![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাথার মধ্যে যা আসে তা দমিয়ে রাখতে না পারার নামই আবর্জনা। আমি লিখি- কখনোই তা লেখা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করিনি। তবু লিখছি- স্বপ্ন ভাঙা এক আগন্তুক আমি।
ধর্ষণ! অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
চুপ! আজ আমরা বলব আর আপনারা কেবল শুনবেন। কেননা অনেক বলেছেন। কবিও বলে গেছেন- অমনি নাচানাচি শুরু হয়ে গেছে। সব পূন্যে নারী পুরুষের সমান অংশীদার। মানলাম। তাহলে পাপেরটা নিবেন না কেন?
প্রতিদিনই দেশের সকল সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলেন, খুলতেই ধর্ষণ! ধর্ষণ। তাও এক না একাধিক। কখনো সেটা ধর্ষণ কখনো গণধর্ষণ। কখনো ধর্ষণ তারপর খুন! যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে আমরা জানতে পারি। প্রতিবছরই আমাদের দেশে কম করে হলেও ৫ থেকে ৬ হাজারের মত ধর্ষণের খবর কানে আসে বাকিটা লাপাত্তা। যেসব ঘটনা চাপা পড়ে যায় তার পেছনে হাত থাকে গ্রাম্য সালিশের নামে ধর্ষককে প্রশ্রয়, মোটা অংকের উৎকোচের আদানপ্রদান, স্থানীয় প্রভাবশালীর দৌরাত্ম্য, ধর্ষিতার পারিবারিক অসহায়ত্ব ও সমাজে একঘরা হয়ে যাওয়ার ভয়। আবার অনেকক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলার জন্যও ধর্ষণের নাটক সাজানো, যৌবনের লিভ-টুগেদার যা এক সময় ধর্ষণের সুর তুলে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা। এমন ঘটনা এদেশে অহরহ ঘটছে, তবে এসব নিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছি না।
আপনিও থামেন প্লিজ! আপনারা আর নতুন করে মাঠ গরম করবেন না। তাছাড়া কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে শেষে না আবার শাপ বের হয়ে যায়।
আর আপনি এত কথা বলেন, এত গলার সুর উঁচু করেন, নারী-পুরুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেন, কি ভেবেছেন আমরা কিছুই বুঝি না?
বাদ দিন। এবার আমরা ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। কেননা এদেশে নীতি-নৈতিকতার কোনো মুল্য নেই। যেখানে সমাজই নষ্ট হয়ে গেছে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাস্প। ধর্মীয় অনুশাসন নেই। বিদ্যালয় আছে, বিধান-পন্ডিদদের ছড়াছড়ি। শিক্ষা আছে নৈতিক বা আদর্শিক শিক্ষা নেই। অন্যদিকে ভাল লোকগুলো দিন দিন চলে গিয়ে খারাপ লোকগুলো তাদের জায়গায় ঝেকে বসছে।
ধর্ষণ ও বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ
ধর্ষণ আমাদের সমাজে অন্যতম মারাত্মক একটি আতংকের নাম। যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়ে তাদের কাছে ধর্ষণ শব্দটা বেশী পরিচিত। এমনকি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও ধর্ষণ শব্দটির সাথে আজ পরিচিত। পত্র-পত্রিকা হাতে নিলে প্রথমেই চোখে পড়ে ধর্ষণের মত লোমহর্ষক ঘটনা। পত্রিকার পাতায় এমন কোন দিন বাদ নেই যেখানে ধর্ষণের খবর আসে না। খবর ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে হাজারো শিশু, শিক্ষার্থী, নারী ধর্ষণের বা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। যার কোনো হিসেব নেই। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুধের বাচ্চা থেকে শুরু করে ৬০-৬৫ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে এ এক ধর্ষণের অভয়ারণ্য। এ আমরা কোন দেশে বাস করছি? বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে পারেন তবে উত্তর মেলানো দুষ্কর।
তারপরেও একে অন্যের উপর দোষারোপ করছি। দয়া করে দোষাদোষির পর্বটা শেষ করুন। কে দায়ি আমরা তা বলতে চাচ্ছি না। তবে যেহেতু সামাজিক ভাবে ধর্ষিতাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেদিক বিবেচনা করলে দোষ ধর্ষকের উপর বর্তাবে।
দেখা গেছে, ধর্ষণের নেশায় কিছু মানুষরূপি নরপশুরা এতটাই বিকৃত পর্যায়ে চলে এসেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা দায়। বর্তমানে এসব মানুষরূপি নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউই। না শিশু কন্যা, না বৃদ্ধা, না স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীরাও।
একই চিত্র। প্রতিদিনই শালীনতাহানি, ধর্ষণ অত:পর হত্যা বা হত্যা চেষ্টা। এর মধ্যে যেসব ধর্ষিতা হয়ে বেঁচে থাকে তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বিয়ে নিয়ে দেখা দেয় পরিবার ও সমাজে চরম অনিশ্চয়তা। কিন্তু ধর্ষকের বিয়ে অনায়াসেই হয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো প্রকার লাঞ্ছনা গঞ্জনা পোহাতে হয় না। আবার অনেক নারী আছে যারা ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা ঢাকতে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। এমনি প্রতিদিন আনাচে কানাচে কত ঘটনাই না শুনি তার কোন ইয়ত্তা নেই। অনেকে লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষণের কথা কারো কাছে প্রকাশ করে না। সেজন্য দিন দিন শীলতাহানি ও ধর্ষণ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আগে ধর্ষণ হতো গোপনে আর এখন ধর্ষণ হয় প্রকাশ্যে খোলা মাঠে, চলন্ত বাসের মধ্যে। যেখানে একজন নারীকে হাত পা বেঁধে দল বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করছে। যাকে গণধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণকারীরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয় না, ধর্ষণের পর খুন করা হয় ধর্ষিতাকে। মা-বাবার সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এসব করেও ধর্ষকরা ক্ষান্ত হচ্ছে না। তারা ধর্ষণের দৃশ্যকে ভিডিও করে ব্লু-ফিল্ম বানিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে। ইদানিং আবার তা ইন্টারনেটে আপলোড করে দিচ্ছে। যা আমাদের নূন্যতম চক্ষু লজ্জাকেও হার মানাচ্ছে।
ধর্ষণ কেবল বাংলাদেশেই নয় বরং সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ভয়ঙ্কর ব্যধির নাম। না। নেই। নারী আজ কোথাও নিরাপদ নেই, নারী আজ তার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক এমনকি আপন বাবার কাছেও নিরাপদ নেই। প্রতিদিনই কারো না কারোর লালসার শিকার হচ্ছে। হোক তা ঘরে, হোক তা বাইরে, রাস্তায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি কর্মক্ষেত্রে- কোথাও রেহাই নেই। নারী মানেই যৌন হয়রানি, নারী মানেই পুরুষের কামের বস্তু। দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ আদর্শ প্রতিষ্ঠানেও নারী নিরাপদ নেই। ধর্ষণ হচ্ছে। ধর্ষক বুক ফুলিয়ে হেটে বেড়াচ্ছে। অথচ আমাদের প্রচলিত আইন ধর্ষকের কিচ্ছুই করতে পারছে না। এ যদি হয় দেশের অবস্থা তাহলে কিভাবে আমাদের মা বোনরা রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করবে? উফ! ভাবতেই পারছি না। আজকে নারী ভয় পায়। বোন ভয় পায়। মা ভয় পায়। ভয়ে রাস্তায় বের হতে সাহস করে না। কিন্তু কেনো? যে দেশের সরকার প্রধান মহিলা, স্পিকার মহিলা, বিরোধী দলের প্রধানসহ অনেক নারীই আজ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে আছেন। অথচ দুঃখের বিষয়- দেশের নারী সরকারই পারেনি ধর্ষণকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে। পারেনি তনুর হত্যাকারী ও ধর্ষকদের ধরতে কিংবা শাস্তি দিতে। বরং জল ঘোলাটে করছে। তাহলে কিভাবে এ দেশের অসহায় নারীরা ধর্ষণের হাত থেকে রেহায় পাবে?
ব্যক্তিগত অনুসন্ধানী রিপোর্টঃ
অনেকেই বলে থাকেন ধর্ষণের কারণ একাধিক। এর মধ্যে ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার মূল কারণগুলো ধরা হয় নগ্নতা, পুরুষের অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্খা, অবাধ স্বাধীনতার অপপ্রয়োগ, বেহায়াপনা ও অবাধ যৌনাচার, নগ্ন পোস্টারে বিকৃত শরীরী প্রদর্শন, ফুটপাতে অশ্লীল ছবি সম্বলিত যৌন উত্তেজক অবৈধ বইয়ের রমরমা ব্যবসা, অশ্লীল পত্রপত্রিকা ছায়াছবির প্রদর্শন, সহজলভ্য ব্লু-ফিল্মের ছড়াছড়ি, দেশি বিদেশি চলচ্চিত্রে নগ্ন দৃশ্যের এটোমবোম, ইন্টারনেটে উন্মুক্ত অশ্লীল সাইটের সয়লাব, লটরপটর প্রেমে ব্যর্থতা, ছেলে মেয়েদের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে বাবা মা উদাসীন। এছাড়া ধর্ষণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অভিভাকদের উদাসীনতা। মানলাম। তবে এর থেকেও ঘোরতর যেটা তা হলো নৈতিক শিক্ষা ও নৈতিকতার অবক্ষয়। আর দোষ কেবল একপক্ষীয় দিলে চলবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে বুঝা দরকার ধর্ষণ কেবল আমাদের দেশেই নয় বরং এটি বিশ্বব্যাপি ব্যধি। যার মূল উৎপাটন করাই আমাদের এক ও অভিন্ন লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তাছাড়া ধর্ষণ কে করলো, ধর্ষক কে আর ধর্ষিতাই কে সে প্রশ্নে না গিয়ে সমাধানের রাস্তায় আসতে হবে। কোনো প্রকার কাদা ছুড়াছুড়িও করা ঠিক না। তবে একটা কথা বলতে চাই ধর্ষণকারী যে-ই হোক অন্তত সে আমাদের সমাজের কেউ না। আর ধর্ষণকারী পুরুষও না নারীও না, সে ঘৃণিত এটাই তার পরিচয়।
পরিশেষে বলতে চাই, ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। অন্যদিকে সমাজ থেকে নগ্নতা, বেহায়াপনা, ব্লু-ফিল্মের সহজলভ্যতা রোধ, অশ্লীল পত্রপত্রিকা ও বইয়ের রমরমা ব্যবসা বন্ধ ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, ছেলে-মেয়েদেরকে যথাসময়ে বিয়ের ব্যবস্থা ও তাদেরকে চালচলনের উপর নজর রাখা। সর্বপরি আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। বুঝাতে হবে, বুঝতে হবে, এটা আমাদের পৃথিবী- আমরা আমাদের মত করে সাজাব। যদি কিছু আগাছা থেকে থাকে তবে তা উপড়ে ফেলতে হবে। কেননা কোনো আগাছাই আমাদের কাম্য না। সেক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকা চাই।
উপরিউক্ত লক্ষণগুলো দূর করতে পারলে আশা করা যায় কিছুটা হলেও সমাজ থেকে ধর্ষণ প্রবনতা কমবে। তা না হলে কষ্মিনকালেও ধর্ষণ প্রবণতা রোধ করা যাবে না।
আসুন আমাদের জন্য হলেও অন্তত আমাদের সমাজটাকে সাজাই। যেখানে নারী নিতে পারবে প্রাণ ভরে নিশ্বাস। যেখানে অন্তত পুরুষের দিকে দোষ চাপাতে দ্বিধাবোধ করবে। কেননা ধর্ষক কোনো ভাবেই পুরুষ হতে পারে না। ধর্ষক ধর্ষকই। আর ধর্ষিতা সে আমাদের সমাজেরই একজন। তাকে কোনো ভাবে ভিন্ন চোখে দেখার অবকাশ নেই।
.
কবি ও লেখক
©somewhere in net ltd.