![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ কেন জানি বার বার কলিং বেলটা বেজে উঠছে। আধা ঘন্টায় আঠারো-বিশ বার তো হবেই। তারপরও ছেলেটার কোন অভিযোগ নেই। যে যা চায় তা ঠিকসময়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় স্যারদের ডাকে যথাসময়ে সাড়া না দিলে তাকে অনেক বকাঝকা শুনতে হয়। রাগের মাথায় তাকে যাই বলা হোক না কেন নীরবে শুনে যায় সে। একটু আগে মামুন স্যারকে তো গল্পগুচ্ছ বইটি দিয়ে আসলো,আবার কি হলো ?
কলিং বেলটারও যেন বিরাম বলতে কিছু নেই।
জাহিদ স্যারের আবার গত দশ দিন আগের ‘ডেইলি স্টার’ সংখ্যাটি লাগবে। কাঠের শেলফে রাখা পেপারগুলি থেকে চট করে পেপারটি বের করে জাহিদ স্যারকে বুজিয়ে দেয় সে। কোন শেলফে কোন বই আছে রাসেলের তা এক প্রকার মুখস্থই বলা চলে। আর তা হবেই বা না কেন ? সারাটি দিন চোখ জোড়া যে তার অফিসের শেলফে রাখা বইগুলিতেই ঘুরে ফেরে।
অফিসের সবাইকে স্যার সম্বোধন করাটা তার একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটি অফিসের নিয়ম। আর সে যে নিয়মের বাইরে নয়। পেপারটি বুঝিয়ে দিয়ে আবার রিসেপসন সেকসনে চলে আসে রাসেল। এদানিং কাজের চাপটা একটু বেশি। কারণ বৈশাখ আসতে আর মাত্র সতের দিনেক বাকি। ব্যাস্ততা যে আগে ছিল না তা নয়। ফেব্রুয়ারীর ব্যাস্ততার রেশ এখনও সেভাবে কাটেনি। তার মধ্যেই আবার ১৪ই এপ্রিল অর্থাৎ বৈশাখ নিয়ে ব্যাস্ততা শুরু। ফেব্রুয়ারী আর এপ্রিল মাসই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বই ডেলিভারির একেবারেই মোক্ষম সময়। ফেব্রুয়ারীর মাসব্যাপী বই মেলা করার পর পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ ১৪ই এপ্রিল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রকাশকদের সারা বছরের লাভ-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারিত হয়। এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলি। দিনটি এক দিকে বাঙ্গালীর হাজার বছরের জাতিগত ঐতিহ্য উদযাপন,অপরদিকে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য নির্ধারণের দিন। এইদিন সারাদেশ থেকে পাইকারী ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলি সারা বছরের জন্য অর্থ দাখিলা করে বইয়ের অর্ডার দিয়ে যায়। মক্কেলদের আপ্যায়নের বিশেষ ব্যাবস্থা এবং বড় দাখিলাকারীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যাবস্থাও থাকে।
আবারও কলিং বেলটা বেজে উঠল।এবার অবশ্য কলিং বেলের আওয়াজ শুনেই রাসেল বুঝতে পারলো যে এটি বসের কল।
বেল পাওয়া মাত্রই যারপরনাই সে বসের রুমে হাজির। ম্যানেজারের বেল বাজলে যে সে যেতে দেরি করে তা নয়। বসের কাজে সবাই একটু বেশিই গুরুত্ব দেয়,কারণ সবকিছুর কল-কাঠি যে তারই হাতে। বসের মন জয় করতে অবশ্য অনেকেই আগবাড়িয়ে অনেক কিছু করতে যায়।রাসেল অবশ্য সেরকম নয়। সে অফিস কর্তৃক প্রদেয় নিজের কাজটুকু যথাযথভাবে করার চেষ্টা করে।
বয়স পনের-ষোলো হলেও ভালো- মন্দ বিষয়গুলি সে ভালোভাবেই বোঝে। সবাইকে চা দেওয়ার সময় হয়েছে,সাথে হালকা নাস্তা। সকাল-বিকাল চা তৈরী করতে হয় রাসেলকে। হিটারে পানিটা ঠিকমত গরম করা হলে সাবধানে সে সকেট থেকে হিটারের লাইনটি খুলে ফেলে। এই সাবধানতার অবশ্য একটি কারণ আছে। ছ-বছর আগের কথা। তখন সে সবেমাত্র এই অফিসে যোগ দিয়েছে। এতসব নিওম-কানুন মোটেই তার জানা ছিল না। একটু আনমনে হিটারের লাইনটি লাগাতে গিয়ে ঝাঁকুনি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলো সে। তখন থেকে সে সাবধানতার সহিত এই কাজটি করে। অবশ্য টুকিটাকি অনেক কাজেই এখন সে সিদ্ধহস্ত। বিদ্যুতের বিল দেওয়া,নাস্তা নিয়ে আসা,আগন্তুক কোন গেস্ট আসলে তার সাথে ভালো ব্যাবহার করা,ল্যান্ডফোনটি রিসিভ করে অপর প্রান্তের লোকিটির সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলা ,বইয়ের পার্সেলটা যথাযথ ঠিকানায় প্রেরণের ব্যাবস্থা করা,মেহমান ও অফিস কর্মচারী সবাইকে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করাসহ তার কত কাজ।
কাপে চায়ের উপকরণগুলি পরিমাণমত দেওয়া হলে চামচ দিয়ে সে নাড়তে থাকে। কাপে চামচের ক্রমাগত আঘাতে এক ধরণের ব্যাঞ্জনা তৈরী হয়। সে ব্যাঞ্জনা রাসেলের জীবনেরই প্রতিকী রুপ। এই সময়টিতেই তার বাড়ির কথা খুব বেশি মনে পড়ে। কৃষক বাবা,গৃহিনী মা,সদ্য বিবাহিত বড় বোন রেহেনা আর ছোট বোন রেবার ছবিগুলি যেন প্রতিটি কাপের চায়ের মাঝে জীবন্ত ভাসতে থাকে। রেবার লেখাপড়ার খরচ,বাবা-মার দেখাশুনার ভার সবকিছুই তার উপর। বড় বোনটির যৌতুকের টাকাটিও এখনো পরিশোধ করা হয়নি। মাস শেষে যা পায় তার মাধ্যমেই ধীরে ধীরে বোনের টাকাটা শোধ করতে হবে। নিজের একটু কষ্ট হলেও আপন বোনের সুখমাখা মুখটি কোন ভাইয়ের না দেখতে ইচ্ছে করে। মাস দেড়েক পর পর দু’দিনের জন্য হলেও বাবা-মা,বোনের মুখগুলি দেখে আসতে ভুলে না রাসেল। বৃহস্পতিবার অফিস করে বিকেলে সদরঘাট থেকে লঞ্চে উঠে বরিশালের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয় এবং শনিবার সকালে এসে অফিস ধরে সে।
জ্যৈষ্ঠ মাস। গাছে গাছে ফল পাঁকতে শুরু করেছে। মা দিনক্ষণ গোনে যে ছেলে আসবে আমটা,কাঠালের স্বাদটা নেবে। ঢাকা শহরে ছেলেটা কি খায় না খায় । যদিও সে ঢাকা শহরে বাড়ির চেয়ে ভালোটাই খায়,মায়ের মন কত কিছুই ভাবে। মোবাইলে মায়ের সাথে কথা বলার পর ছেলের মনটাও যেন আর ঢাকায় নেই।
আজ বৃহস্পতিবার । ব্যাগটা যতনে গুছিয়ে রেখেছে সে। দুপুরে বসের অনুমতিও নিয়েছে সে। বাবা-মা,ছোট বোনটার জন্য কেজি খানেক আঙ্গুর,হাফ কেজি আপেল,বাবার জন্য একটি লুঙ্গী, মায়ের জন্য একটি কাপড়,ছোট বোনটার জন্য ফ্রক ও একজোড়া জুতা আরও কতকিছু ব্যাগটিতে পুরে নিয়েছে সে। অন্যদিনগুলির মত বিকেলেই লঞ্চে ওঠে রাসেল। আজ গরমও যেন গতকালের চেয়ে একটু বেশি। বৈশাখের রোদেলা আকাশে বৈশাখী মেঘেরা বেশ দাপটে বিরাজ করছে । আকাশটা থেকে থেকে গড় গড় আওয়াজ করছে। লঞ্চ বরিশালের উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে দিল। মাঝ নদীতে লঞ্চটা ঢেউয়ের সাথে আছাড় খাচ্ছে। যাত্রীরা খোদার নাম জপছে। ক্রমেই লঞ্চের বিপদগ্রস্থ মানুষের আহাজারিতে আকাশ- বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে। ঢেউগুলি যেন কোন এক উন্মত্ত খেলায় মেতে উঠেছে। মানুষের রক্তের নেশায় ঢেউগুলি যেন মাতাল। কালবৈশাখের ছোবল থেকে রক্ষা পেল না লঞ্চটি।
চিরদিনের মত আম-কাঠাল খেতে মায়ের কাছে ফিরল রাসেল।
৩১ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে,কান্ডারি ভাই।আমি বাস্তবতারই একটি আমার মত করে রুপ দেওয়ার চেষ্টা করি।ভালো থাকবেন।
২| ৩১ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১
সামুস কিং বলেছেন:
সুন্দর
৩১ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ,সামুস কিং ভাই।ভালো থাকবেন।
৩| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৫
নাহিদ শামস্ ইমু বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পটি।
কষ্টের গল্প।
শুভকামনা রইলো...
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৪
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নাহিদ ভাই।ভালো থাকবেন।
৪| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫০
স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: ভালো লেগেছে |
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:১৭
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
৫| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫১
আরজু মুন জারিন বলেছেন: জ্যৈষ্ঠ মাস। গাছে গাছে ফল পাঁকতে শুরু করেছে। মা দিনক্ষণ গোনে যে ছেলে আসবে আমটা,কাঠালের স্বাদটা নেবে। ঢাকা শহরে ছেলেটা কি খায় না খায় । যদিও সে ঢাকা শহরে বাড়ির চেয়ে ভালোটাই খায়,মায়ের মন কত কিছুই ভাবে। মোবাইলে মায়ের সাথে কথা বলার পর ছেলের মনটাও যেন আর ঢাকায় নেই
মা সন্তানের শ্বাশ্বত বন্ধনের প্রকাশ । সহজ সাবলীল ভাবে লিখা গল্প টি মন ছুয়ে গেল। লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:২২
মিনুল বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ,আরজু মুন জারিন আপু আপনার ভালো লাগার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।ভালো থাকবেন।
৬| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:০০
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: গল্পটি ভাল লাগল ।শুভ কামনা রইল ।
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৩৩
মিনুল বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
৭| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:০৫
এহসান সাবির বলেছেন: মন খারাপ করা গল্প।
শুভ কামনা।
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৩১
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ ,এহসান সাবির ভাই।কি করব আমার মাথায় যে একধরনের গল্পই বেশি আসে। অন্য কোন সময় মন ভালো করা গল্প লেখার চেষ্টা করা যাবে! ভালো থাকবেন।
৮| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৫
শূন্য সাগর বলেছেন: অনেক সুন্দর
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৫১
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ,শূন্য সাগর ভাই ।ভালো থাকবেন।
৯| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৭
এহসান সাবির বলেছেন: লেখা চালিয়ে যান।
আপনার লেখা ভালো লাগছে।
০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১২:২৬
মিনুল বলেছেন: দোয়া রাখবেন সাবির ভাই। আপনাদের প্রেরণা দু'কলম লিখতে সহায়তা করবে।
১০| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৬
আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: বেশ লাগলো। মনে একটা হালকা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম।
শুভকামনা রইলো।
০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১২:২৯
মিনুল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, সজল ভাই।আপনার ভালোলাগা জেনে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
১১| ০১ লা জুন, ২০১৪ সকাল ১০:০৫
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: অনেক ভাল লাগল।
০১ লা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪১
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।ভালো থাকবেন।
১২| ০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪
সুমন কর বলেছেন: ভাল লাগল।
০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১১:১১
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন কর ভাই।ভালো থাকবেন।
১৩| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪৭
বোকামানুষ বলেছেন: বাস্তবতার গল্প ভাল লাগলো
০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৪
মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ বোকামানুষ ভাই। শুভকামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৩
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
আপনার লেখার ভেতর সবসময় ছোট্ট করে একটা ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা থাকে যা খুব ভাল লাগে। সমাজের নিদারুন বাস্তবতা নিয়ে আপনার লেখনী মুগ্ধ করার মতো। শুভ কামনা রইল ভাই।