নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
ছয়
বারান্দায় এসে চেয়ারে বসার পরপরই একটা কবুতর এসে রেলিংয়ে বসে, ওটাকে দেখে আসে আরেকটা। বারবার ঘাড় নেড়ে নেড়ে আমার মুখের দিকে তাকায় ওরা, এর অর্থ জানতে চায়-খাবার কই? ছাদ থেকে ওরা নেমে আসে খাওয়ার লোভে, প্রায়ই আমি এখানে বসে ওদেরকে চাল খাওয়াই; ওরা রেলিংয়ে বসে আমার হাত থেকে চাল খায়। আমি কৌশলে আস্তে আস্তে হাত টেনে আনলে ওরা গ্রিলের ফাঁক গলে আমার কোলের মধ্যে চলে আসে। আমি উঠে গিয়ে আমার খাটের নিচে ওদের জন্য রাখা মোটা চালের পাত্র থেকে একমুঠো চাল এনে ওদেরকে খাওয়াতে থাকি।
মনটা ভাল নেই, মেজাজটাও চড়ে আছে; আর মন ভাল না থাকলে বা মেজাজ চড়ে থাকলে আমি পশুপাখি-গাছপালা-নদীর সাথে সময় কাটাই; ওরা মন ভাল করে দেয়। এই মন ভাল না থাকা আর মেজাজ চড়ে থাকার কারণ সাতসকালে বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে, ঝগড়ার কারণ আমার একটি লেখা। গতকাল জার্মানীর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ফিহেনহাইমের একটি সিনেমা কমপ্লেক্সে মুখোশ পরা এক বন্দুকধারীর হামলায় পঞ্চাশজন আহত হয়েছে। জার্মানীতে এই হামলা নতুন নয়, এর আগেও বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে এবং যথারীতি হামলাকারী হয় আফ্রিকা নয়তো মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান। কেবল জার্মানীতেই নয়; কিছুদিন পরপর ফ্রান্স, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রেও হামলা চালাচ্ছে ইসলামী জঙ্গিরা। এই তো সপ্তাহ দুয়েক আগেও মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সমপ্রেমীদের একটি নৈশক্লাবে এক বন্দুকধারীর হামলায় ঊনপঞ্চাশ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়। গত বছর জানুয়ারিতে মুহাম্মদকে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের কারণে ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে বারোজনকে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা, এরপর থেকে ফ্রান্সে অন্তত ডজনখানেক হামলা হয়েছে। শরণার্থী বা মুহাজির মুসলমানদের এই হামলা বিষয়েই আমি ব্লগে একটি লেখা প্রকাশ করেছি কালরাতে-
মুহাজিরদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকড় এবং ঐতিহাসিক সত্যতা
জার্মানীর ফিহেনহাইম শহরের সিনেমা কমপ্লেক্সে বন্দুকধারীর হামলায় পঞ্চাশজন নিরপরাধ মানুষ আহত হয়েছে আর এদিকে বাংলাদেশ নামক একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রের ফেসবুকীয় শান্তিকমিটি শান্তির বাণী প্রচারের মিশনে নেমেছে। যারা বলছেন এবং কু-তর্ক জুড়েছেন- ইসলাম এই ধরনের হামলা বা হত্যার অনুমোদন দেয়নি; ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানুষ খুন করতে বলেনি; ইসলাম রক্তপাতে বিশ্বাস করে না ইত্যাদি ধরনের মুখস্ত বুলি আওড়ে; এবং সবশেষে নিজের আসল রূপটিও প্রকাশ করছেন এই বলে যে এর জন্য পশ্চিমাদের মুসলিম বিদ্বেষ দায়ী; তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এবং বোধশক্তির প্রতি করুণা করে তাদের জন্যই আমার এই লেখা। যে বন্দুকধারী জার্মানীতে হামলা চালিয়েছে বা যারা ইয়োরোপ-আমেরিকায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তারাই মুহাম্মদের প্রকৃত অনুসারী, আপনি বা আপনারা নন। গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব মুসলমান জীবন বাঁচাতে জল-স্থলের বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে ইয়োরোপে ঢুকেছে আমরা তাদের বলি শরণার্থী, ইসলামের ভাষায় মুহাজির। ইয়োরোপের অনেক দেশই যখন মুসলমানদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা চিন্তা করে মুহাজিরদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, নিজ নিজ দেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে, সীমান্তের কোথাও কোথাও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মুহাজিরদের সংঘর্ষও হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে; তখন এই মুহাজিরদেরকে বিশ্বাস করে এবং নিজ দেশের রক্ষণশীলদের সমালোচনা উপেক্ষা করে তাদের জন্য জার্মানীর দরজা খুলে দিয়ে মানবতার এক দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জার্মান সরকার। লক্ষ লক্ষ মুহাজিরকে তারা আশ্রয় দিয়েছে, খেতে-পরতে দিচ্ছে। সাধারণ জার্মানরাও যে-যেভাবে পেরেছে সাহায্য করেছে মুহাজিরদের, স্কুলবালক-বালিকারাও তার জলের বোতলটি বাড়িয়ে দিয়েছে মুহাজির বালক-বালিকার দিকে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই এই ভালবাসার বিপরীতে জার্মানরা মুহাজিরদের কাছ থেকে পেয়েছে আঘাত, অল্পদিনের মধ্যেই মুহাজিররা জার্মানদের জিনিসপত্র চুরি করতে শুরু করেছে! যদিও জার্মান সরকার তাদের ভরণপোষণ করছে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে জীবনযাত্রার মান আরো উন্নত করা যায় সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। মুহাজিররা শুধু চুরিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও ব্যাপারটা না হয় মানা যেত, কিন্তু এরপর তারা যা শুরু করেছে তা কেবল কোনো বেঈমান-নিমকহারাম, বর্বর এবং নির্বোধ জাতি-ই করতে পারে। তারা জার্মানদের ওপর ছুরি চালিয়েছে, জার্মান নারীদেরকে যৌন নিপীড়ন করেছে, গুলি-বোমাবাজি করে মানুষ মারতে শুরু করেছে। সঙ্গত কারণেই সাধারণ জার্মান নাগরিকরা এখন মুহাজিরদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তারা মুহাজিরদেরকে ঘৃণা করতে এবং সন্ত্রাসী ভাবতে শুরু করেছে; জার্মানদের বুকের ভেতরের ভালবাসার চারাগাছটি ডালপালা মেলে আরো বিস্তৃত হবার আগেই মুহাজিরদের বিশ্বাসঘাতকতার বিষের প্রভাবে তা শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করেছে। ফ্রান্সের চিত্রও একই। আর এদিকে বহুদূরের বাংলাদেশে বসে হামলাকারীদের কওমের ভাই-বোনেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছচ্ছে যে ইয়োরোপিয়ানরা বর্ণবিদ্দেষী-ইসলাম বিদ্বেষী, শেতাঙ্গদের বিদ্বেষের শিকার হয়ে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ হামলা চালাচ্ছে। আইএস হামলার দায় স্বীকার করলে সে-ব্যাপারে বাংলাদেশী কওমের ভাই-বোনেরা অনেকেই উচ্ছ্বসিত হয়, আবার অনেকে বলে এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই, আল্লাহ বা নবী এমন হামলার আদেশ দেননি! হামলাকারীদের এই কওমের ভাই-বোনেরা জেনে বা না জেনে অর্ধেক সত্য আর অর্ধেক মিথ্যা বলে। সত্য হচ্ছে, আল্লাহ আদেশ দেননি; কেননা আল্লাহ’র কোনো অস্তিত্ব-ই নেই। যার অস্তিত্ব নেই সে কী করে আদেশ দেবে? কোরান তো মুহাম্মদের প্রলাপ! আর মিথ্যা হচ্ছে, নবী আদেশ দেননি; কিন্তু ইতিহাসের সত্য হচ্ছে নবী কোরানে আদেশ দিয়েছেন যা কওমের ভাই-বোনেরা সর্বদাই অস্বীকার করে। ফলে কওমের ভাই-বোনদের মিথ্যাচারের জবাব দিতে এবং মুহাজিরদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঐতিহাসিক শিকড় ও ইতিহাসের সত্যতা খুঁজতেই আমার এই লেখা। এই যে মুহাজির হয়েও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা ইয়োরোপ-আমেরিকার অধিবাসীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, এটা মুসলমানদের জন্য নতুন কিছু নয়; চৌদ্দশো বছর আগেই এর সূচনা হয়েছিল। চলুন কওমের ভাই-বোনেরা আমরা একটু চৌদ্দশো বছর আগের ইয়াসরিব নগর অর্থাৎ বর্তমানের মদিনা থেকে ঘুরে আসি। যেহেতু যুদ্ধবাজ মুহাম্মদের কু-কীর্তির কথা এই ছোট্ট লেখায় তুলে ধরা সম্ভব নয়, তাই শুধু মদিনায় মুহাজির হিসেবে অবস্থানের সময়ের কয়েকটি হামলার কথা তুলে ধরে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধটি খোঁজার চেষ্টা করবো।
৬২২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে মুহাম্মদ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তার হিজরতের আগে-পরে আরো কিছু নব্য মুসলমান মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে তার-ই প্ররোচনায়। মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীদেরকে মদিনার আনসার অর্থাৎ মদিনানিবাসী নব্য মুসলমানরা আশ্রয় দেয়। মুহাম্মদের মদিনায় হিজরতের ব্যাপারে মুসলমানদের আরেকটি মিথ্যাচার হচ্ছে, কোরাইশদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি মদিনায় পালিয়েছিলেন। কথাটা যে সত্য নয় তা কোরানের মধ্যেই নিহিত আছে-‘আর যে-কেউ আল্লাহ’র পথে দেশত্যাগ করবে সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয় ও প্রাচুর্য লাভ করবে। আর যে-কেউ আল্লাহ ও রসুলের উদ্দেশে দেশত্যাগী হয়ে বের হয় আর তার মৃত্যু ঘটে তার পুরস্কারের ভার আল্লাহ’র ওপর। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা নিসা-৪:১০০)। মদিনায় হিজরতে অনিচ্ছুক মক্কার নব্য মুসলিমদেরকে বোঝাতেই মুহাম্মদকে এই আয়াত নাজিলের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তাছাড়া কোরাইশরা তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল থাকলেও তারা সহিষ্ণু ছিল বলেই নবুওতির পর থেকে তেরো বছর মুহাম্মদ তাদেরকে নানাভাবে উত্যক্ত করা সত্ত্বেও তারা তাকে হত্যা করেনি। মুহাম্মদ তাকে নবী হিসেবে মেনে নিতে এবং ইসলাম গ্রহণের জন্য কোরাইশদেরকে বারবার উত্যক্ত করেন, কাবাঘরের দখল চান, বহুশ্বরবাদী কোরাইশদের দেবদেবী এবং তাদের সনাতন রীতিনীতি নিয়ে কটাক্ষ করেন, তাদেরকে আল্লাহ’র শাস্তির ভয় দেখান এবং তাদের পূর্বপুরুষগণ আল্লাহ’র শাস্তি ভোগ করছে বলে জানান। ফলে অতিষ্ট হয়ে কোরাইশরা একদিন সমবেত হয়ে মুহাম্মদের দ্বারা তাদের এইসব উৎপীড়নের বিষয়ে আলোচনা করছিল। মুহাম্মদ পাশেই ছিলেন, তিনি তখন কোরাইশদের উদ্দেশে বলেন, ‘হে কোরাইশগণ, আমি অবশ্যই সুদসহ এর প্রতিশোধ নেব।’
বিরক্ত কোরাইশরা মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীদেরকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে (৬১৭-৬১৯) নিষিদ্ধ করে, যা তারা দুই বছরের মাথায় তুলেও নেয়।
মুহাম্মদ মদিনায় হিজরত করেন স্বেচ্ছায়, তার প্রত্যাশা অনুযায়ী কোরাইশদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করতে না পেরে। তাছাড়া মুহাম্মদ এর পূর্বেও ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে একবার মদিনায় হিজরতের চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু তখন মদিনার আনসাররা তাকে নিরস্ত করে এই বলে যে মদিনায় তার হিজরতের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি; কেননা তখনো পর্যন্ত মদিনায় আনসারদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না।
মদিনায় হিজরতের পর মুহাম্মদ এবং অন্য মুহাজিররা গভীর সংকটের মুখে পড়ে। কারণ, তাদের না ছিল নিজস্ব আশ্রয় না ছিল রুটি-রুজির ব্যবস্থা; খাদ্য এবং আশ্রয়ের জন্য তাদেরকে নির্ভরশীল থাকতে হতো আনসারদের ওপর, যারা কাজ করতো ধনী ইহুদিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষেত-খামারে। প্রথমদিকে মক্কা এবং মদিনার ইসলাম গ্রহণকারীদের সবাই ছিল বহুশ্বরবাদী, সমাজের নিচুস্তরের দরিদ্র এবং উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের মানুষ।
শুরুতে ইহুদিদের সঙ্গে মুহাম্মদের কোনো বিরোধ ছিল না, কেননা তিনি তখন মদিনায় নতুন এবং তার কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল না। বরং তিনি তখন ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ এবং রীতিনীতির প্রশংসা করতেন, যার প্রমাণ কোরানে আছে। নবুওতির আগে-পরে তিনি বহুবার ইহুদিদের উপাসনালয় ‘সিনাগগ’ এ গেছেন, ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ‘তাউরাত’ শ্রবণ করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে ধর্মীয় এবং ইহুদি রীতিনীতির ব্যাখ্যা জেনেছেন। তিনি মক্কায় থাকাকালীন খ্রিষ্টানদের বাইবেল শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘বেথ-হা মিদ্রাস’ এও যেতেন। ফলে তার চিন্তা-ভাবনায় ইহুদি এবং খ্রিষ্টান ধর্মের প্রভাব পড়ে। কেবল ইহুদি বা খ্রিষ্টান ধর্ম নয়, আববের বহুশ্বরবাদী বিভিন্ন ধর্মীয় গোত্রের রীতিনীতি দ্বারাও তিনি প্রভাবিত হন এবং তা ইসলামে গ্রহণও করেন; যার প্রতিফলন মুসলমানদের জীবনাচারে এবং কোরানে দেখা যায়। বস্তুত কোরান অলৌকিক কোনো গ্রন্থ নয়, আরবের বিভিন্ন ধর্ম এবং গোত্রের রীতিনীতির মিশ্রণ, মুহাম্মদের কল্পনাপ্রসূত ও ব্যক্তিজীবনের ঘটনাপ্রবাহের ভিত্তিতে তারই মুখনিসৃত বাণী সম্বলিত লৌকিক গ্রন্থ।
মুহাম্মদ মদিনার ইহুদিদেরকে ইসলাম গ্রহণ এবং নবী হিসেবে তাকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানালে কোরাইশদের মতো তারাও তা প্রত্যাখান করে। বর্তমানে আমাদের চারপাশেও তো কতো ভণ্ড সাধু-সন্ন্যাসী, পীর-ফকির কিংবা মানসিক রোগী ঘুরে বেড়ায়; যারা নিজেকে ঈশ্বর বা আল্লাহ’র খুব ঘনিষ্ঠজন মনে করে এবং আমাদেরকে তাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার আহ্বান জানায়, তাই বলে আমরা সবাই তো আর নিজেদের বিশ্বাস এবং আদর্শ ছেড়ে তাদের আদর্শ এবং শিষ্যত্ব গ্রহণ করি না; কেউ কেউ হয়তো করে। মদিনার ইহুদিরা তাদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতো; ফলে কোথাকার কোন মুহাম্মদ নিজেকে আল্লাহ’র নবী দাবী করে ইসলাম নামক একটি নতুন ধর্মের প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাতে তাদের কিছু যেত-আসতো না। ইহুদিদের দলে ভেড়াতে কোরানের নতুন নতুন আয়াত নাজিল করলেও ইহুদিরা তা ভ্রান্ত মতবাদ বলে উড়িয়ে দেয় যেমনটা কোরাইশরা উড়িয়ে দিয়েছিল পাগলের প্রলাপ বলে। তবে মদিনার বহুশ্বরবাদীদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে, বিশেষত এটা বহুলাংশে বেড়ে যায় নাখলা হামলা এবং বদরযুদ্ধের পর লুণ্ঠিত ধন-সম্পদের লোভে।
মদিনায় মুহাম্মদ এবং তার অনুসারী মুহাজিরদের মাসের পর মাস কেটে গেলেও তারা কোনো সুবিধাজনক রোজগারের পথ খুঁজে পাচ্ছিল না, এভাবে মাসের পর মাস চলতে থাকলে মুহাম্মদের অনুসারীরা হতাশ হয়ে পড়ে এবং তার নবুওতির ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে। মুহাম্মদ মক্কায় থাকতে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে আল্লাহ তাদেরকে বহু আশ্রয় এবং প্রাচুর্য দেবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো দুটো রুটির জন্যও তাদেরকে আনসারদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়; মুহাম্মদ আল্লাহ’র কাছ থেকে তাদের জন্য কোনো অলৌকিক সুবিধা এনে দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মুহাম্মদ তখন আবার কোরানের আয়াত নাজিলের কৌশল অবলম্বন করে অনুসারীদের সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করেন এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে থাকেন। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন সিরিয়া থেকে মক্কায় প্রত্যাবর্তনরত কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় হামলা করে তাদের মালামাল লুণ্ঠন করবেন। তবে তার এই সিদ্ধান্তে অনুসারী মুহাজিররা আরো হতাশ হয়ে পড়ে এবং তারা কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় হামলা চালাতে অনীহা প্রকাশ করে, কেননা কোরাইশরা তাদেরই আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু চতুর মুহাম্মদ আবারো কোরানের আয়াত নাজিলের কৌশল অবলম্বন করে তার অনুসারীদের রাজি করান এবং তাদের মনোবল বৃদ্ধি করেন। মদিনায় হিজরতের আট মাস পর ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মুহাম্মদের নির্দেশে তার অনুসারীরা প্রথম হামলা চালায় কোরাইশদের একটি বাণিজ্য কাফেলায়, কিন্তু হামলাটি ব্যর্থ হয়। এরপর তারা পর্যায়ক্রমে আরো পাঁচটি হামলা চালায়, যার সর্বশেষ তিনটির নেতৃত্ব দেন স্বয়ং মুহাম্মদ; কিন্তু তাদের পাঁচটি হামলাই ব্যর্থ হয়!
এর পরের বছর, অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে মুহাম্মদের নির্দেশে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাসের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি দল নাখলা নামক স্থানে নাটকীয় ছলনার মাধ্যমে কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় হামলা চালায়। পূর্বের হামলাগুলো ব্যর্থ হওয়ায় সতর্ক মুহাম্মদ গোপনীয়তা রক্ষার্থে হামলার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগ মুহূর্তে জাহাসের হাতে একটা চিঠি দিয়ে জানান যে দু-দিনের পথ পাড়ি দেবার আগে সে যেন চিঠিটা না খোলে। জাহাস দু-দিন পর চিঠিটা খুলে দ্যাখে তাতে নাখলায় অবস্থান এবং হামলার নির্দেশনা দেওয়া। নাখলা মদিনা থেকে নয় দিনের এবং মক্কা থেকে দুই দিনের দূরত্বের পথ। জাহাস তার দল নিয়ে নাখলায় পৌঁছে কোরাইশদের কাফেলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তখন রজব মাস, ওমরাহ পালনের সময়। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী রজব মাসে যুদ্ধ এবং রক্তপাত নিষিদ্ধ হলেও মুহাম্মদ তা উপেক্ষা করেই তার অনুসারীদেরকে পাঠান কোরাইশদের মালামাল লুণ্ঠনের জন্য। সময়টা যেহেতু ওমরাহ পালনের তাই জাহাসের দলের একজন মাথা ন্যাড়া করে যাতে কোরাইশরা তাদেরকে ওমরাহ পালনকারী মনে করে বিভ্রান্ত হয়! হয়ও তাই, কাফেলাটি তাদেরকে ওমরাহ পালনকারী ধার্মিক দল ভেবে অসতর্কভাবে কাছে আসতেই তারা অতর্কিত হামলা চালায়। কাফেলার একজন পালিয়ে গেলেও জাহাস এবং তার দল বাকি তিনজনের একজনকে খুন এবং অন্য দু-জনকে বন্দী করে মদিনায় নিয়ে আসে, সঙ্গে লুণ্ঠিত মালামাল। মুহাম্মদ এই বন্দী দু-জনের মুক্তিপণ বাবদ অর্থ আদায় করে কোরাইশদের কাছ থেকে। লুণ্ঠিত মালামাল এবং মুক্তিপণের অর্থ পেয়ে তিনি আর তার অনুসারীদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা উন্নত এবং ইসলাম প্রচারে সুবিধা হয়। আধুনিককালে এটাকে বলা হয় ডাকাতি এবং অপহরণের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। অনেকটা এই ঘটনাটির মতোই একটি ঘটনা গতবছর আমাদের দেশেও ঘটে। আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে একদল ডাকাত ব্যাংক ডাকাতি করতে যায়; ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তাকর্মী, গানম্যান এবং একজন গ্রাহককে গুলি করে হত্যা এবং ব্যাংক লুঠ করে তারা; এরপর ডাকাতরা পালানোর সময় জনতা তাদের ধাওয়া করলে তারা এলোপাথারি গুলি এবং বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালানোর চেষ্টা করে, ডাকাতদের গুলি এবং বোমার আঘাতে চারজন নিহত হলেও জনতার হাতে দু-জন ডাকাত আটক হয় ও গণধোলাইয়ে একজন মারা যায়। এরপর আটকৃত দু-জনের তথ্যে ডাকাত দলের বাকি সদস্যদের গ্রেফতার করা হয় এবং পুলিশি তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে কেউটে! ডাকাতরা আসলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) সদস্য; তারা নিজেদের জীবনযাপন এবং বাংলাদেশে শতভাগ ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যাংক ডাকাতি করতে যায়। এই ডাকাত দল অর্থাৎ জেএমবি সদস্যদের উদ্দেশ্য আর মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে জেএমবি’র এই সদস্যরা তাদের নবীজির জীবন ও কর্ম থেকে থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ব্যাংক ডাকাতি করতে যায়। কিন্তু দূর্ভাগ্য এই জেএমবি সদস্যদের যে তারা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার যাঁতাকলে পড়েছে, ফলে গত মে মাসে তাদের ছয়জনের ফাঁসি, একজনের যাবজ্জীবন এবং দুই জনের তিনবছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত; যা মুহাম্মদের ক্ষেত্রে হয়নি।
নাখলা হামলার পর হয় সেই কুখ্যাত বদর যুদ্ধ, মুসলমানদের কাছে অবশ্য বিখ্যাত! কিন্তু সকল মানবতাবাদী, নিপীড়িত জনগণের পক্ষের মানুষের কাছে এটা কুখ্যাত যুদ্ধ-ই হওয়া উচিত। নাখলা হামলার দুই মাসের মাথায় অর্থাৎ মার্চ মাসে মুহাম্মদ জানতে পারেন যে মক্কার কোরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারবের নেতৃত্বে বেশ বড় একটি বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়া থেকে মক্কা ফিরছে। তখনই তিনি সেই কাফেলা আক্রমণ করে মালামাল লুণ্ঠনের সিদ্ধান্ত নেন এবং সাড়ে তিনশো অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে পানির কূপসমৃদ্ধ বদর নামক মরুদ্যানে কাফেলাটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরই মধ্যে কোনোভাবে আবু সুফিয়ানের কাছে মুহাম্মদের এই ষড়যন্ত্রের কথা পৌঁছে যায়। তিনি এই দুঃসংবাদটি জানিয়ে দমদম বিন আমর আল গিফারিকে দ্রুত মক্কার উদ্দেশ্যে পাঠান, যাতে মক্কার কোরাইশরা এসে মুহাম্মদ ও তার বাহিনীর হাত থেকে কাফেলা রক্ষা করতে পারে। পরে উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি কাফেলা নিয়ে বদরের পথে না গিয়ে লোহিত সাগরের ধার দিয়ে সতর্কতার সাথে এবং নিরাপদে মক্কায় পৌঁছান। কিন্তু তার পৌঁছার আগেই অন্য কোনো মাধ্যমে দুঃসংবাদ শুনে মক্কা থেকে সাতশ (মতান্তরে হাজার) কোরাইশের একটি দল কাফেলাটি উদ্ধারের জন্য ভিন্ন পথে বদরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।
এদিকে বদরে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা মুহাম্মদ জানেন না যে আবু সুফিয়ান অন্য পথে মক্কা পৌঁছে গেছে। তিনি নিজের সৈন্যদের জন্য তাদের তাঁবুর কাছে একটি জলের কূপ রেখে অবশিষ্ট কূপগুলো বালি দিয়ে বন্ধ করে দেন যাতে কাফেলার কোরাইশরা পানি খেতে না পারে, ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত থাকে। সফল হয় মুহাম্মদের এই ধূর্ত ও নিষ্ঠুর পরিকল্পনা, মক্কা থেকে আগত কাফেলা উদ্ধারকারী দলটি মরুপথ পাড়ি দিয়ে যখন বদরে পৌঁছায়, তখন তারা ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত; জলের কূপ বালিপূর্ণ থাকায় তাদের তৃষ্ণা নিবারণের কোনো উপায় থাকে না। ভোররাতে মুহাম্মদ আবু সুফিয়ানের কাফেলা মনে করে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত কোরাইশদের উদ্ধারকারী দলটির ওপর নির্মমভাবে আক্রমণ করে। দু-পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়, সংখ্যায় দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি থাকা সত্ত্বেও তৃষ্ণার্ত থাকায় কোরাইশরা যুদ্ধে হারতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে কোরাইশ গোত্রের পঞ্চাশজন নিহত হয় এবং আরো প্রায় পঞ্চাশজন হয় বন্দী মুহাম্মদের বাহিনীর হাতে, পরবর্তীতে মুহাম্মদের নির্দেশে বন্দীদের অনেককেই হত্যা করা হয়। অন্যদিকে এই যুদ্ধে মুহাম্মদের বাহিনীর মাত্র পনেরজন নিহত হয়।
এই যুদ্ধ মুহাম্মদকে দারুণ আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং তিনি তার অনুসারীদেরকে বোঝাতে সক্ষম হন যে স্বয়ং আল্লাহ’র ফেরেশতা তাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, নইলে এই যুদ্ধে কোনোভাবেই তারা কোরাইশদের সঙ্গে পেরে উঠতেন না। আর এরপরই তার এই আত্মবিশ্বাসের খড়গ নেমে আসে মদিনার ইহুদিদের ওপর। প্রথমেই তিনি এক তুচ্ছ ঘটনায় পুরো বানু কাইনুকা গোত্রকে মদিনা থেকে উচ্ছেদ করেন। বানু কাইনুকা গোত্রের এক তরুণের বিরুদ্ধে মুসলিম এক মেয়েকে উত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে, এমনও হতে পারে যে তরুণ মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করেছিল। ইসলাম ধর্মে তো প্রেমও নিষিদ্ধ! এই উত্যক্ত অথবা প্রেম নিবেদনের অপরাধে একজন মুসলমানের হাতে তরুণ খুন হয়। খুনি মুসলমানকে আবার খুন করে একজন ইহুদি। এই অপরাধে মুহাম্মদ পুরো বানু কাইনুকা গোত্রকে ঘেরাও করে, টানা পনেরদিন অবরোধের পর ইহুদিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মুহাম্মদ ইহুদি পুরুষদের বন্দী করার নির্দেষ দিলে ইহুদিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন খাজরাজ গোত্রের প্রভাবশালী নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওবাই। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর মুহাম্মদ ওবাইয়ের প্রভাবের কথা চিন্তা করে ইহুদিদের হত্যার বদলে তাদেরকে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধন-সম্পদ রেখে মদিনা ত্যাগের জন্য তিনদিনের সময় বেঁধে দেন; আর ইহুদিদের ধন-সম্পদ গণিমতের মাল হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।
মদিনায় ইহুদি উচ্ছেদের সেই শুরু, এরপর তিনি বানু নাদির গোত্রকে উচ্ছেদ করেন; আর সর্বশেষ বানু কোরাইজা গোত্রের ওপর গণহত্যা চালিয়ে মদিনা প্রায় ইহুদিশূন্য করেন। বানু কোরাইজা হত্যাকাণ্ড ছিল নির্মম, নৃশংস এবং রোমহর্ষক! বাজারের কাছে একটি পরিখা খনন করে বানু কোরাইজা গোত্রের হাতবাঁধা আটশো থেকে নয়শো সাবালক পুরুষকে শিরোচ্ছেদ করে দেহগুলো পরিখার মধ্যে ফেলা হয়। মুহাম্মদ নিজে বানু কোরাইজার দু-জন নেতার শিরোচ্ছেদ করেন। উঠতি বয়সী ছেলেদের পরনের কাপড় খুলে তাদের গোপনাঙ্গের লোম পরীক্ষার মাধ্যমে সাবলকত্ব নির্ধারণ করা হয়। মুহাম্মদ এবং অন্য জিহাদীরা বানু কোরাইজার শিশু-নারী এবং ধন-সম্পদ গণিমতের মাল হিসেবে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন।
বানু কোরাইজার গণহত্যা ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবি হত্যাসহ অন্যান্য গণহত্যার কথা মনে করিয়ে দেয়। পাকিস্থানীরা বুদ্ধিজীবি, ধরা পড়া মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষকে ধরে এনে খনন করা গর্তের কাছে নিয়ে গুলি এবং জবাই করে লাশ গর্তের ভেতরে ফেলে দেয়। এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাকবোঝাই লাশ এনে গর্তের ভেতরে ফেলে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী। কোথাও মাটি ফেলে ভরাট করা হয় গর্ত, কোথাওবা ওভাবেই ফেলে রাখা হয়, পশু-পাখি আর শিয়াল-কুকুরের দল ঠুকরে-ছিঁড়ে খায় লাশগুলো! স্মরণ রাখা দরকার, একাত্তর সালের এই গণহত্যা চালানো হয় অখণ্ড মুসলমান রাষ্ট্র রক্ষার নামে, আল্লাহ’র জমিন রক্ষার নামে, আল্লাহ’র নামে!
আমাদের বাংলাদেশেও অনেক মুহাজির আছে এবং এখনো আসছে, এরা অতীতে রক্তপাত ঘটিয়েছে এবং এখনো ঘটাচ্ছে। পাকিস্থান আমলে ভারত থেকে আগত বিহারী মুহাজিররা পশ্চিম পাকিস্থানের ইন্দনে হিন্দু নিধনযজ্ঞে নামে ১৯৪৮, ৫০ এবং ৬৪ সালে; অকাতরে তারা খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এবং বাস্তুচ্যুত করে হিন্দুদের। এরপর এই বিহারী মুহাজিররা আবার গর্জে ওঠে ১৯৭১ সালে, এবার আর শুধু হিন্দু নয়, স্থানীয় অনেক মুসলমানও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। মুহাজির সুন্নি মুসলমানদের হাতে স্থানীয় সুন্নি মুসলমান নিধনের ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম কিনা জানি না।
আজও আমাদের দেশে মুহাজিররা হামলা চালায়, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গা মুহাজির। চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজারে সুযোগ পেলেই তারা হামলা চালায় আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির ওপর। মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই তত্ত্বে বিশ্বাসী রোহিঙ্গা মুহাজির আর কিছু বাঙালি মৌলবাদী মুসলমান হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে চালায় আদিবাসী নিপীড়ন এবং উচ্ছেদ। আর অনেকক্ষেত্রেই এই উচ্ছেদ-নিপীড়নে ইন্দন জোগায় জনগণের টাকায় পোষা আমাদেরই সেনাবাহিনী। কেবল আদিবাসী নিপীড়ন নয়, সুযোগ পেলে এই মুহাজির রোহিঙ্গা এবং বাঙালি সম্মিলিত সাম্প্রদায়িক মুসলিম জোট হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপরও হামলায় চালায়। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে এই সম্মিলিত সাম্প্রদায়িক মুসলিম জোট হামলা চালায় কক্সবাজারের রামু, উখিয়া এবং চট্টগ্রামের পটিয়ার বৌদ্ধমন্দির এবং বৌদ্ধপল্লীতে। এক ডজনের বেশি বৌদ্ধ মন্দির এবং অনেকগুলো বৌদ্ধপল্লীতে ভাঙচুর করে, আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
মুহাজিররা পৃথিবীর নানা প্রান্তে যেখানেই গেছে, সেখানেই ধর্মের নামে কম-বেশি রক্তপাত ঘটিয়েছে এবং এখনো ঘটিয়ে চলেছে। ফলে আজকে যে মুহাজিররা ইয়োরোপ-আমেরিকায়-অষ্ট্রেলিয়ায় হামলা চালাচ্ছে, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে, এর শিকড় প্রোথিত সেই সুদূর অতীতে মদিনার জমিনে। মুসলমানরা স্বীকার করুক বা না করুক, ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে- এই হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নিপীড়ন, নিগ্রহ আর রক্তপতের বীজটি রোপন করেন কোটি কোটি ধর্মান্ধ মানুষের প্রাণের নবী স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ।
এই লেখাটি নিয়েই সাতসকালে বাবার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। বাবা ব্লগ-ফেসবুক ব্যবহার করেন না, ইন্টারনেট দুনিয়ার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই; মা’রও না। সঙ্গত কারণেই আমি ব্লগ কিংবা ফেসবুকে কী লিখি তা তাদের জানার কথা নয়, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমি ইসলাম ধর্ম নিয়ে যা-ই লিখি না কেন সেই খবর তাদের কাছে চলে আসে; অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে লিখলে আসে না। শুধু যে ওপর ওপর একটা খবর আসে তা নয়; কী লিখি, কাকে নিয়ে লিখি, কখন পোস্ট করি এসব বিষয়ে একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর আসে। বেশ কয়েক মাস যাবৎ এই উপদ্রব চলছে আমার মানসিক শান্তি নষ্ট করার জন্য। খবরগুলো এতো দ্রুত আর এতো নিখুঁতভাবে আসে যে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম এটা ছোট আপুর কাজ। পরে এই বিষয়ে ছোট আপুর সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে বাসায় অশান্তি হবে জেনে ও একাজ করে না, তবে ও আমাকে অনুরোধ করেছে এসব বিষয়ে না লেখার জন্য। এরপর আমার সন্দেহ হয় ফাহাদ, মালিহা, রাইদাহকে নিয়ে। মালিহা করে না সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত হওয়ার পর রাইদাহ আর ফাহাদকে ফেসবুকে ব্লক করেছি; নাদিয়া আপু আর আবিদ ব্যতিত আমাদের সব আত্মীয়স্বজনকে আমি ব্লক করেছি। তারপরও বাসায় খবর আসে। আমার ধারণা চাচা-চাচীর কোনো ফেসবুক আইডি আছে, তারাই আমাকে ফলো করে আর তথ্য পাঠায় বাবা-মা’র কাছে।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে বসতেই বাবা আমাকে চেপে ধরে লেখার প্রসঙ্গ তুলে, আমার তো অস্বীকার করার প্রশ্নই আসে না। আমি লিখেছি কি না, বাবার এই প্রশ্নের জবাবে বলি, ‘হ্যাঁ লিখেছি।’
বাবা হুঙ্কার ছাড়েন, ‘নবীজিকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা কেন লিখেছিস তুই?’
‘বাবা, আস্তে কথা বলো, আমি তো বয়রা নই।’
‘কেন আস্তে বলবো? তুই নবীজিকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা কেন লিখলি?’
চিবোনো পাউরুটি গলাধঃকরণ করে আমি শান্তভাবে উত্তর দিই, ‘আমি উল্টাপাল্টা কিছু লিখিনি বাবা। একটা লাইনও মিথ্যা লিখিনি, যা সত্য তাই-ই লিখেছি।’
‘সত্য লিখেছিস? আমি পড়ি নাই কী লিখেছিস তুই? সব বানানো মিথ্যে কথা, নবীজি আর ইসলামকে হেয় করার জন্য তুই এসব লিখিস।’
নিজের ঘর থেকে দাদীর ফোঁড়ন, ‘আল্লাহ আছে, আল্লাহ সব দ্যাখতাছে। নবীজিরে লাইয়া খারাপ কিছু কইলে আল্লাহ’র হাত থেইকা কারো রেহাই নাই!’
বাবার উদ্দেশে বলি, ‘বাবা, বাসায় তোমাদের কোনো বিষয়ে তো আমি অসুবিধা করি না, আমার লেখালেখি নিয়ে তোমরা কেন মাথা ঘামাও, এইসব খবর তোমাদেরকে কে দেয়?’
‘সে যে-ই দিক, মিথ্যা তো দেয় নাই। তুই কেন করিস এসব? আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না, তোকে জন্ম দিয়ে কী এতোই অপরাধ করে ফেলেছি আমরা?’
‘তুমি একটু ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেখ তাহলেই বুঝতে পারবে যে আমি কিছুই বানিয়ে লিখিনি।’
‘তুই পড় ওইসব কাফের কুলাঙ্গারদের লেখা, আমার পড়ার দরকার নাই। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ইসলামকে হেয় করার জন্যে কাফেরা ওইসব ছাই-পাশ লেখে আর তোর মতো নির্বোধ গাধা সেগুলো পড়ে বিশ্বাস করে।’
‘আমি যা লিখেছি তাতে নতুন কিছু নেই, আর তুমি যাদের কাফের বলছো সেই অমুসলমান ওসব কথা লেখেনি, তারা অনুবাদ করেছে মাত্র। মুহাম্মদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে ওইসব ইতিহাস লিখে গেছেন মুসলমানরাই।’
‘কোনো মুসলমানের সন্তান এইসব মিথ্যা ইতিহাস লিখতে পারে না। আল্লাহ’র আদেশ ছাড়া নবীজি কোনো কাজ করেননি। নবীজির মতো দয়ালু আজ অব্দি পৃথিবীতে জন্ম নেয়নি, কোনোদিন জন্মাবেও না।’
‘বাবা, তুমি নিজেই মুহাম্মদের চেয়ে অনেক বেশি দয়ালু, আমি যদি মুহাম্মদের সময়ে তার সঙ্গে তার ধর্ম নিয়ে এভাবে তর্ক করতাম, তাহলে আমি তার পুত্র হলেও এতোক্ষণে তিনি আমার শিরোচ্ছেদ করতেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত তুমি আমাকে তো নয়ই, এমনকি কেউ যদি আমাকেও খুন করে, তুমি সেই খুনিকেও খুন করতে পারবে না।’
গর্জে ওঠেন বাবা, ‘মুখ সামলে কথা বল, নবীজি কি বাজারের কসাই যে শিরোচ্ছেদ করবেন?’
‘কসাই পেটের দায়ে পশুহত্যা করে বাজারে মাংস বিক্রি করে; কিন্তু কখনোই সে মানুষ হত্যা করে না। তোমাদের নবীজি কসাই ছিলেন না, কসাইয়ের চেয়েও অনেক বেশি নির্মম, নিষ্ঠুর আর হিংস্র ছিলেন। আর তিনি নিজহাতে শিরোচ্ছেদও করেছেন।’
আমার কথা শেষ হওয়ামাত্র বাবা হুঙ্কার ছেড়ে টেবিলে রাখা জলপূর্ণ জগে ঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। ছিটকে কিছুটা জল আমার গায়ে পড়ে, জলে ভেসে যায় মেঝে আর জগ গড়াতে গড়াতে গিয়ে ধাক্কা খায় রান্না ঘরের পানি ফুটানো কলসিতে। আমি আর কোনো কথা না বলে অবশিষ্ট এক পিস পাউরুটি প্লেটে রেখেই নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিই। আমি ঘরে আসার পরেও অনেকক্ষণ যাবৎ সম্মিলিত কথার ঝড় বইয়ে দেন বাবা, মা আর দাদী। একটু আগেই ঝড়টা থেমেছে।
বাংলাদেশের মুসলমানরা প্রতিনিয়ত আমাকে অবাক করে! কিছু মুসলমান আছে যারা মুসলমানদের ইতিহাস পড়ে, জানে; কিন্তু এই বিষয়ে একেবারেই বোবা হয়ে থাকে। আর আমার বাবার মতো মুসলমানরা কখনো ইতিহাস পড়েন না, ইতিহাসের সত্য জানার চেষ্টা করেন না, সত্য ইতিহাস স্বীকারও করেন না; সত্য ইতিহাস তুলে ধরলে এরা অমুসলমানদের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। অথচ এই বইগুলো লিখে গেছেন আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জরির আল-তাবারি, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, হিশাম বিন মুহাম্মদ আল-কালবি, মুহাম্মদ আল-ওয়াকেদি’র মতো মুসলিম লেখকেরা; যারা গর্বের সঙ্গে মুহাম্মদের বীরত্বগাঁথা প্রকাশ করতে কোনো কুণ্ঠাবোধ করেননি। কেবল অমুসলমানরাই নন, অনেক মুসলমান লেখকও ইতিহাসের এই সত্য স্বীকার করে এইসব গ্রন্থ অনুবাদের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশের মুসলমানরা সর্বদাই এইসব ইতিহাস লুকোতে চায় এবং অস্বীকার করে। এমনকি পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে ইসলামী আগ্রাসনের যে নৃশংস অধ্যায়, তাও এরা লুকোতে চায়। আমি নিশ্চিত এরা এটা করে অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের কাছে ইসলামের লজ্জা ঢাকবার জন্য; কিন্তু এরা বোঝে না যে তাদের এই প্রচেষ্টা ইসলামের কলঙ্কজনক ইতিহাস ঢাকবার এক ছেঁড়াফোঁড়া ব্যর্থ আবরণ মাত্র! তাছাড়া মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটা কলঙ্কজনক হলেও ইসলামের ইতিহাসে এটা গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়, এই ইতিহাস লুকোতে চাওয়া মানে মুসলমান বীরদের অশ্রদ্ধা করা এবং ইসলামী আদর্শচ্যূত হওয়া। সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যসব মুসলমান দেশগুলো এমনটা করে কি না তা আমার জানা নেই।
(চলবে……)
০১ লা আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৫
মিশু মিলন বলেছেন: এটা উপন্যাস, ইতিহাসের বই নয়। উপন্যাসে সূত্র থাকা আবশ্যক নয়।
২| ০১ লা আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: অতি চমৎকার।
এই ধারাবাহিক টি লিখতে গিয়ে যে সমস্ত বই গুলো আপনাকে পড়তে হয়েছে তার তালিকা দিবেন। প্লীজ।
০১ লা আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৬
মিশু মিলন বলেছেন: চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।
৩| ০১ লা আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: ঈদ মুবারক ।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আজও আমাদের দেশে মুহাজিররা হামলা চালায়,
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গা মুহাজির।
.........................................................................................
ঐতিহাসিক কথা বয়ান করতে গেলে সুত্র থাকা আবশ্যক ।