নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গোলাকার

এসো বৃত্ত ভেঙ্গে স্বপ্ন গড়ি...

মো. মইন উদ্দীন

গণমাধ্যম কর্মী ও শিক্ষার্থী- আইন বিভাগ।

মো. মইন উদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ এখন কাগুজে সংগঠন!

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৯

মইন উদ্দীন:::::::::





কুতুবদিয়া থেকে আসা ছাত্রলীগের এক কর্মীর ফোন “লিডার আপনি কোথায় একটু দেখা করতে চাচ্ছিলাম” অপরদিক থেকে জেলা ছাত্রলীগের উচ্চপদস্থ নেতার জবাব “দিনে আর বের হবো না, একটু ক্লান্ত, এক কাজ করো তুমি সন্ধ্যায় (পাঁচ তারকা মানের একটি হোটেলের নাম প্রকাশ করে) ওখানে এসো আমি থাকবো”। ছাত্রলীগের কর্মীদের প্রতিনিয়ত এমনই বিলাসবহুল হোটেল কিংবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা করতে বলেন জেলা ছাত্রলীগের উচ্চ পদে আসীনরা।

ইতোপূর্বে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতির যে চর্চা এসব কিছুই লক্ষ্য করা যায় না কক্সবাজারে। বিলাসবহুল হোটেলের লবিই এখন ছাত্রনেতাদের ঠিকানা, ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই বললেন সাবেক ছাত্রনেতারা।

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতাদের জৌলুসপূর্ণ আচরণ, ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের মতো চাল-চলন দেখে কোন ভাবেই মনে হয়না এরা ছাত্রনেতা।

এই ছাত্র সংগঠনটির কক্সবাজারের বেহাল দৈন্যদশা সংগঠনটির সাবেক নেতৃবৃন্দকে পীড়া দেয় বলে জানা যায়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে কক্সবাজার থেকে ছাত্রলীগের হয়ে নেতৃত্বে দিয়েছেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, কক্সবাজার ছাত্রলীগের অবস্থা দেখলে মনে হয় যেনো এটি একটি সরকারের কাছে স্বীকৃতি পাওয়া আমদানী-রপ্তানীমূলক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। যেটির কার্যক্রম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। আর ব্যাংক ব্যালেন্সের ব্যাপারটি দেখলে মনে হয়, ছাত্রনেতার পদ পাওয়া মানে আলাদিনের চেরাগ পাওয়া। অর্থ আয়ের প্রধান

উৎসে পরিণত হয়েছে পদগুলো। আর মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাতের ছিনতাইকারীদের পর্যন্ত থানা থেকে ছাড়াতে ছাত্রনেতাদের লবিং ছাত্র রাজনীতিকে সাধারণ মানুষের কাছে চরম বিতর্কিত করে তুলেছে।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের অধীনে বিভিন্ন উপজেলা, পৌর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের শাখাগুলোর বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে হতাশাজনক চিত্র পাওয়া গেছে। জানা যায়, কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি দীর্ঘদিন পর হলেও পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। জেলার সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আগের চেয়ে সক্রিয় ছাত্রলীগের কার্যক্রম।

কক্সবাজার শহর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিলো জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সময়। সভাপতি/সম্পাদককে দিয়ে গঠিত উক্ত কমিটি দীর্ঘদিন পর পূর্ণাঙ্গ করা হলেও অভিযোগ রয়েছে এই কমিটিতে স্থান পেয়েছে বিবাহিত, অছাত্র ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িতরা। যার কারণে জেলা শহরে শক্ত অবস্থান জানান দিতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগ।

কক্সবাজার পলিটেকনিক ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে ধু¤্রজাল কাটছে না এখনো। বিভিন্ন সময় কমিটি পাল্টা কমিটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কার্যক্রম। শেষ পর্যন্ত নারী কেলেঙ্কারি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্তদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এই কমিটিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সম্পাদক উভয় এর সম্মতি আছে কীনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।

কক্সবাজার সিটি কলেজে ছাত্রলীগ অস্তিত্বহীন। দীর্ঘদিন আগে পুরনো কমিটির সর্বোচ্চ পদে আসীনরা পদত্যাগ করলেও এখনো এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কার্যক্রমের ব্যাপারে সজাগ হতে পারেনি জেলা ছাত্রলীগ। যার কারণে উক্ত কলেজে ছাত্রলীগের কোন রকম রাজনৈতিক অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। দীর্ঘদিন আগে আহ্বায়ক ও যুগ্ন-আহ্বায়কদের সমন্বয়ে গঠিত হওয়া উক্ত কমিটিটি এখনো বহাল রয়েছে। যদিও এই কমিটির বেশিরভাগ নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। কেউ বিবাহিত কেউ অছাত্র আবার কেউ দস্যুতার সাথে জড়িত বলে জানান একই উপজেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

রামু উপজেলা ছাত্রলীগের অবস্থা আরও খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নেই এই উপজেলায়, আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে কার্যক্রম। ৪ বছর আগে গঠিত হওয়া আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে ডকুমেন্টসহ অভিযোগ থাকলেও কেউই এর বিহিত করতে পারছেন না। উল্টো বিবাহিত ও অছাত্রদের দিয়ে পূণরায় কমিটি করার চেষ্টায় লিপ্ত উচ্চ পদে আসীন কয়েকজন নেতা।

মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছিলো জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার সময়। সেই থেকে বহাল রয়েছে উক্ত কমিটি এখনো পর্যন্ত এই উপজেলায় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে অনেকটা বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে মহেশখালী ছাত্রলীগের।

কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিলো ২০১০ সালে। স্বল্প সময়ের জন্য গঠিত উক্ত কমিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই এখন আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের হয়ে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোন ধরনের হদিস নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির। এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র এক নেতার দাবী ঈদের পরই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কোনো রকম কার্যক্রম নেই বললেই চলে। শেষ কখন এই উপজেলায় কমিটি হয়েছিলো সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতা। এছাড়াও এই উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বর্তমানে জণপ্রতিনিধিত্ব করছেন বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উখিয়া ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, জেলা ছাত্রলীগের উচ্চ পদস্থ কয়েকজন নেতাকে নিয়মিত টাকা দেন তারা।

টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগ ভাঙ্গা-গড়ার নাম। একদিন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কমিটি দেয় জেলা সভাপতি। পরের দিন পাল্টা কমিটি দেয় জেলা সাধারণ সম্পাদক। এই রকম দূরাবস্থার মধ্যে চলছে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। কমিটিগুলোতে স্থান পাওয়া বেশিরভাগ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। আর অভিযুক্ত সেই সব যুবকরা নিয়মিত নাটের গুরুদের টাকা পাঠিয়ে দেন বলে জানা যায়।

পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে এক পর্যায়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছিলো। জেলা সভাপতি তার পছন্দমতো একটি কমিটি দেন, একইদিন জেলা সম্পাদক আরো একটি পাল্টা কমিটি দেন। সভাপতি ও সম্পাদকের এই ধরনের সমন্বয়হীনতায় পত্রিকায় পাঠানো বিবৃতিগুলোতে স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছিলো না আসলে কোনটা পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি। অভিযোগ রয়েছে কমিটি দেয়ার নাম করে সেখানকার একজন ছাত্রনেতার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সম্পাদক।

চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের বর্তমান অবস্থার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন খোঁদ কমিটির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবী তৃণমূলকে অবজ্ঞা করে গঠন করা হয়েছে কমিটি। অন্যদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের পদবীধারী নেতারা দাবী করছেন সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী তারা। যদিও আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতার হয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংগঠিত করার অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে।

ঈদগাও সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ এখন ৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বহাল সেই কমিটির নেতারা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক যুবলীগের দায়িত্ব পেলে সেই পদে আসীন করা হয় অন্য একজনকে। যদিও টাকার বিনিময়ে একটি পক্ষকে খুশি করার জন্য এই পদে থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.