নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গোলাকার এক বৃত্তে পতিত মানব

মীর রবি

কবি ও সম্পাদক

মীর রবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিলিভস ইটস অর নট

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২৭




`আপনারে আপন কে কয়
আপন তো কেউ কারো নয়...’

গানটা আমার ভিষণ প্রিয়। নিঃসঙ্গ হয়ে ওঠার পর থেকে এ গানটাই আমি গাই। গুনগুনিয়ে যে কত এলোমেলো বাক্য এর সাথে জুড়ে দিয়েছি তার ইয়াত্তা নাই। নগর জীবনে যে জীবনের কোনো শৃঙ্খলা নাই, আপনার বলে কেউ নাই, তখন গানের বাক্যবিন্যাস নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। যখন যা ইচ্ছে জুড়ে দিয়েই আমি গাই। এই গান কেউ শোনে না। আমি নিজে নিজেই শুনি। তাহলে এ গানই কি আমার খুব ‘আপনার’? যে আমি আমার হয়ে উঠতে পারি না, সেই আমির ‘আপনার গান’ বলে কিছু থাকতে পারে তা আমি বিশ্বাস করি না। সত্য- তোমাদের নগরে কোনো কিছুতেই আমি বিশ্বাস করি না। যে আমি আপনার বিশ্বাস হারিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে উঠি, অবিশ্বাসে নিজেকে যাপন করি, তার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে কারো কিছু যায় আসে না।

বিঃশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচালে শহর, আমি শহর হাঁটি। শহরের প্রত্যেকটা ধূলিকণা থেকে প্রত্যেক জড় আর জীবকেই আমার অবিশ্বাস হয়। যাকে একটু-আকটু বিশ্বাস করতে শিখি, তা পরমুহুর্তেই ভুল বলে স্বীকার হয়। স্বীয়-স্বার্থ হাশিল করেই হারিয়ে যায় সে জন। আমি একা হয়ে থাকি- বিশ্বাসের ভাইরাসে। এ শহরের বাস কন্ট্রাকটার আর হেলপারগুলোতে আমার একদম বিশ্বাস নেই। এরা বজ্জাতই হয়! হাড়ে-মাংসে-রক্তে এরা অবিশ্বাসের জিন নিয়ে বেড়ে ওঠে। বাসে উঠে তাই স্বস্তি পাইনে। কোনো সুখ পাই না আমি। লক্কর-ঝক্কর সিটিং আর চিটিং বাসগুলোর দাপোট আমাকে ভরকে দ্যায়। আমি শুনি- বাস মালিকগুলোই রাজনীতির বড় কর্তা। এমপি-মন্ত্রী আর আমলারাই শ্রমিক নেতা। পরিবহন ঠিকাদার। জনগণও ভয় পায়! যে জনগণ যাকে ভয় পায়, তাকে ভোট দ্যায় কেনো- আমি ভেবে পাই না। মনে হয়- আমার মতো জনগণেরও কোনো বিশ্বাস নেই। এই আমজনতাগুলোও বিশ্বাস হারিয়ে জড় হয়ে গেছে। রাষ্ট্র আর রাজনীতিক যে ভাবে খেলছে, এরাও সেভাবেই চলছে যেন! স্বকীয়তা বলে আজ কিছু নেই। তাদের অনুভূতি বলে কিছু আছে কি না- আমার সন্দেহ হয়। আমি জ্ঞাত নই- মানুষ কিভাবে বোবা হয়ে যায়। শুধু এই জানি- বিশ্বাস হারানো মানুষ ভোতা হয়ে যায়, তার মতো ভীত আর কেউ নয়!

আমার ‘আপনার বিশ্বাস’ বলে কিছু থাকুক আর না থাকুক, আমার অনুভূতি আছে বলে আমি টের পাই। সূর্যের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তাই রাস্তা হাঁটি। মহাখালী থেকে একে খন্দকার রোড, তাজউদ্দিন স্মরণী, বেগুনবাড়ি- তেজগাঁও কিংবা শাহবাগ; টিএসসি আর সোহরাওয়ার্দী, এদের বুক জুড়ে, ফুটপাতে মিশে থাকে আমার পদছাপ, হাতিরঝিলে পঁচা জলের নোংরা গন্ধ শোঁকে নিঃশ্বাস। পড়ে থাকে পদছাপ। এ ছাপ কেউ দ্যাখে না। আমি দেখি। বিশ্বাস করলে একটা বিশ্বাসই আমার ভিতর কাজ করে- আমি যতদিন তোমাদের পৃথিবীতে থাকব, আমার পায়ের ছাপ পড়বে নিঃসঙ্গ শহর জুড়ে। যত হাঁটব, এ শহর ততো টের পাবে- অবিশ্বাসের ভারে ভরা পা ছুটছে নগরের বুকে। যে শহরে আপনার বলে কিছু নেই, সে শহরে মামার অভাব নেই! ঢাকার রাজপথে যেখানে সেখানে পড়ে থাকে মামারা! মহাখালী বাসষ্টান্ড পেরুতেই নাবিস্কো, কতজন ডাকে এই মামা কই যাবেন? কই যাব জানি না বলে হাঁটি দ্রুত পা ফেলে। রিক্সাওয়ালারা ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকে। ওদের ফ্যাল ফ্যাল চোখ দেখে আমার মায়া হয় না! ওদের ধূর্ততা দেখেই আমি বড়! একেকটা রিক্সাওয়ালাকে আমার ডাকাত মনে হয়। বিশ্বাসের স্থানটুকু তারা রাখেনি যে! কে মানুষ- ভেবে পাইনে যে!

দাঁড়ি-টুপিওয়ালা রিক্সায় উঠেছি। আশুলিয়া থানা থেকে বুড়ির বাজার। আমি নতুন যাত্রী। না চেনার সুযোগে সে নিয়ে গেছে মাইলখানেক দূরে! যে আমির পকেটে সম্বল মাত্র পঞ্চাশ, তার সব কেটে নিয়ে গেল! সরল বলে পেরে উঠি না। এভাবে কত রিক্সাই ঠকিয়ে গেল, কার কথা বলব? এখন মামাদের দেখলেই অবিশ্বাস তাড়া করে। আমি দৌড়ে পালাই। বাস আর রিক্সা, বিশ্বাস করি না তাদের। ইন্দ্রদার গল্প বলি আপনাদের। ইন্দ্র’দা সাংবাদিক মানুষ। পেশাগত দায়িত্ব তার বড়। ছুটছেন শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা। জ্যামের তিক্ততা যে কত বিরক্তির তা এ নগরবাসিই জানেন। তাও হুশ নেই মানুষগুলোর। বাসে উঠেছে ইন্দ্র’দা। সিটিং নামের লক্কর-ঝক্কর বাস, প্রশাসনের বড় কর্তা, আপনারা যাকে আমলা বলেন, তিনিই আটকে দিলেন তা। আর কিছু না পারুক রাষ্ট্রের সাময়িক কিছু ধান্দা! ইন্দ্রদার মতো কর্মব্যস্ত মানুষগুলো কি আটকে থাকবে? আমজনতার জাগরণ নেই। কেউ তাই থাকল। কেউ ভাড়া ফেরত না নিয়েই পথ ধরল। যার কষ্টের টাকা, সে তো টাকার দরদ জানেন। ইন্দ্র’দা ভাড়া ফেরত চাইলেন। বাস যাবে না, ভাড়া ফেরত দিবে- এটাই নৈতিকতা। এটা আপনারাও বলবেন। সেই নৈতিকতার কদর আজ আর নেই। যাত্রীই জুটে গেছে বাসের পক্ষে। ভাড়া ফেরত! ইন্দ্র’দাকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে দিলো ওরা! কি বলেন? ইন্দ্র’দা তার প্রাপ্য পেলেন না? পেলেন ঠিকই, তাও যেন তার পাওয়া হয়নি! বাস আটকানো আমলার কাছেই বিচার চাইলেন। তাও পেলেন বেশ! উদর পিন্ডি বুধোর ঘারে! সাংবাদিক পরিচয় দিতেই আমলা তার গামলা উজাড় করলেন। বললেন- সাংবাদিক হয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে মারপিট করলেন? আপনারা সাংবাদিকরাও পারেন। লজ্জা লাগে না। বাবা! অগ্নিশর্মা বটে! কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝলেন তো? আপনারা বুঝুন আর না বুঝুন আপনাদের বোঝা না বোঝাতেও আমার বিশ্বাস নেই। জানেন তো- আমার কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নেই!

কেউ কেউ এখন জিজ্ঞেস করবেন- ‘আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন তো? এর যুথসই উত্তর আপনাদের কাছেই। আপনারা যেমন উল্টো, আমিও তেমন উল্টো বলব- আপনাদের ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি না! তার মানে এই নয়- আমি নাস্তিক! কেউ কেউ নাস্তিক বলে গাল দিতে পারেন, আমি রাগব না। আমার ঈশ্বর গালিবাজ আর রাগি মানুষ পছন্দ করেন না। এ আবার কোন ঈশ্বর! জানেন তো? আমি ঈশ্বর মানি, সে আমারই ঈশ্বর। এই শহরের অলি-গলি, ফুটপাতে হাঁটার সঙ্গে তিনিও আমার সঙ্গে হাঁটেন। তিনি হাঁটেন বলে আমিও হাঁটি! আমার বিশ্বাস বলতে এটাও- পৃথিবীর পথে আমি যতবার হাঁটি, ততোবারই যপ করি- ‘আমিই ঈশ্বর’! এই আমিটাকে আমি ভাববেন না। ভাবুন-আপনার ভিতরের ‘আমার আমিকে’। আমার আমিকে বিশ্বাস করি বলেই আমরা বাঁচি। আপনার বিশ্বাস বলে যা আছে, এখানে তা তুচ্ছ। বিশ্বাস আপনাতে হয় না। বিশ্বাস থাকে এই আমি’তেই। মহাপবিত্র কুরআন বলেন, বেদ বা গীতা বলেন, জেন্দা বেস্তা বাইবেল ত্রিপিটক এই আমিকেই জানে। আপনার ঈশ্বর আপনার আমিতেই বাস করে। শুধু আমরা জানি না- এই আমি আমি’ই যে! যে নিজেকে চেনে, সেই চেনে তার ঈশ্বরকে।




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.