নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচার করা যাবে জামাতেরও...

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০২

আরো এক দফা সংশোধনী এনে জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন (সংশোধন) বিল ২০১৩ পাস হয়েছে গতকাল রবিবার। এর ফলে ব্যক্তির পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধে জড়িত জামায়াতে ইসলামীসহ সব সংগঠনকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলা যাবে। আর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার, বাদী ও বিবাদীপক্ষের সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ তো তৈরি হলোই।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশোধনীটি গৃহীত হওয়ায় স্বাধীনতার চার দশকেরও বেশি সময় পর জামায়াতে ইসলামীকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হলো। সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনটি ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। পাস হওয়া বিলের বিধান অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার, বাদী ও বিবাদীপক্ষ শুধু আপিল করতে পারবে। এ ছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে আপিল এবং ৬০ দিনের মধ্যে সেই আপিল নিষ্পত্তির সময়সীমা ধরে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, এর আওতায় সরকার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দু-এক দিনের মধ্যেই আপিল করতে যাচ্ছে।

দুই দিন বিরতি দিয়ে গতকাল বিকেলে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বিরোধী দলহীন সংসদে বিলটির ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বিলের ৩ ধারায় দুটি সংশোধনী এনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠন হিসেবে জামায়াতেরও বিচারের প্রস্তাব দিলে মহাজোটের সব সংসদ সদস্য টেবিল চাপড়িয়ে তাতে সমর্থন জানান।

সংশোধনীর ব্যাখ্যায় রাশেদ খান মেনন বলেন, যুদ্ধাপরাধ শুধু ব্যক্তির বিষয় নয়, এর সঙ্গে সংগঠনও জড়িত। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন বেশ কয়েকটি সংগঠন রাজাকার-আলবদর সৃষ্টি করে গণহত্যা চালিয়েছে, যুদ্ধাপরাধ করেছে। এখন পর্যন্ত স্বাধীনতার বিরোধিতা ও যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার করে এসব সংগঠন জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি।

তিনি আরো বলেন, 'সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের আওতায় আনার বিধান আছে। তাই যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি জড়িত সংগঠনগুলোরও বিচার করতে হবে। আর ট্রাইব্যুনালের দুটি রায়েও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের আওতায় আনতে আমি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছি।'

রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদও বলেন, সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের এ বিধানটি আইনমন্ত্রী দেখতে পারেন।

মহাজোটের বিপুলসংখ্যক সংসদ সদস্যের সমর্থনের মুখে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জবাব দিতে উঠে সংশোধনী প্রস্তাবটি গ্রহণের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জার্মানিতে ব্যক্তির পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের জন্য নাৎসি পার্টিকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। সংগঠনটির সঙ্গে জড়িতদেরও বিচারে শাস্তি হয়েছে।

আইনমন্ত্রীও সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের আওতায় আনার বিধান থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'সংবিধানেই রয়েছে, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনেরও বিচারের ক্ষেত্রে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। তাই বিলের সংশোধনীটি আমি গ্রহণ করছি।'

এরপর স্পিকার বিলটি পাসের জন্য ভোটে দিলে গগনবিদারী 'হ্যাঁ' স্লোগানে সংসদ অধিবেশন কক্ষ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ভোটের সময় একজনও 'না' বলেননি। ফলে বিলটি স্পিকার সর্বসম্মতিক্রমে পাসের ঘোষণা দেওয়া মাত্রই প্রধানমন্ত্রীসহ মহাজোটের সব সংসদ সদস্য প্রায় এক মিনিট ধরে টেবিল চাপড়ে বিষয়টি উদ্যাপন করেন। তাঁদের উচ্ছ্বাস ও প্রবল হর্ষধ্বনিতে অধিবেশন কক্ষে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

আলোচিত এ বিলটি পাস হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও মিরপুরের কসাই বলে খ্যাত আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত যাবজ্জীবন রায়ের বিরুদ্ধে দু-এক দিনের মধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতে (সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ) আপিল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের দায়ে বিচারাধীন রাজাকার শিরোমণিদের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামসহ যেসব সংগঠন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, সেসব সংগঠনকেও অচিরেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও মিরপুরের কসাই খ্যাত আবদুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। তাঁর এই লঘুদণ্ড মেনে নিতে পারেনি দেশের তরুণ সমাজ। ওই রায়ের দিন থেকে কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে শাহবাগসহ সারা দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। প্রবল প্রতিবাদ সমাবেশের মুখে সরকার বিদ্যমান আইনের ২১ ধারায় সংশোধনীর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন প্রণীত হয়। এ আইনে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়। বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই প্রথম দফায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন করে। ওই সংশোধনীতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিলের সুযোগ ছিল না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দল : মেজর (অব.) সাদিক সালিকের লেখা 'উইটনেস টু সারেন্ডার' বইতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন যেসব রাজনৈতিক দল বা সংগঠন স্বাধীনতার বিরোধিতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী, মৌলভি ফরিদউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি, সবুর খানের নেতৃত্বাধীন কাইয়ুম মুসলিম লীগ, ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কনভেনশন মুসলিম লীগ ও খাজা খয়ের উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কাউন্সিল মুসলিম লীগ।

বিএনপির কৌশলী অবস্থান : সংসদে পাস হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) বিল নিয়ে কৌশলী অবস্থান ছিল প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। সংসদে অনুপস্থিত থাকলেও এর আগে সংসদে উত্থাপিত প্রায় প্রতিটি বিলেরই বিরোধিতা করে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক সংসদ সদস্য জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। গতকাল সংসদে পাস হওয়া ওয়াক্ফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান বিলেও বিএনপির ১২ জন সংসদ সদস্য জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনীর প্রস্তাব দেন। কিন্তু জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সংসদে পাস হওয়া বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) বিলে বিএনপির কোনো সংসদ সদস্য জনমত যাচাই-বাছাই বা সংশোধনী প্রস্তাব জমা দেননি। অনেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের এ অবস্থানকে শাহবাগ গণজাগরণের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন। কালেরকণ্ঠ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.