নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মধ্যরাতের আগন্তুক

তুমি, আমি এবং আমাদের ছোট্ট ছোট্ট খুনসুটি নিয়েই কেটে যাচ্ছে বেশ।

মধ্যরাতের আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ খুনের শহর

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৩

গল্পঃ খুনের শহর

১।
-"আন্টি, রফিক চাচার দোকান কোনটা বলবেন একটু?" - কন্ঠটা শুনে সায়রা বানু পিছু ফিরে দেখলেন একটি ছেলে মিষ্টি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে দোকানটা দেখিয়ে দিলেন। সন্ধ্যা পার হয়ে গিয়েছে, বাসায় ফেরা দরকার বেশ দেরী হয়ে গিয়েছে। দুপুর বেলায় খেয়ালের বসে শপিং করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন।অনেক কিছু কিনেছেন আজকে, ব্যাগে হাত একদম পরিপূর্ন। তাড়াহুড়ো করে হাটতে থাকলেন বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় ফিরলে মেয়েটা নিশ্চিত ভাবেই বলবে -" মা, আমার জন্য গত সপ্তাহে যে জামা টা বলেছিলাম সেটা কি এনেছো।আজও নিয়ে আসোনি তাইনা। আমি কিন্তু রাতে খাবোনা বলে দিলাম। " মেয়েটা হয়েছে পুরো বাবার মত, শুধু ছটফট করে দুদন্ড শান্তিতে বসে না। আপন মনে ভাবতে ভাবতে হেটে যাচ্ছেন রাস্তা দিয়ে। হুট করে কেন জানি মনে হলো কেউ যেন উনার পিছু নিয়েছে। পিছু ফিরে তাকানোর আগেই কে যেন উনার মুখ টা চেপে ধরলো। জ্ঞান হারানোর আগে হাতের ব্যাগগুলো বুকের সাথে জাপটে ধরলেন, ব্যাগে উনার মেয়ের শখের জামাটা আছে। মিষ্টি একটা গন্ধ উনার নাকের মধ্যে লাগলো। আবেশে চোখদুটো বুজে আসলো, চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল।।

২.
- "বরকত মিয়া , আমারে এককাপ চা দাও তো।সকাল থেকে শরীর টা কেমন ম্যাজম্যাজ করতেসে"
- " আইচ্ছা স্যার দিতাসি একটু খাড়ান। অই মানিক, স্যাররে একটা চেয়ার দে।"
ওসি মিজানুর রহমান এই এলাকায় এসেছেন আজকে নিয়ে তিনমাস হয়েছে। ভেবেছিলেন এবার বোধহয় শহরের দিকে বদলি হবেন আর বউ বাচ্চাকে নিয়ে আসবেন কিন্তু বিধিবাম তা আর হলোনা। তবে এই এলাকাটাও খারাপ না, ছিমছাম নীরব। রাতের বেলায় এলাকায় বের হলে ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লেগে শরীর জুড়িয়ে যায়।
-"নেন স্যার, আপনের চা, আজকে কড়া কইরা লিকার দিছি, মজা পাইবেন খায়া।" বরকতের কথায় ধ্যান ভাঙলো ওসির। চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই শরীরটা চাঙ্গা হয়ে গেল।
-" ফার্স্ট ক্লাস হয়েছে চা টা। বিকালে আবার আসবো বুঝলে বরকত।" ওসির প্রশংসা শুনে বরকত তার পান খাওয়া দাঁত বের করে হাসলো।

চোখ মেলে সায়রা বানু বেশ কিছুক্ষন বুঝতে পারলেন না উনি কোথায় আছেন কিংবা কতক্ষন ঘুমিয়েছেন। মাথাটা প্রচন্ড ভারি হয়ে আছে। হুট করে মনে পড়লো সন্ধ্যার কথা। নড়ার চেষ্টা করে বুঝলেন যে হাত পা পিছমোড়া করে বাধা। চিৎকার দেবার ও সুযোগ নেই কারন মুখে কিছু একটা ঢুকানো আছে সেটা কাপড় নাকি অন্যকিছু সেটা বোঝার জো নেই। চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন একটা মাঝারি সাইজের রুম, একটা ডিম লাইট জ্বলছে, আবছা আলোতে দেখলেন রুমের কোণায় একটা আলমারি রাখা আছে আর উনার সামনে আরেকটা চেয়ার রাখা। -"আচ্ছা, আরো কাউকে কি আমার মত এনে বেধে রেখেছিলো নাকি?" - নিজের মনকেই প্রশ্নটা করলেন সায়রা বানু। সময় বোঝা যাচ্ছেনা এখন কয়টা বাজে, বাসায় মেয়েটা একা। স্বামী বাসায় ফিরেছে নাকি জানা নেই। দরজার সামনে কারো পায়ের আওয়াজ শোনা গেলো। দরজার লক খুলে কেউ যেন প্রবেশ করছে। ক্যাচ ক্যাচ করে দরজাটা খুলে আগন্তুক ভিতরে প্রবেশ করলেন। সায়রা বানুর বুক থেকে যেন হৃৎপিন্ড বের হয়ে যাবে এত জোরে ধুকধুক করছে।
৩.
ওসি মিজানুর রহমান থানায় ঢুকার পরই কনস্টেবল হারুন দাঁড়িয়ে সেলুট দিলো। নিজের চেয়ারে যেয়ে বসার সাথে সাথে এসআই শফিক রুমে এসে ঢুকলো।
-" স্যার, এক লোক এসেছে তার স্ত্রীকে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না দুইদিন ধরে। আপনার সাথে দেখা করার জন্য বসে আছে। সকাল ৭ টায় নাকি এসেছে, হারুন বললো। আপনার সাথে দেখা না করে যাবেনা।" - ওসি মিজানুর রহমান একটা মুচকি হাসি দিলেন। মনে মনে ভাবলেন নিশ্চয়ই পরকীয়া। বউ পালিয়ে গিয়েছে প্রেমিকের সাথে। -"দাও, পাঠিয়ে দাও। কতই তো এমন কেস হ্যান্ডেল করলাম।এটা আর এমন কি হবে।" এসআই শফিক রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষন পর হারুন মিয়া রোগা পাতলা চেহারার একজনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। লোকটার চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে যে খুব টেনশনে আছেন। মিজানুর রহমান উনাকে বসতে বললেন।
-" আপনার নাম কি এবং কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।বলুন।"
লোকটা যেন ভরসা খুজে পেল। হরবর করে বলতে শুরু করলো মিজানুর রহমান থামিয়ে দিলেন। বললেন -" আস্তে আস্তে বলুন।"
তারপর লোকটা বলা শুরু করলো -" স্যার, আমার নাম ইদ্রিস, এখানেই উত্তর পাড়ায় ৩ তলা বাড়ি আছে আমার, পৈতৃক বাড়ি। ছোট একটা ব্যবসা আছে আমার। একটা মেয়ে আছে। দুইদিন আগে আমার স্ত্রী দুপুর বেলায়
মার্কেট এ গিয়েছিলো শপিং করতে। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত খুজে পাওয়া যায়নি। মোড়ের এক দোকানদার নাকি দেখেছে বাড়ির দিকে আগাতে কিন্তু তারপর আর কেউ জানেনা কিছু।"
-" আপনার স্ত্রীর বয়স কত?
-"স্যার, বায়ান্ন বা তিপ্পান্ন হবে।" লোকটার উত্তর শুনে ওসি মিজানুর রহমানের মনক্ষুন্ন হলো। ভেবেছিলেন পরকীয়ার কেস কিন্তু নাহ সেরকম না।
-"কাউকে কি সন্দেহ করছেন?
-" না স্যার, আমি নিরীহ মানুষ। কারো সাতে নাই পাচেও নাই। আমার কোন শত্রু নাই স্যার। কাউকেই সন্দেহ হয়না আমার।স্যার আপনি যেভাবেই হউক আমার স্ত্রীকে খুজে বের করেন।"
-" আচ্ছা ঠিকাছে, একটা জিডি করে যান। বাকিটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।খুব শীঘ্রই আমরা সমাধান ফেলবো। চিন্তা করবেন না। "
ওসি মিজানুর রহমানের কথায় লোকটি ভরসা পেল। এসআই শফিককে ডাক দিয়ে তার সাথে যেতে বললেন। রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই চেয়ারে হেলান দিয়ে চিন্তার সাগরে ডুব দিলেন।

৪।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়। সকাল থেকে আকাশটা কালো হয়ে আছে। বৃষ্টি হবে হবে করেও হচ্ছেনা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রাজু। মনটা বেশ আনচান করছে। অনেক দিন পর কাংখিত মানুষটাকে দেখতে পেয়েছে। কিছুক্ষন পর পর চোখের কোনে জল চলে আসছে আনন্দে। -"নাহ আজকে আর আবেগঘন হওয়া যাবেনা।" নিজের মনকে প্রবোধ দিলো রাজু। এগিয়ে গেল বদ্ধ রুমটার দিকে। লক খুলে রুমের ভেতর ঢুকে গেল।লাইট জ্বালিয়ে দিলো, দেখিলো ঘুম ভেঙে গিয়েছে উনার। -"ঘুম কেমন হয়েছে আপনার? চিনতে পেরেছেন আমাকে? দোকানটা কিন্তু খুজে পেয়েছিলাম আমি। " প্রান খুলে হাসি দিলো। সায়রা বানু প্রচন্ড অবাক হলেন। সেদিনের সন্ধ্যায় যে ছেলেটাকে দোকান দেখিয়ে দিয়েছিলেন সেই ছেলেটা। মনের ভেতর কেমন একটা ভয় ঢুকে গেল। চিৎকার দিতে চাইলেন কিন্তু মুখ বন্ধ থাকায় তা আর বের হলোনা। সায়রা বানুর সামনে রাখা চেয়ারে র
বানুর সামনে রাখা চেয়ারে রাজু ধপ করে বসলো।
-" চিৎকার করে লাভ নেই। আর শুধু শুধু শক্তি খরচ করেও লাভ নেই। আপনার আজ মুক্তি নেই। তারচেয়ে বরং একটা গল্প বলি শুনুন।আমার গল্প। আমি যখন খুব ছোট,কত বয়স ২ বছর মনে হয়। আমার মা তখন আমাকে আর আমার বাবাকে ছেড়ে চলে যায়। তবে মরে যায়নি, সুখের আশায় অন্যত্র চলে যায়।একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম আর আমার মায়ের অভাব খুব করে বুঝতে পারতাম।আমার বন্ধুরা তাদের মায়ের কোলে যখন ঝাপিয়ে পড়তো আমি তখন নীরবে চোখের পানি ফেলতাম বুকের ভেতর টা খুব ফাকা ফাকা লাগতো। মায়ের চলে যাওয়াটা বাবা মেনে নিতে পারেনি। আমার বাবা প্রায়দিন ই মাতাল হয়ে বাসায় আসতো আর মরার মত নিজের রুমে ঘুমিয়ে থাকতো। আমার যখন পনের বছর বয়স একদিন রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখলাম বাবা আমার পায়ের কাছে বসে চোখের পানি ফেলছে। শুনেছিলাম পুরুষদের নাকি চোখের পানি ফেলতে হয়না। কিন্তু বাবাকে দেখে আমার বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠে। আজ দুটো বছর আমার বাবা মরে গিয়েছে। আর আমার মা! সে তার নতুন সংসারে খুব সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, সেই মহিলাটি আপনি। আপনাকে মা বলে ডাকার খুব ইচ্ছা ছিল জানেন। অন্য মায়েরা যখন তাদের ছেলে মেয়েদেরকে আদর করতো আমি তখন আপনার শূন্যতা খুব করে অনুভব করতাম। কিন্তু এখন আপনার জন্য আমার মনে প্রচন্ড ঘৃনা কাজ জানেন। পৃথিবীতে কারো অস্তিত্ব যদি আমি বিলীন করে দিতে চাই সেটা আপনি। এবং আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে আজকে কিছুক্ষন পরই আপনার কোন অস্তিত্ব থাকবে না এই পৃথিবীতে। " প্রকান্ড হাসি দিয়ে উঠলো রাজু। সায়রা বানুর বুকের ভেতর কাপন ধরে উঠলো সে হাসিতে। ২৫ বছর আগের পুরাতন স্মৃতি গুলো এক নিমিষে চোখের সামনে ভেসে উঠলো। বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ের পর থেকে নিজের জীবনটা ঠিক মত মিলাতে পারছিলেন না।বিয়ের তিন বছরের মাথায় ছোট একটা ছেলে জন্ম নেয়। মানুষটাকে ঠিক মত মেনে নিতে পারেননি। তাই ছেলের ২ বছরের মাথায় সংসার সন্তান ছেড়ে ছুড়ে চলে যান। আবার বিয়ে দিয়ে থিতু হন। ছেলেটার চেহারা একদম উনার মত হয়েছে।
-"খারাপ লাগছে তাইনা। আমার এর থেকেও বেশি কষ্ট হয়ে হয়েছে জানেন। "- রাজুর কথায় সায়রা বানুর ধ্যান ভঙ্গ হলো। রাজু উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সায়রা বানু প্রানপন হাত ছুটানোর চেষ্টা করছেন। রাজু ফিরে এলো হাতে একটা ছুড়ি আর একটা ডিব্বা তাতে লাল কিছু একটার গুড়া আছে। সায়রা বানুর চিনতে ভুল হলোনা সেগুলো মরিচের গুঁড়া। ধীরে ধীরে সায়রা বানুর দিকে ছুরি নিয়ে আগানো শুরু করলো রাজু। শরীর টা কেন যেন অসাড় হয়ে গেল সায়রা বানুর। ভয়ের একটা শীতল ধারা মেরুদন্ড বেয়ে নিচে নেমে গেল। ছুরি দিয়ে পোজ দেয়ার আগে ডিব্বার মুখ খুলে ছুরির উপর মরিচের গুঁড়া লেপ্টে দিলো। ছোটবেলার কষ্টগুলো আজকে সব শোধ তুলতে হবে রাজুর। দুই হাতের উপর ছোট ছোট পোজ দিতে শুরু করলো। রক্তের ফোটা গড়িয়ে পড়ছে। প্রচন্ড যন্ত্রনায় পাগলের মত অবস্থা হয়ে গেল সায়রা বানুর। আরেকটা পোজ দিলো হাতের কবজি তে, গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করলো হাত থেকে। হাতদুটো অসাড় হয়ে গেল। নাড়ানোড় ক্ষমতা নেই আর। হাতের উপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিলো। সায়রা বানুর মনে হচ্ছে কেউ যেন উনার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মুখ দিয়ে চিৎকার করতে পারলে সম্ভবত পুরো দেশ আজকে উনার কন্ঠ শুনতে পেতো। রাজু এবার সায়রা বানুর দুই পায়ের গোড়ালি তে পোজ দিলো, পা থেকে চিরিক করে রক্ত বের হচ্ছে। ঘরের মেঝে লাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে রাজু মেঝের রক্তে নিজেকে গড়াগড়ি দিয়ে নিজেকে যেন রক্তে গোসল করে ফেললো। প্রচন্ড অট্টহাসিতে রাজু মেতে উঠলো। বহু বছরের জমানো ক্ষোভ আজকে ঢেলে দিয়েছে। মেঝে থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে ছুড়ি দিয়ে ধড় থেকে মাথাটা আলাদা করে ফেললো। বিচ্ছিন্ন মাথাটা হাত দিয়ে উচিয়ে ধরলো যেন ট্রফি জিতেছে কোন খেলায়। অমানুষিক চিৎকার দিয়ে সায়রা বানুর মৃত শরীরে এলোপাথারী ছুরি চালাতে লাগলো৷ আফসোস মৃতদেহে এলোপাথারী কোপ দিয়েও লাভ নেই কারন সায়রা বানু আর সেই কষ্ট অনুভব করছেন না। তিনি আছেন অন্য পারে। তিনি যে এখন সুখ দুঃখ অনুভব করার উর্ধ্বে।
৫।
ওসি মিজানুর রহমানের মেজাজ খুব খারাপ লাগছে। নিজের ভাগ্যকে নিজে দুষছেন। দুদিন আগে যেই লোক তার স্ত্রীর নিখোঁজের জন্য কেস করে গিয়েছিলেন সেই লোক এসে হাজির৷ প্রথমে ভালো ভাবে বুঝালেন যে কেস তদন্ত করে দেখতেসেন।কিন্তু সেই লোক নাছোরবান্দা৷ -"বেটা, তোরা কি বুঝবি। কইলেই কি সব বাইর কইরা ফেলানো যায়। মামার বাড়ির আবদার পায়া গেছে।" বিড়বিড় করতে করতে বরকতের দোকানে উপস্থিত হলেন। -" বরকত মিয়া, এক কাপ কড়া লিকারের চা দাও তো। সকাল থেকে মন মেজাজ খারাপ। চিনি কম আর আদা বেশি করে দিবা।" বরকত মিয়া তার পান খাওয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো -" বসেন স্যার। আপনের মন মেজাজ দেখি আজকে ভালা না৷ চা খাইলে দেখবেন মন ফুরফুরা হইয়া যাইবো " দোকানের পাশ দিয়ে একটা কলেজ পড়ুয়া মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ওসি মিজানুর রহমান মেয়েটাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেন। মেয়েটা নিজের ওড়না ঠিক করে, দ্রুত গতিতে হেটে চলে গেল৷ মিজানুর রহমানের ঠোটের কোণে একটা হাসি ফুটে ওঠলো। শরীরটা কেমন জেগে উঠছে, এই এলাকার হোটেল গুলোর খবর নেয়া হয়না বেশ অনেকদিন। এর মধ্যে বরকত মিয়া চা দিয়ে গেল, চুমুক দিয়েই মুখ টা বিকৃত হয়ে গেল। চিনিই দেয়নি।আবার ডাক দিয়ে চিনি দিতে বললেন। -"দিনটাই খারাপ যাবে মনে হচ্ছে"- বিরবির করে নিজের মনে বললেন।

রাত আটটা বাজে। বাসায় ফিরে জগ থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেন।প্রচুর কাজ জমে গিয়েছে৷ শফিক বিকেলে খবর দিয়েছে নিখোজ কেস এর নাকি কোন লিড পাওয়া গিয়েছে। সকালে শফিককে নিয়ে যাবেন বলে দিয়েছেন।ছেলেটা ভালো, ভবিষ্যতে ভালো করবে। মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো, চেয়ারটা ধরে তাল সামলাতে চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন।অন্ধকার হয়ে আসলো চারপাশ।

ওসি মিজানুর রহমান কতক্ষন ঘুমিয়েছেন বলা যাচ্ছেনা ঠিক। পানির ঝাপটা খেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন।নিজেকে চেয়ারে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলেন। ছাড়া পাওয়ার জন্য চেষ্টা করলেন কিন্তু সফল হলেন না। -"চেষ্টা করে লাভ নেই৷ বাধন খুলবে না। " সামনে তাকিয়ে দেখলেন একজন সুদর্শন তরুন বসে আছে। -" কিরে কুত্তার বাচ্চা, তুই আমারে বাইন্ধা রাখসস কেন? চিনস আমারে? বাধন খুইল্লা দেখ খালি, শুয়রের বাচ্চা তোরে এইখানে পুইতা রাইখা দিমু।" আগন্তুকের মুখে কোনরুপ ভাবান্তর দেখা গেল না। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়ে ওসির সামনে এসে দাঁড়ালো, প্রকান্ড এক ঘুসি এসে লাগলো নাক বরাবর। কট করে একটা শব্দ হলো। চেয়ার সহ উলটে পড়ে গেলেন। নাক টা অবশ হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে। কতক্ষন পর আগন্তুক টেনে তুললেন ওসি মিজানুর রহমানকে।প্রচন্ড ব্যাথায় কোকানো শুরু করলেন ওসি। আগন্তুকের মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷
-"স্যার, আপনার কি খুব ব্যাথা লেগেছে? আমি দুঃখিত স্যার।আমি এত জোরে মারতে চাইনাই।হাত ফসকে জোরে পড়ে গেছে।" -আগন্তুকের কথা শুনে ওসি মিজানুর রহমানের মাথায় আগুন ধরে গেল।
-" হারামীর বাচ্চা, একটা বার আমার বাধন খুইল্লা দেখ। তোর শরীর থেইক্কা আমি হাড্ডি- মাংস আলাদা কইরা দিমু।তোরে তোর বাপের নাম ভুলায় দিমু খালি একবার তোরে পাই। " -নাকের ব্যাথা ভুলে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন।
-"দুঃখিত স্যার, সেই সুযোগ আপনি পাবেন না। আর স্যার, আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে আমার আব্বা এই দুনিয়াতে নাই। অনেক দিন হলো মারা গেছেন। আর দুদিন আগে আমার মা কে এইযে এই ছুড়িটা দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসেছি।" আগন্তুক একটা ছুড়ি বের করে দেখালো। ওসি মিজানুর রহমান ঢোক গিললেন একটা। নাক থেকে ফোটায় ফোটায় রক্ত পড়ে জামা টা ভিজে যাচ্ছে। -" কি চাস তুই? কত টাকা চাস? যত টাকা চাস দিমু। তোরে আমি কিছু করমুনা। ছাইড়া দিমু। আমারে কিছু করিস না। " -ছুড়িটা দেখে মৃত্যু ভয় নিজের ভেতর পেয়ে বসেছে।
-"স্যার, আমার নাম রাজু৷ আমাকে ওই নামে ডাকবেন। আর আজকেই আপনার শেষ দিন। আপনাকে আমি নিজের হাতে মারমু। তবে মারার আগে একটা গল্প শোনাবো। " - রাজু উঠে ভেতরে চলে গেল। ওসি মিজানুর রহমান হাতের বাধন খোলার জন্য প্রানপন চেষ্টা করছেন।কিন্তু যত চেষ্টা করছেন ততই যেন বাধন টা আকড়েঁ ধরছে। রাজু ভেতর থেকে একটা বড় চাকু নিয়ে এসেছে। ফল কাটার চাকু। -" দুঃখিত স্যার, ওই চাকুটা ব্যবহার করবোনা। ওইটা দিয়ে আমার মা কে মেরেছি। ওটা ব্যবহার করলে অপমান করা হবে ছুড়িটাকে। " রাজুর কথা শুনে ওসি মিজানুর রহমানের মুখ সাদা হয়ে গেল। চিৎকার দেবার জন্য মুখ খোলার আগেই মুখে কাপড় দিয়ে আটকে দিলো রাজু।
-"চিৎকার দিয়ে লাভ নেই৷ তারচেয়ে একটা গল্প বলি শুনেন। ঠিক দুই বছর আগে একটা মেয়ে তার ছোট ভাইকে নিয়ে আপনার কাছে আসছিলো। বখাটেরা ছোট ভাইকে মেরে জখম করেছিলো সেই বিচার দিতে, আপনি কি করছিলেন স্যার মনে আছে? মনে আছে কুত্তার বাচ্চা কি করছিলি? মনে না থাকলে মনে করায় দিবোনা। পরদিন মেয়েটার গলায় দড়ি দেয়া লাশ খুজে পেয়েছিলো। ছোটবেলায় মা আমাকে ফেলে অন্য কারো কাছে সুখের আশায় চলে গিয়েছিলো। এই মেয়েটাকে খুব পছন্দ করতাম এই মেয়েটাও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। কি দরকার ছিলো সেদিন মেয়েটার সাথে কাজ টা করার? মেয়েটা বেচে থাকলে তুইও বেঁচে যেতি। চিন্তা করছি, তোরে তিলতিল করে মারুম আজকে। শুরু করি আয়। " রাজু উঠে দাড়ালো, ওসির সামনে দাঁড়ালো, ছুড়ি দিয়ে পুরুষাঙ্গটা আলাদা করে ফেললো এক কোপ দিয়ে। প্রচন্ড যন্ত্রনায় ওসি মিজানুর রহমান গোঙাতে শুরু করলেন। মেয়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কতদিন মেয়েটাকে দেখা হয়না, বুকের মধ্যে একটা হাহাকার করে উঠলো। -" কিরে কুত্তার বাচ্চা, রাত এখনো অনেক বাকী। এত তাড়াতাড়ি তো তোর মরা চলবে না রে। তিলতিল কইরা মারমু তোরে। " রাজুর কথা গুলো আবছা শুনতে পেলেন ওসি মিজানুর রহমান। তবে কোন প্রতিভাষ করতে পারছেন না।সেই শক্তি টুকু উনার নেই।তবে রাত অনেক দীর্ঘ। রাজু আবার উঠে দাঁড়ালো। অনেক কাজ বাকি এখনো।

পরিশিষ্টঃ
হোটেল থেকে বের হয়ে আজিজ মিয়া প্যান্টের বেল্টটা ভালোমত ঠিক করে নিলেন। সুরুজকে কিছু টাকা বোনাস দিতে হবে। কোথা থেকে যেন এত ভালো মেয়ে জোগাড় করে আনে।আজকের মেয়েটা যখন জোর জবরদস্তি করছিলো আজিজ মিয়া খুব উপভোগ করছিলেন। এদেরকে বশে আনার মাঝে আলাদা একটা পুরুষত্ব আছে। ভাবতেই মনের মাঝে একটা ফুরফুরে ভাব চলে এসেছে।গুনগুনিয়ে একটা গান ধরলেন।হঠাৎ করে কে যেন পেছন থেকে মুখ টা চেপে ধরল। ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতেই অনুভব করলেন ধারালো কিছু একটা উনার গলায় ভেতর দিয়ে চলে গেল। গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো। মাটিতে পড়ে গেলেন গলায় হাত দিয়ে। একটা সুদর্শন ছেলে হেঁটে যাচ্ছে,হাতে একটা ছুড়ি তা থেকে রক্ত ঝড়ছে। বৃষ্টি পড়ছে টিপটিপ করে।অনেক দিনের জমে থাকা বৃষ্টি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব একটি গল্প লিখেছেন।
তবে লেখাটা আর একটু গুছিয়ে লিখলে দারুন হতো।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:২২

মধ্যরাতের আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১০

নাহার জেনি বলেছেন: গল্পটি পড়ে কীটনাশক নাটকের কথা মনে পড়ে গেল।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৮

মধ্যরাতের আগন্তুক বলেছেন: নাটকটি দেখা হয়নি। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.