![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
.
আমার একটা চাচাত বোন ছিল মানে এখনো আছে নাম রেশমি (ছদ্ম নাম)। ছোট থেকে সে খুব রাগী আর একজেদি। তবে অহংকারী না নিরঅহংকারী সেটা বুঝতাম না। কিন্তু সে এমন ছিল তার পানি খাবার গ্লাসে কেউ পানি খাওয়া তো দূরের কথা হাত দিয়ে ছুঁলে সে আর ঐ গ্লাসে পানি খেত না। এমনও হয়েছে সে রাগে ঐ গ্লাসটাই মাটিতে আছাড় দিয়েছে। চাচী তাকে কত বোঝাতো যে মেয়েদের এতো রাগী হলে চলে না। মেয়ে হয়ে জন্মেছিস পরের ঘরে যেতেই হবে আজ না হোক কাল। ঐ বাড়ির সবকিছু গুছিয়ে রাখতে হবে তোকেই, তখন সেখানে এরকম করলে তারা তোকে রাখবে কি করে? সে তখন বলতো না রাখলে চলে আসব ওদের বাড়িতে কাজ কে করবে নিজের বাড়িতেই করি না আর পরের বাড়ি। এই ভাবেই কথা কাটাকাটি করত মায়ের সাথে প্রায় রেশমি আপু। সে আমার অনেক বড় ছিল আমি যখন ২০০৯ সালে পি.এস.সি দেয় তখন সে এস.এস.সি দিয়েছিল তবু আমাকে অনেক আদর করত। তার কাছে আমি রোজ পড়তে যেতাম। আমার পড়া আমারি মনে থাকত না তখন বলত বাড়িতে গিয়ে আর বই খুলিস না তাই না? আমি তখন চুপ করে থাকতাম।
২
.
আমার বড় ভাবির তখন বাচ্চা ছিল তো একদিন এই রোজার মাসে ভাবি কাপড় কেঁচে দেবে তাই কাউকে না পেয়ে রেশমি আপুকেই বাচ্চাটা ধরে থাকতে দিল। সে আবার বাচ্চা খুব ভালবাসে। তবে কিছুক্ষন পরে যখন বাচ্চা তার কোলে পায়খানা করে দিল তখন সে কি কান্ড মনে হয় এক্ষুনি বাচ্চাকে তুলে আছাড় দিবে। সেদিনের পর থেকে সে আর ছোট বাচ্চাদের কাছে যেত না নেওয়া তো দূরের কথা। এক কথায় তার মাঝে তখন সবকিছুই ছিল শূণ্য।
হঠাৎ এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়ার পরই তার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের কিছুদিন পর প্রায় মাঝে মাঝে আসত দুলাভাইকে সাথে করে। তখন কিছুটা পরিবর্তন শুরু হয়েছিল তার মধ্যে। একদিন আমার বড় চাচার ছেলের বিয়ে সেদিন সবাই একসাথে হয়েছিল আমাদের পরিবারের। তো গ্রাম অঞ্চলে জামাইদের একটু বেশি আপ্পায়ন করা হয় আর রেশমি আপুর স্বামী ছিল আমাদের পরিবারের বড় জামাই। তাই খাওয়ানোর সময় আমার চাচীরা তার প্লিটে এতো বেশি মাংস দিয়েছে যে সে আর খেতে পারিনি। পাশে থেকে দেখছিল সবি আপু খাবার নষ্ট করা দেখে আপু বল্ল রেখে দাও আমি খেয়ে নেবনি। আমি তার এই একটা কথা শুনে তখন এতোটা অবাক হয়েছিলাম যা আগে কখনো হয়নি। মনে মনে বলেছিলাম,
বিধাতা কি দিয়ে আপনি করেছেন মেয়েদের সৃষ্টি,
কখনো তাদের মনে কালো মেঘ, কখনো আবার উজ্জল রোদ্র, হঠাৎ ঝরে পড়ে বৃষ্টি।
৩
.
আজ তার বিয়ে হয়ে চার বছর হয়ে গেছে। আমি বাড়িতে ঠিকমত যায়না তাই আর দেখাও হয়না দুই বছর থেকে। তবে আমি এখন তানোর কলেজে আসার সুবাদে হঠাৎ আজ তার সাথে দেখা হয়ে গেল। কারন তার বিয়ে হয়েছে এখানে আজ কাপড়ের দোকানে আসাতে দেখা হয়ে গেল। আমি সালাম দিলাম।
আপু বল্ল, কি ব্যাপার তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছ। আগে তুই করে বলতো এখন বড় হয়ে গেছি বলে তুমি করে বলছে।
আমি- বাড়িতে গেছিলা এর মধ্যে?
আপু- না। আমার শাশুড়ি অসুস্থ অনেকদিন থেকে বাড়ির বড় বউ হিসেবে সব কাজগুলো আমাকেই করা লাগে।
আমি- গতবার তো ঈদেও যাওনি। শুনেছিলাম পরে না কি গিয়েছিলে তাও মাত্র দুই দিন ছিলে।
আপু- হয় রে ভাই। এখন কি আর বাবার বাড়িতে গিয়ে বেশি দিন থাকলে চলে। সংসার তো এখন আমার এখানে।
মনে মনে আমার খুব হাঁসি পেল ছোটবেলার সেই কথাগুলো কি নিত্যান্তই আপু ভুলে গেছে। যে কি না বলেছিল কাজ কে করবে ওদের বাড়িতে চলে আসব কাজ করতে বল্লে। আর সে আজ বাড়িতে যাওয়া তো দূরের কথা বাড়ির কথা মনেই পড়ে কি না ঠিক।
যাওয়ার সময় আপু বল্ল,
আপু- তুমি তো এখন এখানেই থাকো না?
আমি- হ্যা।
আপু- আমাদের বাড়ি তো চেনো?
আমি- হ্যা।
আপু- কয় যাও না তো কোনদিনও। না কি চাচাত বোন বলে পর পর ভাবো?
আমি- আরে না আপু আসলে আমার নিজের বোন হলেও যেতেম কি না ঠিক জানি না। তাছাড়া তুমি তো জানো কোথাও আমি এমনিতেই যেতে চায়না।
আপু- তুমি তো দেখছি আগের মতই আছো?
আমি বলতে গিয়ে বল্লাম না আপুকে যে, তুমি অনেক বদলে গেছ।
আপু আবার বল্ল, তুমি এবার কোন ইয়ারে পড়ছো?
আমি এবার বলেই ফেল্লাম, আগে রোজ আমার পড়া তুমি মনে করে রাখতে আর আজ আমি কোন ইয়ারে পড়ি সেটাই জানোনা? তবু বল্লাম এবার ইন্টার ২য় বর্ষ।
ও। তা আমাদের বাড়িতে আসো একদিন বলে চলে গেল। খুব কম কথা বল্ল আজ আপু আমার সাথে। মনে মনে ভাবলাম তখন চাচী কত বোঝাতো আর এখন.............. আসলেই কিছু সময় থাকে যখন মানুষকে ঐ কথাটা হাজার বার বল্লে শুনে না অথচ সময়ের ব্যাবধানে একই কথা আপনা আপনি বুঝে যায়। মানুষ বড়ই বৈচিত্রময়! তারচেয়ে বড় বৈচিত্রময় নারী।
অবশেষে আজ লক্ষ করলাম সেই দিনের সেই শূণ্য মেয়ের মাঝে পূণ্যতাই ভরে গেছে আজ।
©somewhere in net ltd.