![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি গল্প খুব কম লিখি, আশেপাশের বাস্তবতাগুলো বেশি তুলে ধরার চেষ্টা করি। তবে আজকেরটা গল্প কোন মেয়ের জীবনের সাথে মিলে যেতেও পারে। চলুন গল্পেই নিয়ে যায়..........
এখন ভরা আষাঢ় মাস চলছে অথচ শ্যামলপুর গ্রামে কোন বৃষ্টি নায়। এই গ্রামের সবকিছুই যেন ধূসর রংঙ্গে ভরা। কষ্টের মাঝে সুখ সুখের মাঝে কষ্ট! বুঝলেন না তো কথাটার মানে আচ্ছা গল্পেই না হয় বুঝে নিয়েন। তবে এই গ্রামের একটা প্রথা যুগ-যুগ থেকে চলে আসছে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস আসলেই গ্রামে বিয়ের একটা ধুম পড়ে যায়। আজ এর মেয়ের বিয়ে তো কাল ওর। গ্রামে ছেলে নায় সেটা না তবে ছেলেদের বিয়ে বছরে দুই একটা হয়। আর মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তো প্রায় সব তরুণী বয়সের তাই বছর না ঘুরতেই আরেকজনের বিয়ের বয়স হয়ে যায়। সবগুলো বাল্যবিবাহার মধ্যেই পড়ে প্রতিরোধ করে লাভ নেই কারণ যারা রক্ষক তারাই ভক্ষক। পাত্র দেখতে যেমনই হোক মেয়ে একটু সুখে থাকলে এই বড় পাওয়া ভাবে শ্যমলপুর গ্রামের মেয়ের মা-বাবারা।
এই দিকে তো হাবিবা বেগমের সেই চিন্তা তার মেয়েটাকে নিয়ে। তাদের পরিবারটি একটু প্রভাবশালি গ্রামের মধ্যে। টাকা-পয়সা সব দিক থেকে তবে তাদের কোন ছেলে সন্তান নাই একটাই মাত্র মেয়ে। হাবিবা বেগমকে দেখলে বোঝায় যায়না যে তিনি কোন উচ্চ ঘরের মেয়ে একবারে মাটির মানুষ বল্লেই চলে অথচ তার মেয়েটা হয়েছে পুরাই অন্য চরিত্রের অহংকারে ভরা। মুখে তো একটু মধু নাই দেখতেও চাঁদের মত না তবে সে না কি চাঁদনি রাতে হয়েছে তাই দাদি তার নাম রাখছে মধুচন্দ্রিমা। এই শ্যামলপুরের একটা প্রবাদ আছে, আটা গুণে রুটি, আর মা গুণে বেটি(মেয়ে)। কিন্তু এই মধুচন্দ্রিমার ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টটা। তার মা তার চেয়ে দেখতে সুন্দর ব্যবহারও মাশআল্লাহ! অথচ মধুচন্দ্রিমা হয়েছে ভিন্ন এখানে প্রবাদটা নিরব হয়ে গেছে। শ্যামলা বরণ মেয়ে একটা এতো রাগি তবু তার স্কুলে অনেক বন্ধু। তার বিশেষ একটা কারণও আছে। কারণটা হলো তাদের সব ধরনের গাছ আছে আম, জাম, তেতুল, আমড়া, কামারাঙ্গা সব। তো যখন যেটার সময় তখন সে তা নিয়ে গিয়ে স্কুলের সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে মজা করে খায়। পরিবারের কেউ কিছু বলে না একমাত্র মেয়ে বলে কথা তার জন্যই তো সব। ছেলেদের সাথে সে মিশে না এমনিতেই। তবে উত্তর পাড়ার আকাশটা কিছুদিন যাবত ভালোই তার ইয়ারকি-ফাইজলামি শুরু করছে যা চন্দ্রিমার একদম বিরক্তকর। এই তো সেদিন বৈকালে চন্দ্রিমা বসে বসে তাদের পুকুরঘাটে কামরাঙ্গা খাচ্ছিল আর বর্ষি দিয়ে মাছ ধরছিল। আকাশও সে পথ দিয়ে যাচ্ছিল দুপুরের খাবার নিয়ে তার বাবার কাছে মাঠে। চন্দ্রিমাকে বসে থাকতে দেখে সে একটা কাশি দিয়ে বল্ল, কি রে চন্দ্রি স্কুল করা বাদ দিয়ে মাছ ধরছিস বসে থেকে? চন্দ্রিমা তার কথা শুনে হাঁসতে লাগল।
আকাশ- কি রে পাগলের মত হাঁসিস কেন?
চন্দ্রিমা- তুই তো পাগল বৈকালে কখনো স্কুল থাকে না কি? আর তুই জানবি কোথা থেকে জীবনে তো স্কুলের ধারে কাছে যাসনি কখনো। তুই তো একটা উজ্জবক!
আকাশ- তুই এই ভাবে বলতে পারলি চন্দ্রি তোরে তো পাড়ার কোন ছেলে পছন্দ করে না। আমি একটু করি তাও আমার সাথে এইরকম ব্যবহার করলি। সত্যি বলতে কি আমি ছাড়া তোরে তো কেউ ভালোবাসে না।
চন্দ্রিমা- কি বল্লি কুত্তা। দাঁড়া তোর মাকে বলব, আজ সবাইকে বলে দিব তারমানে তুই মতলব একটা নিয়েই আসছিস আগে থেকে। মা..! মা..! ও মা.!
চন্দ্রিমার মা- কি হয়েছে রে তোর আবার?
চন্দ্রিমার- জানো মা ঐ পাড়ার ফেলু চাচার ছেলে না আজ আমাকে বাজে কথা বলছে।
চন্দ্রিমার মা- কি সর্বনাশের কথা! তা কি বলেছে মা?
তুমি ওর মাকে গিয়ে বলে আসবে ও যেন আর আমার সাথে কথা না বলে...
আচ্ছা মা যাবনি কাল তুই এখন শান্ত হো।
পরেরদিন....
আকাশ- কিরে চন্দ্রি কোথায় যাস সাত সকালে?
চন্দ্রি- তোদের বাড়িতে।
আকাশ- আমাদের বাড়িতে কেন? বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে না কি?
চন্দ্রি- কি বল্লি জানুয়ার...! তোর মুখে সেন্ডেল মারব বিয়ে তো দূরের কথা।
আকাশ- যাই বলেক চন্দ্রিমা আমি কিন্তু তোরে সত্যি ভালোবাসি! তুই কপালে লাল টিপ দিলে আর মাথার চুল খুলে রাখলে খুব সুন্দর লাগে। তখন মনে হয় সারা জীবন তোরে শুধু ভালোবাসি! একবার বল না ভালোবাসিস আমাকে!!
চন্দ্রিমার মা- এই ছেলে এই... কি বল্লে আরেকবার বল তো শুনি?
আকাশ- আরে চাচী যে কোথায় যাচ্ছেন মা-মেয়ে?
চন্দ্রিমার মা- ফেলুর বাড়িতে।।
আকাশ- কেন কেন?
কথার উত্তর না দিয়ে চন্দ্রিমার মা তাদের বাড়িতে চলে গেল।
কৈ গো ফেলুর বৌ?
আকাশের মা- সালামালাইকুম ভাবী! তা আমর বাড়িতে?
চন্দ্রিমার মা- আসছিলাম তোমার ছেলের জন্য। তোমার ছেলেটাকে শাসন করতে পার না সেদিন আমার মেয়েটাকে কি না কি বলেছে আজ আবার আমি নিজে শুনেছি। ছেলেটাকে একটু শাসন কর।
আকাশের মা- আমার ছেলে তো এই রকম না ভাবী। আর ও যদি আপনার মেয়ে কিছু বলে থাকে দয়া করে ভাবী ওর বাপকে বলেন না। যদি ওর বাপে যানতে পারে তাহলে তো ওরে মেরেই ফেলবে যে রাগ ওর বাপের।
আকাশের বাবা রুমেই সব শুনছিল। তারা চলে যাবার পর ছেলেকে খুজতে বেরিয়ে পড়ল হাতে একটা কাঁচা কঞ্চি নিয়ে। বিলের ধারের কাছে যেতেই দেখতে পেল সে খেলছে তার বন্ধুদের সাথে সেখান থেকে আকাশের হাত ধরে মারতে মারতে বাড়িতে নিয়ে আসল। তার পর কান ধরে উঠ-বস আর বলতে বলেছিল কান ধরে বল জীবনে কোন মেয়ের পিছে লাগবি না? আকাশ সব স্বীকার করেছিল। মারের আঘাতে দুইদিন বিছানাই ছিল। পরে তার বাবাই আবার বুঝিয়ে বলেছিল তুই তো আমার একমাত্র সন্তান তুই কেন মেয়েদের সাথে লাগতে যাবি আর কেনই বা তারা আমার কাছে বিচার নিয়ে আসবে। সব সময় মনে রাখিস বাবা তুই ছেলে মানুষ তোর গায়ে কলঙ্ক লাগবে না কখনো। বাবার মাইর গালি খাওয়ার পরে থেকে তো আকাশ তো বদেলে গেল চন্দ্রিমার বাড়ির দিকেও আর যায় না। তবে ভালোবাসে ঠিকি।
ঐ দিকে চন্দ্রিমাও বদলে গেছে। সেদিনের পর থেকে আকাশের কথা ভাবছে। একা একাই সাজছে কপারে লাল টিপ লাগিয়েছে সত্তি কি সুন্দর লাগে! বারবার আয়নায় দেখছে নিজেকে আর হাঁসছে। আর একবার করে বারান্দা থেকে উকি মেরে আসছে আকাশ আসছে না কি। নতুন প্রেমের ছোয়া লাগলে তরুণীদের মনে যা হয় আর কি। এই দিকে সবকিছু খেয়াল করছে হাবিবা বেগম। তাই রাতে স্বামীর সাথে পরামর্শ করেছে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে। হাসান মিঞা তো আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে সলামপুর গ্রামের মাহাবুবের ছেলেটা বড়ই সুন্দর আচার-আচরনে চলাফেরাই ব্যাবহারে সবদিক দিয়ে।
হাবিবা বেগম তখন বল্ল, ঐ ছেলের আবার আমাদের মেয়েকে পছন্দ হবে তো? এ তো যে চঞ্চল। হাসান মিঞা বল্ল, ভালো ছেলেদের কাছে সব মেয়েই পছন্দ হয়, যদি মেয়ের পরিবারের সকলের সুনাম থাকে গ্রামে তা হলে। ভাগ্যগুণে তোমার মত লক্ষী একটা বউ পেয়েছি তোমার গুণে তো এই গ্রামের যে কেউ হার মানে আর মধুচন্দ্রিমা তো তোমারি মেয়ে সেও দেখ ঠিক তোমার মত হয়ে যাবে।
হাবিবা বেগম- থাক হয়েছে হয়েছে আমাকে আর মহান আসনে নিয়ে যেতে হবে না। ও বুঝি তোমার মেয়ে না? যাই হোক কালই তাহলে আপনারা চারজন মিলে ছেলের সবকিছু দেখে আসবেন। আর ওদের কেউ আসতে বলবেন।
হাসান মিঞা- আরে পাগলী আমি তো ওদের বলেই এসেছি কাল শুক্রবার আসবে ওরা মা চন্দ্রিমাকে দেখতে।
এইদিকে সব কথা শুনছিল চন্দ্রিমা। এই সব কথা শুনে মনে হচ্ছে তো তার বুকের উপর দিয়ে সিডর বয়ে গেল প্রেম তো শুরুই হয়নি তার হাত তো ধরা দূরের কথা ভালো করে তাকাতাকিও হয়নি। মেয়েদের মনে প্রথম প্রেম কখনো ভুলতে পারে না তারা। এই দিকে চন্দ্রিমার মনে অস্তিরতা শুরু হয়ে গেছে সে স্কুলে না গিয়ে সরাসরি আকাশের বাড়িতে চলে গেছে।
চন্দ্রিমা- চাচী আকাশ বাড়িতে আছে?
আকাশের মা- (চমকে গিয়ে) কেন মা কে..ন? কি হয়েছে আজ আবার তোমাকে কিছু বলেছে না কি? সেদিন তোমরা মা-মেয়ে বিচার দিয়ে যাওয়ার পরে যেই মার মারছে ছেলেটাকে তাতে তো ও আর তোমাকে কিছু বলার কথা না।
চন্দ্রিমা- কি বলছেন চাচী আকাশকে মেরেছে ওর বাবা? কোথায় আকাশ।
চন্দ্রিমা- মাঠে।
চন্দিমা আর কিছ না বলে মাঠে ছুটল...
আকাশকে দেখতে পেয়ে তাকে ডাক দিল।
কাছে আসতেই চন্দ্রিমা কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল আকাশ আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আকাশ মনে মনে ভাবছে মতলবটা কি এতোদিন পাত্তা দিল না আর আজ কি হল।
চন্দ্রিমা বল্ল, কি কথা বলছ না যে? বলেই হাতটা ধরেছে। আর আকাশ উহ... বলে উঠেছে!
চন্দ্রিমা- কি হয়েছে আকাশ?
আকাশ আমার যায় হোক তোমাকে দেখতে হবে না? প্রথমেই ভালোবাসতে গিয়ে দুইদিন বিছানায় প্রেমিকার মায়ের দেওয়া অভিযোগে এর পরে আর কি করে ভালোবাসি তুমি বলো?
চন্দ্রিমা- সত্যি বলছি আকাশ আমি তোমাকে ভালোবাসি আরো আগে কেন তোমার সাথে আমার পরিচয় হলো না। কাল আমাকে দেখতে আসবে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। আকাশ তুমি যদি বলো তাহলে আমি তোমার কাছে চলে আসব।
আকাশ- হা, হা..,! তোমরা মেয়েরা সত্যি আজব আমি দুই বছর থেকে তোমার পিছে ঘুরছি আর তুমি বলছ আরো আগে কেন পরিচয় হলো না। আর আজ যখন তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন বলছো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তো এখন তোমাকে ভালোবাসি না। আর তোমার কারনে আমার বাবা আমাকে কত মেরেছে দেখ (জামাটা খুলে দেখাল) এর পরে কি ভালোবাসা যায় বলো?
চন্দ্রিমার চোখে অঝর ধারায় জল ঝরছে সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। মেয়েরা একটু ভুল করলে সেটাকে তারা বড় মনে করে নেই নিজেকে সারা জীবনের জন্য অপরাধী ভাবতে থাকে। আর প্রথম প্রেমিক হলে তো কথায় নায়। কান্না করতে করতে চলে গেল আকাশের কাছে থেকে। রাতে ঘুমিয়ে মনে মনে চিন্তা করল আকাশের কাছে আমি শেষ বারের মত যাব ক্ষামা চায়বার জন্য হলেও আবার যাব।
পরের দিন তাকে দেখতে আসল।
মধুচন্দ্রিমাকে তাদের পছন্দ হয়েছে তাই আজকেই বিয়ে পড়ানোর কাজ শেষ করে ফেল্ল কালকের দিন পরে অনুষ্ঠান। সবাই চলে গেলে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করে। সন্ধার একটু আগে চন্দ্রিমা আকাশের সাথে দেখা করতে গেল আজ আবার।
এই দিকে আকাশ সবশুনে সে তো সকাল থেকে কিছু খায়নি।
রাস্তায় তাদের দেখা হলো আকাশে চেহারা কালো হয়ে গেছে দেখে জিজ্ঞাসা করল চন্দ্রিমা কি হয়েছে আকাশ তোমার। আকাশও আজ কেঁদে ফেলেছে আজ তোমার বিয়ে হয়ে যাবে এইভাবে আমি ভাবতেই পারিনি।
চন্দ্রিমা- আমাকে বালোবাসো?
আকাশ- সে তো সেই দুই বছর আগে থেকে।
চন্দ্রিমা- চলো তাহলে আমাকে নিয়ে পালিয়ে।
আকাশ- না চন্দ্রিমা তুমি কভুল বলে ফেলছ এখন তুমি অন্যা আরেক জনের বউ। এখন আমি কি করে তোমাকে নিয়ে পালায় বলো?
চন্দ্রিমা- আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করেছো তো?
আকাশ- কি বলো তুমি? তুমি আবার কি ভুল করলে যে তোমাকে আমি ক্ষমা করব। এখন তো শুধু দোয়া করব তুমি যেন সুখে থাক! অনেক সুখে...!
চন্দ্রিমা- সত্যি আকাশ আমি যে আজ থেকে বাঁধা পড়ে গেছি যখন সুযোগ ছিলো ভালোবাসতে পারিনি।
আকাশ- তোমাকে ভালোবাসতে হবে না মধুচন্দ্রিমা আমি তোমাকে আজীবন ভালোবেসে যাব্।
চন্দ্রিমা- এইভাবে বলো না আমি তাহলে যেতে পারব না স্বামীর ঘরে। কাল তো আমার অনুষ্ঠান......!
আকাশ- হ্যা যাও তাহলে এখানে আর থেক না মানুষে খারাপ ভাববে।
চন্দ্রিমা- আচ্ছা ভালো থেকো তুমি! বলে চন্দ্রিমা চলে গেল।
আকাশ মনে মনে বলছে ভালো থাকতে তো সবাই বলে কিন্তু কেউ পাসে থেকে ভালো রাখে না। কাল তার বিয়ে দাওয়াত তো আমাকে দিল না দেখতে যাব কি তারে? ভাববে কি মানুষ? যে যায় ভাবার ভাবুক তবু আমি তারে বধুর সাজে একবার দেকতে যাব।
বাঁকি অংশ পড়তে সঙ্গে থাকুন........
©somewhere in net ltd.