![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২য় পর্ব
★-★
পরের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। ফজরের নামাজ পড়ে একজন হিন্দু মেয়ের জন্যই দোয়া করলাম মোনাজাতে। মসজিদ থেকে যখন বের হলাম, তখন দেখি কেবল পূর্ব গগনে সূর্য্য রক্তিম বর্ণ হয়ে উদিত হচ্ছে।
একটু বেলা হলে কলেজের দিকে চলে যায়। হোস্টেল আর কলেজ যদিও একি যায়গায়। কলেজের সামনে একটি পুকুর আছে পুকুরের পশ্চিম-দক্ষিণ সাইডে ঢালাই করে বেশ কয়েকটি বসার জন্য বেঞ্চি করা রয়েছে। শেষ বেঞ্চি টার শেষ মাথায় রোজ বিথী বসে থাকতো। তার পাশের বেঞ্চিটাতে গিয়ে আমি বসলাম। সময় যেন যেতেই চায়না। বিথী রোজ ৯টার পর পরই কলেজে চলে আসে কখনো লেট করেনা। যেদিন আসবেনা সেদিন আসবেনা, কিন্তু যেদিন আসবে সেদিন কখনো তার লেট হয়না।
হঠাৎ আমার পেটে চাপ দিল। হাতে ঘড়ি আছে কিন্তু দেখার খেয়াল ছিল না। পেটে চাপ দেওয়ায় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৮ টা বেজে ৪৭ মিনিট। তাই হোস্টেলের টয়লেটের দিকে আসলাম। টয়লেট থেকে বের হতেই রান্না করা আনটি ডাক দিল। কাছে যেতেই আনটি বললো, আমাকে একটা হুইল পাউডার আর একটু পিঁয়াজ এনে দেও তো। খাবার বাটিগুলো সব পড়ে আছে একটুও পাউডার নেই বেশিক্ষন থাকলে তো দূর্গন্ধ ছড়াবে। কাউকে কোন রুমে দেখতেও পাচ্ছি না যে আনতে দেব। আমি আবার কেউ কিছু বললে সরাসরি নাও করতে পারি না। তাই আনটিকে বল্লাম, টেনশন করতে হবে না বেশি আপনাকে আমি নিয়ে আসছি এক্ষুনি। এই আনটি সব কিছু ঠিকঠাক বাজরের আগে বলতে পারেনা। পরে যাকে পাবে এমন করে বলবে তাকে ঐ কাজ করিয়ে ছাড়বে। একটা না একটা কিছু ভুলে যাওয়া তার প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গেছে।
বাজার থেকে হুইল পাউডার আর পিঁয়াজ এনে দিয়ে আবার বেঞ্চিটার দিকে যেতে লাগলাম। কিছু সামনে যেতেই দেখি, জবা গাছ আছে তার ভিতরের বেঞ্চিটাতে নীল জামা পরা একটি মেয়ে বসে আছে সাথে একটি ছেলেও বসে আছে। হেঁসে হেঁসে তারা কথা বলছে দূর থেকেও শুনতে পাচ্ছি আমি। তাদের কথা বলার ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরুণী তারা। কাছে গিয়ে তো আমি চমকে গেলাম এ যে, বিথী। নীল রং আমার এমনিতে পছন্দের না, বড়ই বিদঘুটে লাগে। নীল রং অপছন্দ করে এমন ছেলে-মেয়ে খুজে পাওয়া যাবে না শুধু মাত্র আমি ছাড়া। আর তাছাড়া এই নীল জামা, নীল ওড়নার গোলাপি টান পোশাকে বিথীকেও তেমন সুন্দর দেখাচ্ছে না। যদিও বিথী এমনিতেই অনেক সুন্দরী মেয়ে। তারচেয়ে পাশের ছেলেটাকে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে একেবারে রাজপুত্র।
বিথী যদি আজ হলুদ কিংবা কালো রংয়ের ড্রেস পরে আসতো তাহলে ওকে এমন সুন্দর দেখাতো যার কোন উপমা দেওয়ার মত ভাষা আমার কাছে থাকতো না। যদিও আমার পছন্দের রং লাল। মানুষের সৌন্দর্যের রং বদলায়, চরিত্রের রং তো অহরহ বদলায়। কিন্তু পৃথিবীর সকল মানুষের রক্তের রং লাল। আমি মনে করি সকলের এটা প্রিয় রং হওয়া উচিৎ। লাল রং নিয়ে অন্য কোন গল্পে কথা হবে।
আমি তার কথা ভাবতে ভাবতে আরো সামনে চলে গেলাম। চোখে চোখ পড়লো দু-জনের এই প্রথম। যা বলতে এসেছিলাম তা আর বল্লাম না। শুধু বললাম আপনাদের দু-জনকে বেশ মানিয়েছে একদম রাজপুত্র আর রাজকন্যা। তারা দু'জনেই আমার দিকে একবার তাকালো। আমি একবুক হতাশা নিয়ে ফিরে আসলাম।
আহা..! এই তো সেদিনের একটি শান্ত-শিষ্ট মেয়ে আজ কেমন অশান্ত হয়ে গেছে। যার কথার শব্দ বের হতো না তার হাঁসির শব্দ আজ পুরো সরকার কলেজের বোবা গাছ-গাছালিরাও পড়ে ফেলতে পারে। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে। মেয়েদের মন কখন কার পরশে যে, বদলে যায় তারা নিজেও জানে না।
সেদিনের পর থেকে আমি আর কলেজে তেমন যেতাম না। কিছুদিনের মধ্যে একটা দোকানে কাজও নিলাম। হোস্টেলে থাকি দোকানে যায়, ইচ্ছে হলে কোনদিন কলেজে যায়, না হলে যায় না। মাঝে মাঝে দেখি বিথী মোটরসাইকেলে করে কলেজে আসে। এই কয়দিনে লক্ষ করেছি ৩ জন ছেলের মোটরসাইকেলে সে আসে। শুনেছি একজন তার ভাই, একজন তো সেই রবিন আর একজন কে এখনো জানি না। মনে হয় ঐটা আরেকজনকে লাইনে রাখছে হয়তো, সে ছেলেটাও সুন্দর বটে। সুন্দরী মেয়ে বলে কথা তার তো ঐরকম একশত টা সিরিয়ালে রাখা উচিৎ।
দেখতে দেখতে কলেজে বিদায় অনুষ্ঠান হলো আমাদের। মার্চ মাসের ২৮ তারিখ। এখন আর কাউকে দেখা যায়না কলেজে। আমরা শুধু হোস্টেলের ছেলারাই কয়জন থাকি।
পরীক্ষা শুরু হলো এপ্রিলের ২ তারিখ থেকে। পরীক্ষার হলে গিয়েও বিথীকে নিয়ে সে কি কাহিনি। তার কাছে যে ছেলে বসেছে সে না কি প্রথম দিনই প্রোপোজ করে বসছে। পরীক্ষা শেষ হয়ে বের হওয়ার পরই রবিন কে বলে দিয়েছে সে কথা। বিথীর ভাই তো গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে, রবিন ভিতরে পরীক্ষা দিচ্ছিলো তাই তাকে আগে বলে দিয়েছে। যখন ঐ ছেলেটাকে বিথী চিনিয়ে দিয়েছে তখনই বাঁধলো গন্ডগোল। ঐ ছেলেটা তখন রবিনের চরিত্রের ১২ টা বাজিয়ে ছেড়ে দিল একই গ্রামের তারা দু'জন ছেলে, সে রবিনকে ভালোভাবে জানতো বটে। এইদিকে বিথী তো সব শুনে রেগে-মেগে আগুন।
পরেরদিন থেকে বিথী আর রবিনের সাথে কথাই বলে না। ধীরে ধীরে পরীক্ষা শেষ হয়ে এলো। আমার হোস্টেল ছেড়ে দিতে হলো। তখন একটা ম্যাস নিলাম কারন আমি দোকানে থেকে ভালোই একটা মাইনে পেতাম। এর মধ্যে বিথীর সাথে আমার মাঝে মধ্যে দেখা হতো, সে প্রায় বাজারে আসতো। কেন আসতো জানি না জানার চেষ্টাও করিনি।
জুলাই মাসে আমাদের রেজাল্ট বের হলো অর্ধেক স্টুডেন্ট ফেল করলো আমাদের কলেজের, তার মধ্যে আমিও। তবে জেনেছিলাম বিথী পাশ করেছে।
ফেল করায় দোকান, ম্যাস সব ছেড়ে দিয়ে আমি বাড়িতে চলে আসলাম। প্রায় ১বছর আর কলেজের দিকে যায়নি। পরের বার আইসিটি পরীক্ষাটা দিয়ে চলে গেলাম অন্য আরেকটা দোকানে। আবার এপ্রিলে রেজাল্ট বের হলো এবার পাশ করলাম। তারপর ভর্তি হলাম ঐ কলেজেই আবার অনার্সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে।
এখন আর ইন্টারের মত কলেজ যেতে হয়না। অনার্স লেভেলের ছাত্র-ছাত্রীরা তেমন কলেজে আসে না। তাই এখন কলেজ তেমন ভালোও লাগে না। বাবা-মায়ের মুখের দিকে চেয়ে যেতে হয়। তারা অন্তত যেন, পাড়ায় পাড়ায় বলতে পারে আমার ছেলে অনার্স করে।
কলেজ না যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কাল সিলেবাসটা নিতে যেতে হবে, শুনলাম সামনে না কি আমাদের ইনক্রস পরীক্ষা। আর আমি এখনো সিলেবাসি নেয়নি, বই তো দুরের কথা। সে যে একমাস আগে ভর্তি হয়ে এসেছি আর যাওয়া হয়নি।
আজ ৯ টার একটু পরে কলেজে আসলাম। গেইটে ঢুকে আমার নজর গেল সেই বেঞ্চিটাতে, দেখি কেউ একজন বসে আছে কালো রংয়ের একটা ড্রেস পরে। বুকটা একটু ধক্ করে উঠলো, এ তো আবার বিথী নয়? যে মেয়ে আগেই দুইটাকে সিরিয়ালে রেখেছে তার তো এখন আরো বেশি ছেলে লাইনে থাকার কথা। এটা বিথী হতে পারে না। মনে মনে ভাবছি আর সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম।
To be Continue...
লিখনিঃ- মোঃ হাফিজুল ইসলাম
©somewhere in net ltd.