নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিনুল

নিজেকে সম্মান করুন অপরের সম্মান পাবেন।

মিনুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘোর

০৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

আজ হাট বার।

একটু আগে মাগরিবের আযান হলো। বিদ্যুৎ চলে গেছে মিনিট দশেক হবে। জেনারেটরের ক্ষীণ আলোয় দোকানদার-দোকানীরা তাদের কেনা বেচায় ব্যাস্ত। কোথাও কোথাও কেরোসিনের কুপি জ্বলতেও দেখা যাচ্ছে। ব্রক্ষ্মপুত্রের তীর ঘেঁষা হাজারো মানুষের মিলনস্থল এই অনন্তপুর বাজার। যেখানে বাজার সদাই ছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষেরা সপ্তাহান্তে বার দু’য়েক তাদের পরিচিতজনদের সাথে মিলিত হয়। সুখ-দুঃখগুলি তারা একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে। এতে করে তাদের দুঃখের বোঝাটি কিছুটা হলেও হালকা হয় আর সুখের সাথে আরো নতুন মাত্রা যোগ হয় বৈকি। পুব আকাশে সোনালী মেঘগুলি সাদা মেঘের সাথে কিছুক্ষণ আগেও খেলা করছিলো তারাও যেন কোন এক অজানার উদ্দ্যেশ্যে চলে গেছে। বরাবরের মতই বাজারের চারপাশেই মানুষের উপচে পড়া ভীড়। যদিও জৈষ্ঠের কাঁঠালপাকা গরমে মানুষগুলি হাঁসফাঁস করছে মাঝে মাঝে দখিনা বাতাসে শ্রান্ত-ক্লান্ত প্রাণগুলি কেমন শীতল হয়ে আসছে।

বাজারের একেবারে পশ্চিমের কোণায় যেখানটাতে মূলত মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে ঠিক সেখানেই উৎসুক জনতার ভীড় দেখা গেল। বাজার এমনিতেই এমন একটি জায়গা যেখানে একটি পকেটমারের মত ছিঁচকে চোর ধরা পড়লে কিংবা হকারও চিৎকার দিলে বা তার সাউন্ড বক্সে দৃষ্টি আকর্ষণকারী কোন সুর তুললে বিশ-পঞ্চাশেক লোকের অভাব হয় না। উক্ত জায়গাটিতে জনমানুষের ভীড় ক্রমশ বাড়তে লাগলো। মনে হয় যেন কোন যাদুকর তার যাদুর কসরত দেখাচ্ছে। সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হোসেন আলী আর তিথি বানুর উপর। হাট-বাজার,গ্রামে গঞ্জে এধরণের ঘটনা সাধারণ মানুষের একপ্রকার বিনোদনই বলা চলে। বাজারে হঠাত কোন ঘটনা ঘটলে বাজার করতে আসা মানুষগুলির কাছে বাজার করার চেয়ে সেই ঘটনাটিই যেন বেশি গুরুত্ব পায়। ছোট্ট একটি এক চালা টিনের ঘর। এই ঘরটিতে কিছুদিন আগেও বিনোত মেথর তার স্ত্রী তিথি বানু আর একমাত্র ছেলে হীরালালকে নিয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করতো। বাজারটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব বিনোত মেথর আর তিথি বানুর উপর সেই দশ বছর আগে থেকেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে মা আর ছেলে মিলে এই দায়িত্বটি পালন করে আসছে।



হোসেন আলীর হাত দু’টি পিছনের দিক থেকে বাঁধা। তিথি বানুর হাত দু’টিও বাঁধা তবে সামনের দিক থেকে। হোসেন আলীর বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে ষাট ছুঁইছুঁই। সাদা টিউব লাইটের আলো অনেকটাই টাকমাথা হোসেন আলীর উপর পড়ায় আধপাকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলি আরো পষ্ট দেখা যাচ্ছে। প্রশস্থ কপালের উপরের অংশে জমে থাকা ঘাম লাইটের আলোয় চিকচিক করছে। বাহারি ফতুয়া আর অনেকটা ধুতি প্রকৃতির লুঙ্গি পরিহিত হোসেন আলীর মদের ঘোর এখোনো কাটেনি। বড় বড় রক্তলাল চোখ জোড়া দিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছে কি না সেটা হোসেন আলীই ভালো জানে।

তিথি বানু লাল ব্লাউজের সাথে কালো শাড়ি পরে আছে। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। চুলগুলি উষ্কখুষ্ক। মদের নেশায় তিথিও বিভোর। নিজের প্রতি তার কোন খেয়ালই নেই। তার সামনের কাপড় মেঝের সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মেদযুক্ত শরীরটিতে কয়েকটি ভাঁজ পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। স্তনযুগলও পষ্ট। গ্রাম চৌকিদারের হেফাজতে আছে তারা। বাজার শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে সবাই। বাজার শেষেই বিচার করা হবে ওদের। বাজার করতে আসা লোকগুলি যে যার মত মন্ত্যব্য করেই যাচ্ছে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ বলছে তারা বিচার দেখেই যাবে রাত যতোই হোক না কেন। রাত ১১:০০ টা বাজে। বাজার শেষে বাজার কমিটি বৈঠকে বসলো। কী করা যায় ? তিথি বানুর স্বামী বিনোত মেথর জীবীত থাকা অবস্থায়ও তারা দু-দু’বার মদ্যপ অবস্থায় ধরা পড়েছিল। বিনোত মেথরের মৃত্যুর পর বিষয়টি যেন নিয়মিত হয়ে দাড়িয়েছে। বিচারই বা তারা ক’বার করবে ? আগের বারগুলিতে টাকা-পয়সা দিয়ে পার পেয়েছে হোসেন আলী। অল্প কিছু নগদ পয়সা পেয়েই খুশি ছিল বিনোত মেথর। এবার বাজার কমিটি বিচার একটু কড়া করার সিদ্ধান্ত নিলো। বিচারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হোসেন আলীকে ন্যাড়া করে জুতার মালা পরিয়ে সারা বাজার ঘোরানো হলো। সাথে কিছু অর্থদন্ডও করা হলো। এবারের বিষয়টি এলাকার মোটামুটি সবাই জেনে গেলো।



বাজারে হোসেন আলীর মনোহারি দোকান থাকায় হোসেন আলীকে বাজারে আসতেই হয়। তার সন্তান দু’টি আর স্ত্রী সাহেরার সমাজে মুখ দেখানোর মত কোন উপায় নেই। তারপরও সমাজের আর দশজন মানুষের মত তারা সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়। কিন্তু হোসেন আলীর বিষয়টি আর সমাজ ক’বার মেনে নেবে ?

বাজারের মসজিদে আর হোসেন আলী নামাজে যায় না। এবারের বিষয়টির পর এলাকার মসজিদেও একবারও নামাজ পড়তে যায়নি সে। নিজের টাকায় নিজের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করে সে।পাড়ায় ধন-সম্পদশালীদের মধ্যে সে একজন। এলাকার খেঁটে খাওয়া মানুষগুলি তার মসজিদে নামাজ পড়ে। তারা তার জমিতে কাজ করে। ঈদ আসলে হোসেন আলী কোরবানি করে। তার অনুগত সাধারণ মানুষগুলির মাঝে মাংস বিলায় সে। বড় ছেলে হেলাল বাবার এরূপ কাজ-কর্মের জন্য অনেক আগে থেকেই বাড়িতে আসে না। ঢাকায় কিছু একটা করে সে নিজের জীবন নিজেই চালায়। বাড়ির কোনরকম খোঁজ-খবর নেয়ার প্রোয়োজনও মনে করে না সে। ছোট ছেলেটা এবার এস.এস.সি পরীক্ষা দিবে। স্ত্রী সাহেরার ধনের অভাব না থাকলেও মনের সুখের বড় অভাব। বাড়ির বাইরে সে বের হয় না বললেই চলে। স্বামীর কাছে পষ্ট প্রতিবাদ করতেও পারে না সে। পাড়া-পড়শির কটু কথাও কখনো কখনো তার কানে আসে। মানুষ সামনে কিছু বলতে না পারলেও পেছনে পেছনে ঠিকই বলে। লোকমুখে শোনা যায় যে কাজের বুয়াও তার বাড়িতে নাকি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। শোনা যায় তিথি বানুর সাথে হোসেন আলীর ঠিকই যোগাযোগ হয়।



আজ সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আকাশের সে কি তর্জন- গর্জন । মনে হয় যেন আকাশখানি ভেঙ্গে চুড়ে মাটিতে পড়বে। সারাদিন মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে পায়নি। বাজারে আজ তেমন মানুষের ভীড় নেই। তারপরও বাজারের পশ্চিমের কোনায় তিথি বানুর একচালা ঘরের কাছেই আবার একটু জটলা দেখা যায়। মদ্যপ অবস্থায় তিথি বানুর বারো বছরের ছেলে হীরালালের হাতে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল হোসেন আলীর। স্থানীয় চৌকিদার মারফত থানা পুলিশ এসে নিয়ে গেল হীরালালকে। বৃষ্টির ধারার সাথে রক্তের ধারা এক হয়ে গেছে। হোসেন আলীর স্বজনেরা মৃতদেহ নিয়ে গেল। তিথি বানুর মদের ঘোর এখোনো কাটেনি। ধীরে ধীরে বাজারের জনমানুষও যে যার কাজে যেতে লাগলো।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
সুন্দর।


২য় প্লাস :)

০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৯

মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, একজন ঘূণপোকা ভাই।ভালো থাকবেন সবসময়।

২| ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লাগা রইল +++

০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৬

মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ, কান্ডারি ভাই।ভালো থাকবেন।

৩| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:০৯

ইশতিয়াক এম সিদ্দিকী বলেছেন: অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:১১

মিনুল বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে ইশতিয়াক এম সিদ্দক্যী ভাই। ভালো থাকবেন।

৪| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:২৭

এম হাবিব আহসান বলেছেন: ++++

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:১৬

মিনুল বলেছেন: এম হাবিব আহসান ভাই,আমার জন্য এতগুলি প্লাস? ???? ভালো থাকবেন সবসময়।

৫| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৪

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: প্রথম ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম ..

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:১৯

মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ, মুনতাসির নাসিফ ভাই। ভালো থাকবেন।

৬| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:২২

মেঘের স্বপ্ন বলেছেন: A+

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:৩১

মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদনিবেন মেঘের স্বপ্ন ভাই।ভালো থাকবেন সবসময়।

৭| ০৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৪০

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: পোস্টে++++++

০৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩

মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।ভালো থাকবেন সবসময়।

৮| ০৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫১

গোঁফওয়ালা বলেছেন: গল্পের পটভূমিটা বেশ! খুব ভালো লাগলো।

০৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আপনার ভালোলাগা জেনে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন সবসময়।

৯| ০৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:


ভালো লাগলো !!!

০৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯

মিনুল বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ স্নিগ্ধ শোভন ভাই।ভালো থাকবেন।

১০| ০৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: যে কোন বিচারে গল্পটি প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। ব্লগ ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে (প্রিন্ট মিডিয়া) আপনি লেখেন কী? আমার মনে হয়, আপনার প্রিন্ট মিডিয়াতেও লেখালেখি করা উচিৎ। আমি কিন্তু ভাই প্রিন্ট মিডিয়াতেই বেশি লিখি। আমাকে অনুসরণ করতে বলছি না। তবে আপনার লেখার মান বিচার করলে এগুলো বৃহত্তর পাঠক সমাজের কাছে পৌঁছানো দরকার। আমাদের দেশে এখনো প্রিন্ট মিডিয়ার পাঠক বেশি।

ধন্যবাদ, ভাই মিনুল।

০৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

মিনুল বলেছেন:
অনেক অনেক ধন্যবাদ আশরাফুল ইসলাম ভাই আপনার সুন্দর এবং দিকনির্দেশনামূলক মন্তব্যের জন্য। আমি বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ায় লিখছি না, তবে লেখার চেষ্টা করব। ভালো থাকবেন সবসময়।

১১| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩৬

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: গল্পের বর্ণনার ভঙ্গিটা অসাধারণ হয়েছে। পড়তে পড়তে কখন যে গল্পের মধ্যে ডুবে গেছি টেরই পাইনি।

০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৫৭

মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অর্থনীতিবিদ ভাই।ভালো থাকবেন।

১২| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৩৯

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
আপনার গল্পের প্লটটি এককথায় অসাধারণ ৷

তবে কিছু যদি মনে না করেন গল্পের বিন্যাস নিয়ে আরেকটু ভাবতে পারেন ৷ একটু গোছানো হলে ভিন্নতার সাথে নান্দনিক হতো ৷

তবে ব্লগে এ ধরণের লেখা কম পাওয়া যায় ৷ ভাল থাকুন ৷

১৩| ০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

মিনুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নিবেন আলজাহাঞ্জীর ভাই।আপনার সুচিন্তিত পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হলো। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.