নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেবদ্রোহ (উপন্যাস: পর্ব- চব্বিশ)

০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫০

সতের

‘ধনুশ! আহারে ধনুশ! সৎ, প্রাণবন্ত, নির্ভীক ও প্রতিবাদী ধনুশ!’ গভীররাত্রে আঙিনার দক্ষিণদিকে পাথরের ওপর উপবেশিত বেণ একা একা সোমরসের চষকে চুমুকের ফাঁকে দীর্ঘশ্বাস মাখানো শব্দগুলো উচ্চারণ করেন।

ধনুশ, যার যৌবনের সবে শুরু, এখনো জীবনের অনেক পথ অতিক্রম করা বাকি, যার মধ্যে নেতৃত্বগুণ ছিল, অস্ত্রবিদ্যায় যে ছিল দারুণ দক্ষ, আরো বড় হয়ে যে যুবক-কিশোরদের অনুকরণীয় চরিত্র এবং আর্যদের সম্পদ হতে পারত; অথচ আজ সে নেই, এই ধরণীর কোথাও নেই, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে মিশে গেছে সরস্বতী নদীর জলে! ধনুশের মৃতদেহ দাহ করে সরস্বতীর জলে স্নান সেরে সন্ধ্যায় বাটী ফেরেন বেণ, রাত্রে কয়েক টুকরো রুটির বেশি আহার করতে পারেননি, সোম পান করতে করতে ধুনশের জন্য বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে তাঁর। সোমরসের গন্ধ ছাপিয়ে যেন তাঁর ঘাণেন্দ্রিয়ে অনুভূত হয় ধনুশের দেহপোড়া কটু গন্ধ!

কেশবের অপরাধের বিচারের পরিবর্তে সেই রাতে ব্রাহ্মণ প্রহারের দায়ে ধনুশের প্রতি যে অবিচার করা হয়, যে শারীরিক এবং মানসিক আঘাত করা হয় ওর ওপর, তা ও মেনে নিতে পারেনি। ওর প্রতি অবিচারের পর থেকেই ও কারো সঙ্গে কথা বলত না, উৎসবে সোমরস পান করে কোনো যুবতীর কোমর জড়িয়ে ধরে নৃত্য করা তো দূরের কথা উৎসবে অংশগ্রহণও করত না, একা একা থাকত, কখনো অরণ্যে কখনো সরস্বতীর পারে ঘুরে বেড়াত। জাগতিক সকল প্রকার উৎসব-আনন্দ থেকে ও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। আসলে রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছিল ও। বেণ একদিন ওকে ডেকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করেন, ‘সমাজ এবং জীবন চিরকাল একই স্থানে থেমে থাকবে না ধনুশ, কোনো একদিন পরিবর্তন হবে, সেই দিনের জন্য আমাদের সকলের অপেক্ষা করা উচিত। পায়ের তলার ভূমি কিছুটা শক্ত হলে আমি নিজেও চেষ্টা করব সমাজের কিছু কিছু আইন পরিবর্তনের, আর পরিবর্তনের জন্য তোমার মত যুবকদের আমার পাশে থাকা প্রয়োজন।’

ধনুশ নির্লিপ্ত চোখে বেণের কথা শুনেছিল কখনো শূন্যে কখনো-বা তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে। তারপর যাবার বেলায় কেবল দুটি মাত্র শব্দ উচ্চারণ করেছিল, ‘পুতুল নৃপতি!’

‘পুতুল নৃপতি! সত্যিই কি আমি পুতুল নৃপতি?’ বিনিদ্র রজনীতে নিজেকে বহুবার এই প্রশ্ন করেন বেণ, তাঁর ভেতরের মানুষটিও যেন বারবার ধনুশের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলে ওঠে-সত্যিই তুমি পুতুল নৃপতি! শাস্ত্রীয় বিধানের ছুতোয় তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে ব্রাহ্মণগণ যেভাবে বিচারের দায়িত্বভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে ধনুশকে অপরাধী বানিয়ে দণ্ড দেন, তাতে নিজের কাছেও নিজেকে পুতুল নৃপতি মনে হয় নৃপতি বেণের! বিচারের পর থেকেই প্রচণ্ড হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আছেন তিনি। অপরাধী কিংবা উশৃঙ্খল মানুষদের দণ্ড দিয়ে তিনি যদি সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতেই না পারেন, তাহলে নৃপতি হয়ে তাঁর কাজটা কী? নৃপতি হওয়া যদি তাঁর জন্য মানসিক চাপের এবং মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তো এর চেয়ে তাঁর পূর্বের জীবনই ভালো ছিল। এখন কী করবেন তিনি? ব্রাহ্মণদের উপেক্ষা করে বিচারের সম্পূর্ণ দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেবেন? তাহলে ব্রাহ্মণ সমাজ এবং ঋষিদের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে উঠবে। এমনকি দেবগণও তাঁর প্রতি তাঁদের সমর্থন তুলে নেবেন। তাহলে? বিচারের নামে ব্রাহ্মণদের এই প্রহসন চলতেই থাকবে? ধনুশের মতো যুবকেরা ব্রাহ্মণদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে প্রশংসা পাবার পরিবর্তে তারা অবিচারের শিকার হয়ে ক্ষোভে-দুঃখে-অপমানে আত্মঘাতী হবে? অথবা অবিচারের শিকার হবার ভয়ে তারা নিজেদের গোত্রের, এমনকি নিজের পরিবারের কোনো কন্যাকে ব্রাহ্মণদের দ্বারা নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হতে দেখেও চুপ করে থাকবে?

শাস্ত্রীয় বিধানের রক্ষাকবচ থাকায় ব্রাহ্মণদের উশৃঙ্খলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, তিনি নৃপতি হবার পূর্বে গোত্রপতিগণ এ বিষয়ে কোনো প্রতিকার করতে পারেননি, বরং ব্রাহ্মণদের ইন্দনে অপরাধী ব্রাহ্মণদের অপরাধ আড়াল করেছেন। বড্ড অসহায় লাগে বেণের, চষকের পর চষক সোমরস গলাধঃকরণ করেন তিনি, কিন্তু এই সংকট থেকে উত্তরণের কোনো উপায় খুঁজে পান না। নেশাতুর চোখে কেবল ধনুশের জলজ্যান্ত চেহারাটা ভাসতে থাকে, মনে হয় এই তো ধনুশ তাঁর চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে, এখনই হয়ত বলে উঠবে- ‘ভ্রাতা, কাল প্রভাতে যাচ্ছ তো শিকারে?’

সারা বহির্ষ্মতীর মানুষ হয়ত এখন ঘুমে অচেতন, কিন্তু বেণের চোখে ঘুম নেই! নৃপতি হবার পর আজই প্রথম তিনি অনুভব করেন- নৃপতি হবার আনন্দের চেয়ে, নৃপতি হয়ে কোনো প্রজার প্রতি ন্যায় বিচার করতে না পারার বেদনা অধিক।

আজ প্রভাত থেকে ধনুশকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, পরে জানা যায় যে কেশবকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুরু হয় দুজনকে খোঁজা, অনেক খোঁজাখুঁজির পর ধনুশকে পাওয়া যায় পাহাড় চূড়ায়, মৃত অবস্থায়। তার বাম হাতের শিরা কাটা ছিল, কাটা জায়গা থেকে রক্ত ঝরে ভূমিতে জমাট বেঁধে গিয়েছিল। পাশে পড়ে ছিল শুকনো রক্তমাখা পাথরের ছুরি, ছুরিটা ওর নিজেরই। ধনুশের মৃতদেহ এবং রক্তমাখা ছুরি দেখে সকলেরই এই ধারণা জন্মে যে ধনুশ আত্মহত্যা করেছে। কেননা হাতের শিরা কাটা দেখে সকলেই নিশ্চিত হয় যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই ধনুশের মৃত্যু হয়েছে। যদি কেউ তাকে হত্যা করত তাহলে তার গলা কাটত, কিংবা শরীরে এলোপাথারি কোপের ক্ষত থাকত, সে-সব কিছুই নেই। কেউ তাকে হত্যা করতে চাইলে হাতের শিরা কেটে দিয়ে মৃত্যুর জন্য এত সময় দিত না। আর ধনুশও তার হাতের শিরা কাটতে দিত না কাউকে। সুতরাং অভিমানী ধনুশ যে সেই রাত্রের বিচারের দণ্ডের অপমান সইতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছে, সেই বিষয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ থাকে না। কিন্তু সকলের কৌতুহলের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় কেশব, কেশব গেল কোথায়?
রাত্রি পর্যন্ত কেশবের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি, কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ নেই নৃপতি বেণের, তাঁর অন্তরে কেশবের জন্য এতটুকু দয়া-মায়া নেই, তাঁর যত কষ্ট ধনুশের জন্য, এমন ভালো ছেলেটি যে আর কখনোই ফিরে আসবে না।

হঠাৎ পায়ের শব্দ পেয়ে বেণ বামদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন হংসপাদা। তিনি হংসপাদার চন্দ্রালোকিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তুমি ঘুমোওনি?’

উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন হংসপাদা, ‘তুমি শয্যায় যাবে না?’
‘আমার নিদ্রা পাচ্ছে না।’
‘রাত্রি অনেক হলো, আর পান কোরো না, এখন শয্যায় চলো।’
‘নিদ্রা না এলে শুধু শুধু শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না, তুমি শয্যায় যাও, নিদ্রা পেলে আমি শয্যায় আসব।’
‘বেশি দেরি কোরো না, কাল তোমার শিকারে যাবার কথা।’

বেণ কিছু বলেন না, হংসপাদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন কয়েক মুহূর্ত, তারপর দূর আকাশের নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে ভাবেন- হংসপাদাকে নিত্যদিনের মতোই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে, ও কী বুঝতে পারছে যে তাঁর অন্তরে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে? ওর কী ধনুশের জন্য খারাপ লাগছে না?

হংসপাদাও আর কিছু না বলে গৃহের দিকে পা বাড়ান, বেণ ঘাড় ঘুড়িয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে হাতের চষকে চুমুক দিয়ে ভাবেন- হংসপাদা খুব গুছিয়ে সংসার করতে পারে, সুন্দরভাবে পুত্র-কন্যা লালন-পালন করতে পারে, স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করতে পারে, অশ্বারোহণ আর অস্ত্র চালনাও জানে; কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তাঁর মনটা ঠিক বুঝতে পারে না, কী করলে তাঁর মনে একটু আনন্দ হয় কিংবা কী করলে দুঃখের কিছুটা উপশম হয়, তা ও জানে না। আর একটুও ভাবপ্রবণ নয়, শরীরে কামের তৃপ্তি দিতে পারে, কিন্তু হৃদয়ে প্রেমের পরশ বুলাতে পারে না। দীর্ঘ দাম্পত্যজীবন একসঙ্গে পাড়ি দিতে গেলে যে কেবল শরীরের কাম নয়, বর্ষাকালের আকাশের মেঘের মতো হৃদয়ে প্রেমও থাকা চাই, তবেই তো জীবন সুখময় হয়ে ওঠে। প্রেম ও কামের সম্মিলন তিনি পেয়েছেন সুরোত্তমার মাঝে, আহা সুরোত্তমা, কে জানে স্বর্গে এখন সে কেমন আছে!

নেশা বেশ ধরে বেণের, এই ধনুশের জন্য তাঁর বুকের ভেতর হাহাকার করে তো পরক্ষণেই হংসপাদার কথা চিন্তা করে কিংবা সুরোত্তমার কথা ভাবে। কিন্তু পুনরায় তাঁর চিন্তা ফিরে এসে ঘুরপাক খায় ধনুশের মৃত্যু আর সমাজকে ঘিরে, যেখানে তিনি একজন অসহায় নৃপতি।
‘কী রে, তুই এখনো পান করছিস? রাত্রি যে শেষ হতে চলল!’ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গৃহের বাইরে এসে পুত্রকে দেখে বলেন অঙ্গ।
হাতের শূন্য চষক উল্টে ধরেন বেণ, ভূমিতে রাখা সোমরসের ছোট্ট মৃৎপাত্রটি হাতে নিয়ে সেটিও উল্টে ধরেন তিনি। তারপর পিতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমার পাত্রের সোমরস শেষ হয়ে গেছে! পিতাশ্রী, আপনার কাছে সোমরস আছে?’

‘থাকলেও তোকে এখন দিচ্ছে কে!’
‘একটু দিন না পিতাশ্রী।’
‘এক ফোঁটাও না!’
‘কাল আমি আপনাকে দুটো গরুর বিনিময়ে দুই কলসি সোমরস এনে দেব!’
‘আমাকে কী মর্দপ ইন্দ্রদেব পেয়েছ! সোমরস আমি পান করি বটে, তবে আমার ইন্দ্রদোষ নেই!’
‘হা হা হা…..পিতাশ্রী, ইন্দ্রদেবকে নিয়ে আড়ালে আপনিও রসিকতা করেন, অথচ লোকের সামনে এমন ভাব দেখান যেন আপনি ইন্দ্রদেবকে কত শ্রদ্ধা করেন!’

‘ইন্দ্রদেবকে আমি অশ্রদ্ধা করিনে, কথার কথা বললাম আর কী।’
‘সে আপনি যাই-ই বলুন পিতাশ্রী, আপনার মনোভাব আমি বুঝতে পেরেছি!’
‘বাজে কথা রেখে এখন শয্যায় যাও।’
‘নিদ্রা আসছে না পিতাশ্রী, দুশ্চিন্তা আমার নিদ্রা হরণ করে নিয়েছে।’
‘তোর দুশ্চিন্তা করার তো কোনো কারণ দেখছি না।’

‘আপনি দুশ্চিন্তা করার কোনা কারণ দেখতে পাচ্ছেন না পিতাশ্রী! সত্যিই আপনি একজন সুখী মানুষ, একজন সুখী গোত্রপতি ছিলেন।’
‘নৃপতি যদি সোমরস পান করে ভোরবেলায় ঘুমিয়ে বেলা দ্বিপ্রহরে শয্যা ত্যাগ করে, তাহলে মানুষ তেমন নৃপতির কথা মানতে চাইবে!’
‘নৃপতি! হা হা হা, আমি নৃপতি পিতাশ্রী!’
‘তা নয় তো কী!’

‘ধনুশ, ধনুশ আমাকে পুতুল নৃপতি বলেছিল পিতাশ্রী, সত্যিই আমি পুতুল নৃপতি! প্রকৃত নৃপতি তো মনু আর ঐ ব্রাহ্মণ পুরোহিতগণ, যাদের বিধানে সমাজ পরিচালিত হয়!’
‘অর্বাচীনের মতো কথা বলিস না।’
‘আমি অর্বাচীনের মতো কথা বলছি পিতাশ্রী? সত্য করে বলুন তো সমাজ পরিচালনার রজ্জু কী ব্রাহ্মণদের হাতে নয়?’
‘তোর হাতেও কম দায়িত্ব নয়।’
‘আমার দায়িত্ব তো কেবল বর্হিশত্রুর হাত থেকে গোত্রের মানুষকে রক্ষা আর অনার্যদের ওপর আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়া।’
‘কেন নৃপতি হবার পর গত কয়েক মাস ক্ষত্রিয় অপরাধীদের দণ্ড তো তুই-ই দিয়েছিস।’

‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্রাহ্মণদের পরামর্শ নিয়ে দণ্ড দিতে হয়েছে। আর ব্রাহ্মণ অপরাধীকে কোনো দণ্ড দিতে পারিনি।’
‘ব্রাহ্মণের অপরাধ দণ্ডনীয় নয়, তাদের অপরাধের দণ্ড স্বয়ং ঈশ্বর দেবেন! যা শাস্ত্রীয় রীতি, বংশ পরম্পরায় হয়ে আসছে, তা তো মেনে নিতেই হবে।’
‘তা বলে অন্যায়ের প্রতিবাদকারী ধনুশকেও দণ্ড পেতে হবে?’
‘ধনুশ ব্রাহ্মণ সন্তান কেশবের অঙ্গে আঘাত করে অন্যায় করেছিল।’
‘ধনুশ কোনো অন্যায় করেনি পিতাশ্রী। ধনুশের জায়গায় আমি থাকলেও একই কাজ করতাম।’
‘তুই এখন নেশাগ্রস্ত, অসঙ্গত কথা বলছিস।’
‘আমি নেশা করলেও আমার জ্ঞান লুপ্ত হয়নি পিতাশ্রী, আমি যুক্তিসঙ্গত কথাই বলছি; এবং আমি এটাও বলছি যে অন্যায়কারীর কোনো জাত দেখা উচিত নয়, ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় সকল জাতের অন্যায়কারীকেই একই রকম দণ্ড দেওয়া উচিত।’

‘এইসব অর্বাচীন কথা বলে তুই ব্রাহ্মণদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলিস না। এমনিতেই কেশবকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ব্রাহ্মণগণ অসন্তুষ্ট হয়ে আছেন।’
‘মরুকগে কেশব!’
‘নৃপতি হয়ে ওসব পাপের কথা বলিসনে।’
‘আমার মনে একটা কথা উঁকি দিচ্ছে পিতাশ্রী।’
‘কী কথা?’
‘ধনুশ কেশবকে হত্যার পর মৃতদেহ গুম করে কিংবা সরস্বতীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে তারপর নিজে আত্মঘাতী হয়নি তো!’
‘হে ঈশ্বর, তেমন কিছু না হোক, কেশব ফিরে আসুক।’
‘ধনুশ যদি তেমন কিছু করেই থাকে, তবে সে বীরের কাজ করেছে, ওকে আমার প্রণাম!’
‘অনর্থক কু-কথা বলিস না; যা, এখন নিদ্রায় যা। আমি যাচ্ছি।’

পুত্রের ওপর বিরক্ত অঙ্গ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে গৃহে প্রবেশ করেন। বেণ পিতার সঙ্গে কথা বলেও সুখ পান না চিন্তার বৈপরীত্যের কারণে। সুসময়ে-দুঃসময়ে এই ব্রহ্মাবর্তে একমাত্র যার সঙ্গে কথা বলে তিনি সুখ পান, যার সঙ্গে কথা বলতে বলতে রাত্রি ভোর হয়ে যায় তবু মনে হয় আলো না ফুটুক; সেই কুথানের সামনে দাঁড়াবার মতো মনের জোর এই মুহূর্তে তাঁর নেই! ধনুশ যে কুথানেরই কনিষ্ঠ ভ্রাতা! অপরাহ্ণে ধনুশের দেহ দাহ করার সময় শ্মশানে সবার থেকে দূরে গিয়ে একা বৃক্ষের নিচে উদাস হয়ে উপবেশন করে ছিলেন কুথান। বেণ তখন তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ান, কাঁধে হাত রাখেন। কুথান তাঁর দিকে না তাকিয়েই বলেন, ‘আমাকে একা থাকতে দাও সখা।




(চলবে.....)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা।

০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩০

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.