![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছক্কু মিয়াঁর তৃতীয় বিয়ের সানাই বাজল।
বাবা বড়ই চিন্তিত। এবার বিয়েটা না টিকলে সম্মান বুঝি আর থাকে না। আগের বিয়ে দু’টি না হয় বউয়ের ত্রুটি প্রচার করে ধামাচাপা দেওয়া গেছে। মসজিদে ফজরের আযান দেওয়ার পর থেকে তসবি হাতে এখন পর্যন্ত ছেলের বিষয়টি ঘুরে ফিরেই বার বার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে আমজাদ আলীর। নামাজ সেরে মসজিদ থেকে বের হয় আমজাদ আলী। অন্যসব মুসল্লিরা ততোক্ষণে যে যার যার বাড়িতে চলে গেছে। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত আমজাদ আলী মসজিদটিকে আর একবার পর্যবেক্ষণ করে সরু মেঠো রাস্তাটির দিকে পা বাড়ায়। সকালের আলো স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ছেলের কৃতকর্মও স্পষ্ট হতে থাকে তার কাছে। বয়স ষাট ছুইছুই। মেজাজ মর্জি সময় খিটখিটে থাকে আমজাদ আলীর। ছোটবেলায় যাত্রাদলের বাদক থাকলেও যুবক বয়স থেকে ধর্মে মতি হয় তার। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সুবাদে একসময় মুয়াজ্জিন হওয়ার সুযোগও হয় তার। সমাজও অন্যান্য ঘটনাগুলির ন্যায় তার অতীতকে ভুলে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজ বর্তমানকেই প্রাধান্য দেয়। এখন অবশ্য সবাই তাকে সম্মান করে।
বড় ছেলেটিকে কামিল পর্যন্ত পড়িয়েও কোন কাজে আসে নাই। ঢাকায় এখন সে রিক্সা চালিয়ে নিজের এবং বউ-বাচ্চার দেখভাল করে। আর এই ছোট ছেলেটিকে নিয়ে তো সে রীতিমত বিপদে পড়েছে। মেয়ে দু’টির বিয়ে হওয়াতে যাহোক একটা গতি হয়েছে।
বিয়ের তৃতীয় দিনেই আবার ছক্কু মিয়াঁকে নদীর পাড়ে পাল পাড়ায় সাতসকালেই তাস খেলতে দেখা যায়।
তাস খেলাটা তার পেশা নয়,নেশা। যেদিন কয়েক বাজি জেতে সেদিনটি ভালোই কাটে ছক্কু মিয়ার। সেদিন বেশ উৎফুল্ল চিত্তে বাড়িতে ফেরে সে। বাজার সদাইও ঠিকমতো করে। মাছ-মাংস কেনার কমতি থাকে না তার। এই সময়গুলিতে সংসারে যেন স্বর্গীয় শান্তি বিরাজ করে। হাসিমুখেই বউয়ের সাথে কথা বলে সে। বউয়ের কাপড়-চোপড় যেটা লাগে কিনে দিতেও তার কার্পণ্য হয় না। বিপরীতটা ঘটে কেবল বাজিতে হারলেই। প্রিয়তমা বউ,মা-বাবা, এলাকাবাসী কারো সাথে চাইলেই ভালো ব্যাবহার করতে পারে না সে। আপন মানুষগুলিও কেন জানি তার হারটাকে মেনে নেয় না। জুয়াখেলা খারাপ একথাটা সে ভালোভাবেই জানে। সিগারেটসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্যগুলির মত তাকে পেয়ে বসেছে জুয়াখেলা। খেলায় হারায় আজ নতুন বউয়ের সাথে বনি-বনা হয়নি ছক্কু মিয়ার।
প্রথমত এই জুয়াখেলার বিষয়টি কনে পক্ষের জানা না থাকলেও সপ্তা খানেকের মধ্যে জানার আর বাকি থাকে না। কনে পক্ষ আর দশটি বিষয়ের মত নিয়তি হিসেবে মেনে নেয় এই বিষয়টিকে। মেয়ের বাবা কেরামত আলী নয়া গ্রাম থেকে ভাঁটি গ্রামে মেয়ের জন্য এটা ওটা নিয়ে দেখতে আসে। মেয়ের মন ভালো নেই। মেয়ের পূর্বেকার সে মায়ামাখা সরস হাসি আজ আর নেই। বিষাদের কালো ছায়া মেয়ের মন থেকে যেন আর সরে না। দেখতে দেখতে দু’টি মাস কেটে গেছে। দু’টি মাস নয় যেন দু’টি যুগ পার করেছে আছিয়া।
স্বামী-সংসার নিয়ে মেয়েদের চিরাচরিত যে স্বপ্ন থাকে সে স্বপ্নের কবর দেওয়া হয়েছিল বিয়ের রাতেই সে কথা এরই মধ্যে জেনে গেছে আছিয়া। কত খোদার কসম খাইয়েছে সে ছক্কুকে,কিন্তু তার স্বভাবের কোন রকম পরিবর্তন হয়নি । বিয়ের পর সে লোকমুখে শুনেছে যে খোদার ঘর মসজিদে তওবা করেও পরদিন আবার জুয়াখেলেছিল তার স্বামী। পাল পাড়া না গেলে পেটের ভাতই যেন হজম হয় না ছক্কু মিয়ার।
বিয়ের তৃতীয় মাসের মধ্যেই শ্বসুর কর্তৃক প্রদেয় গহনা,হাজার চল্লিশেক টাকার সবটাই পাল পাড়ায় ঢেলেছে ছক্কু মিয়া। বিয়ের প্রথম প্রথম বউয়ের সাথে ভালোই মিলত তার। কিন্তু দিন যায় তিক্ততার মাত্রা ক্রমেই বাড়ে। কথায় কথায় বউ পেটানো তার একাটা স্বভাব। ইদানীং বউ পেটানো কেমন যেন একটা সখে পরিণত হয়েছে ছক্কু মিয়ার। জীবন যুদ্ধে আছিয়া যেন মুখ থুবড়ে পড়া এক নারী যাকে তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দেওয়া হয় না। চাইলেই সে এই ময়দান থেকে পালাতে পারে না। সমাজের শত নিয়মে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা সে। আজকের মত কখনই বউ পেটায়নি ছক্কু মিয়া। দিনভর কেঁদেছে আছিয়া। সন্ধ্যায় কীটনাশক খেয়ে মুক্তি পেয়েছে আছিয়া।
হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই ছক্কু মিয়াঁর চতুর্থ বিয়ের সানাই বাজবে।
২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ, কান্ডারি ভাই কষ্ট করে পড়ার জন্য । ভালো থাকবেন।
২| ২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫০
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: লেখায় মেলা +++++++++++++
ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম
২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫
মিনুল বলেছেন: লায়লী আপু ভালোলাগা শেয়ার করেছেন জেনে ভালো লাগলো।
৩| ২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এ ধরনের সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয় আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। গল্প হিসাবে অবশ্যই প্রথম শ্রেনীর হয়েছে। ধন্যবাদ, মিনুল।
২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ,আশরাফুল ভাই।আপনার উৎসাহমূলক মন্ত্যব্যের জন্য।অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
৪| ২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮
ডি মুন বলেছেন: ঘুরে গেলাম, ভালো লাগলো
তবে গল্পটা আরো একটু বড়ো হলে আরো বেশি সুন্দর হতো।
শুভকামনা জানবেন
২৯ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ,ডি মুন ভাই আপনার সুচিন্তিত মন্ত্যব্যের জন্য।ভালো থাকবেন।
৫| ২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৩০
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ভালো লিখেছো বন্ধু!!
৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:২১
মিনুল বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ তোমাকে বন্ধু।
৬| ২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৮
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বেশ ভালো লিখেছেন!
৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৩২
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।
৭| ২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:০৫
সুমন কর বলেছেন: চিরাচরিত গ্রাম্য জীবনের চরম বাস্তবতা, গল্পে দারুণভাবে প্রকাশ হয়েছে। তবে প্রথমদিকে আরো একটু বিস্তাররিত করা যেত।
সুন্দর গল্প।
৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৭
মিনুল বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ, সুমন ভাই আপনার ভালো লাগা এবং সুন্দর পরামর্শ প্রদানের জন্য। ভালো থাকবেন।
৮| ৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:১৬
এহসান সাবির বলেছেন: দারুন।
৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:১৭
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ, সাবির ভাই। ভালো থাকবেন।
৯| ৩০ শে মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩৭
সকাল হাসান বলেছেন: দাড়ান আগে প্লাস দিয়ে নেই। ++++++
চমৎকার লাগছে।
৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:১৩
মিনুল বলেছেন: আমার জন্য এতগুলি প্লাস? ???? ধন্যবাদ,হাসান ভাই। ভালো থাকবেন।
১০| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
লিরিকস বলেছেন: +
৩১ শে মে, ২০১৪ ভোর ৬:৫৬
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ, লিরিকস ভাই।শুভকামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৮
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
আবহমান কাল ধরেই এমন সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার হতে হচ্ছে অনেক কেই। লেখা ভাল লাগছে।