বিয়ে

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১০

১
.
বিয়ে মানে কী আগে বুঝতাম না। এখনো বুঝিনা তবে একটু একটু টের পাই যে, একজনের ভালোবাসার মায়া ত্যাগ করে অন্য আরেক জনের ভালবাসা গ্রহন করে নেওয়া। একজন কে কাঁদিয়ে আরেক জনকে সুখী করা।
সাহিত্যিকরা বলেছে মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া খুব সহজ, তবে পথচলা অনেক কঠিন।
কিন্তু একবারো ছেলেদের কথা ভাবলো না, হয়ত তাদের সময় হয়নি।
আসলে এ যুগে মেয়ে হয়ে পথচলাটা খুবই কঠিন, হাঁসতে গেলেও ভাবতে হয়, কাঁদতে গেলেও ভাবতে হয়।
তবে সব মেয়েদের ক্ষেত্রে না তা আমার আশেপাশের পরিবেশ দেখলে বুঝতে পারি।
আমার কোন বোন নাই। তাই মেয়েদের মন বুঝতে পারি না কে সুখী আর কে দুঃখী!
শুনেছি একটা বোন থাকলে ভাইয়ের জন্য কতইনা সুবিধা হয় যেমন, ভাইয়ের জন্য টুকটুকে ভাবি খুজে বিয়ের আগেই লাইন করিয়ে দেওয়া।
মাঝে মাঝে সেই সুবাদে ভাইকে শাসিয়ে টাকা নেওয়া সেই টাকা দিয়ে নিজে কিছু না কিনে, ভাইয়া এবং হবু ভাবির জন্য গিফ্ট কেনা, আরো কত কী! তা আর আমার ভাগ্যে হয়ে উঠেনি ভুলেও কোনদিন কেউ এই নিস্বার্থ ভালবাসার দাবি নিয়ে ডাকেনি ভায়া বলে।
হতভাগা ভাগ্য আমার....!
হতভাগায় তো! যারা বোনের নিস্বার্থ ভালবাসা থেকে বঞ্ছিত তারা তো হতভাগায় ভাগ্য আমার বন্ধুদের।
এই তো সেদিন এক বন্ধু তার বোনের বিয়ের দাওয়াত দিলো। দাওয়াত খেতে গিয়ে দেখলাম কত মিল মহব্বতই না দিয়েছে উপরওয়ালা তাদের মধ্যে। মনে মনে হিংসা হলো, যদি বোনটা আমার হতো।
কিছুক্ষন পর শুরু হলো সে কী কান্ড। সারা বাড়ি কান্নায় ভরে গেল। আর প্রায় বিয়েতে দেখা যায় এরকম কান্না। তবে শুধু মেয়েরাই কাঁদে কই বরকে তো কোনদিন কাঁদতে দেখলাম না।
দেখলাম বাবা-মার গলা জড়িয়ে যতটা কাঁদল, ভায়ের গলা জড়িয়ে তার চেয়ে একটু বেশি কাঁদল।
বুঝলাম একটি মেয়ের আঠার থেকে বিষ বছর পরিবারের সাথে সম্পর্ক নিবিড় থাকে তার পর চলে যেতে হয় অচেনা ঠিকানায়, কারো কারো চেনায় হয়।
আর যাবার বেলা মনে পড়ে হয়ত সব স্মৃতি ভায়ের সঙ্গে ছোটবেলায় এক বালিসে শুয়ে ভায়ের মুখে গল্প শুনে ঘুমানো।
বাবা-মা এ সময় ব্যাস্ত থাকে তো তখন ভাই থাকলে সেটায় হয় বোনের প্রিয় বন্ধু।
ধরুন হঠাৎ মেয়ে যেয়ে মায়ের কাছে বল্ল, মা আমার খেলনাটা একটু ঠিক করে দাও তো? তখন মা কাজে ব্যাস্ত থাকায় বলবে, মা তোমার ভাইয়ার কাছে যাও। আর বোন বড় হলে বলবে আপুর কাছে যাও এই তো ভাই বোনের ভালোবাসা।
কিন্তু আজ বোন আমার চলে যাচ্ছে অচেনা এক ঠিকানায় এ আবার কেমন বিধির নিয়তি সেখানে কী সে পারবে ভালবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে?
দেখি বন্ধুর বোন (কান্নাজড়িত চোখে) আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। বুকে মাথা রাখতেই শর্ক খেলাম 420 ভোল্টের এই প্রথম কোন বোন ভাইয়া বলে বুকে মাথা রাখল। কিছুই বলছে না চোখে যেন আষাঢ়ের জল আমি তাকে বল্লাম কেঁদনা বোন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তুমি সুখী হবে তোমার জন্য রইল শুভ কামনা!
আর মনে মনে বল্লাম, নিজের বোন হলেও বলতাম যে, এখন আমাদের এত দিনের ভালোবাসা ছেড়ে যেতে চাইছিস না। কিন্তু সেখানে দুদিনের ভালবাসায় আমাদের কাছে আর আসতেই চায়বি না।
হঠাৎ... এই হাপি চল!
কোথায়? (চমকে গিয়ে)
কেন ভুলে গেলি? তুই তো আবার যে মন ভোলা।
আমি কিছু একটা ভাবছিলাম সে হয়ত বুঝতে পারেনি।
সে আবার বল্ল বোনটাকে গাড়ি অবদি উঠিয়ে দিয়ে আসি।
দুজনে মিলে উঠিয়ে দিয়ে আসলাম। দুজনে বললে ভুল হবে।
দেখলাম গাড়িতে উঠে গিয়েও কী যেন বল্ল কানে মুখে জাকিরকে তার বোন।
ধীরে ধীরে তারা চলে গেল তাদের ঠিকানার উদ্দেশ্যে।
সুখী হোক এই তরুণ নব দম্পত্তিরা দোয়া করলাম মনে মনে আরেকবার।
তারপর ফিরে এলাম বাড়িতে।
২
.
আজ বন্ধুটিকে কেমন মনমরা মনমরা লাগছে। পাশে গিয়ে বসলাম শান্তনা দেবার জন্য।
সে বলল, অনেক... দিনের একটু একটু করে পুষে রাখা ভালোবাসা আজ এমন ভাবে হাঠাৎ চলে যাবে ভাবিনি কোনদিনও রে।
আমি বল্লাম, ধুর পাগল তুই তো তাও আজ ভাবলি আর আমার যে কোনদিনও ভাবার প্রয়োজন হবে না।
দেখলাম এবার সে আমাকে সান্তনা দিতে লাগল।
দোস আমার বোন তো তোর বোন।
দোজেনের চোখে অশ্রু।
সারাদিন কান্না করে ক্ষুধা লেগেছে চল কিছু খেয়েনি।
খাওয়া শেষে রাতেই বাড়ি চলে আসলাম। অনেক জোরাজোরি করল সকলে মিলে রাতে বাড়ি না আসার জন্য তবুও চলে আসছি। আমি কারো বাড়িতেই রাত্রে থাকিনা।
ভাবলাম আমি থাকলে সে হয়ত বোনের কথা ভুলে যাবে আর আমি চলে গেলে বোনের কথাই বেশি মনে পড়বে।
শুনেছি একা থাকলে কাঁদতে ভালো হয় আমি থাকলে তো সে কাঁদতে পারবে না। বোনের কথা মনে পড়বে, আর সারারাতে বালিশ ভিজেয়ে একাকার করবে কাঁদবে সে প্রানখুলে। কাঁদুক, এ কান্না যে কিছু হারানোর কিছু পাবার। হারানোটা বুঝতে পারলেন আর পাবারটা বুঝতে পারলেন না? নতুন একটা দুলাভাই পেল, নতুন একটা পরিবার পেল, কিছুদিনের মধ্যে নতুন একটা স্বপ্ন পেয়ে যাবে। বাড়িতে এসে মনের অজান্তেই চোখে অশ্রু চলে আসল কেন আসল জানি না। হয়ত বন্ধুর বোনটিকে ভালোবাসতাম বন্ধুর মত করে। হঠাৎ দূর্যোগ এসে নিয়ে চলে গেল কেড়ে।
(অসমাপ্ত)
উৎসর্গঃ পৃথিবীর সকল বোনহীন ভাইদের।

২ টি +০/-০