নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজাকারের বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় কারা?

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

‘এ বিচার চলতে থাকবে, যখন যাকে পাওয়া যাবে, তখন তার বিচার হবে।’ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেছেন জাতিকে। জাতির ওপর দীর্ঘকাল থেকে চেপে থাকা বেদনার জগদ্দল পাথর যেন সরতে শুরু করলো গতকালের বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার চায় বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ। দেশের ষোল কোটি মানুষ কিংবা বিদেশের অগণিত বাঙালির প্রতিনিধি আজকের প্রধানমন্ত্রী। আমরা বিশ্বাস করতে চাই তার কথা। সে জন্যই আমরা মনে করতে চাই, যে জাতি একটা কলঙ্কের ভার বয়ে বেড়াচ্ছিল গত চার দশক থেকে, তা-ই যেন কিছুটা হালকা হলো একটা রায়ের মধ্য দিয়ে। আজ চারদিকে চলছে আনন্দের মিছিল, দেশে-বিদেশে সবখানে আলোচনা, রায় হয়েছে ফাঁসির। ফোনে টিভি দেখার তাড়া দিচ্ছে একজন আরেকজনকে। একাত্তরে যুদ্ধের মাঠে ছিলেন, এমন একজন মানুষ ফোন করে বললেন ভালো লাগছে। যে দুঃস্বপ্ন আমাকে তাড়া করতো, সেই দুঃস্বপ্নের রাত যেন কাটতে শুরু করছে। বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির খবরে যে মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন, চোখের জল ফেলেছেন, তারা হলেন সেই মানুষগুলো, যারা বাচ্চুর প্রত্যক্ষ নির্যাতনের শিকার। বাচ্চুর গুলিতে নিহত ফরিদপুরের সালতা উপজেলার চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী জোছনা রানী দাস কিংবা তার ছেলে গোপাল চন্দ্র দাশের চোখ থেকে আবারো অশ্রু ঝরেছে। এই অশ্রুতে আছে বেদনা থেকে মুক্তির আস্বাদ। এই স্বাদ শুধুই বিচারের রায়ের। রায়ের কার্যকারিতা কতোদূর, তা এখন দেখার। কারণ বাচ্চু নাকি এখন নতুন পথ খুঁজছেন। পাকিস্তানের ‘আয়শা মঞ্জিল’ থেকে তুরস্ক যাবার, পালাবার। কিন্তু তবুও সরকারের দিকে চেয়ে আছেন তারা। তাদের সঙ্গে আমরাও। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। শহীদ হয়েছেন, পাকি বাহিনীর হাতে। কিন্তু শিক্ষক- সাংবাদিক-ছাত্র-সাধারণ মানুষ, যারা ঐ বাচ্চুদের নৃশংসতায় বধ্যভূমিতে পচে-গলে নিঃশেষ হলেন, যে যুবতী-বৃদ্ধা দেশীয় জানোয়ারদের দ্বারা সম্ভ্রম হারালেন তাদের স্বজনরা তো অপেক্ষায় থাকবেনই। এই স্বজনেরই একটি বৃহৎ অংশ এই বাংলাদেশ। আমরা তাই চেয়ে আছি সেই দিনটির প্রতীক্ষায়। বিচার কার্যকরের দিনটির।



ঐ শশ্রুম-িত রাজাকাররা দাপটের সঙ্গে খুন করেছে, লুণ্ঠন-ধর্ষণ সবকিছুই করেছে তারা। কারণ তখন তাদের হাতে অস্ত্র ছিল। তাদের কাছে পাকিস্তানি শাসক ছিল, ছিল পাকি বাহিনী। নৃশংসতার তা-ব চালিয়ে মাত্র তিন-চারটি বছর তারা গর্তে লুকিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এদের আবার সবকিছুই ফিরিয়ে দিয়েছিল। এদের জৌলুশ ফিরে এসেছিল। ধর্মীয় লেবাস আবার তারা পরে নিয়েছিল। এরা সারা জাতিকে ব্যঙ্গ করে ধর্মীয় উপদেশ দিয়েছে। কেউ কেউ বলে আজকের সরকার দলের সমর্থক টিভির পর্দা এই বাচ্চু রাজাকারদের অবারিত করে দিয়েছিল। এরা টিভির পর্দায় এসে নসিহতের মাধ্যমে যেন জানান দিতো একাত্তরের খুন-ধর্ষণেরও ব্যাখ্যা আছে তাদের কাছে। তা না হলে এরা কিভাবে পুনর্বাসিত হয়, কী করে এরা টিভির পর্দায় মেয়েদের নসিহত দিতো। আসলে তারা সেই ভ- ধার্মিক, যারা পবিত্র ধর্মকে ব্যবহার করতো আর টিভির পর্দায় উপস্থিত হয়ে প্রকারান্তরে জানিয়ে দিতো মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো হালাল, জায়েজ। দুঃখ-ক্ষোভ এতোকিছুর পরও সারা জাতির আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে (সোমবার) একটা রায় হলো, যে রায়ে কিছুটা হলেও আছে জাতির দায়মুক্তির শুরু। অথচ কী অদ্ভুত আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যখন সবাই কথা বলছে, তখন বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির একজন মেধাবী তরুণ নেতা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন সিনিয়ররা। তার এ কথার পর আমরা কী ভাবতে পারি। হয় এদের মুখ বাঁধা, না হয় জাতির আকাক্সক্ষার সঙ্গে এদের আকাক্সক্ষার একটা দ্বন্দ্ব আছে। অথচ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়া সম্মুখসমরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই মুক্তিযোদ্ধার সংগঠন যুদ্ধকালীন অপরাধকারীর রায়ে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারে না। কী এক অদৃশ্য সুতোয় এরা বাঁধা পড়ে আছে, যে সুতোর টানে সত্য কথাটি গুমরে মরে তাদের মুখের ভেতর। এমনকি জামাতে ইসলামীর নেতাদের মতো সাহসটুকু পর্যন্ত তারা করতে পারেনি। জামাত না হয় বলতে পেরেছে বাচ্চু রাজাকার একসময় জামাতে ইসলামী করতেন, এখন করেন না। তবুও তারা অন্তত বলতে পেরেছ এ রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম বিচারের রায়ে বিএনপি জাতির আকাক্সক্ষার প্রতিফলনের প্রতিধ্বনি তো করতেই পারেনি গতকাল। বলতে গেলে সিদ্ধান্তহীনতায়ই তারা কাটিয়েছে তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। বিএনপি চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত তৈরি করতে পারতো, কারণ দেশ-জাতি সবাই জানতো বাচ্চু রাজাকারের বিচারের রায় হচ্ছে ২১ তারিখ সোমবার। সত্যি বলতে গেলে বলতে হয়, কী এক অদ্ভুত-অদৃশ্য সুতোয় আটকে আছে বিএনপির যুদ্ধাপরাধী-প্রীতির সেতুবন্ধন।



বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের পর জাতি যেন একটা প্রতিধ্বনি শুনলো, একটা বার্তা পেলোÑ এ জাতির চার দশকের দায় শুধু এখন আর দায়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। এ দায় থেকে মুক্তি শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑ ‘জাতির ললাট থেকে কলঙ্ক মোচন করতে চাই, সে জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’ বাংলাদেশের মানুষ আশাবাদী এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাই। কিন্তু আওয়ামী লীগই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলে থাকে ছাত্রলীগে শিবির ঢুকে গেছে। সেভাবে কোনো এক অগোচরে ঢুকে যায়নি কি কিছু রাজাকার আওয়ামী লীগের ছায়ায়? এ কথাগুলো উচ্চারিত হচ্ছে এখন মাঝে মাঝেই। ঐ বাচ্চুই তো ঢুকে পড়েছিলেন টিভিতে। সেভাবে অনেকেই দল এবং নেতাদের ছত্রছায়ায় লুকিয়ে আছেন, এ কথা এমনকি দলের ভেতরেও উচ্চারিত সত্য। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হতে চাই। তিনিই বলেছেন ‘যখন যাকে পাওয়া যাবে, তখন তার বিচার হবে’। দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ঐরকম সাপ-বিচ্ছুদের বের করাও এখন সময়ের দাবি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অপরাধীদের অপরাধ প্রমাণিত হলে এদের রায়েও জাতির আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে এ প্রত্যাশা আছে দেশ ও জাতির এক বিরাট জনগোষ্ঠীর। এ রায়ের পর জামাতের ছাত্র সংগঠনটির আলোচনাও একাত্তরের সেই অপরাধকারীদের মতোই। গত সোমবারের এক সমাবেশ থেকেই বলেছে তারা তাদের নেতাদের কিছু হলে তারা দেশ অচল করে দেবে। সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে তাদের কমেন্ট কোনো কোনো অংশে এমনকি দেশদ্রোহিতার শামিল। শুধু রেড সিগন্যাল পেলে তারা এমনকি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ‘রুই-কাতলা’দের হত্যার পর্যন্ত হুমকি দিচ্ছে তাদের এই সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে। এ সমস্ত হুমকি-ধমকিকে আইনের আওতায় আনা যেতে পারে।



বাচ্চু রাজাকার পলাতক। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করতে চাই সরকার তার গতিবিধি জানে। এই সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে আসতে পেরেছে। বিচার কার্যকর হয়েছে। সে সময়ও আমরা হম্বিতম্বি কম শুনিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কুখ্যাত বাংলা ভাইদের ফাঁসি ছিল সে সময়ে জাতির কাক্সিক্ষত বিচার। আমরা বিশ্বাস করি বাচ্চুরা পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। শিবিরের দম্ভোক্তি কিংবা একটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক শক্তির পক্ষাবলম্বন একটি জাতির দায়মুক্তির আকাক্সক্ষায় চূড়ান্ত কোনো বাধা হতে পারবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। এই দায়মুক্তির প্রক্রিয়ায় সরকারের সহযোগী হতে হবে মানবিক বোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষকে। ফারুক যোশীর লেখা থেকে -

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.