![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা ডাইক্লোফেন দেন।
একটু অপেক্ষা করেন বলে বাম দিকের লোকটির জ্বর পরীক্ষা করে সে থার্মোমিটার দিয়ে। অন্য একজন এসে বলে দাউদের মলম দেন। একে একে সবাইকে ওষুধ দেওয়ার পর কাঠের ঘুনপোকা খাওয়া ড্রয়ারটিতে সে সযতনে টাকাগুলো গুছিয়ে রাখে। খুচরা পয়সাগুলো রাখার কয়েকটি কৌটা আছে ড্রয়ারের এক কোণে। যেখানে একটিতে সিকি;একটিতে আধুলি;এভাবে এক্টাকা,দুইটাকা,পাচটাকার কয়েনগুলি সাজিয়ে রাখে সে। পশ্চিমমুখী টিনের বাংলা ঘরটিতে সে দু’টি আলমারিতে যত্ন করে ওষুধগুলি সাজিয়ে রাখে। পড়ালেখা তেমন একটা করার সুযোগ পায়নি সে। অনেক কষ্টে ও নিজের চেষ্টায় এস.এস.সি পাস করেছে। আর তখনি তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। বাবা হাড়ের রোগী। দীর্ঘদিন হাতুড়ে ডাক্তারের ঔষধ শেবোণ করে তেমন কোন উপকার হয়নি ,বরং ক্ষতির মাত্রাটাই যেন বেড়ে গেছে। আগে একটু এঘর ওঘর হতে পারতো। ভাতিজার হাতটি ধরে আঙ্গিনা,পুকুর পাড়,দোকানের পাশটা যেতে পারতো রানার বাবা। কিছুদিন যাবত কোনভাবেই আর দাড়াতেই পারছে না আক্কাছ আলি। পাশের বাড়ির রমিজ চাচাকে ডেকে বাঁশ আর সূতলি দিয়ে একটি হেলান চেয়ার তৈরি করে নিয়েছে সে। এখন ঐ চেয়ারটিতে কঙ্কালসার দেহটিকে ঠেস দিয়ে জ্বল জ্বল করে তাকিয়ে থাকে আর সারাক্ষণ কি যেন ভাবে রানার বাবা। রানার মা রানাকে ভূমিষ্ঠ করার সময় পরপারে চলে গেছে। হয়তো সে কথাই ভাবে।ভাবে সেই ক্ষণিকের সোনালী দিনগুলির কথা। নতুন স্ত্রীর আদর,সোহাগ,আর আনন্দঘন খুনসুটির ছবিগুলি হয়তো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একটি নতুন মুখের আবির্ভাব ও একটি প্রিয় মুখ তিরোভাবের পর কষ্ট ভুলে একটু সুখের মুখ দেখার জন্ন্য দ্বিতীয় দ্বার পরিগ্রহ করে আক্কাছ আলী। এছাড়া তার যে আর কোন উপায় ছিল না। সদ্য ভুমিষ্ঠ হওয়া শিশুটিকে ঠিকমত লালন পালন করার জন্যই তার এত তারাহুড়া। সুখ যে তার কপালে সইবে না সেকথা সে তো আর জানত না। ছেলে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আর ঘুনপোকাও একটু একটু করে এগোতে থাকে। আক্কাছ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী নিজের সন্তানের মত রানাকে লালন পালন করতে থাকে। এই ফুটফুটে ছেলেটি থাকতে আর কোন সন্তানের আশা করার সাহস পায়নি হালিমা। স্বামী হাতুড়ে ডাক্তার। স্বামী বাজার থেকে বাড়িতে আসার পর বাঁশের আলনায় রাখা তেলচিটচিটে সার্টের পকেত থেকে খুচরা পয়সাগুলি একটি মাটির ব্যাংকে জমা রাখে সে। মেলার সময় সে ব্যাংক ভেঙ্গে এটা ওটা কিনে দেয় ছেলেকে। ছেলেটিও হালিমাকে নিজের মা হিসেবেই জানে। আর এজন্যই তো ছেলেটিকে নিয়ে হালিমার এত ভাবনা। বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা গাভীটার দুধটুকু,কলাটা,ভোরবেলায় গাছতলা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া আমটা রানার মুখে পুরে দিয়েই কি যেন এক শান্তি পায় হালিমা। ছেলে বড় হয়,এক ক্লাস থেকে আর এক ক্লাসে ওঠে হালিমার সুখ যেন আর ধরে না। এদিকে স্বামীর শারিরীক অবস্থাও তেমন ভাল না। বাবার বাড়ি থেকে আর নিয়ে আসবেই বা কি! বাবা-মার হাত খরচের গাভীটাও তো সে নিয়ে এসেছিল ছেলেটাকে মানুষ করার জন্য। ছেলেটাকে গর্ভে ধারণ না করলে কি হবে-ওরা যে মায়ের জাত। আত্নীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশি,সবার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কোন রকমে স্বামীর চিকিৎসা করাচ্ছে হালিমা। এই দিই দিব করে কারো টাকাই পরিশোধ করতে পারেনি হালিমা,কারন অর্থ উপার্জনের একমাত্র চাকাটাই যে অচল হয়ে পড়েছে। রানা সে বছর এস.এস.সি পরীক্ষা দিল । আর তার বাবার অবস্থা যেন আরও খারাপ হয়েই চলেছে। সে বছর শীত শেষে গাছে গাছে কেবল নতুন পাতা গজাতে শুরু করেছে। শীতের ধকল কাটিয়ে যেন গাছগুলি নতুন জীবন পেল। কিন্তু রানার বাবা আর সেই শীত কাটিয়ে উঠতে পারল না। ঝরা পাতার মতই ঝরে চলে গেল না ফেরার দেশে। স্বামীর শোকে না খেয়ে না দেয়ে দিন কাটে হালিমার। বাবার পেশায় হাল ধরে রানা। টিনের বাংলা ঘরটাই যেন রানার সব। যখন কোন রোগী বা ওষুধের ক্রেতা না আসে ,রানা তখন আলমারিতে রাখা ওষুধগুলি নাড়তে থাকে আর তার বাবার স্মৃতিকে হাতড়াতে থাকে।
১৪ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪২
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।ভালো থাকবেন সবসময়।
২| ০৩ রা জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৮
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
ভালো লাগলো !!!
০৩ রা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০২
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ স্নিগ্ধ শোভন ভাই।ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:০১
আমারে তুমি অশেষ করেছ বলেছেন: ছোট গল্প হিসেবে ভালই লাগল লেখাটা।