![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য-মিথ্যা এবং ভালো-খারাপের দ্বন্দ্বের মাঝখানে নিরপেক্ষ কোনো অবস্থান নেই। যে বলে, ‘আমি নিরপেক্ষ’, সে শয়তান; সে মূলত মিথ্যা এবং খারাপের সহায়তাকারী।
প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা কোনদিকে যাচ্ছে দেশ...
অলিউল্লাহ নোমান যুক্তরাজ্য থেকে
« আগের সংবাদ
61
পরের সংবাদ»
রাস্তায় বের হলে পরিচিত যার সঙ্গেই দেখা হয় সালাম ও কুশল বিনিময়ের পর প্রথম প্রশ্ন—দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী? কোনদিকে যাচ্ছে দেশ? আর কত দিন এরকম চলবে? অনেকে টেলিফোনেও উদ্বিগ্ন কণ্ঠে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চায়। সবারই ধারণা আমি যেহেতু সাংবাদিক, দেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হয়তো রয়েছে। এজন্যই মূলত আমার সঙ্গে দেখা হলে বা টেলিফোনে এসব প্রশ্ন করা হয়। এক কথায় লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক দেশ নিয়ে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় রয়েছেন। দেহ লন্ডনে থাকলেও মনটা যেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। লন্ডনে যখন বিকাল ৬টা, বাংলাদেশে তখন রাত ১২টা। সবাই ৬টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো সার্চ করা শুরু করেন। কারণ পরের দিনের পত্রিকাগুলো তখন অনলাইনে চলে আসে। দিনের সর্বশেষ খবর পত্রিকার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেন সবাই। চোখ রাখেন বেসরকারি টেলিভিশনের দিকে। কী হচ্ছে দেশে, কী ঘটছে এই উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা থেকেই মূলত সংবাদের দিকে চোখ রাখা।
নির্ঘুম রাতে প্রায়ই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া নামক দেশটির চিত্র। বাংলাদেশের সমআয়তনের দেশ এটি। লোকসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। মাটি খুঁড়লেই স্বর্ণ মিলে। রয়েছে সারা দুনিয়ার এক দশকের লোহার চাহিদা মেটানোর মতো বড় বড় আয়রনহিল। তারপরও দুর্ভিক্ষ দেশটিতে। ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৫ দিন লাইবেরিয়া সফরের সুযোগ হয়েছিল আমার। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের কল্যাণে লাইবেরিয়া যাওয়ার এই সুযোগ পেয়েছিলাম। সম্পদে সমৃদ্ধ দেশেও কীভাবে দুর্ভিক্ষ দানা বাধে সেটা বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
টানা ১৩ বছর ধরে চলেছিল গৃহযুদ্ধ। ১৫ দিনের সফরে অনুসন্ধানী মন নিয়ে গৃহযুদ্ধের কারণ খোঁজার চেষ্টা করি। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। কৌতূহলী মনে জানতে চেয়েছি গৃহযুদ্ধের পেছনে আসল কারণ কী? খোঁজার চেষ্টা করেছি কেন তারা নিজেরা নিজেদের দেশকে ধ্বংস করল। সবার উত্তরের সার বক্তব্য ছিল জাতিগত বিভক্তি, শাসকদের লাগামহীন দুর্নীতি, শাসক গোষ্ঠীর ফ্যাসিবাদী মনোভাব এবং এক শ্রেণীর লোকের নিজেদের দেশের ভেতরে দুর্নীতির টাকা দিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা। এ সবকিছুই আমাদের দেশের হাল-হকিকতের সঙ্গে মিলে যায়।
লাইবেরিয়ায় যারা বাস করেন তাদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকান লাইবেরীয় এবং স্থায়ী বসবাসকারী লাইবেরীয়। দাসপ্রথা চলাকালে লাইবেরিয়া থেকে লোকদের ধরে নিয়ে আমেরিকায় বিক্রি করা হতো। আটলান্টিকের এক পাড়ে লাইবেরিয়া, অপর পাড়ে আমেরিকা। দাসপ্রথা উঠে গেলে অনেকের বংশধর আবার নিজ দেশে ফেরত আসেন। এতে আমেরিকান লাইবেরীয় আর স্থায়ী বসবাসকারী লাইবেরীয়দের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব লেগেই ছিল। এই বিভেদ, শাসকদের দুর্নীতি, স্বৈরাচারী মনোভাব দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। গৃহযুদ্ধ থামানোর জন্য একযুগ পর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করে। এর মধ্যে ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে দেশটির সব অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। বিদ্যুত্, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প সবই ধ্বংস করে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত বিবদমান দুই গ্রুপ। সেনাবাহিনী, পুলিশ—সবই ধ্বংস হয়ে যায়। ক্যান্টনমেন্টের ভবনগুলো আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার পর ধ্বংসাবশেষ ছিল। বিমানবন্দর সমুদ্র বন্দর সবই রয়েছে। তবে একেবারেই ধ্বংসপ্রাপ্ত। অচল অবস্থায় পড়ে আছে। বিদ্যুতের খুঁটি আছে তবে বিদ্যুত্ উত্পাদন নেই। রেললাইন রয়েছে ট্রেন নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন আছে শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। এ সবকিছুর ধ্বংসাবশেষ যেন আধুনিক জামানায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তবে দেশটিতে রয়েছে সম্পদের পাহাড়। রয়েছে বড় বড় দু’টি আয়রনহিল। যা দিয়ে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত সারা দুনিয়ার লোহার চাহিদা মেটানো সম্ভব। আরও রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাবার বাগান। মাটি খুঁড়লেই স্বর্ণ বের হয়ে আসে। পুরো দেশ জুড়ে দৃশ্যমান অফুরান বনজ সম্পদের কথা না-ই বা বললাম। জমি পড়ে আছে কোনো চাষাবাদ নেই। বাংলাদেশের সমআয়তনের ৪০ লাখ লোকের জন্য আল্লাহ এত সম্পদ দিয়েছে। আয়তন, জনসংখ্যা ও সম্পদের হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ হতে পারত। কিন্তু হয়েছে বিপরীত। রয়েছে চরম দারিদ্র্য। দেশটির যে জায়গায়ই গিয়েছি সেখানেই স্থানীয়রা আমাদের দেখে দৌড়ে এসেছে একটু খাবার প্রাপ্তির প্রত্যাশায়। আমাদের দেখা মাত্রই ছেলে-বুড়ো সবাই এসে হাত দিয়ে ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করত তাদের পেটে খাবার নেই। জীর্ণশীর্ণ রোগা আকৃতির মানুষগুলোকে দেখলেই বোঝা যায় তারা অভাব-অনটনে রয়েছে। তাদের এই অবস্থা দেখে তখন পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত মনে পড়ে। এর বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায়—‘যে জাতি নিজেরা নিজেদের শাসন করতে জানে না, সেই জাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন বিজাতীয় শাসকের মাধ্যমে শাস্তি দেয়।’ তখন মনে মনে ভাবি হে আল্লাহ তোমার কালামে যা পাঠ করেছিলাম এটাই কি তার নিশানা!
এত অফুরান সম্পদের মধ্যে নিজেরা নিজেদের শাসন করতে পারেনি। তারা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত ছিল বলেই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের সৈন্যরা তাদের শাসন করছে। জাতিগত বিভেদ, ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দুর্নীতি, আর ক্ষমতা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নিজেদের কামড়া-কামড়িতে পুরো জাতি ও দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তখন ভেবেছি এই সাধারণ মানুষগুলোর কী অপরাধ ছিল? তাদের কেন এত শাস্তি হচ্ছে! রাজা-উজির ও তাদের চামচাদের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার দায় সাধারণ মানুষকে বহন করতে হচ্ছে।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও একটি অমিত সম্ভাবনার দেশ। নানা প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর আমাদের এই বাংলাদেশ। রয়েছে বিশাল মানব সম্পদ। আমাদের দেশেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিভক্তির যে রেখা টানা হয়েছে তা ক্রমেই প্রশস্ত হচ্ছে। বর্তমান শাসকদের মেগা সাইজের দুর্নীতি, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী মনোভাব ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে এক সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে। রাজপথে মানুষের জান-মাল নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ নিরাপত্তার পরিবর্তে প্রকাশ্যে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে শিকারি কুকুরের মতো আদম সন্তানকে খুন করছে। উপড়ে নিচ্ছে চোখ। হাতকড়া পরিয়ে পাগলা কুকুরের মতো রাস্তায় মানুষ পেটাচ্ছে। পুলিশ ও ফ্যাসিবাদী মনোভাবাপন্ন গুণ্ডারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অস্ত্র হাতে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এসব কিসের আলামত?
আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে বা যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে তার বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। তবে জিঘাংসায় উন্মত্ত হয়ে রক্ত পিপাসায় রাজপথে নেমে দণ্ড আদায় করলে বিচারের নামে প্রহসন হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
এই বিচার নিয়ে আমাদের ইতিহাসের পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায় স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার জন্য একটি তদন্ত হয়েছিল। সেই তদন্তে ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেয়া হয় তখন। তাদের সহযোগী যারা ছিল তাদের বিচারের জন্যও দালাল আইন নামে একটি আইন তৈরি করে স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার। সেই দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয় ২০ হাজারের বেশি লোককে। এর মধ্যে বিচার করে অনেকের দণ্ডও হয়। কিন্তু মূল যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জনকে তত্কালীন শেখ মুজিবুর রহমান সরকার ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়। তারা নিরাপদে পাকিস্তান চলে যায়। আইনের ভাষায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তারা হলেন প্রিন্সিপল আসামি। তাদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩’ নামে একটি আইন পাস করা হয়। এই আইনটির দফায় দফায় নিজেদের প্রয়োজনমত সংশোধন করে বর্তমান বিচার চলছে।
বর্তমানে যাদের বিচার চলছে ১৯৭৩ সালের মূল আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করা সম্ভব ছিল না। এজন্য সরকার নিজেদের পছন্দমত ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য আইনটির সংশোধন করে নেয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই আইনটির সংশোধনীর গেজেট জারি করে। এতে ব্যক্তি ও ব্যক্তি সমষ্টিকে বিচারের আওতায় আনা হয়। অর্থাত্ মূল আইনে ছিল সামরিক বাহিনীর সদস্য ও তাদের সহযোগী ফোর্স। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যক্তি ও ব্যক্তি সমষ্টিকে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বর্তমান আমলে। এছাড়া বিচারে কোনো ব্যক্তিকে খালাস দিলে সরকারের পক্ষে আপিলের বিধান করা হয় নতুন সংশোধনীতে।
সরকারের চাহিদা এই সংশোধনীতে যখন পুরোপুরি মিটছিল না তখন আবার ২০১২ সালে আরেকটি সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীতে মামলা এক ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্য ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের বিধান করা হয়।
মামলার আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে আপিল করার সুযোগ দুই মাস থেকে কমিয়ে ৩০ দিন করতে আইনের সংশোধনী আনে সরকার। একই সঙ্গে যেদিন রায় প্রদান করা হবে সেদিনই যাতে রায়ের কপি সরবরাহ করা হয় সেজন্যও বিধান করা হয়। প্রচলিত আদালতগুলোতে রায় দেয়ার পর বিচারপতিরা রায় লিখে স্বাক্ষর করেন। তাতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়। ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইনে রায়ের কপি পেতে একদিন বিলম্বেরও কোনো সুযোগ নেই।
সর্বশেষ গত ১৭ ফেবু্রয়ারি রোববার আইনটির আরেক দফা সংশোধনী আনা হলো। কারণ এখন রায় ঘোষণার পর সরকার বুঝতে পারছে শুধু খালাস পাওয়ার ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ রাখা হলে চলবে না। দণ্ড বৃদ্ধির জন্যও আপিলের সুযোগ থাকতে হবে। নতুন সংশোধনীতে আপিল নিষ্পত্তির জন্য কমিয়ে তিন মাসের জায়গায় দুই মাস করা হয়েছে। অর্থাত্ রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে আপিল এবং সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি। সব মিলে তিন মাসের মধ্যে আপিলের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে। বিচার চলাকালীন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আইনকে নিজের মতো করে আইন সংশোধন ও প্রয়োগ নিয়ে এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দালাল আইনের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের চিফ প্রসিকিউটর (সরকার পক্ষের আইনজীবী) বর্তমানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, এখন যাদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে তাদের নামে তখন মামলা তো দূরের কথা, কোনো থানায় জিডিও করা হয়নি। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন—আবদুল কাদের মোল্লা ১৯৭২ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত উদয়ন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। সেখানে তিনি নিয়মিত শিক্ষকতা করেছেন। এত লোকের বিরুদ্ধে মামলা হলো তখন কেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কোনো থানায় একটি জিডিও হলো না! যুদ্ধাপরাধী হলে বা সহযোগী হলে তখন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীকে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি কারাগারের অভ্যন্তরেই ইন্তেকাল করেন। অথচ তখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো থানায় জিডিও করা হয়নি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকলে তখন বাবার সঙ্গে তাকেও কেন গ্রেফতার করা হয়নি বা তার বিরুদ্ধে তখন কেন মামলা দেয়া হলো না! বিভিন্ন টকশোতে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এই প্রশ্নগুলো জাতির সামনে রাখছেন।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা যুদ্ধাপরাধের বিচার করা। যেহেতু দীর্ঘদিন পর বিষয়টি জাতির সামনে আবার নাড়া দিয়েছে তাই পুরো জাতি চায় যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হোক। তবে ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান ও তার বন্ধুর ভাষায় ড্রামা হলে জাতি মেনে নিতে পারে না। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ বিচারকদের দিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচার হলে কোনো প্রশ্ন ওঠারও সুযোগ থাকত না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচার হয়েছে বা হচ্ছে সেই পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে বিচার হলে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। খোদ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি থেকেও আমাদের দেশের ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা এবং বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শুধু দেশে নয়, সারা দুনিয়াজুড়ে এই বিচার এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
এখানে আরও উল্লেখ করা যায়, যাদের বিরুদ্ধে এখন বিচার চলছে স্বাধীনতা উত্তর রাজনীতিতে তারা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসে রাজনীতি করেছেন। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী অংশ নিয়েছিল। যদিও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ঘোষণা করেছিলেন এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই আওয়াজের একদিন পরই তিনি এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীও অংশ নেয় এবং ১০টি আসন লাভ করে। শুধু বিএনপি তাদের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তখন স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
১৯৯৫ সালে তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে কর্মসূচি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ-জামায়াতে ইসলামী মিলে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য তত্কালীন এনডিপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাশাপাশি এক টেবিলে বসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে এক টেবিলে বসে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য তাদের জোটের লিয়াঁজো কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, কারাগারে আটক জামায়াতে ইসলামী নেতারা এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একসঙ্গে নিয়মিত লিয়াঁজো কমিটির বৈঠকে বসতেন। তখন কিন্তু তারা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এখন কারাগারে। তাদের ফাঁসির দাবিতে রক্তপিপাসায় উন্মত্ত বাম-আওয়ামী জোটের লোকরা। তাদের গঠন করা ট্রাইব্যুনাল, তাদের নিয়োগ করা বিচারক, তাদের নিয়োগ করা প্রসিকিউশন, তাদের নিয়োগ করা তদন্তকারীদের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত বিচার তারাই আবার মানছে না। শাহবাগে যারা রক্তপিপাসায় উন্মত্ত হয়ে ‘ফাঁসি চাই-জবাই কর’ স্লোগান দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই পুরো জাতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তবে সেটা হতে হবে ন্যায়, ইনসাফ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা আদালতের মাধ্যমে। তাছাড়া ন্যায়নীতি বিবর্জিত শুধু রাজনৈতিক জিঘাংসা চরিতার্থ করার কোনো বিচার হলে বা ফাঁসির দণ্ড দিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং হলে আরেকটি জিঘাংসার জন্ম দেবে। এতে জাতির বিভক্তি রেখা কমবে না বরং আরও বাড়বে। একটি জিঘাংসা আরেকটি জিঘাংসারই কেবল জন্ম দেয়। মেগা দুর্নীতি, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, শেয়ার মার্কেট থেকে লক্ষ-কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার, রাজনৈতিক জিঘাংসা ও প্রতিহিংসা আমাদের লাইবেরিয়ার পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
১৮-০২-২০১৩
[email protected]
লিংক
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৯
২০১৩ বলেছেন: এসব কথা সবাই শুনছে, বুঝছে, কিন্তু কুত্তাদের সামনে জনগণ বড়ই ভীত ।
৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:২৭
টিটোপণডিত বলেছেন: মাহামুদের পোলা নোমান .......হারামজাদা আগে রাজাকারের বিচার হোক তারপর বাকিগুলি............।
৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪৫
অজানাবন্ধু বলেছেন: ভাইজান আমি বাংলাদেশেই আছি। আমি আমার দেশকে নিয়ে খুবই আশাবাদী।
দেশে অনেক অনিয়ম আছে এটা ঠিক।
তবে র্সাবিক বিবেচনায় দেশটা সামনের দিকেই যাচ্ছে।
জয় বাংলা।
৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০২
যা বলার বলবো বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষণ, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে,
ততই দেশের ভাল ।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৬
কে বা কারা বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর কথার জন্য। সুন্দর মানুষেরাই সুন্দর কথা বলতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৩
তৌফিক মাসুদ বলেছেন: কতা সত্য কইছেন, তয় আমাগো রাজাকার মুক্ত দেশ চাই।