![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
.
দেখতে দেখতে আবারও রমজান চলে আসল। গত রমজান থেকে আমার বাড়ি ছেড়ে থাকা শুরু। এই রমজান আসলেই আমার খুব করে একটা কথা মনে পড়ে। যে সব মায়েদের মেয়ে নাই এই রমজান মাসে সে সব মায়েদের যে কি কষ্ট হয় আমি সেটা ভালো করে দেখেছি খুব কাছে থেকে। আমার কোন বোন নাই ছোট একটা ভাই আছে তো ও মেয়েলি কোন কাজ পছন্দ করে না, আর আমার বাবা তো একদম না। প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবে তবু রান্না করে খাবে না। তবে আমি ছিলাম অন্য রকম যে কোন সময় ফ্রি থাকলে মায়ের কাজ করে দিতাম। কথা সেইটা না এবার আসা যাক আসল কথায়, চার বছর আগের কথা আমি যখন বাড়িতে থাকতাম তখন রমজান মাস এলে দেখতাম আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হত আমার মায়ের। কারণ আমার তিন চাচার মেয়ে ছিল। তাই তাদের মায়ের অতটা কষ্ট হত না। রমজান মাস এলে আমি ইফতারির কিছুক্ষন আগে আমার মায়ের সামান্য কিছু কাজ করে দিয়ে চলে যেতাম এর-ওর বাড়িতে শুধু ইফতারির আইটেম দেখতে ভাগ না নিয়ে আসতাম না সেটা ঠিক। তো সেদিন চোদ্দটা রমজান চলে গেছে পনের দিনের দিন আমি রোজা রাখছিলাম। আমদের গ্রাম অঞ্চলে ছোট ছেলে-মেয়েরা রোজা রাখতে চাইলে রাখতে দেয়না বলে প্রথমটা, মাঝখানের, আর শেষেরটা করলেই না কি ছোটদের সব রোজা হয়ে যায়। আমরাও তাই মনে করতাম তাই সেদিন রোজা রাখা। কোন মতে আসরের নামাজ পড়ে এসে আমি মাকে বল্লাম, মা আমি ভাত খাব আর পারছি না। মা বল্ল আসর পার হয়ে গেলে রোজা ভাংতে হয়না। মনে মনে রাগ হলো আর বল্লাম হায়রে নারী মানুষ তোমাদের বোঝা বড় দায়। রোজা থাকতে চায়লে বল থাকিস না আর ভাংতে চায়লে বলো ভাঙ্গিস না। তাই মার উপর রাগ করে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।আজ আর কোন কাজ করে দিলাম না।
কিছুক্ষন পর ছোট ভাই এসে ডাকলো। সেও আজ রোজা আছে তবুও ওর কোন ক্লান্তি নাই রোজা রেখেও মারবেল খেলে আসছে। আমি উঠার পরে মা বল্ল, যা তো বাবা টিউবওয়েল থেকে এক জগ ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়। এমনিতে আজ আমার রাগ উঠে আছে তার উপর কাজের কথা। সামনে দেখি বাবা, বাবাকে দেখে আমি না শুধু আমার চাচাত ভাই-বোনেরাও ভয় পাই তাই টিউবওয়েল থেকে গিয়ে পানি নিয়ে আসলাম। এই দিকে ইফতারির সময়ও হয়ে আসছে। মা দেখি এখনো চুলোতে রান্নার কাজে ব্যাস্ত। গ্রামে তো আর গ্যাসের চুলা নাই এখানে উনুনের চুলা। বাবা আর ছোট ভাই ইফতারি রেডি করছে আমিও সাহায্য করলাম। এই দিকে (আমাদের এই খানে আজানের আগে মাইকে একটা সিগনাল দেয় সেটার মাধ্যেমেই গ্রামের মানুষরা ইফতারি করে যাকে বলে “সায়রিন”) তো সায়রিন দিয়ে দিচ্ছে তবু মা এর কাজ শেষ হচ্ছে না। বাবা মাকে ডাকছে বলছে আগে ইফতারি করে নিয়ে কাজ করলে কি এমন ক্ষতি হবে। এমন সময় আমাদের একটা লাল গরু ছুটে গেছে খুঁটায় বাঁধা থেকে তো মা তখন ইফতারি না করেই গরুটাকে ধরতে চলে গেল। আমাদের ইফতারি করা শেষ, চার দিকে আযান দেওয়া শুরু হয়ে গেছে তখন মা আসে গরুটা নিয়ে। তারপর খুঁটাই বেঁধে একটা খেজুর আর একটু পানি মুখে দিয়ে নামাজে বসে পড়ল।আমরাও মসজিদে নামাজ পড়তে চলে আসলাম। সেদিন আমার আর কোন চাচাদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি।
২
.
পরের দিন আর রোজা ছিলাম না। তাই প্রতিদিনকার মত আবার এর-ওর বাড়িতে গেলাম। ছোট চাচী বল্ল, কি রে একদিন রোজা থেকে সৌজা হয়ে গেছিস, কাল সারাদিন তো তোর দেখা পাওয়া যায়নি। আমি শুধু বল্লাম, আমি তো আসরের পর ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলাম আম্মা ভাংতে দেয় নি। তাই তো কাল কোন কাজও করে দেয়নি। ছোট চাচী তখন বল্ল, তোর মায়ের কোন মেয়ে নায় তোরা যদি কাজে সাহয্য না করিস তাহলে কে করে দেবে? তোর ছোট ভাইটা তো খেলা নিয়ে পড়ে থাকে সারা দিন। চাচাত বোনও একই কথা বল্ল, তখন আমি বাড়িতে এসে মায়ের কাজে সাহয্য করলাম মা তখন কিছু বল্ল না। সে দিন এর পর থেকে আর যায় নি কারো বাড়িতে ইফতারির সময়। কারন আমি দেখতাম রোজ আমার চাচাত বোনেরা ওদের মায়ের প্রাই সব কাজে সাহায্য করত। আর আমার মা একই কাজগুলো একাই করত। সবচেয়ে বড় কথা সেদিন চাচী বলার পরে বাড়ি এসে দেখি মায়ের মুখ ঘেঁমে গেছে গরমে, রোজা আছে অথচ কাজ করছে । আর কাজগুলো করতেই হবে এটাই বাস্তবতা। তবু কোনদিন আমাদের একবারের উপর দুই বার কাজ করতে বলেনা। আমরা একবার না করে দিলে ঐ কাজ আর করতে বলে না। ভালোবাসাই না অভিমানে তা ঠিক জানি না। তবে আমাদের নিয়ে মা অনেক গর্ব করে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।এইও জেনেছি এতোদিনে যে, মেয়েরা মা হওয়ার আগে কখনো এমন হতে পারে না।
..........অসামাপ্ত
©somewhere in net ltd.