নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরান ঢাকার কুট্টির খপ্পরে মিথিলা - ৪র্থ পর্ব

০৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:২৭

আগের তিনটি পর্বের লিংক নিচে দিলাম
পুরান ঢাকার কুট্টির খপ্পরে মিথিলা - ১ম পর্বপুরান ঢাকার কুট্টির খপ্পরে মিথিলা - ২য় পর্বপুরান ঢাকার কুট্টির খপ্পরে মিথিলা - ৩য় পর্ব

ঠিক সকালে ঘুম ভেঙে গেলো মিথিলার । গতকাল রাতের স্বপ্নটা সত্যি অনেক ভয়ংকর ছিল । একবার সেই স্বপ্নের কথা চিন্তা করে মিথিলা কেমন জানি আবারও শিউরে উঠলো । আচ্ছা, ঐ ছেলেটার মত তো কত ছেলেই আজ পর্যন্ত মিথিলার পথ রোধ করেছে, ফোন নাম্বার চেয়েছে, ওকে দেখে শিস বাজিয়েছে, ওকে দেখে অসভ্য বাক্য চালান দিয়েছে আরও কত কি !! কই তখনও তো এরকম ভয়ংকর স্বপ্নগুলো আসেনি মিথিলার । কেমন জানি অদ্ভুত ব্যাপার ।

যাই হোক ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে খেয়াল করলো মিথিলা । ওরে বাব্বা, ১০ টা বেজে গেছে । কলেজে আশিস স্যারের কেমিস্ট্রি ক্লাসটা তো তাহলে মিসই হয়ে গেলো । পুরো কলেজে যতগুলো স্যার আছে, সবার মধ্যেই এই আশিস স্যারকেই মিথিলার ভালো লাগে । অনেক মজা করেন পড়ান স্যার । পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে দারুন দারুন গল্প করেন । মাঝে মাঝে তার গল্পগুলো চোখ বন্ধ করে শুনতে হয় । তখন মনে হয় গল্পের চরিত্রগুলো সত্যি সত্যি চোখের সামনে চলে আসে । তাছাড়াও স্যার কখনও বাবার মত, কখনও বড় ভাইয়ের মত আচরণ করেন । প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী একমাত্র এই একটা স্যারের কাছে তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে । স্যার হাসিমুখেই সবার সমস্যা শোনেন আর সাধ্যমত সাজেশন দেন । আর মিথিলা কিনা আজকে এই লোকটার ক্লাশই মিস দিলো !! যদিও আজকে মিস হলে সেটা প্রথমবারই হবে । যাই হোক, মিথিলা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো । মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে, গুছিয়ে বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো মিথিলা । বাসা থেকে বেরুতেই একটা রিকশা পেয়ে গেলো মিথিলা, ভাগ্য মনে হচ্ছে ভালো আজকে তার । অন্যদিন হলে একটা রিকশা মিলতেই বেশ বেগ পোহাতে হয় । রিকশা চলা শুরু হওয়া মাত্রই মিথিলা পারুলের ফোনে ফোন করলো । কিন্তু ওপাশ থেকে রিং হলেও কেউই ফোন উঠালো না । পারুল ফোন ধরছে না কেন !! সম্ভবত ক্লাশের মাঝে আছে তাই ।

মিথিলার বাসা থেকে ওর কলেজের দূরত্ব বেশি না । ৩-৪ কিলোমিটারের মত হবে । বাসার চার দেওয়ালের বাইরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে মিথিলার কেন জানি বেশ ভালো লাগছে । পুরান ঢাকার ঐ ছেলেটার কথা প্রায় মন থেকেই বেরিয়ে গেছে । রিকশা বেশ জোরেই চলছে । খোলা বাতাস মিথিলার চুলগুলোকে কেটে কেটে দিচ্ছে । মিথিলা চোখ বন্ধ করে মাথাটা সামান্য উঁচু করে বাতাস মুখে লাগানোর অভিপ্রায় করতেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো তার । মাথা নামিয়ে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই খেয়াল করলো বাবার ফোন । সিলেট থেকে ফোন দিয়েছে । জনাব আকিম হোসেন, লোকটা পুরো দুনিয়ার ব্যাপারে উদাসিন হলেও মেয়ের ব্যাপারে পুরাই সিরিয়াস । মেয়েটা যেন জান তার । বাবার ফোন পেয়ে মিথিলার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো । হাসিমুখেই সে ফোন রিসিভ করলো,

- হ্যালো বাবা...
- কি খবর মামনি ? ভালো আছো ?
- হ্যাঁ, খুব । তুমি কেমন আছো ?
- নাহ, ভালো নেই । একেবারেই ভালো নেই ।
- (বাবার কথা শুনে একটু চমকে গিয়ে) কেন বাবা ? তোমার শরীর খারাপ নাকি ?
- না তো, শরীর তো পুরাই ফিট ।
- তাহলে ? ভালো নেই কেন তুমি ?
- তুমি আর তোমার আম্মু কত দূরে । চাইলেও প্রতিদিন তোমাদের দেখতে পারি না, একটু গল্প করতে পারি না তোমাদের সাথে, তোমার চুলে বিলে কেটে কতদিন আদর করতে পারি না, তোমার আম্মুর হাতের রান্না কতদিন খাই না - আচ্ছা, বলো তো মামনি, তবু আমি ভালো থাকি কিভাবে ?
- ওহ, আচ্ছা । এইগুলো !! তাই বলো । তাহলে তুমি চলে আসো তো বাবা । একেবারে সোজা আমাদের কাছে ।
- কিন্তু মামনি......
- আবার কিন্তু কেন ?
- আমার যে নতুন একটা কন্ট্রাক্টের কাজ শুরু হয়েছে । ৪ মাসের কাজ । তার আগে যে চাইলেও আসতে পারবো না ।
- হয়েছে, হয়েছে, প্রতিবার ফোন করেই খালি ঢং করো !! আর আসতে বললেই শুরু করো নানা বাহানা । ঠিক আছে, তোমার আসতে হবে না । কোনদিন আসতে হবে না । তুমি সিলেটেই থাকো । আমাদের ভুলে যাও ।
- (মেয়ের কথা শুনে জনাব আকিম হোসেন হেসে দিলেন, কিছুক্ষণ হাসার পর আবার কথা শুরু করলেন) ও বাবা, আমার মামনিটা কি রাগ করলো নাকি ?
- ধুর, বাবা, তোমার সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না । আমি রাখছি ।
- এই শোনো, শোনো, তুমি কি বাইরে ? কোথায় যাচ্ছ নাকি ?
- হ্যাঁ, কলেজে ।
- ওহ, তা এত দেরী করে ?
- আজকে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছিল ।
- আচ্ছা, মামনি যাও । আমি দেখি রাতের দিকে ফোন দিবো নে আবার । তোমার আর তোমার আম্মুর সাথে একসাথে কথা বলবো নে । তখন পর্যন্ত আল্লাহ্‌ হাফেজ ।
- হুম, আল্লাহ্‌ হাফেজ ।

বাবার সাথে কথা শেষ হতেই একটু বিমর্ষ হয়ে গেলো মিথিলা । বাবা সেই কবে থেকেই আসি আসি করে আসছে না । বাবাকে ভীষণ ভালো লাগে মিথিলার । সবকিছুই বলা যায় বাবাকে । কখনও রাগ করেন না তিনি মিথিলার উপর, এমনকি আম্মু কখনও শাসন করলে তখনও তিনি মিথিলার সাপোর্টই নেন । বাবাকে হঠাৎ মিস করা শুরু করলো মিথিলা । ভাবতে ভাবতেই রিকশা কলেজ গেটের সামনে এসে পৌঁছালো । হ্যাঁ, কলেজে পৌঁছে গেছে মিথিলা ।


(বাকীটা পরবর্তী পর্বে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৪৪

কাব্য রসিক বলেছেন: বাহ!! খুবই ভাল লাগলো .....

পরবর্তী পর্বের অপক্ষোয় রইলাম B:-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.