![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১।
সকাল থেকেই বৃষ্টি। মন খারাপ করা বৃষ্টি। মন খারাপ করা বৃষ্টি কখনও হয় কি না আমার জানা নেই, তবে হাসানের মন খারাপ। কারণটা বিচিত্র, ছোট বেলায় বৃষ্টিস্নানের বাতিক ছিল। রাত কি দিন, সন্ধ্যা কি ভোর, বর্ষা কি শীত যখনই বৃষ্টি তখনই গোসল, অতি বৃষ্টি প্রীতি। তাহলে হঠাৎ করে বৃষ্টি ভীতি কেন? কারণ আছে, আট বছর বয়সের সময় নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হবার কথা তার মাথা থেকে কখনও মুছে যাবে না। স্থায়ী মেমরি, যা মৃত্যু ছাড়া ডিলিট হবার সম্ভাবনাকেম।
বৃষ্টি কমে এসেছে আর সেই সাথে হাসানের মনেও আনন্দ। মা’র কথাটা মাথায় ছিল। আরও কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলে মন খারাপ করা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই কাজটা করতে হতো। কাজটা ভিজেই করতে হবে, সময় বেধে দেয়া। মার কথা ফেলা যাবে না এমনটি নয়, তবে সব সময় তা রক্ষা করার চেষ্টাই করে। পঞ্চমে শ্রেণীতে পড়ার সময় হঠাৎ করেই হাসানের বাবা মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর চরম বাস্তবতা মহিলাকে একজন জেনারেলে পরিণত করেছে। বলা যায় মহিলা হিটলার, তবে-মানবিক। অতি খারাপ লোকেরও অপ্রকাশিত কিছু মানবিক দিক থাকে। আমেনা বেগম সে রকম নয়, সবার জন্যই উনার হৃদয়ভর্তি ভালোবাসা আছে। ভদ্রমহিলা স্বল্পভাষী। স্বামীর মৃত্যুর পর একাই সংসারটার হাল ধরেছেন। হাসানকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পড়িয়েছেন, মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর প্রতি তার অভিমান-দুনিয়ার সমস্ত কাজ শুরু করে গেছেন কিন্তু একটাও শেষ করে যেতে পারেন নি। শুধু ফিতা কেটেই তিনি অপারে চলে গেছেন।
আজ হাসানের বাবার মৃত্যু দিবস। প্রতি বছরই দিনটি আষস। এই দিন ভদ্রমহিলা করও সাথে কথা বলেন না। প্রয়োজনিয় সব কথা আগের দিন রাতেই বলে দেন হাসানকে। সে রকমই একটা আদেশ জারী হয়েছে গতকাল রাতে। অতি দরিদ্র কোন মানুষকে এক হাজার টাকা দান করার ঘোষণা। এদেশে দরিদ্র মানুষ খুঁজতে হয় না, স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও দরিদ্র দেশের সবাই দরিদ্র। আর্থিক, মানসিক সার্বিক দিক দিয়েই আমরা এখনও দরিদ্র। হাসান এক হাজার টাকার একটা নোট হাতে নিয়ে বসে আছে। খেযালি ভাবে টাকার নাম্বারটা দেখছে। মা’র শেষ মুহূর্তের আদেশের অপেক্ষায়। যদিও মা’র আজ কথা বলার সম্ভবনা নেই তবে হাসানের মনে হচ্ছে কথা বলতে পারেন। হাসানের ধারণা সত্যি হল, আমেনা বেগম ছেলেরকে অবাক করে দিয়ে বললেন:
হাসান টাকাটা দিয়ে আয়। আর শুন এক হাজার এক টাকা দিবি।
এক টাকা আবার কেন মা?
শূন্যটা ভাঙিয়ে দিস।
শূন্য থাকলে সমস্যা কি?
হঠাৎ কথা থামিয়ে আমেনা বেগম মৃদু হেসে নিজের কাজে ব্যস্ত হলেন, মনে মনে হয়তো ভাবলেন ছেলেটা হয়েছে বাবার মতই।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.