নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নহারার স্বপ্ন

...........................

সাঈদ আজিজ

.............................................

সাঈদ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাক্তার হবার বিপত্তি

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

পেশাগত পরিচয় নিয়ে বিপদে আছি। দুর্মূল্যের বাজারে বেতন সর্বস্ব ডাক্তারের বহুত যন্ত্রণা। চড়ি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে, আই মিন লক্কড়-ঝক্কর মার্কা সিটি সার্ভিসে, সীট না পেলে ঝুলতে ঝুলতে যাই। তাতে আমার তেমন সমস্যা নেই, কিন্তু পাশের লোক যদি উৎসুক হয়ে কি করি জিজ্ঞেস করে, বিপদে পড়ে যাই। ডাক্তার পরিচয় দিলে তিনরকম সমস্যা দেখা দেয়, এক শ্রেণীর লোক আছে, তারা ডাক্তার মানেই টাকার খনি মনে করে। যখনি ডাক্তার পরিচয় দেই, এমন দৃষ্টিতে তাকায় যেন, 'ধুর, কিসের ডাক্তার, মনে হয় ওয়ার্ড বয় অথবা স্বাস্থ্য সহকারি হবে। ডাক্তার আবার এইসব বাসে চড়ে নাকি!' আরেক শ্রেণীর লোক আছে, ডাক্তার শোনা মাত্র রোগী হয়ে যায়। বাতের ব্যাথা থেকে শুরু করে খাদ্যে অরুচি, ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার রোগের সমাধান দিতে দিতে মেজাজ নষ্ট হয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ আবার সর্বজ্ঞানী। আমার চিকিৎসা শোনার পরে তারা সেই চিকিৎসা মডিফাই করা শুরু করে বিভিন্ন ডাক্তারের রেফারেন্স দিয়ে কেন এই ঔষধ সেই ঔষধের থেকে বেশি কার্যকর, সেই ব্যাপারে আমাকে বেশ কিছু জ্ঞান বিতরণ করে, আমি মাথা ঝাকিয়ে সায় দিয়ে যাই। সবচেয়ে বিরক্তিকর হল তৃতীয় শ্রেণী। এরা দ্বিতীয় শ্রেণীর-ই উপশ্রেনী বলা যায়, তারা ডাক্তার পরিচয় পাওয়া মাত্র কেন এলপ্যাথির চেয়ে হোমিওপ্যাথি অধিক কার্যকর সে ব্যাপারে ব্যাপক জ্ঞান বিতরণ শুরু করে। আশে পাশের মানুষ সবাই তার সাথে একমত হয়ে যায়। দু-তিনজন বেরিয়ে যায় যারা বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন, এলপ্যাথিক চিকিৎসায় কোন ফল পাননাই, অথচ হোমিওপ্যাথি খেয়ে এখন সম্পুর্ণ সুস্থ্য। সবশেষে সবাই মিলে আমার সামনেই বিভিন্ন হুজুরের পানি পড়া, পাগলা মলম, কবিরাজি ঔষধ ইত্যাদি কেন এলপ্যাথিক্র চেয়ে ভাল, সেই বিষয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু করে। সেই আলোচনা শেষ হবার আগেই আমি গন্তব্যে পৌঁছে যাই, এবং সবার অজান্তে মুখ লুকিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ি। এসব অভিজ্ঞতার কারণে আমি কখনোই যাত্রাপথে ডাক্তার পরিচয় দেই না। বলি, আমি ছোটখাট সরকারি চাকুরি করি, কেউ আর ঘাটায় না। হাসপাতাল থেকে ফোন আসলে এমন আস্তে আস্তে কথা বলি যেন পাশের কেউ শুনতে না পায়। আজ সেলবাজারের এড দ্যাখে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ক্যামকর্ডার কিনলাম। যার থেকে কিনলাম, সে জানতে চাইল আমি কি করি। আমি বললাম, ভাই, আমি একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চাকুরি করি। সে দিব্যি মেনে নিল। অথচ দেশের সাধারণ জনগন জানেনা, একটা সরকারী ডাক্তারের বেতনের চেয়ে একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্কের কর্মকর্তার বেতন কয়েকগুণ বেশি। এই ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে উঠা প্রাইভেট মেডিকেলের ভুড়ি ভুড়ি ডাক্তারের দেশে 'ডাক্তা্রি' একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পেশায় পরিণত হয়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২১

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: হুমম... সরকারের উচিত সরকারী চাকরির বেতনের স্কেল বাড়ানো, সামঞ্জস্যপূর্ণ করার খাতিরে...

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:০৯

সাঈদ আজিজ বলেছেন: ডাক্তার, অর্থাৎ স্বাস্থ্য ক্যাডার কিন্তু সরকারি অন্য ক্যাডারের থেকেও অনেক বেশি বঞ্চিত। আপনি যদি এডমিন ক্যাডারের দিকে তাকান, তাহলেও দেখবেন, সেখানে এমনকি ম্যাজিস্ট্রেটরা পর্যন্ত নিজের প্রয়োজনে একটা গাড়ি পায়, একটা সরকারি বাসা পায়, একজন পিয়ন পায়।আর ডাক্তারদের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সমপর্যায়ের আমরা তো দূরে থাক, অধ্যাপকরা পর্যন্ত কোন গাড়ি বা পিয়ন পায়না। উভয়েই প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, আর যদি ঠোঁটকাটার মত সত্য কথা বলি, তাহলে বলতে হয়, ডাক্তারেরা অই ডিগ্রি পাস এডমিন ক্যাডারের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী এবং কম্পিটেন্ট, কিন্তু তারা ক্ষমতার বলে কি অদ্ভুত বিশ্রী একটা অসামঞ্জস্যতা তৈরি করে রেখেছে বিসিএস ক্যাডারে!ীটা হিন্দুদের শ্রেনী প্রথার চেয়েও ন্যাক্কারজনক!

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: ভাই আপনার জন্য কেবলই সমবেদনা...।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:০০

সাঈদ আজিজ বলেছেন: া হা হা, ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১

রানা িসরাজুল বলেছেন: সমবেদনা...।

৪| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

ইলুসন বলেছেন: এই ব্যাপারগুলো কেউ দেখবে না। সবাই শুধু কয়েকজন প্রফেসরের আয় দেখে বাকি সব ডাক্তারকে বিচার করে। সবার অবস্থা যে সমান না, ডাক্তারাও যে মানুষ সেটা কেউ বুঝতে চায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.