![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘটনা ঘটে স্বর্ণদ্বীপে।
স্বর্ণদ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটা ছোট্ট দ্বীপরাজ্য। জনসংখ্যা মাত্র কয়েক লাখ।
সেই দ্বীপে নির্বাচন হলো। আলো দল বিপুল ভোটে জয়লাভ করল। ভালো দল গেল হেরে। চার বছরের জন্য আলো দল বসল ক্ষমতায়। তারা মনের সুখে রাজ্যশাসন করতে লাগল। তিন বছর পর সেই দ্বীপে কতগুলো উপনির্বাচন হলো।
তাতে দেখা গেল ভালো দল সব আসনেই জয়লাভ করেছে।
আলো দল শাসক দল। তারা চিন্তিত হয়ে পড়ল। দলীয় প্রধান ডাকলেন দলের হোমরাচোমরাদের। আমরা হারলাম কেন?
তখন ব্যাপক গবেষণাকর্ম চলল। জরিপ করা হলো। কম্পিউটার দিয়ে অ্যানালাইসিস করা হলো জনগণের মত। নেতাদের কার্যক্রম।
শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যার মুখে গন্ধ, তার ভোট বন্ধ।
জনগণ নেতাদের মুখের গন্ধ খুব অপছন্দ করে।
তাহলে এর প্রতিকার কী।
বলা হলো, ভালো কোম্পানির টুথ পাউডার ব্যবহার করতে হবে। দুই বেলা দাঁত মাজতে হবে।
আলো দলের নেতারা ভালো টুথব্রাশ কিনলেন। ভালো ভালো টুথ পাউডার কিনলেন। তাঁরা সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা ভালো করে দাঁত মাজতে লাগলেন। শুধু দাঁত মাজা নয়, তাঁরা ভালো মাউথওয়াশ দিয়ে কুলিও করা শুরু করলেন। তাঁদের মুখে আর কোনো গন্ধ নেই। তাঁরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে দিলেন। কথা আর কথা। কথার চোটে দ্বীপে থাকাই হয়ে উঠল দায়। তারপর তাঁরা ফাইনাল ভোটের প্রচারণায় অবতীর্ণ হলেন। চার বছর পরে চূড়ান্ত ভোট। এবং দেখা গেল, আলো দলের নেতারা হেরে গেছেন।
তখন তাঁরা ধরলেন গবেষণা টুথব্রাশ টুথ পাউডারের কোম্পানিকে। তোমাদের ব্রাশ খারাপ, পাউডার খারাপ। তা না হলে আমরা হারব কেন?
টুথব্রাশ কোম্পানি বলল, ভালো দলও তো আমাদের টুথব্রাশ ও টুথ পাউডার ব্যবহার করেছে। ওরা তাহলে জিতল কেমন করে?
তখন আলো দলের নেতারা ধরলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে। তোমাদের সূত্রে কোনো ভুল আছে। আমরা কেন হারলাম, সেটা খুঁজে বের করো।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটা ব্যাপক অনুসন্ধান চালাল। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেল। জরিপ করল। কোশ্চেনিয়ার পূরণ করল। প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করল কম্পিউটারে। তারপর সেই সব ডেটা নিয়ে তারা বসল চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য। কত পিপে নস্য যে ফুরাল সেই সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে। সিদ্ধান্তে আসতে।
শেষে তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করল আলো দলের কাছে। তারা বলল, আমাদের আগের গবেষণার প্রাপ্ত ফলে সামান্য ত্রুটি ছিল। আসলে সমস্যাটা মুখের গন্ধে নয়।
সমস্যাটা মুখ খোলায়। মুখের কথার গন্ধে।
আমরা একটা ছোট্ট পরীক্ষা করেছি। নেতাদের টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে কথা বলতে দিয়েছি। আর ভোটাররা সেটা দেখেছেন নিজের বাড়িতে টেলিভিশনে বসে। তারপর দেখা গেছে, ভোটাররা তাঁকে ভোট কম দিয়েছেন, যিনি মুখ খুলেছেন বেশি। আর যিনি মুখ কম খুলেছেন, তিনি ভোট পেয়েছেন বেশি। তার দ্বারা বোঝা গেল, সমস্যাটা গন্ধে নয়, মুখ খোলায়।
যিনি মুখ বন্ধ রাখবেন, তিনি ভোট পাবেন বেশি।
যিনি মুখ খুলবেন, তিনি ভোট পাবেন কম।
কাজেই আমাদের নতুন ফাইন্ডিং হলো, যার কথায় গন্ধ, তার ভোট বন্ধ।
আমাদের পরামর্শ হলো: যদি আপনি ভোট বেশি পেতে চান, তাহলে আপনি কম কথা বলুন। যদি আপনি ভোট কম পেতে চান, কথা বেশি বলুন। নেতার কথার পরিমাণ প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণের বিপরীত আনুপাতিক।
আলো দলের প্রতিনিধি এই নতুন গবেষণায় খুশি হলেন।
এখন এই গবেষণালব্ধ সুপারিশ দলের ফোরামে উপস্থাপন করতে হবে।
এটা কে উপস্থাপন করতে পারবে?
সবাই চুপ করে রইল।
কারণ কী?
কারণ হলো, যার কথায় গন্ধ, তার নমিনেশন বন্ধ।
তাদের দলের উপনির্বাচন বিপর্যয়ের কারণ যিনি উপস্থাপন করবেন, তিনি কি পরের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন?
কাজেই গবেষক দলের সুপারিশ দলীয় ফোরামে উপস্থাপিত হলো না।
স্টালিনের মৃত্যুর পরে ক্রুশ্চেভ হলেন পার্টির সেক্রেটারি। তিনি পার্টির পলিটব্যুরোর বৈঠকে বলতে লাগলেন স্টালিন কী কী ভুল করেছেন। এই সময় কেউ একজন বলে বসল, এসব কথা আপনি এখন বলছেন কেন? স্টালিন যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন বললেই তো আর এই ভুলগুলো হতো না।
ক্রুশ্চেভ মাথা তুললেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, কে বলল কথাটা? কে? সাহস থাকলে হাত তোলো।
কেউ হাত তুলল না।
ক্রুশ্চেভ বললেন, আপনি আজ যে কারণে হাত তুলছেন না, সেই একই কারণে স্টালিনের সামনে আমি এই কথাগুলো বলিনি।
দলের নেত্রী ইউরোপ সফরে গেছেন।
তিনি ফিরে আসার পরে তাঁকে দলের নির্বাচনী সাফল্য বর্ণনা করছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান। তিনি বলছেন, এবারের নির্বাচনে আমরা খুব ভালো করেছি। আমরা হয়েছি দ্বিতীয়।
আর বিরোধী দল খুব খারাপ করেছে। ওরা শেষতম দলের জাস্ট এক ধাপ আগে ছিল।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
Click This Link
©somewhere in net ltd.