নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিটন আলম

মিটন আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতার যুদ্ধের দলিলপত্র

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

স্বাধীনতার যুদ্ধের দলিলপত্র



স্বাধীনতাযুদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। এটি একদিকে যেমন বেদনার-শোকের, তেমনি অন্যদিকে বীরত্বের ও গৌরবের। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। যাদের সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা তাঁরা আমাদের গৌরব ও অহংকার। তাঁরা জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। বেদনা আর বীরত্বগাঁথা গৌরবোজ্জল এই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট যথাযথভাবে তুলে ধরা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক পবিত্র দায়িত্ব।



স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিল প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সময়কালে বাস্তবায়িত “বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ১৫(পনের) খণ্ডে স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল প্রকাশিত হয়। দলিল খণ্ডগুলো সর্বমহলে যথেষ্ট সাড়া জাগায় ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভে সমর্থ হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে যায়। এ প্রেক্ষিতে জনসধারণের ব্যাপক চাহিদা মেটানোর এবং দলিল খণ্ডগুলো তাদের কাছে সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধী করে উন্নত প্রযুক্তিতে পুনরায় প্রকাশের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। অপরদিকে বাংলা একাডেমী “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” বিষয়ক “গ্রন্থ প্রণয়ন ও প্রকাশ” শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। এমতাবস্থায় বিগত সরকারের সময়ে প্রকল্প দু’টিকে একীভূত করে “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: দলিল ও ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ” শীর্ষক সমন্বিত প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলা মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।



বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়সীমা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে সারা বিশ্বে যা কিছু ঘটেছে তার তথ্য ও দলিলপত্র সংগ্রহ এবং সে সবের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস রচনা ও মুদ্রণের দায়িত্ব অর্পিত হয় মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের ওপর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর কাজ শুরু হয় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি থেকে।



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো একটি যুগান্তকারী ঘটনার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করা এবং বিকৃতির সম্ভবনা এড়িয়ে যাওয়া বস্তুত অত্যন্ত দুরুহ। এজন্যেই ইতিহাসের পরিবর্তে দলিল ও তথ্য প্রকাশই গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কয়েকটি খণ্ডে সংগৃহীত দলিলসমূহ প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দলিলপত্র সংগ্রহের সময়সীমা স্বাধীনতা যুদ্ধ কেন্দ্রীক হওয়ায় এর সত্যতা গুরুত্বপূর্ণ।



স্বাধীনতা যুদ্ধের পশ্চাতে বিরাট পটভূমি রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকে এই পটভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। এই পটভূমির ঘটনাবলী যাকে মুক্তিসংগ্রাম বলে অভিহিত করা যায়; তার অনিবার্য পরিণতিই স্বাধীনতা যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। তাই মুক্তিসংগ্রামের স্বরূপ জানা ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধকে তুলে ধরা সম্ভবই নয়। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশ করা হয়।

প্রথম খণ্ড : পটভূমি (১৯০৫-১৯৫৮)

দ্বিতীয় খণ্ড: পটভূমি (১৯৫৮-১৯৭১)

তৃতীয় খণ্ড: মুজিব নগর প্রশাসন

চতুর্থ খণ্ড: মুজিব নগর : প্রবাসী বাঙালিদের তৎপরতা

পঞ্চম খণ্ড: মুজিব নগর: বেতার মাধ্যম

ষষ্ঠ খণ্ড: মুজিব নগর: গণমাধ্যম

সপ্তম খণ্ড: পাকিস্তানী দলিলপত্র: সরকারি ও বেসরকারি

অষ্টম খন্ড: গণহত্যা, শরনার্থী ও প্রাসঙ্গিক ঘটনা

নবম খণ্ড: সশস্ত্র সংগ্রাম (১)

দশম খণ্ড: সশস্ত্র সংগ্রাম (২)

একাদশ খণ্ড : সশস্ত্র সংগ্রাম (৩)

দ্বাদশ খণ্ড: বিদেশী প্রতিক্রিয়া: ভারত

ত্রয়োদশ খণ্ড: বিদেশী প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘ ও বিভিন্ন রাষ্ট্র

চতুর্দশ খণ্ড: বিশ্বজনমত

পঞ্চদর্শ খণ্ড: সাক্ষাৎকার

ষোড়শ খণ্ড: কালপঞ্জী ও নির্ঘন্ট



মূল পরিকল্পনায় ৭২০০ পৃষ্ঠা মুদ্রণের পরিকল্পনা থাকলেও তথ্য ও প্রামাণ্য সংগ্রহের পরিমাণ বিপুল হয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত— পরিবর্তন হয়। নতুন পরিকল্পনায় প্রতিটি খণ্ড প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠা, সর্বমোট ১৫০০০ পৃষ্ঠার মধ্যে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়।



দলিল এবং তথ্য প্রামাণ্যকরণের জন্য সরকার নয়-সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রামাণ্যকরণ কমিটি গঠন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর মফিজুল্লাহ কবীর এই প্রামাণ্যকরণ কমিটির চেয়ারম্যান।



কমিটির সদস্যরা হলেন:

ড. সালাহউদ্দীন আহম্মেদ, প্রফেসর, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ড. আনিসুজ্জামান, প্রফেসর, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ড. সফর আলী আকন্দ, পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী

ড. এনামুল হক, পরিচালক, ঢাকা যাদুঘর।

ড. কে এম করিম, পরিচালক, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার

ড. কে এম মোহসীন, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ড. শামসুল হুদা হারুন, সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জনাব হাসান হাফিজুর রহমান, সদস্য সচিব



প্রকল্পের কর্মীবৃন্দ নির্দিষ্ট গ্রন্থের জন্য দলিলাদি বাছাই করে প্রামাণ্য কমিটির নিকট পেশ করেন। প্রামাণ্যখরণ কমিটি সেগুলো নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কিনা তা পুংখানুপুংখরূপে যাচাই করেন। কমিটির সর্বষম্মত সিদ্ধান্তনুযায়ী যে সকল দলিল ও তথ্য প্রামাণ্য বলে গৃহীত হয়েছে, কেবলমাত্র সেগুলোই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদ্ধে যাঁরা আত্মাহুতি দিয়েছেন, যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সর্বব্যাপী প্রতিকুল পরিবেশে যাঁরা দেশপ্রেমের দীপশিখা অমলিন রেখেছেন তাঁদেরকে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এসব দলিলপত্রাদি অনুপ্রেরণা জোগাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.