![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
★-★
আগে শীতকালে রোজা হতো, প্রচন্ড শীত, কনকনে ঠান্ডা ভোর রাতে চারিদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। তখন বাবু খুব ছোট। তাকে রোজ সেহেরী খাওয়ার সময় ডাকতেই হবে, তা না হলে সকালে তার কত অভিযোগ, কত অভিমান মায়ের সাথে। যদিও সে কোনদিন রোজা রাখতে পারতো না। তার মা দুপুরে খেয়ে নিতে বলত কত। সে শুনতো না মায়ের কথা, কিন্তু আছরের পরে সে আর ক্ষুধা সহ্য করতে পারতো না খেয়ে ফেলতো তখন।
রোজ সন্ধ্যা লাগার পূর্বে যখন তার মা ইফতারির জন্য খাবার রান্না করতো তখন বাবুকে তরকারি টেষ্ট করতে দিত। তার টেস্ট করাও একদম ঠিক হতো।
তাদের গ্রাম একদমই একটি অজপাড়া গ্রাম। এখানে ইফতারির জন্য শহরের মত স্পেশালি কিছু রান্না করা হয়না।
গ্রামের ভিতরে একটি মসজিদ আছে সেখানে রোজ মসুর ডাল, লাউ, পুঁইশাক ইত্যাদি যেদিন যা পাই তা দিয়ে ইফতার হয়। বড়জোর একটি করে নরমাল মানের খেজুর দেওয়া হয় প্রতি প্লেটে। এটাই এই গ্রামের স্পেশাল খাবার বটে। গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েরা সে ইফতারি নিতে যায়। তার জন্য অনেকেই অনেক কথাও শোনায়। তারপরও অনেকে যায়, অনেকে যায় না। সেখানে যেতে বাবুর নিষেধ। কারন তার বাবা-মা কারো কটুকথা শোনার মানুষ না। শুধু তার বাবা-মা এইরকম তা না, আরো কয়েকজনের বাবা-মা এইরকম। তাই বাবুরা কয়েকজন মিলে তার চাচার একটি পরিত্যক্ত ভাঙ্গা বাড়িতে ইফতারের আগে জড়ো হয়। যার বাড়িতে যে যা পাই তা নিয়ে আসে এসে সেখানে তারা ইফতার করে।
ধীরে ধীরে শীতকালের রোজা বিলিন হতে থাকে কিছুটা গরমকালে চলে আসে।
একবার বাবু একটি রোজা করে ফেলে। সেদিন রোজার ১২ তারিখ শিখা তাকে বলে কাল আমাদের ইফতারি দিবে মসজিদে তুই যাবি নিতে রোজা না থাকলেও যাবি। প্রতিবারই তাদের ইফতারি দেয় মসজিদে কিন্তু কোনবার বাবুকে বলে না। এবার একটু বড় হয়েছে বলে তাকে বলেছে। সে বলে রোজা না রেখে গেলে মানুষরা কি না কি বলবে তারচেয়ে কাল আমি রোজা রাখবো যতো কষ্টই হোক না কেন। তখন শিখা বল্লো তাহলে কাল আমিও রোজা রাখবো। তারা যে, ছোটবেলা থেকে ইফতার করে তাদের মধ্যে একজনই শুধু মেয়ে সে হলো, শিখা। শিখা বাবুকে সবকিছু বলে না বল্লে শান্তি পাইনা। সে পাড়ার আর কোন ছেলেদের সাথেও তেমন মিশে না।
পরদিন দু'জনেই রোজা রাখছে, যোহরের পরে শিখা আর ক্ষুধা সহ্য করতে পারছিলো না তাই সে খেয়ে ফেলছে বয়সই বা কত হবে তার বাবুর চেয়ে ১ বছরের বড় শুধু। সে একটু বড় পরিবারের মেয়ে কখনো না খেয়ে থাকার অভ্যাস তার নেয়। অন্যদিকে বাবু আছরের সময় হওয়ার আগে তার শরীর দূর্বল হয়ে আসছে তখন সে শুয়ে পড়েছে নামাজ পড়তেও আর যায়নি। এর মধ্যে একবার শিখা আসছিল তার বাড়িতে। বাবুর মা তখন বলেছে, সে শুয়ে আছে। কতবার তাকে রোজা ভেঙ্গে দিতে বল্লাম, সে আজ কিছুতেই রোজা ভাংলো না। এ কথা শুনে শিখা বাড়ি চলে গেল।
এইদিকে সন্ধ্যা হওয়ার আগে বাবু মসজিদে গেল। প্রতিটা মসজিদে দু'একজন করে লোক থাকে ছোট ছোট বাচ্চাদের হেয় পন্ন করার জন্য। কেউ হঠাৎ কোনদিন রোজা থাকলেও, আর না থাকলে তো কথায় নাই তাকে বেশি পরিমানে ঠাট্টা বিদ্রুপ করবে। সেখানে ছিল করিম চাচা সে বাবুকে দেখে বল্লো, কি রে তুই রোজা আছিস সত্যি? কোনদিন তো আসিস না, তোর বাপও তো আসেনা। আরো অনেক কথা বলায় বাবু রেগে যায়। তাই তখন তার মুখে যা আসে তাই বলে গালি দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মসজিদের সকলে এসে তাকে থামায়।
পরদিন গোটা পাড়া হয়ে গেছে বাবু একদিন মসজিদে গিয়ে গালাগালি করেছে। যায় তাই তাকে বলছে কি রে বাবু তুই কাল না কি মসজিদে গিয়ে গন্ডগোল করছিস। কাল রোজা ছিলিস কি না কে জানে কিন্তু তুই তো একদিন ইফতার করতে গিয়ে পাড়ার সবার মুখে মুখে হয়ে গেছিস।
এইসব কথা শুনে তার মন ভিশন খারাপ। শিখার সাথে এখনো দেখা হয়নি তার। ওদের বাড়িতেও সে যায়না, ওর মা কেমন জানি ব্যাবহার করে বাবু ওদের বাড়িতে গেলে। তাই একাই বসে আছে, আজ ভোরে সেহেরি ও খাইনি।
বিকালে শিখার সাথে দেখা হয় আমবাগানে। শিখা এসে বলতে শুরু করে, কি রে তুই না কি কাল মসজিদে গিয়ে গালাগালি করেছিস, গন্ডগোল করেছিস তাই আমার মা তো তোর সাথে খেলতে নিষেধ করেছে। এমনিতে তার মন অনেক খারপ, শিখাও আবার এমন কথা বলাতে সে আবার রেগে গিয়ে শিখাকে যা ইচ্ছে তা বলে দেয়। শিখারই বা দোষ কোথায় তাকে তার মা যা বলেছে সে তা-ই বিশ্বাস করেছে। ছোট ছেলে-মেয়েদের মনে যেটা গেঁথে দেওয়া যায় সেটা তারা বিশ্বাস করে। শিখা বাবুর কড়া কথা শুনে মন খারাপ করে চলে যায়। বাবু বসেই থাকে আর মনে মনে ভাবে আমি তোকে যেটা বলতে চাইছিলাম সেটা বলাই হলো না। তার আগে কি বলে ফেল্লাম। বলতাম আমি জীবনের প্রথম রোজা করেছি। তুইও তো করলি আমরা এখন বড় হয়ে গেছি।
সেদিন এর পর থেকে শিখা আর কথা বলতো না। তার মা হয়ত তাকে কড়া ভাবে নিষেধ করেছিল। তাই বাবুও আর পরে কথা বলতো না। কখনো কখনো কোন কিছু হঠাৎই বদলে যায় সামান্য কারনে। রমজান মাস এলে সে-সব কথাগুলো ভেসে বেড়ায় বাবুর মনে।
--
©somewhere in net ltd.