![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
.
আজ শুক্রবার কলেজ ছুটি, আমার দোকানও ছুটি। এই ছুটির দিনটা হোষ্টেলে থাকা বিরক্তকর! হোষ্টেলে যারা থাকে তারাই ভালো বুঝবে। একান্তই আমাদের এই তানোরের কলেজ হোষ্টেল নিয়ে লিখলে শেষ করা যাবে না। সে গল্পগুলো অন্য একদিন বলব!
রোজ শুক্রবার আমি ঘুরতে যায় শিব নদীর সেই ব্রীজে। তানোরের মধ্যে সবচেয়ে মনো-মুগদ্ধকর যায়গা এই একটি আমার কাছে মনে হয়। যা আমাদের এম,পি মহাদয় জনাব, আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর বিশেষ অবদান। হোষ্টেল থেকে বেরুলে ৫ মিনিট লাগে ব্রীজের কাঁচা রাস্তায় উঠতে। ব্রীজ পেরুলেই তানোর থানা শেষ, মোহনপুর থানার শুরু। তাদের রাস্তার দু’ধার দিয়ে সারি-সারি গাছ লাগানো আছে। রাস্তার মাথায় দু’টি দোকান আছে। এই দোকান দু’টির মুড়ি মাখানো খাওয়ার জন্য অনেকে আসে রোজ-রোজ প্রায় বিষ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে। আরো একটা জিনিসের জন্য আসে বিশেষ করে আমাদের মত তরুনরা। সিগারেট টানার জন্য এমন উপযুক্ত যায়গা আর হয়না। আরো একটা কারনে আসে.. সেটা লুকায়িতই থাক। এই রাস্তাতে আসতে তানোর মেইন রোড থেকে প্রায় ২০-৩০ মিনিট লাগে ।
আমি অন্যদের মত রোজ আসি না অনেক ব্যাস্ততা আমার তাই শুধু রোজ শুক্রবার আসি।
কাল রাতে বৃষ্টি হওয়াতে আজ সকালে আকাশ অনেক মেঘলা ছিল।
তবুও সকাল সকাল আজ বের হলাম একাই। আমার আবার একা একা থাকতে ভালো লাগে এমন কি ঘুরতেও।
কলেজের রাস্তা পার হয়ে বাজার থেকে রাস্তায় নামতেই আজ অনেক কাঁদা রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে বল্লাম আগেই।
সিন্ডেল খুলে হাতে নিতে চেয়ে নিলাম না। সামনে এগোচ্ছি যতই, ততোই কাঁদা বাড়ছে।
আর ওহ.! একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি আজ আবার তানোরের হাট। রোজ শুক্রবার আর মঙ্গলবার তানোর গোল্লাপাড়া বাজারে বড় ধরনের একটা হাট বসে।
তো আমি ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করলাম ব্রীজের দিকে। ঝিরি-ঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আর একটু যেতেই একটা স্লিপ খেয়ে পড়লাম কাঁদার মধ্যে তখন সেন্ডেলটা খুল্লাম। এইটা আমার আগে খোলা উচিৎ ছিল। এমন ভুল অনেক মানুষেরই হয়। প্রেমের ক্ষেত্রেও হয়।
সেন্ডেল খুলে হাঁটা শুরু করছি। কাঁদার মধ্যে ঠিকমত হাঁটা যায় না। পা এক যায়গায় রাখলে আরেক যায়গাই চলে যায়। এইগুলো এঁটেল মাটি একটু পfনি হলেই গলে যায়। আবার একটু রোদ হলেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। কিছুটা ইট দিয়ে রাস্তা বাঁধা হয়েছে ব্রীজের দুই পারে। এতো কাঁদার মধ্যেও মোহনপুর থানার লোকেরা আসছে কাঁধে করে সবজির ভার নিয়ে। আমি এমনিতেই স্লিপ খাচ্ছি আর তারা নির্দিধায় চলে আসছে। আমিও একবার এই রকম বৃষ্টির দিনে বাবার সাথে বিছন (ধানের চারা) কাধে করে নিয়ে গিয়েছি তখন কোথাও পড়িনি। মানুষের কাধে ভারি জিনিসি থাকলে পড়ে না সে কাদায়।
কিছুক্ষনের মধ্যে দোকানে চলে আসলাম। দোকানে আসতে বৃষ্টি একটু জোরেই শুরু হলো। দেখি এক চাচা আসছে ঐ দিক থেকে বাঁশের তৈরি কিছু জিনিস নিয়ে। দোকানে চাচা পা রাখতেই বল্ল, সুখ নাই রে বা.. কুনঠেও সুখ নাই!
বলেই দোকানে বসে থাকা আরেক জনের সাথে কথা বলতে লাগল। বুঝলাম চাচা খুব মিশুক লোক এই রকম মানুষ সবাই হতে পারে না। তাই তো মনে হয় চাচার কষ্টটা একটু বেশি কথার ইঙ্গিতে সেটা বুঝলাম। দুই চাচা মিলে অনেক গল্প করতে শুরু করে দিল। পরে যে চাচা আসল সে বল্ল, হামার একটা ব্যাটা আছে মাদ্রাসা লাইনে পড়ে। হামি এই হাটের দিন করে যে, এই ভারের বোঝা আতাপুর থেকে (প্রায় ১০কি:মি: রাস্তা) কাধে করে নিয়ে আসি। কোন সময় পানির মধ্যেও নামতে হয়। পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করবে বইল্যা জমিতেও যাইতে বলি না ব্যাটাডারে। তাও এইবার পাশ করেনি। আরো কি কি যেন বল্ল, আমার আবার অনেক কিছুই মনে থাকে না।
এই রকম কথা আমাদের গ্রামের অনেক বাবায় বলে। তবে কোন ছেলে এই রকম কথা শুনে পরিবর্তন হয়ছে বলে আমার জানা নাই। আমার বাবাও বলে না কি সেটাই কে জানে। তাই চাচাকে কিছু বলতে গিয়েও বল্লাম না। মানুষ বড়ই বৈচিত্রময়! আমি এই বৃষ্টির মধ্যেও আসছি ২০মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে মূখরুচি করার জন্য। আর কেউ কেউ আসছে দু’মুঠো খাবার খেয়ে বাঁচার জন্য।
©somewhere in net ltd.