|  |  | 
| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
 মহিউদ্দিন হায়দার
মহিউদ্দিন হায়দার
	শব্দে আমার আশ্রয়, লেখায় আমার মুক্তি। এখানে আমি লিখি, ভেবে দেখি, আর খুঁজি মানুষের মনের গল্প।

এক সময় বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ ছিল এক অমলিন আন্তরিকতার চিত্রপট।
সেই সমাজের প্রতিটি দিন, প্রতিটি উৎসব, প্রতিটি শুক্রবার ছিল পরস্পরের সঙ্গে মিশে থাকার আনন্দময় বন্ধন। শুক্রবারের সকাল মানেই ছিল হাসি-খুশির পরিবেশ—পরিবারের সবাই ঘরে থাকে, আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসে, আর ঘরে ঘরে তৈরি হয় নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন। মায়ের হাতে পিঠা, বোনের হাতে সেমাই, পুকুরে একসঙ্গে জাল ফেলা—সব মিলিয়ে শুক্রবার ছিল গ্রামীণ জীবনের এক পরম আনন্দদিন।
পুকুরে হাতজাল ফেলার সেই দৃশ্য আজও স্মৃতিতে ভাসে—যার পুকুরে অংশীদারিত্ব ছিল, সে আনন্দ ভাগাভাগি করতো অংশীদার নয় এমন প্রতিবেশীর সঙ্গে। কারণ, উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা নয়, আনন্দ ধরা। সবাই মিলে হাসত, খেত, গল্প করত। সেই আন্তরিকতার ছোঁয়ায় পুরো পাড়া যেন উৎসবের আবহে ভরে যেত। বিকেলে ছোটরা মাঠে খেলতে যেত, বড়রা উৎসাহ দিত। কেউ আবার মৌসুম অনুযায়ী আয়োজন করতো ছোটখাটো পিকনিক বা ঘরোয়া মিলনমেলা।
  আমাদের ছোটবেলায় শুক্রবার মানে শুধু বিশ্রাম নয়—মানুষে মানুষে সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন। আমি নিজে অপেক্ষা করতাম দৈনিক পত্রিকার জন্য; শুক্রবারে থাকতো বিশেষ সাহিত্যপাতা। কাঙ্ক্ষিত সেই পত্রিকা হাতে পাওয়া মানেই ছিল যেন “সাত রাজার ধন” পাওয়া।
 আমাদের ছোটবেলায় শুক্রবার মানে শুধু বিশ্রাম নয়—মানুষে মানুষে সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন। আমি নিজে অপেক্ষা করতাম দৈনিক পত্রিকার জন্য; শুক্রবারে থাকতো বিশেষ সাহিত্যপাতা। কাঙ্ক্ষিত সেই পত্রিকা হাতে পাওয়া মানেই ছিল যেন “সাত রাজার ধন” পাওয়া।
কিন্তু সময় বদলেছে, বদলে গেছে শুক্রবারের রূপও। এখনকার শুক্রবারে গ্রামের আকাশে আর সেই হাসির ধ্বনি ভেসে আসে না।
পরিবারে নেই মিলনমেলা, পাড়ায় নেই একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগির পরিবেশ। বরং দেখা যায়—শুক্রবার মানেই এখন সালিশ-বিচারের দিন, জায়গা-জমি মাপজোকের হিসাব, কিংবা পীর-দরবেশের নামে মাইকের কর্কশ আওয়াজে গ্রামজুড়ে শব্দ দূষণ। কোথাও কোথাও জুমার নামাজ শেষে শুরু হয় কলহ-বিবাদ, দ্বন্দ্ব আর বিশৃঙ্খলা।
এই পরিবর্তন কেবল সময়ের নয়—এটা আমাদের মূল্যবোধেরও অবক্ষয়। যেখানে একসময় ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সম্মান ছিল সমাজের চালিকাশক্তি, আজ সেখানে জায়গা নিয়েছে সন্দেহ, বিভাজন ও আত্মকেন্দ্রিকতা।
গ্রামীণ সমাজের মানুষ এখন আর একে অপরের সুখে-দুঃখে ছুটে আসে না, বরং প্রতিযোগিতা করে নিজেদের আধিপত্য প্রমাণে।
আজকের শুক্রবার তাই আনন্দের নয়—বরং এক ধরনের উদ্বেগের নাম।
যে দিনটিতে আগে গ্রামের প্রতিটি ঘরে বাজতো হাসির সুর, এখন সেখানে শোনা যায় বিবাদের শব্দ।
তবুও আশার আলো নিভে যায়নি পুরোপুরি। এখনো কিছু গ্রামে, কিছু পরিবারে সেই পুরোনো দিনের ঐক্য আর আন্তরিকতা টিকে আছে। প্রয়োজন কেবল সেই পুরোনো মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা—যেখানে শুক্রবার আবার হয়ে উঠবে মিলনের দিন, নয় বিচ্ছেদের প্রতীক।
গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার প্রাণ ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও মানবিক বন্ধন। আজ সেই প্রাণশক্তি যেন নিঃশেষ হতে বসেছে। সময় এসেছে নতুনভাবে ভাবার—আমরা কি সত্যিই উন্নতির পথে, নাকি হারাচ্ছি আমাদের মমতার শিকড়?
যেদিন আবার শুক্রবারে মানুষের মুখে ফিরবে হাসি, সেদিনই আমরা ফিরে পাবো আমাদের হারানো গ্রামীণ সমাজের সত্যিকারের রূপ।
 ১ টি
    	১ টি    	 +০/-০
    	+০/-০©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫  বিকাল ৪:২৯
৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫  বিকাল ৪:২৯
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
কোন সালগুলোর কথা?