![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালো নাম মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী।কল্পবিজ্ঞান, সাইকোলজিক্যাল গল্প এবং ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। এসব নিয়েই লিখছি অল্পবিস্তর।
২২৬৯ সালের এক সকাল।
আজকের সকালে খুব বিষণ্ণ ভাবে ঘুম ভাঙল আমার। রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। খিদেয় চো চো করছে পেট। কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। খাওয়ার মতো মানসিক অবস্থা নেই আমার। শুধু আমার কেন‚ পৃথিবীর কারোই বোধহয় নেই। আজ পৃথিবীর বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ একটি দিন। আজ পৃথিবীর সকল মানুষ পৃথিবী ছেড়ে এক নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
পৃথিবীতে গত দুশো বছরে পরিবেশের যার পর নাই ক্ষতি হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গলে গিয়েছে হিমালয়ের বেশিরভাগ বরফ। ভারত‚ বাংলাদেশ‚ নেপাল এবং শ্রীলংকা পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে আরো অনেকগুলো দেশ।
সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাও বেড়েছে অস্বাভাবিক রকম ভাবে। সামুদ্রিক জীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত আজ।
ওজন স্তর ক্ষয়ে গেছে। ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির কারণে মানুষের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে।
শুধু তাই নয়‚ বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান ২১% থেকে কমে ১৫% এ ঠেকেছে। বায়ুমণ্ডল নেমে এসেছে অনেক নিচে।
মানব জাতির অস্তিত্ব যখন বিপন্ন‚ ঠিক তখন পৃথিবীর মতো ঠিক আরেকটি গ্রহের সন্ধান পায় বিজ্ঞানীরা। যার নাম দেয়া হয়েছে- কেপলার নাইন নাইন্টি ওয়ান ডি। গ্রহটিতে একদল রবোট পাঠিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে বিজ্ঞানীরা এবং গ্রহটিকে বসবাসের উপযোগী বলেই মনে করেছে।
এক বছর লেগেছে পৃথিবীর সকল দেশের সরকারকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে যে‚ সকল মানুষকে সেই গ্রহটিতে স্থানান্তর করা হবে এবং স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করবে মানবজাতি।
একটি প্রজেক্ট তৈরি করা হলো তখন-প্রজেক্ট মেগা মাইগ্রেশন। এই প্রজেক্টের কাজ হলো‚ সকল মানুষকে ধারণ করা যাবে এমন একটি সুবিশাল স্পেসশিপ তৈরি করা। সেই স্পেসশিপে করে সকল মানুষকে পৌঁছে দেয়া হবে নতুন আবিস্কৃত গ্রহটিতে। প্রাচীন মাইথোলজিতে ঠিক যেমনটা করেছিলেন নূহ কিংবা নোয়াহ!
এই প্রজেক্টের কমান্ডার বানানো হলো আমাকে!! আমি জিওসায়েন্টিস্ট। একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাইড জিওগ্রাফির প্রফেসর। পৃথিবীর এত বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী থাকতে আমাকেই কেন এই প্রজেক্টের কমান্ডার বানানো হলো সেটা নিয়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। পরে জানলাম যে‚ জিওসায়েন্সে বিজ্ঞান এবং সমাজতত্ত্ব উভয় বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে বলেই একজন জিওসায়েন্টিস্টকে নির্বাচন করা হয়েছে এই প্রজেক্টের নেতৃত্বের জন্য। কারণ প্রজেক্ট মেগা মাইগ্রেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো‚ নতুন গ্রহটিতে মানুষের সমাজ ব্যবস্থা কেমন হবে ‚তা নিয়ে একটি নীতিনির্ধারণী তৈরি করা।
আমি মনপ্রাণ ঢেলে এই প্রজেক্টের কাজে আত্মনিয়োগ করলাম। পাঁচ বছর লাগল একটি মেগা স্পেশশিপ তৈরি করতে। আরো দু'বছর লাগল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণে। তারপর‚ আজকের দিনটা ঠিক হলো মেগা মাইগ্রেশনের দিন হিসেবে।
আমার দশতলা বাসার খোলা বারান্দা দিয়ে পুরো শহরটা দেখা যায়। আমি সেই বারান্দায় দাড়িয়ে যখন এসব উথাল পাতাল ভাবছিলাম‚ তখন মিষ্টি কলিংবেল শুনতে পেলাম আমার দরজায়।
দরজা খুলে দেখি‚ বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট‚ মিয়ান এসেছে। মিয়ান অত্যন্ত সুন্দরী এবং উচ্ছল একজন নারী। গণিতে অসাধারণ প্রতিভা থাকার কারণেই তাকে বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট বানানো হয়েছে।
মিয়ান আমাকে দেখে বলল-
"ড. ত্রিশাদ‚ আপনাকে বিধবস্ত মনে হচ্ছে। আপনি ঠিক আছেন তো?"
"হ্যা। মিয়ান‚ আমি ঠিক আছি।"
"আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি ডক্টর‚ পৃথিবীর সব মানুষ টাউন সেন্টারে জড়ো হয়েছে। মেগা স্পেসশিপে তাদের ওঠাতে হবে। আপনার অনুমতি এবং নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।"
"ঠিক আছে‚ চলুন।"
"এভাবেই‚ আপনি কোন কিছু গোছগাছ করবেন না?"
"না‚ গোছগাছ করার কিছু নেই। চলুন।"
টাউন সেন্টারে এসে আমি হতবিহবল হয়ে গেলাম। পৃথীবির আনাচে কানাচে হতে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ জড়ো হয়েছে সেখানে। একেক জনের একেক ভাষা‚ একেক রকম গায়ের রং। তবে সবার চোখে একই রকম বিষণ্ণতা‚ একই রকম বেদনা। হাজার কোটি বছরের আবাসভূমি ছেড়ে যাওয়ার বেদনা‚ মাতৃভূমি ছেড়ে যাবার বিষণ্ণতা।
আমি বিরস কন্ঠে আদেশ দিলাম‚ "স্পেসশিপের দরজা খুলে দাও। সবাইকে স্পেসশিপে ওঠানো হোক।"
স্পেশশিপের অনেকগুলো দরজা। অনেক চটপটে দক্ষ কর্মী কাজ করছে সেখানে। মাত্র বারঘন্টার মধ্যে সব মানুষকে ওঠানো হয়ে গেল স্পেসশিপে।
পৃথিবীর সব মানুষ স্পেসশিপের ভেতর‚ শুধু আমি আর মিয়ান বাইরে। বেশ ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে। শরৎকাল বোধহয়। মিয়ানের চুল উড়ছে বাতাসে। মিয়ান বিষণ্ণ গলায় ইলিয়টের কবিতার লাইন আবৃত্তি করল-
"দিজ ইজ দা ওয়ে দা ওয়ার্ল্ড এনডস...চলুন ত্রিশাদ। স্পেসশিপে ওঠা যাক।"
বলেই আগে আগে হাটা দিল সে। দেখতে দেখতে উঠে গেল সিঁড়ি বেয়ে। এক জন কর্মী দাড়িয়ে আছে দরজায়। আমি গেলেই দরজা বন্ধ করে উড়াল দেবে স্পেসশিপ।
মিয়ান দরজা হতে চেচিয়ে বলল-
"ত্রিশাদ‚ উঠে পড়ুন।"
"আমি যাচ্ছি না! দরজা বন্ধ করে স্পেসশিপ চালু করা হোক।"
মিয়ানের চোখ কপালে উঠে গেল। "আপনি কি বলছেন ড. ত্রিশাদ? উঠে পড়ুন প্লীজ!!"
"আপনাকে স্পেসশিপের চার্জ দিলাম মিয়ান। খেয়াল রাখবেন।"
"আপনাকে ছাড়া আমরা যেতে পারিনা ডক্টর..."
"আমি এই প্রজেক্টের কমান্ডার। আমি যা নির্দেশ দেব। তাই হবে এই প্রজেক্টে। আমি নির্দেশ দিচ্ছি‚ দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক।"
স্পেসশিপের কর্মীর আমার নির্দেশ পেয়ে সবগুলো দরজা বন্ধ করে দিল। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি মিয়ানের বিষণ্ণ‚ বিস্মিত চোখ দু'টো দেখতে পেলাম।
আমার চোখের সামনে স্পেসশিপটি উড়াল দিল আকাশে। ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল দৃষ্টি সীমা হতে।
স্পেসশিপ চলে যেতে আমি অলস পায়ে হাটতে লাগলাম পরিত্যক্ত নগরীর রাস্তা ধরে। চারিদিকে খাঁ খাঁ নির্জনতা। কখনো আর কোন মানুষ এই রাস্তা ধরে হাটবে না‚ ভাবতেই বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল! আমি বড় বড় দালান‚ শপিং মল ফেলে হাটতে হাটতে চলে এলাম শহরের শেষ প্রান্তে।
এখানে একটি সমাধিস্থল রয়েছে। সমাধিস্থলে ঢুকে আমি দাড়িয়ে পড়লাম ইরিনার কবরের সামনে। ওর কবরের উপর জেসমিন ফুল ফুঁটেছে। সুন্দর গন্ধ আসছে জেসমিন থেকে।
এখানে শুয়ে আছে ইরিনা; আমার ইরিনা! এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীতে ইরিনাকে একা রেখে কি করে যেতাম আমি!!
ইরিনা‚ জীবনের শেষ ক'টা দিন আমি তোমার কাছে থাকতে চাই। মনে আছে? বিয়ের রাতে তুমি আমায় বলেছিলে‚ "যদি এমন হতো‚ পৃথিবীর কোথাও কেই নেই‚ শুধু তুমি আর আমি। আদম আর ইভের মতো!"
আজ সেই দিন ইরিনা। এমন দিনে চুপ করে থেকো না ইরিনা‚ প্লীজ কথা বলো!
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১
একলা চলো রে বলেছেন: ভালো লাগা গ্রহণ করলাম। ধন্যবাদ জানবেন।
২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: দারুন লিখেছেন তো--- ভাল লাগা রেখে গেলাম
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
একলা চলো রে বলেছেন: ভালোলাগা কুড়িয়ে নিলাম আপনার। ভালো থাকবেন!
৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪
আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: কল্পগল্প হয়নি, গল্প হয়েছে। খুব ভালো একটা গল্প. মানবিক অনুভুতির তীব্রতায় দারুন ফিনিসিং। যদিও বিজ্ঞানের নানা ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা ছিল। ভালোলাগা জানবেন
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২
একলা চলো রে বলেছেন: মানবিক গল্পই লিখতে চেয়েছিলাম শুরুতে। যাই হোক‚ ভালো লাগা জানলাম।
কল্পগল্প মানেই পদার্থ কিংবা গণিত নিয়ে হবে এমনটা ভাবি না। বিজ্ঞানে অনেক শাখা রয়েছে। মনোবিজ্ঞান কিংবা পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়েও কল্পগল্প হতে পারে।
বৈজ্ঞানিক দুর্বলতা এবং কল্পগল্পের সংজ্ঞা ও উপযুক্ততা নিয়ে বিস্তারিত মতামত জানালে বাধিত হতাম। ভালো থাকবেন!
৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: শেষ অংশটুকু বেশি মেলোড্রামাটিক হয়ে গেছে। গল্প সাদামাঠা।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
একলা চলো রে বলেছেন: তাই বোধহয় ‚ তবে মেপে মেপে চিনি দিতে ইচ্ছে হয় না সবসময়!
অল্পকথায় আপনার মতো সুন্দরভাবে মতামত ব্যক্ত করতে দেখিনি কাউকে।
পড়ার জন্য এবং মন্তব্য রেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৪
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: অসাধারণ, বিশেষ করে শেষ লাইন টা।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯
একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন তাবাসসুম।
৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৪
আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: একসাথে এত বিলিয়ন মানুষ এক টাউন সেনটারে জড় হইলো কিভাবে? কয় শত কিলোমিটার বড় সেই সেণ্টার? মাস এভাকুয়েশন হইলেও একেবারে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা পাগলেও করবেনা, অন্তত ২ ধাপে হবে মিনিমাম দুর্ঘটনা র আশংকা থাকলেও। আপনি এভাবে বলতে পারতেন যে শেষ ধাপের এভাকুয়েশন এর সময় যেতে চাইলেননা। একেবারেই শেষ মুহুর্তে ঢুকতে গিয়েও বেরিয়ে এলেন।
আরো বলা যায়, তবে নিজের লেখা নিয়ে নিজে ভাবুন। ১৫% অক্সিজেন বললেন, ভেবে দেখুন আরো। বায়ুমন্ডল নীচে নেনে এলে কি হবে? মানে কি নিচে নামার?
একটা সায়েন্স ফিকশন যফি বলতে চান, বলবো যে হয়নি। সমস্যা কই, ঘটনাপ্রবাহ আর সমাধান কই বিজ্ঞানভিত্তিক?
তাই বলেছি, এটা মানবিক গল্প বলা যায়। ধন্যবাদ
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩০
একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কার করে বুঝানোর জন্য।
৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: কল্প গল্প নাকি মানবিক গল্প জানিনা , তবে লেখকের কল্পনা শক্তি আর লিখার স্টাইল আমার ভাল লেগেছে ।
লেখক অনেকদূর এগুবেন , এমতই প্রত্যাশা ।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫০
একলা চলো রে বলেছেন: প্রত্যাশাই অনুপ্রেরণা! অনেক ধন্যবাদ ।
৮| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১৯
মনিরা সুলতানা বলেছেন: লেখায় ++++++
২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ!
৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩৭
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লাগলো
২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ!
১০| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬
অগ্নি কল্লোল বলেছেন: ভালো লেগেছে। । । ।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৪
একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪০
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার লেখা বেশ ভালো লেগেছে। গল্প ভালো লাগা জানবেন।