নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যুদ্ধে নেমেছে, আর এই যুদ্ধে তাদের বড় অস্ত্র হলো নিজের বিবেগ।\nহাফিজুল\n

মো: হাফিজুল ইসলাম হাফি

মো: হাফিজুল ইসলাম হাফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবহেলা (সম্পূর্ন অংশ)

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৩৭

মোঃ হাফিজুল ইসলাম (বিদায়ের পথযাত্রী)
তানোর কলেজ, রাজশাহী।
" " " "

.
মাহিমের বাবা কিছুদিন যাবত অসুস্থ, আজ যে অবস্থা তাতে মনে হয় আর বাঁচবে না।
মাহিম ডাক্তার নিয়ে এসেছে।
ডাক্তার দেখার পর কিছু ঔষুধ লিখে দিল, এবং তা দ্রুত নিয়ে আসতে বল্ল। তাই মাহিম দৌড়াতে দৌড়াতে রাজশাহী নিউ মার্কেটের উপসাম ফার্মেসিতে চলে আসল। সে এতো বেখেয়ালে দৌড়াইছে যে, ফার্মেসিতে দাড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের সাথে এসে ধাক্কা লেগে যায়। মেয়েটির সাথে একটি বাচ্চা মেয়েও ছিল, মা মেয়ে দুজনেই পড়ে যায় পাকার উপর।
বাচ্চাটির মাথা কেটে রক্ত ঝরছে মাহিমর সেদিকে খেয়াল নেই।
সঙ্গে সঙ্গে লোকজন এসে বাচ্চাটিকে ডাক্তারের কাছে নিল। আর কিছু লোক মাহিমকে মারার জন্য ব্যাস্ত।
মেয়েটি দাঁড়িয়ে উঠে যেই ছেলেটির উপর নজর পড়েছে, তখনি লোকদের উদ্দেশ্যে চিৎকার দিয়ে বল্ল, জানুয়ারটাকে মারুন আরো ভালো করে মারুন!
নিউমার্কেটের অনেকেই তাকে মারল।
কে বলে মেয়েদের ডাকে না কি ছেলেরা সাড়া দেয় না? শুধু মেয়েদের অবহেলা করে।
আসুন দেখে যান রাজশাহীতে ছেলেরা কত সন্মান করে এখনো মেয়েদের!
মাহিম অনেক বলেছিল তাদের, প্লিজ আমাকে মারবেন না আমার বাবা অসুস্থ। কেউ শুনেনি তার কথা সামন্য একটু রক্ত ঝরার জন্য পাবলিক তাকে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল।
সামন্য ভুলের মাসুল কি এরকম হওয়া উচিৎ?
মাহিম যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় দাঁড়াল তখন কে দেখতে পেল। এই ছিল মাহিমর প্রথম স্ত্রী।
অবশেষে চিৎকার দিয়ে মাহিম একটা কথা বলেছিল, তোরাই সুষ্ঠ বিচারক ভাই!
তার পর ঔষধ নিয়ে বাড়ি দিকে রওনা দিল...........।
বাড়ির সামনে আসতেই কান্নার আওয়াজ।
তার বাবা আর বেঁচে নেই।
বেঁচে থাকলেও ছেলের এই অবস্থা দেখলে নির্ঘাত মারা যেত।
হয়ত ফার্মেসিতে দূর্ঘটনাটি না ঘটলে সময় মত ঔষধ নিয়ে আসলে বেঁচে যেতে পারত তার বাবা।

.
শারীরিক যন্ত্রনায় আর মানুষিক যন্ত্রনায় আজ তিন দিন থেকে ঘরেই আছে মাহিম। মা এসে বল্ল ঔষধ গুলো ফেরত দিয়ে আয়, ঐ খান থেকে কিছু টাকা না হয় আসবে। তাই মাহিম আজ আবার সেই ফার্মেসির উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করল।
ফার্মেসির কাছে গিয়ে আবার র সাথে দেখা আজ আবার এসেছে। তাই সে চলে আসতে যাবে এমন সময় বাচ্চা মেয়েটি বলে উঠল, আংকেল আপনি! আপনাকে আমি কত খুজেছি। (মেয়েটির মাথায় ব্যান্ডেজ)
এটা আমার আম্মু ।(কে দেখিয়ে)
আম্মু জানো এই আংকেল আমায় সেদিন রক্ত দিয়েছিল। তোমরা দেখতে চায়ছিলা না?
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মাহিম বল্ল তা এখানে কেন মামনি?
তখন বাচ্চাটি বল্ল, জানেন আংকেল কিছুদিন আগে যখন আম্মু আমাকে নিয়ে এখানে ঔষধ নিতে এসেছিল, তখন কে যেন জোরে আমাদের ধাক্কা দিয়েছিল আর আমি পড়ে গিয়েছিলাম। দেখেন আংকেল কত বড় কেটে গেছে, খুব ব্যাথাও পাচ্ছি! এরা কি মানুষ আপনি বলুন আংকেল?
না মামনি এরা জানুয়ার।
কথাটি বলার পর
মাহিম দেখল র চোখ লাল হয়ে গেছে। কারন ই সেদিন কথাটি বলেছিল।
আংকেল আমার আব্বু আপনাকে দেখতে চেয়েছে, আম্মুও।
তা আপনার মাথায় কি হয়েছে?
এ আমার পাপের ফল মামনি।
মাহিম আর কথা না বাড়িয়ে ডাক্তারকে বল্ল ঔষধ গুলো ফেরত নিন।
আরে একটা ঔষুধ ও যে খাওয়ান নি।
খাওয়াব কাকে?
তো কিনেছিলেন কেন?
বাবার জন্য..বলেই মাহিম কেঁদে ফেলে।
তাহলে মারা গেছে আপনার বাবা?
কোন রকমে মাহিম হ্যা শব্দটি উচ্চারন করে টাকা নিয়ে চলে আসতে লাগে। দাঁড়িয়ে থেকে সব শুনছিল, তাই মাহিম চলে যাবার সময় ডাক দিল।
: (অশ্রুভেজা চোখে) কাল একবার দেখা করবেন পদ্মা পাড়ে?
মাহিম: কেন?
: কারন যে আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছে, তাকে একবার দেখতে চায় আমার স্বামী।
মাহিম: আর যে আপনার মেয়ের রক্ত ঝরাল তার উপর প্রতিশোধ নিতে চায় না, তাকে মারতে চায়না আপনার স্বামী?
: হা! হা! হা! প্রতিশোধ...! আপনার উপর তো আমি সেদিন নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছি। (কিছুক্ষন থেমে থেকে) আমাকে মাফ করা যায় না।
মাহিম: সঠিক বিবেক বোধটা জাগ্রত হয়েছে আপনার মধ্য সেটাই অনেক, কয়জন মেয়েই বা তা পারে আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
বলে মাহিম চলে গেল...।
জানে মাহিম কাল পদ্মা পাড়ে যাবে না অনেক বড় ধরনের কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাকে ক্ষমা আমাকে চায়তেই হবে।
বাড়ি এসে জাকির কে (তার স্বামী) সব কথা বলে। সব কথা শোনার পর জাকির মাহিমের বাসাতে যাবার জন্য কে বলে। তবে তার ঠিকানা তো জানা নায়।
বলে যেহুতু সে রাজশাহীতে আছে খুজে পাওয়া যাবে নিশ্চয়।
মাহিম জানত এবার তার ছাড়িয়ে যাবে আমার সাথে দেখা করার জন্য। যে মেয়ের মনে এত মায়া আছে, সে আমার বাসা চিনতে কতক্ষন। তাই মাহিম পরদিন তার মাকে নিয়ে চলে যাবার সময় রেল ইষ্টিশনে দেখা হয়ে যায় র পরিবারের সাথে। র স্বামী প্রথমে মাহিমকে সালাম দেয়।
মাহিম প্রতিউত্তর দিল।
কিছুক্ষন লোকটির সাথে গল্প করল মাহিম কথার চাল চলনে বুঝতে পারল লোকটি অনেক ভালো তার চেয়েও অনেক ভালো। এবং কথাটি মুখ ফসকে বলেও দিল মাহিম।
কথাটি বলাতে সবাই হেঁসে উঠল!
তারপর মাহিমকে উদ্দেশ্য করে বল্ল কি করেন এখন আপনি?
হোটেলে কাজ করি।
অবাক হয়ে বল্ল আপনি তো অনেক শিক্ষিত!
তো?
তো চাকরি করেন নি কেন?
চাকরি সবার জন্য নয় বর্তমান বাংলাদেশে তাছাড়া কাজ করলে ক্ষতি কোথায়?
জাকির বল্ল শুনেছি মানুষ বেশি অবহেলা পেলে বড় কিছু করে বড় কিছু হয় এই প্রথম ভিন্ন একটা মানুষ দেখলাম।
মাহিম একটা হাঁসি দিয়ে বল্ল, অনেক আছে ভাই তবে তাদের কথা কোথাও লিখা হয়না বিধায় আমরা জানতে পারি না। যখন কোন গরিব ঘরের সন্তান অবহেলা পেয়ে হাঠাৎ বড় হয়ে যায় তখন সেটা ইতিহাস হয়ে যায়। আবার যখন কোন ধনী ঘরের সন্তান অবহেলা পেয়ে নিচে নেমে যায় তখন এটাও ইতিহাস। কিন্তু ঐ ইতিহাসবিদরা জানে না যে এই মাহিমরাও দেশের বেশ গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি।
জাকির তখন বল্ল বাহ.. আপনি তো খুব যুক্তি দিয়ে কথা বলেন! তবু আপনার স্ত্রী আপনার কাছ থেকে চলে গেল কেন?
সে আপনাকে ভালবাসত তাই, আপনার ভালবাসার শক্তি আছে।
জাকির সব জানে তাকে সব বলেছে তাই জাকির এবার বল্ল, তারপর আর বিয়ে করেছেন?
না, বিয়ে একবার ফরয তাই পরবর্তীতে আর বিয়ে করি নি। তাছাড়া যে ছেলের বউ বিয়ের পর দিন চলে যায় তাকে আবার কোন মেয়ে বিয়ে করবে করবে বলুন?
আমি করব ( বল্ল)।
মাহিম জাকির দুজনেই র দিকে তাকাল (র চোখ অশ্রুসিক্ত)
মাহিম: মাথা ঠিক আছে আপনার? কি বলছেন এসব আপনার স্বামী আছে একটা মেয়ে আছে।
: হ্যা! আমি তিনার সামনেই তো বলছি।
মাহিম: না এটা হতে পারে না।
: কোনটা? দুটো স্বামী? একটা ছেলে যদি চারটা বিয়ে করতে পারে, তাহলে একটা মেয়ে কেন দুইটা বিয়ে করতে পারবে না?
মাহিম: সেটা স্বামী স্ত্রীর মনমালিন্য সৃষ্টি হলে হয়। আপনার স্বামী তো আপনাকে ভালবাসে, আর আপনিও তো তাকে ভালবাসেন। যার জন্য প্রথম স্বামীর ঘর ভেঙ্গে দিয়েছেন, সাথে মন!
: সেগুলো নিয়ম নীতি মানি না। আমি নতুন নিয়ম তৈরি করব।
মাহিম: তাহলে আপনার স্বামী?
সিমা: সেও থাকবে, আমি তাকে ভালোবেসে সব কিছু ছাড়তে পারলে, সে কেন আমার জন্য এইটুকু পারবে না।
জাকির: কি বলছ এসব? যদি তোমাকে আমি পরিক্ষা দেয় যে, আমাদের মধ্য তুমি যে কোন একজন কে বাঁচাতে পারবে, তাহলে কি করবে?
: উত্তরাটা সহজ! আমি আপনাকে বাঁচাব, কারন আপনার একটা মেয়ে আছে । আর মাহিমের সাথে আমিও মারা যাব।
কি মিষ্টার মাহিম এবার বিয়ে করবেন তো?
না।
তারপর মাহিম তার মা কে নিয়ে এবার সোজা হাঁটা ধরল। সে জানে কিছু মেয়েদের ভাগ্য উপরওয়ালা নিজের হাতে সুন্দর করে লিখে দেন তার মধ্য একজন সিমা। কিন্ত এরা নিজের সুখ নিজে বিসর্জন দিলে কারোই কিছুই করা থাকে না।
(সমাপ্ত)
বিঃদ্রঃ গল্পটি সরল ও মিশ্রিত ভাষায় লিখা বানানে ভুল থাকলে ক্ষমা পার্থী!
গল্পটি থেকে যদি কেউ এতটুকু কিছু শিক্ষা অর্জন করতে পারেন তবেই আমার লিখাটি সার্থক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.