নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়ারী

মেষ তাড়ুয়া

আমি এম আর জান্নাত স্বপন, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে খুব ভালবাসি। ব্লগিং করা উপভোগ করি

মেষ তাড়ুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরডিজেএ’র নৌবিহারে একদিন

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৩৮

সম্মুখপানে এগিয়ে চলা লঞ্চ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দু’পাশের সারি সারি দালানগুলোকেই যেন বিদায় জানাচ্ছিল। এগিয়ে চলছিল সুনসান নীরবতার দিকে। লিখেছেন ওবায়দুল হক মণ্ডল

গত ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির বার্ষিক মিলনমেলা, যার নামকরণ করা হয়েছে নৌবিহার-২০১৭। লঞ্চের নাম সুন্দরবন-১২। যাত্রার সময় সকাল ৮টা। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মনটা অস্থির হয়ে আছে কাঙ্ক্ষিত নৌবিহারে অংশগ্রহণের জন্য। ঘুম থেকে ভোর ৫টায় উঠে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি শুরু হলো। সকাল সাড়ে ৬টায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আপা, দুলাভাই, ভাগ্নে সাদমান, ভাগি্ন সুপ্তাসহ আমরা পাঁচজন বেরিয়ে পড়লাম সদরঘাটের উদ্দেশে। যথাসময়ে আমরা পেঁৗছলাম সদরঘাটে। যদিও রাজধানীর চিরচেনা যানজট কিছু সময়ের জন্য হলেও বাগড়া দিয়েছিল। এরপর ভিআইপি গেট দিয়ে পন্টুনের ভেতরে ঢুকে আমরা নির্ধারিত লঞ্চে উঠলাম। আমাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করলেন রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির মহসিনুল করিম লেবু ও আমিরুল মোমেনিন সাগর ভাই। লঞ্চেই সকালের নাশতার আয়োজন ছিল। সকাল ৯টার দিকে লঞ্চ যাত্রা শুরু করল চাঁদপুরের উদ্দেশে। আমার ভাগ্নে-ভাগি্নর এটা যেহেতু প্রথম লঞ্চযাত্রা, তাই তাদের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। লঞ্চ কীভাবে চলে, নদীতে ডুবে যাবে না তো… ইত্যাদি। চলতে থাকা লঞ্চ যখন বুড়িগঙ্গার বুক চিরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ফেলে আসা লঞ্চগুলোকে দূর থেকে অপরূপ লাগছিল। বড় বড় লঞ্চের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছোট ছোট নৌকাও যাত্রী এবং মালপত্র পারাপারে ব্যস্ত। মানুষভর্তি নৌকাগুলো বিশাল লঞ্চের ঢেউয়ের ধাক্কায় এই বুঝি উল্টে যাবে যাবে মনে হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষ অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই এগিয়ে চলে সম্মুখপানে।

লঞ্চ ছাড়ার আগেই আমাদের কেবিনের পাশে বসে থাকার সময় লোকজনের শোরগোল শুনে ছোট ভাগি্ন বলছিল, মামা নদীতে কে যেন পড়ে গেছে। এগিয়ে গিয়ে দেখলাম লঞ্চে উঠতে গিয়ে একজন যাত্রীর ব্যাগ পানিতে পড়ে গেছে আর একটি পথশিশু পানিতে লাফ দিয়েছে সেই ব্যাগ তুলে আনার জন্য। এটি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। পেটের তাগিদে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে এরা মানুষের সাহায্যে হাত বাড়ায়। চলতে গিয়ে অসাবধানতায় ব্যাগ, মোবাইলসহ অনেক মূল্যবান জিনিস পড়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। তাড়াহুড়া করে লঞ্চে উঠতে গিয়ে বাচ্চারাও অনেক সময় পড়ে যাচ্ছে পানিতে। অনেকেরই জীবন বিপন্ন হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে ওঠার কারণে। তাই তড়িঘড়ি না করে ধীরেসুস্থে বাচ্চা ও বৃদ্ধ মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে লঞ্চে ওঠা উচিত। অন্যদিকে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই লঞ্চে ওঠার মানসিকতা আমাদের পরিবর্তন হওয়া দরকার।

সম্মুখপানে এগিয়ে চলা লঞ্চ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দু’পাশের সারি সারি দালানগুলোকেই যেন বিদায় জানাচ্ছিল। এগিয়ে চলছিল সুনসান নীরবতার দিকে। নদীর ধারে গড়ে ওঠা বসতি, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর বিভিন্ন ধরনের পাখির জলকেলি দেখতে দেখতে কখন যে অনেক দূর এগিয়ে গেছি আমরা তা টেরই পাইনি। লঞ্চের কেবিন-স্বল্পতা থাকলেও পিকনিক কমিটির সক্রিয় সদস্য ও নিবেদিতপ্রাণ মকসুদার রহমান মাকসুদ ভাইয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত ২০৭ নম্বর কেবিনে ব্যাগ-ব্যাগেজ রেখে আমরা লঞ্চটি ঘুরে ঘুরে দেখছি, সেই সঙ্গে ছবি ও সেলফি উঠছিল বিভিন্ন ভঙ্গিতে। কখনও বা গ্রুপ ছবি তুলছি, আবার কখনও একক ছবি এবং কখনও বা সেলফি। এরই মধ্যে কিছু সময়ের জন্য আপা-দুলাভাই, ভাগ্নে-ভাগি্নসহ সবাই গেলাম সুকানির (লঞ্চচালক) কক্ষে। ভাগ্নে-ভাগি্ন উৎসুকভাবে সুকানিকে লঞ্চ চালনা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। তিনিও কোনোরূপ বিরক্তিভাব প্রকাশ না করে তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। পরে আমরা চালককে ধন্যবাদ জানিয়ে তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলাম প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করতে।

আমাদের নৌবিহার ছিল বিভিন্ন আয়োজনে ভরপুর, যার মধ্যে খেলাধুলার আয়োজনও ছিল। ছিল ছেলেদের পিলোপাসিং, যে খেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী রংপুরের কৃতী সন্তান মসিউর রহমান রাঙ্গা। ছোটদের বুদ্ধি যাচাইয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে আমার ভাগ্নে শেরেবাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র খন্দকার সাদমান বিন মোস্তাক। প্রধান অতিথি পরে বিজয়ী সাদমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। প্রথম পুরস্কার পেয়ে সাদমান খুশিতে আত্মহারা। এরপর শুরু হলো দুপুরে খাওয়ার পর্ব, যাতে ছিল পোলাও, ইলিশ ভাজা, মুরগির রোস্ট, খাসির রেজালা, সালাদ, জরদা, কোল্ড ড্রিঙ্কস ও জিরা পানির পর মিষ্টি পান। খাওয়া-পরবর্তী আয়োজন ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‌্যাফেল ড্র। নাচে-গানে নৌবিহার পেল অন্যরকম এক মাত্রা। অতিথি শিল্পীদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার গান সবাইকে মুগ্ধ করে। তার গানের সঙ্গে খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদের নাচও উপস্থিত সবাইকে বাড়তি আনন্দ দেয়। র‌্যাফেল ড্রতে ছিল আকর্ষণীয় পুরস্কার। আয়োজকরা যখন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছিলেন, তখন ছিল টানটান উত্তেজনা। সবাই হাতে রক্ষিত টিকিটের নাম্বার মেলানোয় ব্যস্ত। সবার নজর ছিল প্রথম পুরস্কারের (মোটরসাইকেল) দিকে। মোটরসাইকেল নির্মাতা রানারের সৌজন্যে ছিল মোটরসাইকেলটি। আমাদের ভাগ্যে ছিল পঞ্চম পুরস্কার হিসেবে ১টি টোস্টার। প্রথম পুরস্কার পান মাছরাঙা টেলিভিশনের রাজু আহমেদ। মোটরসাইকেল পেয়ে তিনি বেজায় খুশি। মন্ত্রী রাঙ্গা ভাই মজা করে বললেন, মোটরসাইকেলে একা একা উঠেন না, বউকেও নিয়েন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নৌবিহারে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামী মিলনমেলা আকাশপথে (বিমান) কক্সবাজারে করার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণাকে করতালির মাধ্যমে উপস্থিত সবাই স্বাগত জানান। অনুষ্ঠান শেষে রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রংপুরের আরেক কৃতী সন্তান কেরামত উল্লাহ বিপ্লব আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। শেষ মুহূর্তে ছিল চাঁদপুর পৌর মেয়রের পাঠানো বিকেলের নাশতা। সব শেষে প্রত্যেকের বাসায় ফেরার পালা। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সব কর্ণধার, সদস্য ও নৌবিহার আয়োজক কমিটিকে।

বাকিটুকু পড়ুন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.