![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বন্ধু আমার তিন বছর পর মিমকে নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরেছে। অনেকদিন পরে মনে একটা প্রশান্তি ফিরে পেলাম। সেই যে, তারা পালিয়ে গিয়েছিল, মিম এর বাবা মায়ের ভয়ে আর ফিরে আসিনি। আমি ছিলাম তাদের একমাত্র বার্তা মাধ্যম। গ্রামে মিম এর বাবা-মা কখন কি করছে না করছে সব জানিয়ে দিতাম। মিম ছিল আসাদ মন্ডলের বড় মেয়ে, `বড়ই লক্ষী মেয়ে'। মেয়ে এইভাবে চলে যাওয়াতে আসাদ মন্ডল খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলেন। বেশ কয়দিন তো রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মত ঘুরেছেন। যেমন, কোন যুবক প্রেমে ব্যার্থ হলে ভবের পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াই। ঠিক তেমন আসাদ মন্ডল ঘুরতেন। আমার সাথে দিনে দশবার দেখা হলে, দশবারই বলতেন,- আমার মেয়েটাকে তুমি দেখছো কি ভাতিজা? আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি ভাবতাম টের টের পেল না কি আসাদ মন্ডল যে, আমি তার মেয়েকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি। কিন্তু না, যখন দেখতাম গ্রামের সব লোককে তিনি এইরকম ভাবে বলতেন, তখন আর সন্দেহ থাকতো না। কিন্তু তিনি কখনো সুজনদের বাড়িতে যেতেন না। সুজনের বাবা হাসান মোল্লা বড়ই অহংকারী লোক দুইটা তার ছেলে সন্তান একটাও মেয়ে নাই। অন্যদিকে আসাদ মন্ডলের দুই মেয়ে। তার জমিজমা হাসান মোল্লার চেয়ে বেশি বৈকি কম না। তবুও তিনি বড়ই মিশুক লোক। তিনি খারাপদের সাথে মিশতেন না আর ভালোদের সাথে কখনো সামন্যটুকু খারাপ আচরণ করতেন না। তাই তিনি গ্রামের সকলের বাড়িতে গেছেন তবু হাসান মোল্লার বাড়িতে যাননি। আর তার মেয়ের খবর তারা জানবেই বা কি করে।
কিন্তু সুজনের বাবা-মা জানে যে, তাদের ছেলে মিমকে নিয়ে পালিয়েছে।
আসাদ মন্ডল বড়ই সাধাসিধে মানুষ হলেও তিনার স্ত্রী নুরজাহান বেগম খুবই রাগী মহিলা। এতো রাগী মহিলাকে নিয়ে যে কেউ সংসার করতে পারে না। আসাদ মন্ডলের মত মানুষ বলে সব সহ্য করে অন্য কেউ হলে এতোদিন নুরজহান বেগমের ভাত চাউল হয়ে যেত এই বাড়িতে। কিন্তু খোদা তো এইভাবে লিখে রাখেন সবার জীবন খাতা, সুন্দরদের সাথে অসুন্দরদের জীবন বেঁধে দেন, সাধাসিধেদের সাথে রাগীদের। আবার তিনি তো এও বলে দিয়েছেন, তোমাদের সঙ্গীদের আচার-আচরণ, রূপ-লাবণ্যে যেরকমই হোক নিজে যদি চরিত্রবান হও তাহলে চরিত্রবান সঙ্গী পাবে।
নুরজাহান বেগম বদরাগী হলেও একজন চরিত্রবান নারী আসাদ মন্ডল যেমন একজন চরিত্রবান পুরুষ ।
যাই হোক, এইদিকে নুরজাহান বেগম জেনে গেছে এক সপ্তাহ পরে যে, তার মেয়ে কার সাথে পালিয়েছে। তাই স্বামীকে না বলেই আগে চলে গেছে, হাসান মোল্লার বাড়িতে। হাসান মোল্লা বাড়িতে ছিল না, তার স্ত্রী ছিল। তাকে যখন জিজ্ঞেস করেন, নুরজাহান বেগম, তখন তিনি বলেন,- আমরাও জানি না, আমরাও তো আমাদের ছেলেকে খুঁজতেছি। শুনলাম ডাঙ্গাপাড়ার ছবির কাকার ছেলে মাহিম না কি ঘটনা জানে। হাসান মোল্লার বউ সহজ সোজা হলেও বড়ই প্যাঁচ লাগানো মহিলা।
তখন নুরজাহান বেগম সুজনের মাকে কঠিন ভাবে শাসাল, খুব শিঘ্রই যদি তাদের মেয়েকে না পায় থানায় তাদের ছেলের নামে মামলা করবে।
পরেরদিন সকাল বেলায় দেখি মিম এর মা আমাদের বাড়িতে হাজির। বাবা ফজরে পরে আজ মাঠে চলে গেছে তাই কিছুটা সস্তি পেলাম। কাছে এসে মিম এর মা আমাকে করুন সুরে বললো,- বাবা মাহিম আমার মেয়েটাকে এক সপ্তাহ ধরে খুজে পাচ্ছি না। তুমি কি কিছু জানো? আমি মনে মনে ভাবছি, এই মহিলা এতো নরম হলো কীভাবে? যিনি কড়া গলায় ছাড়া কথা বলতে পারেন না। আর আজ তো তার মেয়ে হারিয়ে গেছে। কোন একটা গন্ডগোল আছে, আর আমার কাছে বা কেন আসছে কেউ কি বলে দিয়েছে?
-এই ছেলে বলো আমার মেয়ের খোজ জানো কি না? কথা বলছো না কেন তুমি? কি লুকাতে চাইতেছো? লুকিয়ে কোন লাভ নেই। যদি চালাকি করো না তাহলে থানায় যাব। আমাদের বলেছে সুজনের মা, তুমি জানো সব।
- কি..? সুজনের মা বলেছে। দুনিয়াটা বড়ই স্বার্থপর শালা কেউ কারো নয়। আমি রেগে গিয়ে বলে দিলাম ঢাকায় গেছে। কিন্তু কোথায় আছে জানি না।
মিম এর মা কিছুটা সস্তি পেলেও আমাকে সন্দেহের চোখেই রাখলো।
বন্ধুত্বের প্রতিদান এমনো হয়। উপকার করলাম আমি তার ছেলের, আর সে আমার কথা বলেছে, এই কথা যদি আমার বাবা জানে তাহলে কি হবে? আমাকে তো বাড়ি থেকে বের করে দেবে। তার ছেলে তো সঙ্গী নিয়ে গেছে, আর আমাকে তো নিঃসঙ্গ বেরিয়ে যেতে হবে। সে খেয়াল আছে সুজনের মায়ের?
এইদিকে এক মাস হতে গেল তাদের কোন খবর নাই। আমার সাথেও আর সুজন কথা বলে না, হয়ত তার বাড়ি থেকে নিষেধ করে দিয়েছে।
এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন আমার বাড়িতে পুলিশ আসা দেখে আমি বাড়ি থেকে সটকে পড়লাম। একবার তাদের হাতে ধরা খেলে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকবে। আর উত্তর দিতে না পারলে একটা ধারা শুনিয়ে দেবে।
এক ঘন্টা পর বাড়ি এসে শুনলাম, মা বললো,- থানায় না কি মিম এর মা মামলা করেছে সুজনের পরিবারের নামে। ১নং আসামী; সুজন, ২। হাসান মোল্লা, ৩। সকিনা বিবি (সুজনের মা)। তারা খবর নিয়ে জানতে পেরেছে বিয়েতে তুই বলে মিম এর পক্ষের সাক্ষী ছিলি তাই তারা তোকে ১নং সাক্ষী করেছে, ২নং সাক্ষী করেছে শিখাকে সেও নাকি তোদের সাথে ছিল। আমি তো মনে মনে কিছুটা খুশি হলাম। তারা এখনো জানতে পারেনি যে, তাদের মেয়েকে আমি ঘর থেকে নিয়ে এসেছিলাম, জানলে পারে নেহাতই আমাকে দুই নম্বর আসামী করে দিত।
আমার ভাবনাটা ভেঙ্গে দিয়ে মা বল্লেন, পুলিশরা শেষ কথা বলে গেছেন, মিম এর না কি কিছু হলে তোকেও আসামী করবে। বাবা... যুগ-জামানা এমনিতে ভালো না। যা করবি ভেবে চিন্তে করিস, এখন তো বড় হয়ে গেছিস। তোর বাপ জানলে কি হবে? ভেবে দেখ?
মার মুখে এমন কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। আমার মা একজন নিতান্তই সোজা বুঝের মানুষ। আর তিনি আজ ছেলের জন্য মনে কঠিন ভয় পেয়েছে৷ যদিও আমরা দুই ভাই, কিন্তু আমি বড় ছেলে।
-আমি যে, ভুল করে ফেলেছি এটা এখন আর শুধরানো যাবে না। তারা কোথায় আছে সেটাও জানি না। তারা ফিরে আসলেই তবে সমাধানে যাওয়া যাবে।
মা যে শিখার কথা বললো, যাই শিখার সাথে একবার দেখা করে আসি। তাদের বাড়ির রাস্তায় যেতেই দেখলাম, সে রাস্তার উপর হাঁসকে খাওয়াচ্ছে। তাদের চারটি বালিহাঁস (রাজহাঁস) আছে। আমাকে দেখেই হাঁসতে লাগলো। বড়ই পাগলি টাইপের মেয়ে। স্কুলের সবাই এমনকি পাড়ার সবাই তাকে পাগলি বলে ডাকে। কিন্ত সে পড়ালেখায় যথেষ্ট ভালো যেমনি ভালো সকল কাজ কর্মে। গ্রামের মেয়ে বলে কথা যাকে বলে, “মাটির মেয়ে”।
দেখলাম আশেপাশে কেউ নাই সে একাই আছে। তাই বললাম,- কি রে পাগলী তোর নামে যে থানায় কেস হয়েছে, জানিস কিছু? সে বললো, হ্যা আমার বাড়িতে জেনে গেছে, মা কাল আমাকে অনেক বকেছে। তোর জন্যই গিয়েছিলাম, আজ দেখ তুইও ফেসে গেছিস আমিও। তারা দু'জন তো ভেগে গিয়ে বেঁচে গেছে, হয়তো অনেক সুখেও আছে। কেন যে গেলাম আমরা মরতে।
মেয়েটাকে দেখলে কখনো বুঝাই যায়না যে, সে কি রকম প্রকৃতির মেয়ে। সব সময় শুধু পাগলির মত হাঁসবে।
আমি বললাম, কাল আমি থানায় যাব। থানাও তো সে ১২কিলোমিটার দূরে আমার কাছে তেমন টাকাও নাই। আমার বাবা এখনো জানে না, জানলে তো বাড়ি ছাড়া করবে। টাকা নাই সেটা জানানোর জন্যই বললাম কথাটা।
-আচ্ছা আমি তোকে টাকা দিচ্ছি দাঁড়া, তুই গিয়ে ভালো মত জেনে আসবি সবকিছু। এসে আমাকে জানাবি।
শিখা তার বাবার একটি মাত্র মেয়ে তাই তার বাবা তাকে খুব আদর করে, কোন কিছু অপূর্ণ রাখে না তার। এবার যে, প্রথম আমাকে টাকা দিচ্ছে তা না, এর আগেও অনেকবার দিয়েছে। কখনো সে তা ফেরত চাইতো না, কারন তার বাবা তাকে রোজ টাকা দেয় সে বেশি খরচ করে না। সে কথাও সে আমাকে বলেছে। আরো বলেছে, আমি টাকা জমিয়ে রাখি, আমার যখন বিয়ে হবে তখন আমার জামাইকে তা দেব, তাকে চমকে দেব প্রথম দিনে আমাদের বিয়ের রাতে।
আমি তখন বলতাম, তোর তো অনেক ধনী ঘরে বিয়ে হবে। তুই দেখতে অনেক সুন্দরী, হাঁসি অনেক সুন্দর তোর জামাই কি তোর এই সামন্য টাকা নেবে পাগলি। তোর শুধু পাগল পাগল কথা, তোর সাথে থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো। তুই এমন কথাগুলো আর আমাকে বলবি না বুঝলি। সে তখন বলতো, তুই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, তোকে সব কথা বললে আমি শান্তি পাই। তুই যখন শুনবি না আর বলবো না কখনো, মন ভারি করে চলে যেত তখন।
হঠাৎ সে টাকা নিয়ে চলে আসে, এই নে টাকা, শুনে আসবি ঠিকমত।
আমি তার কাছে থেকে চলে আসি। আর ভাবি, এ কতো সহজ সরল মেয়ে। সুজন যদি মিমকে নিয়ে না পালিয়ে শিখাকে নিয়ে পালাতো, তাহলে বেশি ভালো হতো। এতো ঝামেলায় পড়তে হতো না। গরীব মানুষেরা কখনো বেশি ঝামেলায় জড়াই না।
পরের দিন সকালে মোড়ে গিয়ে অটো গাড়িতে উঠলাম থানায় যাবার জন্য। থানায় আমার এই প্রথম যাওয়া নয়। এর আগেও একবার আমাদের জমির জন্য এসেছিলাম। তখন আমাদের কেস নিয়েছিলেন হামিদ দারগা, স্যার বড়ই ভালো মানুষ ছিলেন। হয়ত তিনি এখন বদলি হয়ে গেছেন।
ভাবতে ভাবতে থানায় চলে আসলাম। ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম, সেদিন আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল যে পুলিশগুলো তাদের একজন। আমি তিনার কাছে গিয়ে সবকথা খুলে বললাম। তিনি বললেন,- এখন মামলা না কি কোর্টে চলে গেছে, পুলিশ এ মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (২০০০ সালের ৮নং আইন) মতে, চার্জশিট দাখিল করেছেন।
নারী ও শিশু অপহরণ বলতে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩৬২ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে কোন স্থান হতে গমন করার জন্য জোরপূর্বক বাধ্য করে বা কোনো প্রতারণামূলক উপায়ে প্রলুব্ধ করে সে ব্যক্তি উক্ত ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে বলে গণ্য হবে।
যদি কোন ব্যাক্তি নারী বা শিশুকে অপহরণ করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা অন্যূন ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবে।
আমি সবকিছু শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবছি আর আল্লাহ আল্লাহ করছি, মিম যদি তার মায়ের চাপে বা কোন কারনে বলে দেয় যে, তাকে সুজন জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। তাহলে কি হবে? আমি ক্ষীণ কন্ঠে বললাম,- সাক্ষী যদি মিথ্যা প্রমান হয় তাহলে কি কিছু হবে? তিনি বল্লেন, ভিকটিমের বয়ান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর তাছাড়া মিথ্যে সাক্ষীর জন্য নূন্যতম ৫ বছরের সাজা হবে। এই কথা শুনার পর আমার দুনিয়াটা ঘুরতেছিল। আর কিছু না শুনেই বেরিয়ে আসলাম। একেবারে বাড়ি চলে আসলাম।
বিকেল বেলা আবার শিখার সাথে দেখা করলাম। সে আমার কথা, ঠিক আমার কথা না থানাতে কি বলেছে সে কথা শুনার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। সামনে আসতেই সোজা জিগ্যেস করলো, কি শুনে আসলি বল? আমি তাকে বল্লাম, তেমন কিছু না। তাদের পেলে কোর্টে হাজির করবে। সেখানে যদি মিম নিজ মুখে স্বীকার করে সে নিজের ইচ্ছায় গিয়েছে তাহলে কোন সমস্যা নাই কারো।
কথা শেষ না হতে সে বললো, আল্লাহ বড় বাঁচা বাঁচলাম। সে কতো বোকা মেয়ে সহজেই আমার কথা বিশ্বাস করে নিলো। তার এ বিষয়ে কোন ধারনায় নায় যে, তাদের যদি কিছু হয় আমরা তাহলে অন্ধকার জেলের ভিতরে চলে যাব।
দেখতে দেখতে দিন যায়, মাস যায়, বছরো চলে যাচ্ছে তাদের খোঁজ পওয়া মুশকিল হয়ে যায়।
অবশেষে আজ তিন বছর পর যখন তারা ফিরে আসলো তখন সবচেয়ে মনে হয় বেশি খুশি হলাম আমি। এখন থেকে একটা ঝামেলা মুক্ত হতে পারবো। আর অন্যদিকে শিখার মত একটা নিষ্পাপ মেয়েও ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে। তার এই কেসের ঝামেলার কারনে একটা বিয়ে এসেছিলো, সেটাও হয়নি।
তারা আসাতে সারা গ্রাম জানাজানি হয়ে গেছে, মিম এর মাও জেনে গেল। তখন তাদের মামলা তো কোর্টে ছিল। তাই চলতি মাসের ১০ তারিখে সবাইকে হাজির হতে হলো কোর্টে। মিম যখন পালিয়ে গিয়েছিল তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর, এখন তার বয়স ২০ বছর। একজন সাবালিকা, নিজের ভালো মন্দ বুঝার যথেষ্ট জ্ঞান, বুদ্ধি হয়েছে।
আদালতের কাজ শুরু হলো ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ভিকটিম অর্থ্যাত মিমকে জিজ্ঞেস করায়, সে বল্লো, আমি স্ব-ইচ্ছায়, স্ব-জ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে তার সাথে গিয়েছিলাম। এবং আমরা শরিয়ত মোতাবেক ধর্মমতে বিবাহ করেছি। আমি এখন মা হতেও চলেছি। সব কথা ঠিক ছিলো, মা হওয়ার কথা শুনে সবাই একটু অবাক হলো।
সমস্তকিছু শুনে অবশেষে বিচারক মহোদয় এই মর্মে আদেশ দেন যে, আসামি উল্লেখিত ধারায় কোনো প্রকার অপরাধ সংঘটন করেনি। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বিধান মতে, অপহরণ মামলার কোনো উপাদান এখানে বিদ্যমান নেই। তাই আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলা চলতে পারে না এবং সে মতে আসামীকে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (গ) ধারা মতে অত্র মামলা দায় হতে অব্যহতি প্রদান করা হলো।
তারপর থেকে তারা সুখে সংসার করছে। মিম তার বাবার বাড়িতে যায়, শুধু সুজন যায়না। সুজন একজন ভালো ছাত্র ছিল, আরেকটু লিখা-পড়া করলে হয়তো চাকুরী পেতে পারতো। কিন্তু ঐ বয়সে বিয়ে করায় এখন সে মাঠে কাজ করে দিনমজুর হিসাবে, তবুও সুখে আছে সেটাই অনেক। মাঝখানে শুধু শিখা আর আমি ফেঁসে গিয়েছিলাম অপহরণ মামলার সাক্ষী হয়ে। শিখার বিয়ে হলোনা, আমি বাবার ভয়ে কোন কিছু ঠিকমত করতে পারলাম না। যাক, শিক্ষা তো হয়েছে, কাউকে পালানোর সাহায্য করার চেয়ে নিজে কাউকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক ভালো।
কিছুদিন পর মিম এর বাচ্চা হলো। তারপর থেকে দেখি সুজনও তার শশুর বাড়িতে যায়। ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাচ্ছে কেমন। সুজন আর আমি সমবয়সী, অথচ সে আজ বাবা হয়ে গেল। আর আমি হাবা হয়ে থেকে গেলাম। ভাবতেছি শিখাকে নিয়ে আমিও পালাবো না কি। কিন্তু পরে আবার ভাবলাম না, তার জামাইকে তাহলে তার জমানো টাকাগুলো দেওয়া হবে না। আর সে তো আমার বন্ধু, শুধুই বন্ধু বড় দুঃসময়েরও বন্ধু যা সবার কপালে জোটে না।
#লিখনিঃ মোঃ হাফিজুল ইসলাম
©somewhere in net ltd.