নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক সূত্রে গাঁথা একাত্তর ও ২০১৩

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

এ এক অনন্য মার্চকে দেখছে বাঙালি। আমরা যারা দেখিনি একাত্তর, হৃদয়ের গভীর অনুভূতি দিয়ে রাঙিয়ে নিচ্ছি এ প্রবাদপ্রতিম মার্চকে। একাত্তরের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের শুরু যে মার্চের হাত ধরে, ২০১৩ সালে যেন তারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে প্রজন্ম চত্বরে। উদ্বেল মেঘমালার মতো দুর্বার তারুণ্য যেন মেলবন্ধন রচনা করেছে ১৯৭১ থেকে ২০১৩-এর মার্চকে; গেঁথেছে একসূত্রে, যে সূত্রের মূলে আছে চেতনা ও আদর্শের বাতিঘর। এ কথা মানতেই হবে, একাত্তরের যুদ্ধ সমাপ্ত হয়নি। যে শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, '৭৫-পরবর্তী প্রেক্ষাপটেই তার অসম্পূর্ণতা ধরা পড়ে। গণহত্যা, নারী নির্যাতনসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনীকে যারা সহযোগিতা করেছিল, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে তাদের বিচার শুরু হলেও জলপাই রঙের অন্ধকারের কালো ছায়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতি করার সুযোগ পায়, বাংলাদেশ চলে যায় ভয়াল

মেঘমালার নিচে। এর পরের ইতিহাস আরও বেদনাদগ্ধ। কখনও সামরিকতন্ত্রের ছাঁচে ফেলে চলে মৌলবাদতন্ত্র, কখনও মৌলবাদের মলাটে বৈধ করা হয় সামরিকতন্ত্র। ২০০১ সালে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা হয় মন্ত্রী; সভ্যতার দীপ্র দুপুরেও বাংলাদেশে নেমে আসে মধ্যযুগীয় আঁধার।

একাত্তরের মার্চে বাঙালি মুক্তি-সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয় বাঙালি; ২০১৩ সালের মার্চে আমরা আন্দোলন করছি একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে। অতএব, বিয়ালি্লশ বছরের ব্যবধানে সংঘটিত দুটি আন্দোলনেই আমরা জানি প্রতিপক্ষ কারা। একাত্তরের সূর্যসম মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, আমাদের প্রতিপক্ষ দেশের সব যুদ্ধাপরাধী। একাত্তরের লড়াই ছিল মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের লড়াই হলো যুদ্ধাপরাধমুক্ত

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত বাংলাদেশের জন্য। তবে আমাদের আন্দোলনের ধরন ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সশস্ত্র যুদ্ধ আর আমাদের আন্দোলনটি অহিংস। একাত্তরের মার্চ ছিল আকাশমুখী উত্তাল অগি্নবলাকা আর ২০১৩ সালের মার্চ মৃত্তিকা ছুঁয়ে থাকা তীব্র ও শানিত রোদের মতো। সেদিনের মার্চে বাঙালি অস্ত্র হাতে নিয়েছিল দেশ স্বাধীন করার দৃপ্ত শপথে, আজকের মার্চে আমরা শপথ নিই অহিংস আন্দোলনের। মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সেই রাষ্ট্র-কাঠামোর প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। সে কারণেই আজকের মার্চ প্রজন্ম চত্বরের এমন একটি স্বপ্নের মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই শাশ্বত এবং ধ্রুব সত্য। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রতিটি দিক সংজ্ঞায়িত হবে মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র চেতনার বেদিতে দাঁড়িয়ে। সংসদের সরকারি কিংবা বিরোধী_ যে দলই হোক না কেন, তাকে হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। স্বাধীনতাবিরোধী মানেই প্রতিপক্ষ, পুরো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিপক্ষ, ষোলো কোটি বাঙালির প্রতিপক্ষ। রক্তক্ষয়ী মুক্তি-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানের প্রতি যে শ্রদ্ধা, তারই মূর্ত প্রকাশ প্রজন্ম চত্বরের অহিংস আন্দোলন। একাত্তরের মার্চে বাঙালিকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যুদ্ধ করতে হয়েছিল একটি রাষ্ট্রের জন্য, পতাকার জন্য, আত্মপরিচয়ের জন্য; কিন্তু আজ আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবিরের হিংস্র রাজনীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশের জন্য, যার মৌলভিত্তি একাত্তরের ঐশ্বর্যমণ্ডিত চেতনা।

এই মার্চে ১৯৭১-এর মতো আজও আমাদের শপথ নিতে হবে। ঘৃণাভরে বর্জন করতে হবে ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, ফোকাস ও রেটিনা কোচিং সেন্টারের মতো জামায়াত-শিবিরের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কারণ, এগুলোর মাধ্যমেই অর্থ সংগ্রহ করে সারা বাংলায় দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছে এই শ্বাপদেরা। তাদের গণমাধ্যমগুলো বয়কট করতে হবে। দিগন্ত টেলিভিশন, নয়া দিগন্ত, আমার দেশ ও সংগ্রাম পত্রিকা এবং সোনার বাংলা ব্লগকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যেহেতু এরা কোনোদিনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলেনি, বাঙালির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে মূল্য দেয়নি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কোনোদিনই এদের আবর্জনাতুল্য অভিধানে ছিল না, তাই এদের যে কোনো মূল্যে বয়কট করতে হবে। আমরা যারা প্রজন্ম চত্বরে সমবেত হয়েছি, আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই_ বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর যদি সিদ্ধান্ত নেয় তারা যুদ্ধাপরাধীদের পত্রিকা রাখবে না, প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি অফিস যদি সিদ্ধান্ত নেয় যুদ্ধাপরাধীদের গণমাধ্যমকে বয়কট করবে, তাহলে যুদ্ধাপরাধীরা কোনোদিনই সামাজিকভাবে বিষবৃক্ষের বীজ বপন করতে পারবে না। আজকের মার্চ আমাদের এই অনিন্দ্য চেতনায় ভাস্বর করুক, এ চেতনা ছড়িয়ে যাক সবখানে।

একাত্তরের মতোই আজও কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ, গণমাধ্যমকর্মী, সব দল-মত-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা গড়ে তুলেছি এক শালপ্রাংশু মহীরুহ। সবার মিলিত শক্তি যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিহত করতে প্রস্তুত। গণজাগরণ মঞ্চের সামনে চেতনার লড়াই, অস্তিত্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। আমাদের লক্ষ্যে আমরা স্থির অবিচল; ১৯৭১ থেকে অগি্নঝরা মার্চ তার স্মারক বয়ে এনেছে ২০১৩ সালে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এ স্মারক আজ হীরণ্ময় দ্যুতি ছড়াচ্ছে। মারফ রসূল :শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: এসব ক্ষমতা কে আঁকড়ে থাকার ফন্দি
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র এদের শেখলে বন্ধি ।
মানুষ নামের শিষ্টাচার নেই এদের প্রহসনে
আচরনে শয়তান , স্বার্থের আবরনে ।+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.