নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়া...

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯

গত ১১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখ, সন্ধ্যা ৭টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেতর ও টিভির মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিয়েছেন। পত্রপত্রিকার সূত্র মতে ভাষণটি তার প্রদান করার কথা ছিল ৬ জানুয়ারি। ঐ সময় তিনি ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ায় ঐ ক’দিন বিলম্বিত হয়েছে। ২৯ মিনিটের উক্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গত ৪ বছর তার সরকার যেসব উন্নয়নমূলক কর্মকা- করেছে তার একটি বিবরণ দেশ ও জনগণের সম্মুখে উপস্থাপন করেছেন। বিরোধী দল এটিকে কথার ‘ফুলঝুরি’, ‘গতানুগতিক’, ‘মিথ্যাচার’ বলে বিবৃতি দিয়েছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় গত ১৪ তারিখ ‘প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বহীন ভাষণ’ শিরোনামে একটি কলাম লিখেছেন। দৈনিক প্রথম আলো ১৪ তারিখ সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন করেছে, ‘শুধুই সাফল্য, কোনো ব্যর্থতা নেই’? বাম নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ‘কোন দিকনির্দেশনা নেই’ বলে উল্লেখ করেছেন।



প্রধানমন্ত্রীর ২৯ মিনিটের একটি ভাষণে ১৬ কোটি মানুষ সমানভাবে সন্তুষ্টি হয়েছে তা দাবি করার কোনো কারণ নেই। তবে যারা এই ভাষণকে গতানুগতিক, দিকনির্দেশনাহীন ও গুরুত্বহীন বলে অভিহিত করেছেন, তারা ভাষণের ভেতরের তথ্যপ্রমাণসমূহ ভুল, মিথ্যা, অসত্য, বাড়াবাড়ি এমনটি বলেছেন বলে শুনিনি। তারা যদি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে দেয়া বিভিন্ন খাতে তার সরকারের আমলে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ, উন্নয়ন বা সাফল্য সম্পর্কে কোনো বিশ্লেষণে যেতেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খ-ন করতেন তাহলে একটা কিছু করা হতো বলে ধরে নেয়া যেতো। আমরাও বুঝতে পারতাম প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে কোথায় কোথায় বিভ্রান্ত করছেন, ভুল তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু সেই চেষ্টা বা কষ্ট বিরোধী দলের কোনো নেতা করেছেন বলে মনে হয় না। বিএনপি নেতৃবৃন্দের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। আওয়ামী লীগ কোনো কথা বললে বিএনপি তা শুনলেও প্রতিক্রিয়া হবে তাদের মতো করে, আওয়ামী লীগের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ বিএনপি মেনে নেবে বা স্বীকার করবে তেমন সংস্কৃতি দেশে এখনো চালু হয়নি। কিন্তু বাম নেতৃবৃন্দ বিষয় বিশ্লেষণে কেন একরৈখিক হবেন তা কোনোভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না। কাদের সিদ্দিকী সাহেবের এমন শিরোনামের লেখা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করাই বোধহয় ভালো। গণমাধ্যমের মন্তব্যও বেশ লক্ষণীয়। তাদের কোনো কোনোটি বলার চেষ্টা করেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ‘সাফল্যের বয়ানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, ব্যর্থতার দিকটি স্বীকার করে ভবিষ্যতে তা দূর করার প্রত্যয় থাকলে ভাষণটি পূর্ণতা পেতো।’ এমন মতামত শুনতে বেশ ভালো লাগে, ভারসাম্যমূলক মনে হয়। তবে ব্যর্থতার দিকটি যে কোনো কাজের একটি চূড়ান্ত বিষয় বলে জানা হয়ে যায়, এরপর যখন আর কিছু করার থাকে না তখনই ব্যর্থতার সিদ্ধান্ত টানা যায়।



একটি সরকারের মেয়াদ শেষেই কেবল সাফল্য ও ব্যর্থতার চূড়ান্ত রেখা টানা যেতে পারে। সরকারের মেয়াদ এক বছর বাকি থাকতে সরকার কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে তা বলবে, স্বীকার করবে এমনটি বোধহয় যথার্থ নয়। যদি গণমাধ্যম থেকে বলা হতো যে, প্রধানমন্ত্রী যেসব ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে পিছিয়ে আছেন তা উল্লেখ করতেন তাহলে সকলে কথাসমূহ মিলিয়ে দেখতে পারতো। গণমাধ্যমগুলো মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দুটো শব্দকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে থাকে। একটি ‘সাফল্য’, অন্যটি ‘ব্যর্থতা’। এটি আমাদের রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা থেকে বহুলভাবে ব্যবহৃত প্রবণতা। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন বেশ জটিল এবং আপেক্ষিক ধারণা। বর্তমান বছরে যে ক্ষেত্রে বেশ ভালো উন্নয়ন ঘটেছে, সাফল্য ধরা দিয়েছে, নানা কারণেই পরের বছর তা নাও ঘটতে পারে। চেষ্টার ক্ষেত্রে হয়তো কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু নানা বাস্তবতা থাকতে পারে যা অতিক্রম করা হয়তো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঠিক একইভাবে এ বছর দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটেনি, সাংবাদিক বা আলোচকের ভাষায় সাফল্য আসেনি। তিনি চট করে এটিকে ব্যর্থতা বলে চালিয়ে দিলেন। তাতে প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের কর্মপ্রবাহে বড় ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি হতে পারে। ধরে নিলাম, উদ্যোক্তারা এসব কথায় তেমন কান দিলেন না, তারা পারের বছর দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হলেন, এমন একটা সাফল্য দেখালেন যা আগের বছর কারো কারো মতো ব্যর্থতা হিসেবে ছিল, কিন্তু পরের বছরই সে ক্ষেত্রে সাফল্য ধরা দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কিভাবে সম্ভব? এখানে কোন মূল্যায়নটি ঠিক? ধারাবাহিকতা বিবর্জিতভাবে কোনো উন্নয়ন হয় না তবে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো উন্নয়ন কর্মকা- ততোটা দৃশ্যমান হয় না, বেশ দেরিতে হয়। সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে জটিল এসব দিককে বিবেচনায় না নিয়ে আমাদের রাজনীতি ও গণমাধ্যম যেভাবে প্রায়শই উন্নয়ন সম্পর্কে চূড়ান্ত মত দিয়ে ফেলে তা আসলেই বিস্ময়কর বিষয়। এতে সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির চিন্তা যুক্তিনির্ভর বা শাণিত হয় না, হয় আবেগনির্ভর সংকীর্ণ। লক্ষ্য করা যেতে পারে যে, আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ২০১১ সালে বেশকিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সময়মতো ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণেই তেমনটি ঘটেছিল। গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহল এ ক্ষেত্রেও সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে তখন অভিহিত করে যে ধরনের প্রভাব ফেলে দিয়েছিল তাই যদি চূড়ান্ত সত্য হতো তা হলে এক বছর পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এতোসব উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হতো না। যোগাযোগমন্ত্রীর হাতে নিশ্চয়ই আলাদীনের চেরাগ নেই। তিনি সময় মতো উদ্যোগগুলো নিতে পারায় বড় ধরনের সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেখা দেয়নি। ফলে একটি স্বস্তির অবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাজ করছে।



অন্যদিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেসব তুলনামূলক আলোচনা ও তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছেÑ তা কি নিতান্তই সাফল্যের বয়ান? বাংলাদেশে এতোগুলো খাতে এতোসব বড় ধরনের উদ্যোগ, অগ্রগতি অতীতে খুম কম সময়েই ঘটেছে। উপাত্ত নিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে গণমাধ্যম বা বিরোধী রাজনৈতিক মহলে ইতিবাচক দেশের যে কোনো অগ্রযাত্রাকে স্বাগত কমই জানানো হয়, জানানো না হওয়ারই উদাহরণ খুব বেশি। অন্যদিকে কোথাও সমস্যা দেখা গেলে সেটাকে সামগ্রিক বিপর্যয়ের পর্যায়ে ফেলে দেয়া হয়। সমস্যার পরিধি ও গভীরতা কতোটা তা নির্ধারণ করে দেখা হয় না, ফলে সরলীকরণকৃত ধারণা দেয়া ও পাওয়ার বেশ চেষ্টা হয়। জনমনে সেই প্রচারটিই বিস্তৃত করা হয়। জনগণ এর ফলে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারছে না। জনগণকে রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ, কার্যকারণ, পরিণতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দিতে হয়। সেভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে হয়। সেটি দলগুলোতে হয় না। গণমাধ্যম বলে খ্যাত পত্রপত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াও সিরিয়াসলি তা করে বলে আমার কাছে মনে হয় না। ফলে আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারার বিকাশ গতি লাভ করতে পারছে না। অথচ নেতিবাচক যে কোনো প্রচারণা এতো বেশি উৎসাহ লাভ করে যার ফলে বেশিরভাগ মানুষই ঘটনা বা বিষয়ের চারদিক থেকে দেখা ও বোঝার সুযোগ পাচ্ছে না। আমাদেরকে সত্যিই একটি যুক্তিবাদীবিরোধী দেশে পরিণত হচ্ছে। বলা হয়েছে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে কিছু বলেননি, বলেননি পদ্মা সেতু নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের গণমাধ্যম বা বিরোধী রাজনৈতিক দল যতোটা সোচ্চার ততোটা কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উপাদান ও করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে না, এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হচ্ছে না। যেন বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এলেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। অথচ নিকট অতীতে যেসব তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখানে ছিল সেগুলোর দুর্বলতা তলিয়ে দেখা হচ্ছে না, সেগুলোর প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন তা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয় তা থেকে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ার নজির থাকার পরও আমাদের বেশিরভাগ গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষেই ওকালতি করছে। এর ফলে জনমনে একটি ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে যেন কোনোকালেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। চিন্তার এমন দৈন্যদশা থেকে বের না হতে পারলে আমাদের দেশ প্রতি ৫ বছর পরপরই বড় ধরনের সংকটে পড়বেই। আমাদের সকলেরই যেখানে জোর দেয়া প্রয়োজন ছিল সেখানে সবকিছু উপেক্ষা করে আমরা তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বাবধায়ক বলে শক্তি ও মনোযোগ ক্ষয় করছি। আমি জানি না, এমন সংকীর্ণ চিন্তা-ভাবনার শেষ পরিণতি কী হবে? তবে গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়। কোনো সরকারই নির্বাচনের সময় ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় যেতে পারবে, জনগণ চুপ করে ঘরে বসে থাকবে তেমন নজির বাংলাদেশেই নেই।



সুতরাং, রাজনৈতিক দলগুলোকেই জনগণকে আস্থায় নেয়া ও বিশ্বাস করার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতে হবে। অন্যের সহায়তায় নির্বাচন করে দেশের দলগুলোর কোনোকালেই গণতন্ত্রের চর্চা করতে শিখবে না। একইভাবে পদ্মা সেতু নিয়েও দেশে দুর্নীতি হওয়ার যে প্রচারণা চালানো হয়েছিল তা বিশ্বব্যাংক ও দুদকের তদন্ত ও মামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হওয়াটি জরুরি হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার সরকার তেমন একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। দেশের প্রচার মাধ্যম, রাজনৈতিক ও সুধীসমাজ যেভাবে হাওয়া উত্তপ্ত করেছিল তা বোধহয় সঠিক নাকি বেঠিক তা আগে নির্ধারিত হওয়া জরুরি। এরপর দুর্নীতি না হলে টাকা বাংলাদেশ পাবেই। তেমন টাকা নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে তবেই আমাদের জাতীয় মর্যাদা ঊর্ধ্বে থাকতে পারে। যে ধরনের অভিযোগ গত এক বছর পদ্মা সেতু নিয়ে সর্বত্র শোনা গেছে তাতে দুর্নীতিবাজ সেজে বিশ্বব্যাংকের টাকা নেয়ার গ্লানি আমাদের কুড়ে কুড়ে খেতো। এখন মনে হচ্ছে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, দুদকের প্রতিবেদন ও মামলায় বিশ্বব্যাংকের তদন্ত দল সন্তুষ্ট। তাহলে এতোদিন কী শুনেছি, এখন সেসব গেলো কোথায়?এ ধরনের একটি উদগ্র প্রচারণার বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার ভাষণটি কতোটা নিষ্ঠার সঙ্গে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.