![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২।
বাসা থেকে বের হবার সময় বাড়ির কেয়ারটেকার সন্দেহদৃষ্টি নিয়ে তাকায়। লোকটার বয়স হয়েছে, চোখেও দেখে কম। পরিচিত মানুষকে চিনতেও সময় নেয় আর এ কাজটা করার জন্যই তাকে এভাবে তাকাতে হয়। হাসান এর নাম দিয়েছে সন্দেহদৃষ্টি। আজ হাসান কিছু না বলেই বেরিয়ে আসে। বৃষ্টি কেটে গিয়ে সুন্দর নরম রোদ উঠেছে। একটা লোক দরকার, যাকে টাকাটা দেয়া যাবে। পরিচিত লোক হলে ভাল, তবে হাসান ভাবছে অন্য কিছু। বাসা থেকে অল্প দূরেই চা-পানের একটা টং দোকান আছে। হাসান বাসার চা খায়(পান) করে না। দোকানের চা’ই সে বেশির ভাগ সময় খায়। আজও তাই করল। চায়ের কাপ হাতে নিতেই তার চোখ পরে একটি ছেলের দিকে। খালি গা হাফ প্যান্ট পরা কোমরে নাইলনের দড়ি দিয়ে প্যান্টা বাধা। জিপারের ফাঁক দিয়ে পুংদন্ডটা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টিতে ভিজেছে তার চিহ্নও বর্তমান। মুখজোরে আজন্ম খিধের ছাপ আর হাতে একগাদা পলিথিন ব্যাগ। এরা রাস্তায় যা পায় তাই কুড়িয়ে নেয়। এটা এদের জন্মঅভ্যাসে পরিণত হয়। হাসান হাত ইশারায় কাছে ডাকে। ভাবলেশহীন ভাবে হাসানের কাছাকাছি এসে দাড়ায়। হাসান চা খাওয়া শেষ করে-
‘নাম কি ?’
অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পেটের আকারটাই সম্বল আর সেই পেটে হাত রেখে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছেলেটি। সে জানে নাম বলে লাভ নেই, নিশ্চয়ই কোন উটকো কাজের জন্য ডেকেছে। চা’র দাম চুকিয়ে ছেলেটাকে ইশারা করে সে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। ছেলেটিও তার সাথে হাটছে। কিছুদূর যাবার পর হাসান ন্যাড়া মাথায় হাত রেখে বলে-
‘বাড়িতে কে আছেরে..’
এবার গর্ত থেকে আওয়াজ বের হয়-
‘সব্বাই...খালি বাপে নাই’
হাসান কথা না বাড়িয়ে বলে: ‘মা আছে ?’ মাথা নেড়ে সায় দেয়-আছে। এক হাজার টাকার নোটটা বের করে হাসান ছেলেটার হাতে দিয়ে বলে-
‘নে, চিনতে পারিস কত টাকার নোট। মায়ের কাছে দিবি বুঝলি।’
তর্জুনি উচিয়ে ইশারা ভাষায় উত্তর দেয়। হাসান এক টাকার কয়েন আনতে ভুলে গেছে। মানিব্যাগ হাতড়িয়েও একটা কয়েন মিলল না । তাই শূন্যও ভাঙানো হল না। তার ধারনা ছিল টাকাটা হাতে পেয়ে ছেলেটা ভো দৌড় দিবে কিন্তু এর কিছুই হল না। বার কয়েক পিছন ফিরে দেখে আস্তে আস্তে সামনের মোড়ের দিকে হাঁটেতে থাকে।
শ্রাবনের আকাশে মেঘ রোদের খেলা জমে ওঠেছে। নরম রোদের ফাঁক গলে কালো মেঘের আয়োজন। হাসান এবার মন খারাপ করে না, সে মনে মনে ভাবে আসুক বৃষ্টি। আজ সারা দিন বৃষ্টি হোক। প্রাণ ভরে ভেজা যাবে, ফিরে যাবে শৈশবে। সে রকম আর হলো না, তার আরও একটা কথা মনে পড়ে যায়। আজকে কনকের বাসায় যাবার কথা। কনক হাসানের একামাত্র বড় বোন। কনকের বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় হাসান।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.