![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৯৮ সালের ঘটনা। সেবার বিরাট এক বন্যা হল। আমাদের রুমের মধ্যে পায়ের গোড়ালির উপর পানি। আর আঙ্গিনাতে হাটু পানি। রুমের মধ্যেই লাল শাড়ি পরা পুঁটি মাছেরা সর বেধে আমাদের দেখতে আসত। খাটের উপর থেকে জাল পেতে ধরলেও দুই এক বেলা মাছের অভাব হত না। আমি ভিতর আঙ্গিনাতেই চটকা জাল দিয়া মাছ ধরতাম। রাতে কারেন্ট জাল রুমের মধ্যেই পেতে রাখলে সকালে দেখা যেত মাছে সাদা হয়ে গেছে জাল। মাঝে মাঝে দুই একটা সাপও আটকে যেত সেই জালে। আর সাপ আটকালেই বিপদ।
বাড়িতে আমরা সবাই খাটের উপর বসে গল্প গুজব করতাম। সাপলুডু খেলতাম। আপারা নকশি কাঁথা সেলাই করত। কখনো কখনো চোর-ডাকাত খেলতাম।এই দিনগুলিতে লেখাপড়া মোটেই করতাম না। আম্মা পুরাতন একটা চৌকির উপরে শুকনো মৌসুমে বানানো মাটির চুলায় রান্না বান্নার কাজ সারতেন।
আমরা সারাক্ষন রুমের মধ্যে থাকতাম না। আসলে সাত আট বছরের দুরন্ত ছেলেদের চার দেয়ালের মধ্যে আটকানোর সাধ্য কারো নেই। সুযোগ পেলে বাহিরে বের হবেই। আমরা একই বয়সের ছেলেপেলেরা কলা গাছের ভেলা বানাতে পটু ছিলাম।
বাড়ি থেকে চুপিসারে দা নিয়া পাচ-ছয় জন মিলে বাঁশের আরাতে( বাঁশ বাগান)চলে যেতাম। কেউ গামছা আবার কেউ লুঙ্গি নেংটির মত করে পরে কোমর সমান পানি পার হয়ে বাঁশের আরাতে যেতে হত।শক্ত আর চিকন দেখে দুটা বাঁশ চট করে কেটে ফেলতাম। বাঁশ পছন্দ হলেই কাটা শুরু। কার বাঁশ সেটা আমাদের কোন দেখার বিষয় ছিল না।কখনো দেখা যেত চিনে জোক হাঁটুর নিচে রক্ত খেয়ে ঢোল হয়ে আছে।আমরা কি করতাম জোঁকের শরীরে একটু লবন লাগিয়ে দিতাম। লবনই ছিল জোঁক মারার প্রধান অস্ত্র। চারিদিকে পানি আর পানি।
এর পর আমাদের প্রধান কাজ ছিল কলা গাছ কাটা। বাঁশ কাটা দা দিয়াই চার-পাচটা কলাগাছ পলকের মুহূর্তে কেটে ফেলতাম।তারপর বাঁশ সূচালো করে নিয়েই কলাগাছের ভিতর দিয়া গেঁথে ভেলা তৈরী করতাম।এরপর সেই ভেলাতেই দিনের চার ভাগের তিন ভাগ সময় কাটতো।খাবারের সময় হলেই শুধু আমাদের বাড়িতে পাওয়া যেত। স্কুলও বন্ধ, লেখাপড়ারো কোন বালাই নাই । সারাদিন মাছ ধরা আর একে ওকে বাড়ি থেকে শুকনো বাঁধে পৌঁছে দেয়াই ছিল আমাদের কাজ। পানিতে ডুবসাঁতার আর গোসল করতে করতে চোখ রক্তলাল করে ফেলতাম। আব্বা আম্মার ঝাড়ি তো ছিল তিনবেলা খাবারের মত। বকা না খেলে আমাদের পেটের ভাত হজমই হত না।
ভেলা নিয়া মাঝে মাঝে আবার মাছ ধরতে অনেক দূরে চলে যেতাম। মাছও সেবার প্রচুর ধরা পড়ত।টেংরা, পুঁট, শৈল, কৈ,মাগুর,শিং,রুই,কাতলা,বোয়াল,রুপচাদা,বাইন,এমনকি পাঙ্গগাস- কত মাছ। ব্রক্ষ্মপুত্রের কলকলিয়ে ওঠা পানিতে রাতারাতি মাঠ-ঘাট,পুকুর তলিয়ে একাকার হয়ে যেত।ফলে ঐসব বাহারি প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। মুঠা জাল(হাতে রশ্মি বেধে যে জাল ছড়িয়ে দিতে হয় দূরে) শুধু মাছে চক চক করত। রাতের বেলা বেশি মাছ ধরা পড়ত। মাছ ধরতে ধরতে সারারাত কেটে গিয়েছিল অনেক সময়।মাছ ধরাটা এক প্রকার নেশা ছিল আমার। এখন পর্যন্ত শক্ত কোন নেশা থাকলে সেটা মাছ ধরাই!
আষাঢ় মাস এলেই বন্যার কথা মনে পড়ে। স্মৃতি পটে কাঁচা পয়সার মত চকচক করে শৈশবের সেই দিনগুলি।।
২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
২| ২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩
পুরান লোক নতুন ভাবে বলেছেন: সাবলীল সুন্দর সৃতিচারণ!!
২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
মিনুল বলেছেন: শুভেচ্ছা নেবেন। ভাল থাকবেন।
৩| ২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
অহন_৮০ বলেছেন: ঠিক বলেছেন.......... অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে যায়
২৬ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৪০
মিনুল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা নেবেন।
৪| ২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২
জনাব মাহাবুব বলেছেন: পুরান ঢাকাও সেই সময় পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। ৯৮ বন্যার সময় আমরা বন্ধুরা দল বেধে কোমর পানির উপর দাড়িয়ে ফটো তুলে রাখছিলাম।
এখনও মাঝে মধ্যে সেই ছবি দেখি এবং নষ্টালজিক হয়ে পড়ি।
২৬ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৪২
মিনুল বলেছেন: হুম। শৈশব স্মৃতি কখনোই ভোলার নয়। ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৮
ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ভালো লাগলো ।