![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কক্সবাজারে সুপেয় পানি সঙ্কট চরমে (পর্ব-১)
মইন উদ্দীন (দৈনিক সমুদ্রকণ্ঠ) ॥
জেলা শহরে সুপেয় পানির সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। জেলার অধিকাংশ স্থানে ভূ-গর্ভস্থ মিঠাপানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। গত ৩ বছরে শহরের বাঁকখালী নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ৫০ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। এতে শহরের এক প্রান্তে পানীয় জলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ নলকূপে সুপেয় পানির পরিবর্তে উঠে আসছে লবণাক্ত জল।
এভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনক হারে নিচে নেমে যাওয়ায় ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান সচেতন মহল। ধারণা করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫ বছরে তীব্র পানি সঙ্কটেই পড়বে না শুধু কক্সবাজারবাসী বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ বলছে, ৫ বছর কক্সবাজারের কোথাও সুপেয় পানিই পাওয়া যাবে না।
সূত্রমতে, পৌর এলাকায় বসবাস করে ৩ লাখ মানুষ যেখানে রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। প্রতি ২৪ ঘন্টায় শহরে সুপেয় পানির চাহিদা ২০ লাখ গ্যালন যার মধ্যে ১২ লাখ গ্যালন পৌরবাসীর ও ৮ লাখ গ্যালন হোটেল-মোটেল জোন এলাকার চাহিদা। জানা যায, পৌরসভায় পানির সংযোগ রয়েছে ১২৫৭টি এবং গভীর নলকূপ রয়েছে ১৩টি যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি অপ্রতুল।
সূত্রমতে, কক্সবাজারের ৩ ভাগের ২ ভাগ পানি লবণাক্ত। আর শহরে বাঁকখালীর নিকটবর্তী এমন কিছু এলাকা আছে যেই এলাকাগুলোতে সুপেয় পানি সোনার হরিণ। যার মধ্যে নুনিয়া ছড়া, কস্তুরা ঘাট এলাকা, এন্ডারশন রোড, বাজার ঘাটা, টেকপাড়া ও হাঙ্গরপাড়া অন্যতম। এসব এলাকায় পানিই জলের এতটাই সঙ্কট দেখা দিয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শহরে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে গৃহস্থালী ও পানীয়জলের চাহিদা পূরণ করা হয়। সাম্প্রতিককালে দ্রুত নগরায়নের সাথে পাল্লা দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার পাম্প স্থাপনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। আর পাহাড় ও গাছ পালা কেটে সাবাড় করাকেও মূল সমস্যা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কক্সবাজার পৌরসভার একজন প্রকৌশলী জানান, শহরে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১৫ ফুটের বেশি হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। গত ৩ বছরে ৪০ থেকে ৫০ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। মাত্র ১০ বছর আগেও শহরের এন্ডারশন রোড এলাকায় ১৮০ ফুট গভীরে নলকূপ বসিয়ে সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ৩০০ থেকে ৩২০ ফুট গভীরে যেতে হয়।
মিঠাপানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে বাঁকখালী তীরবর্তী শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয়জলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকায় স্থাপিত হাজার হাজার নলকূপ প্রতি বছর অকেজো হয়ে পড়ছে বলে জানা যায়।
শহর এলাকা ছাড়াও জেলার অধিকাংশ স্থানে ভূ-গর্ভস্থ মিঠাপানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ ঈদগাঁও অঞ্চলে মাত্র এক দশক আগেও ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরে টিউবওয়েল বসিয়ে পানীয়জল পাওয়া যেত। এখন সেখানে প্রায় ২শ’ ফুট গভীরে যেতে হয়। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় জেলার সমুদ্র উপকূলীয় নিম্নভূমিসহ টেকনাফের অধিকাংশ এলাকায় পানীয়জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
শহরের বাহার ছড়ার বাসিন্দা চাকুরিজীবি আমান উল্লাহ ও ফয়জুল হক জানান, আগে স্বাভাবিকভাবে পানি পাওয়া যেত। যদি পাম্পে সমস্যা হয় নলকূপ ছিল ভরসার পাত্র। আর এখন নলকূপ, পাম্পকে ছাড়িয়ে পি টিউবওয়েল পর্যন্ত কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিন পানির পিক আওয়ারে তাদের দূর্দশার শেষটুকু পোহাতে হয় উল্লেখ করে অতিস্বত্ত্বর এর সামধান চান তারা।
কক্সবাজার পরিবেশ ও বন সংরক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল মামুন ও সেভ দ্য নেচারের সভাপতি কল্লোল দে চৌধুরী বলেন, আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন নিরাপদ মতার ভিতরে রাখতে হবে। যেকোন উপায়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে হবে। সেচ দতা ও পানির উৎপাদন মতা বাড়াতে হবে। চাষাবাদে ডিপ টিউবওয়েলের ব্যবহার বন্ধ করে পানির চাপ ঠিক রাখতে হবে। অন্যথায় এভাবে চলতে থাকলে খুব বেশি দেরী নেই যখন কক্সবাজার হবে মরুভূমি।
এদিকে কথা হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, নিরাপদ পানির দাবীতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। গত ক’দিন আগেও জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে সুপেয় পানির দাবীতে। কিন্তু এতে সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক না হলে মরুভূমিতে পরিণত হবে কক্সবাজার যা খুব বেশি দেরী নেই বলে জানান তিনি।
নিরাপদ পানির দাবীতে সোচ্চার প্রবীন এই সাংবাদিক আরো বলেন, আমাদের সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। সমুদ্র সৈকত থেকে ডি-স্যালাইনেশন পদ্ধতির মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা সম্ভব। যদি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর একসাথে এব্যাপারে আন্তরিক হয় তাহলে অতি সত্ত্বর সুফল পাবে কক্সবাজারবাসী।
চলবে…
(বি:দ্র: আগামী পর্বে থাকছে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষনে সুপেয় পানি সঙ্কটের সমাধান)
১০ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬
মো. মইন উদ্দীন বলেছেন: হুম...
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৩০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভয়ংকর অবস্থা।