিয়ে- ব্যাস্ত। জাপান ৫৪১ কি: মি: প্রতি ঘন্টায় ছুটে রেকর্ড করে !! আর এখানে বাদাম বিক্রেতা এখনও আয়েস করে রেলগাড়ী’তে ওঠে- নামে !!
* অবাক লাগে- ওরা পরিকল্পনা করে- ৫০/১০০ বৎসরের কথা মাথায় রেখে, আর আমাদের ওনারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই- করে ‘দপ্তর’ ভাগা’ভাগি !! লজ্জা লাগে- এদেশে ‘সেতুতে’ রেলপথ বসানো নিয়ে আজও গন স্বাক্ষর আন্দলন করতে হয় !! ইচ্ছে করে পরিস্কারের মন্ত্র সেই গুড়া সাবান ছিটিয়ে দেশ টাকে পরিস্কার করতে, ইচ্ছে করে ঘন্টা ‘বাদক কর্তার’ মতো গলার আরও গভীর থেকে টেনে ‘বর্জ্য’- ( কালো বিড়াল’ চোর’ ছ্যাঁচড় ) দের ”ওয়াক্ থু”- করে ফেলতে। ইচ্ছে করে- ‘কালো বিড়াল’ চোর’ ছ্যাঁচোর’ গুলোকে- ঐ ষ্টেশনের ‘গন্ধ’ ঘরে ‘বন্দী’ করতে।
* অবাক লাগে- এরা কেন ভাবেনা ? এই নিরাপদ রেলপথ’ রেলগাড়ী সারা বিশ্বে- সবচেয়ে গুরুত্বের’ জনপ্রিয়’ ও লাভজনক। প্রশ্ন রইলো যে অঞ্চলে প্রতি দিন ১০০ অধিক দূর পাল্লা’র বাস চলাচল করে, সে অঞ্চলে- রেলপথ’ রেলগাড়ী- আজ কেন চরম অবহেলায় ? কালো বিড়াল’ চোর’ ছ্যাঁচোর’রা কি প্যাঁট মোটা খুনি বাস মালিক বলে ??
মুল লেখা : মঞ্জুর মোর্শেদ , সাব এডিটর - কুড়িগ্রাম লাইভ ডট কম
২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯
সোহাগ বাবু বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন , ওরা জনসাধারণ নিয়ে ভাবেন, এখানে কালো বিড়াল’ নিজের আখের গোছানো- নিয়ে ব্যাস্ত !!
আমারও খুব ইচ্ছে করে পরিস্কারের মন্ত্র সেই গুড়া সাবান ছিটিয়ে দেশ টাকে পরিস্কার করতে , কিন্তু চাইলেই তো আর সব কিছু হয় না । তাই প্রতিনিয়ত তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া অার কিবা করার আছে..............
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৩:১০
মেষ তাড়ুয়া বলেছেন: