![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার সব ধরণের অপতৎপরতা মোকাবেলা করবে জনগণ। ধর্মের নাম নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করছে। যারা করছে আর গণমাধ্যমে যারা তা প্রচার করছে তারা উভয়ে সমান অপরাধী। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির শহীদ শুক্কুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে কোনো ধরনের অরাজকতা বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর সরকার কোনো অশুভ শক্তিকে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলতে দেবে না। ধর্মীয় বিরোধ তৈরি হয় এমন কিছু পত্রিকায় ছাপা যাবে না। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে সকল ধর্মের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ এবং ম্ুিক্তযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে পারে সেজন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে এবং সকল রায় কার্যকর করা হবে। যারা পাকিস্তানী পাক হানাদারদের সহযোগী বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে এবং আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছে তাদের সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটির জনসভায় দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন, যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে, অত্যাচার ও গণহত্যা চালিয়েছে। এদেশের মাটিতে তাদের বিচার অবশ্যই হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও একজন মুসলমান, মহানবী (সা.)-কে নিয়ে যারা কটূক্তি করে এবং যারা তা পত্রিকায় প্রকাশ করে উসকানি দেয় তারা উভয়ই সমান অপরাধী। তাঁর সরকার ধর্ম নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য অথবা কোনো পত্রিকা বা মিডিয়ায় এ ধরনের প্রচারণা ও প্রকাশনা চালানো সহ্য করবে না।’
ধর্মাশ্রয়ী জামায়াতের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করাকে ইস্যু করে জামায়াত-শিবির খেলা শুরু করেছে। এ খেলা চলতে দেওয়া যায় না। ধর্ম নিয়ে খেলা করার অধিকার কারো নেই। কেউ যদি নবী করিম (সা.) এর সম্পর্কে কিছু বলে থাকে তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও যদি কেউ এটি নিয়ে রাজনীতি করতে চায়, এটা ইস্যু করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চায় তা হবে দুঃখজনক। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় এ ধরনের খেলা জনগণ মেনে নেবে না। আর কোনো বাধাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রভাবিত বা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের কয়েকদিনের মাথায়ই ২৮ ফেব্র“য়ারি দুপুরে ৭১ এ খুন-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ-লুটতরাজ ও বিভিন্ন অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। বাচ্চু রাজাকার, কাদের মোল্লা ও দেইল্লা রাজাকারের রায়ের মাধ্যমে দ্ব্যার্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আন্তরিক। যুদ্ধাপরাধী তিন জনের রায় হয়েছে। আশা করা যায় রক্ত ঝরা মার্চেই রক্তপিপাসুদের বিচারের রায় হবে এবং ২০১৩ সালের মধ্যেই এসব কুলাঙ্গারদের রায় কার্যকর হবে।
পবিত্র কোরআন পরিপূর্ণ জীবন
বিধান : প্রধানমন্ত্রী
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েব পোর্টাল ও কোরআনের ডিজিটাল অনুলিপির উদ্বোধনকালে কয়েক মাস আগে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনকে মানবজীবনের পরিপূর্ণ বিধান আখ্যায়িত করে এর মর্মবাণী অনুধাবন এবং সঠিক অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় অন্য ধর্মের মানুষও যাতে ইসলাম গ্রহণে আকৃষ্ট হয়, সেজন্য নবীর দেখানো পথে জীবন গড়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সকলে ইসলাম সম্পর্কে জানুক। অন্যরা যাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে আকৃষ্ট হন- সে প্রচেষ্টা আমাদের সকলের থাকা উচিৎ।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগের মাধ্যমে ইসলামের ‘শান্তির বাণী’ সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইসলামের শান্তির বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। পবিত্র কোরআন শিক্ষার উদ্দেশ্য সার্থক হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ করে ইসলামের বদনাম করা হয়েছে। ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত- সেটাই তাদের ধর্ম।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। ইসলামের উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার সরকার এ ব্যাপারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুসরণ করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জমি বরাদ্দ দেন। মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেন এবং ইসলামী দেশগুলোর কাছে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করছি। তার সরকার কয়েক লাখ শিশুর কোরআন শিক্ষার জন্য মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচি চালু করেছে, যা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সরকার এ কর্মসূচির জন্য ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, কয়েক হাজার আলেমের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষার জন্য কয়েক লাখ শিশু ও বয়স্ক লোককে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, তার সরকার মানবসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। হজ ব্যবস্থাপনায় সব অনিয়ম দূর করে একটি হজবান্ধব নীতি প্রণয়ন করে এ সেক্টরে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি ও জামায়াত ইসলামের নামে প্রতিদিন সর্বত্র বোমা হামলাসহ সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করেছে এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু এখন ধর্মীয় নেতারা জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত এবং বর্তমানে দেশে জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই। তার সরকার জনগণের কাছে ইসলামের শান্তির বাণী পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। কোরআনের ডিজিটালাইজেশন ও এর ওয়েবসাইট তৈরির ফলে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে মহান আল্লাহর অমর বাণী পৌঁছানোর কাজ সহজ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন কোন রাজনৈতিক দল ধর্মকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে এই প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে আগে আসবে বিএনপির নাম। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে ধর্মভিক্তিক রাজনীতির প্রচলন করেন ক্ষমতায় আসার পরপরই নিজের ক্ষমতাকে পোক্ত করার জন্য। তিনি গোলাম আযমের নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করেন। তাঁকে দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। আজ এতোদিন পর বলতে দ্বিধা নেই, জিয়াউর রহমান যদি বাংলাদেশে গোলাম আযমকে পুর্নবাসিত না করতেন তাহলে এদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার আর কোনো সুযোগ থাকত না।
জিয়াউর রহমানের পর বেগম খালেদা জিয়াও বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখেন। জিয়াউর রহমান শাহ আজিজুর রহমানের মতো রাজাকারকে মন্ত্রীসভায় ঠাই দিয়েছেন সত্য, কিন্তু শাহ আজিজকে বিএনপির লোক বানিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এর চেয়ে জঘন্য কাজ করেন খালেদা জিয়া। তিনি জামায়াতের নেতা হিসেবে মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মো. মুজাহিদকে মন্ত্রীসভায় অর্ন্তভুক্ত করেন। এক কথায় বলা চলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করেন খালেদা জিয়া।
বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের যে গণদাবি উঠেছে সেখানেও বাগড়া দিয়ে রেখেছে বিএনপি। বিএনপি যে ১৮ দলীয় জোট করেছে সেখানেও অন্যতম শরিক জামায়াত। বিএনপি যদি জামায়াতের সংঘ ত্যাগ করত তাহলে যে কেউই মনে করে বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়ত। কিন্তু বিএনপি তা করেনি। এখন বলা চলে বিএনপির আশকারা পেয়েই জামায়াত ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।
বিএনপিকে যে বিষয়টা বুঝতে হবে, ভোটাররা এখন বুঝে ফেলেছে, জামায়াত ধর্মভিক্তিক দল নয়, জামায়াত ধর্মাশ্রয়ী দল। বিএনপি যদি মনে করে থাকে জামায়াত তাদের সঙ্গে আছে বলে এদেশের ধর্মভিরু মানুষ সব ধানের শীষে ভোট দেবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।
মানুষ এখন নিশ্চিত হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দেশে যার যার ধর্ম পালন অনেকটাই অনিশ্চিত থাকে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ধর্ম পালিত হয় নির্বিঘেœ।
সাঈদীর ফাঁসি ঘোষণা এবং তারপর…
জামায়াত নেতা সাঈদীর বিচারের রায় ঘোষণার দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার জামায়াত সারা দেশে হরতাল ডেকেছে। বিষয়টি লক্ষণীয় যে, রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত সারাদেশে হরতালকে কেন্দ্র করে একটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। দুপুরের দিকে যেই রায় ঘোষণা হল অমনি শুরু হয়ে গেল মৃত্যুর মিছিল। ঢাকাসহ সারাদেশে কম-বেশি ৫০ জন মানুষ নিহত হন। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, ২৮ ফেব্রুয়ারির হরতাল ছিল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে জামায়াত রাজধানীতে কোনো ধরনের নাশকতায় নামেনি। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত তারা নাশকতা করেছে সারা দেশ জুড়ে। আর সন্ধ্যার পর অর্থাৎ রাতের আঁধারে অনেকটা ৭১ এর ২৫ মার্চের স্টাইলে তারা ঢাকার রাস্তায় নেমেছে লুটতরাজ ও খুন-জখমের জন্য। মিরপুর, উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তারা যে হামলা চালিয়েছে তার স্টাইল ছিল ৭১ এর মতো।
সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর উদ্ভূত ঘটনা মানুষের কাছে জামায়াতের চরিত্রকে প্রস্ফূটিত করেছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে তারা যে তা-ব চালিয়েছে তাতে সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, ৭১ এ তাদের নৃশংসতা ছিল কতোটা ভয়ঙ্কর। তাদের ভয়ঙ্কর রূপ তারা সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে প্রকাশ করছে তাতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় তারা ধর্মকে অবলম্বনকারী, ধর্মকে ব্যবহারকারি এবং ধর্মাশ্রয়ী একটি দল। তারা কিছুতেই ধর্মভিক্তিক দল নয়। কারণ কোনো ধর্মভিক্তিক দল ধর্মের নামে এমন অধর্মের কাজ করতে পারে না।
দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেও জয় সুনিশ্চিত
রক্তঝরা মার্চ চলছে এখন বাংলাদেশে। ১৯৭১ সালের মার্চে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলায়, সে ধরনের আবহ আবার তৈরি হয়েছে ৪২ বছর পরে এসে। নয় মাস যুদ্ধের পর ৭১ এর গণজাগরণ পূর্ণতা পেয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটেছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। মুক্তির জন্য যে যুদ্ধ বাংলার ছাত্র-কৃষক-জনতা করেছিল সে যুদ্ধের ফলাফল খুব সহজে আসেনি। এর জন্য রক্ত ঝরাতে হয়েছিল, মা-বোনদের দিতে হয়েছিল ইজ্জত।
আজ থেকে ৪২ বছর আগে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সে মুক্তিযুদ্ধ আবার মাথা তুলেছে শাহবাগে। সেখানেসহ সারা দেশে ঘটেছে গণজাগরণ। এ জাগরণের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। এই জাগরণের নেতৃত্বে কোনো নেতা নেই। রাত নেই, দিন নেই, দিনের পর দিন চলতে থাকা এই গণজোয়ারের বিরাট অংশই দেশের নতুন প্রজšে§র তরুণ সমাজ, যারা একাত্তর দেখেনি। কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে অতীতে যাদেরকে অত্যন্ত চতুরতার সাথে একাত্তরের বিকৃত ইতিহাস শোনানো ও শেখানো হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ভেবেছিল বিকৃত ইতিহাস অব্যাহতভাবে শেখানোর ফলস্বরূপ দেশের নতুন প্রজš§ বিকৃত ইতিহাসকেই আসল ভেবে নেবে। কিন্তু তরুণ সমাজ বিভ্রান্ত হয়নি। তাদের কণ্ঠে চার দশক পর আবার বজ্রনিনাধ উঠেছে-‘জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ কর।’
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত যা করেছিল তার পুনরাবৃত্তি তারা ৪২ বছর ধরে করে যাচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার কারণেই তারা এমনটি করার সাহস ও শক্তি পাচ্ছে। তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ বিজয় অর্জনের মাত্র একদিন আগে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা। জামায়াত যখন বুঝতে পেরেছিল, এদেশের স্বাধীনতাকে আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, এদেশ স্বাধীন হলেও দেশটিকে পঙ্গু করে ফেলতে হবে। আর পঙ্গু করার সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হল এদেশের ইনটেলেকচ্যুয়ালদের সরিয়ে দিতে হবে। এদেশের থিংক ট্যাংকারদের বিদায় করতে হবে। তারা তাই করেছিল। ১৪ ডিসেম্বর রাতে তারা বেছে বেছে সেই সব সূর্য
সন্তানদেরই টার্গেট করেছিল, যারা স্বাধীন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দেবে।
জামায়াত যে নীল-নকশা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেছিল, তাদের সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়নি। আজ এ কথা বলার সময় এসেছে, ১৪ ডিসেম্বর রাতে জামায়াত এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল বলেই তারা এদেশের মাটিতে গত ৪২ বছর নির্দ্বিধায় রাজনীতি করতে পেরেছে। স্বাধীনতার মাত্র একদিন আগে আমরা যদি আমাদের বুদ্ধিজীবীদের না হারাতাম তাহলে দেশদ্রোহী জামায়াত আরো অনেক আগেই চিহ্নিত হয়ে যেত। জামায়াত রাজনীতি করার অধিকার কখনোই পেত না।
আজ বহুদিন পর আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া বুদ্ধিজীবীদের প্রতিনিধিরা জেগে উঠেছে। জামায়াত এই প্রতিনিধিদেরও হত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছে। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে ব্লগারদের অর্থাৎ কোনো মানুষকে হত্যার হুমকি দিতে পারে তারা যে মানুষের মতো দেখতে অমানুষ তা জামায়াতই প্রমাণ করেছে। এই অমানুষদের রাজনীতি করার অধিকার বাংলার মাটিতে থাকতে পারে না। অবশ্যই না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, জামায়াত-শিবিরের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই।
জামায়াত ৭১-এ যেভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল ২০১৩ তে এসেও ধর্মকে ব্যবহার করতে চাইছে শাহবাগের গণজাগরণকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য। এই গণজাগরণ স্তব্ধ করার জন্য তারা আল্লাহ-রাসুল (স.) কে পর্যন্ত টেনে এনেছিল। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। দেশের ওলামা মাশায়েখদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে গণজাগরণে অংশগ্রহণকারীদের সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে। আজ চরমোনাই পীর থেকে শুরু করে দেশের সব ওলামা মাশায়েখরা বলছেন, জামায়াত যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার হওয়া অবশ্যই দরকার।
জামায়াতি রাজাকাররা ভেবেছিল, চার দশক একটি দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যে বাংলার মানুষ ৭১-এ তাদের প্রত্যক্ষ মদদে ঘটিত নৃশংসতা ভুলে যাবে। সেজন্য রাজাকাররা দম্ভ করেই বলতে পেরেছিল, এ দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। আর নব্য রাজাকাররা বলতে পেরেছিল, জামায়াত নেতাদের গুরুদ- (ফাঁসি) হলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে। এটা তো সেই ৭১-এর আস্ফালন। এই আস্ফালন আরো প্রকট হয়, যখন আমরা দেখি একজন প্রতিষ্ঠিত রাজাকার আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে ভি চিহ্ন দেখায়। প্রতিষ্ঠিত রাজাকার কাদের মোল্লা এমনটি করতে পেরেছিল মানুষ সব কিছু ভুলে গিয়েছে এই ভেবে। মানুষ যে ৭১-এর নৃশংসতা ভুলেনি, তরুণ প্রজš§ যে ভুল ইতিহাস শেখেনি তার প্রমাণ শাহবাগের গণজোয়ার। এই জোয়ারকে পূর্ণতা দিতেই হবে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য। রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ এখন জাতীয় দাবি। এই দাবির বাস্তবায়ন প্রয়োজন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আরো সুসংহত করার লক্ষ্যে।
শাহবাগে ধারাবাহিকভাবে চলা ঐতিহাসিক গণসমাবেশের শপথ হল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্যে ফিরে যাওয়ার এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এই আন্দোলনের চরিত্র একেবারেই ভিন্ন। এতে যোগ দিয়েছে দেশের তরুণ সমাজ। তরুণদের ডাকে এখন সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ছুটে এসেছে শাহবাগে। এসেছে নারীরা, মায়ের কোলে চড়ে শিশুরা। এই যে সব বয়সীদের আগমন, এটা তো যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে জাতীয় ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। ক্রোধ এখন শক্তি। এই শক্তিকে এগিয়ে নিতেই হবে। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে। এই যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করব যদি একাত্তরের হাতিয়ার জাতীয় চেতনা আবার কাজে লাগাতে পারি।
‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগানের গগণবিদারী উচ্চারণকে ছড়িয়ে দিতে হবে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায়। নতুনের যে কেতন শাহবাগে উড়ছে তার জয় হবেই হবে। বাংলার মানুষ বুক ভরে জয়ধ্বনি করবে, ‘রাজাকারমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।’ তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শাহবাগের গণজাগরণের বিজয় অনিবার্য। কারণ এটি সারাদেশে ছড়িয়ে মানুষকে আশার আলো জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তি এবং এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিশ্বাসী সকল মহলের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন-সহযোগিতা রয়েছে এ আন্দোলন গণজাগরণের প্রতি। ফলে বাংলার সব শ্রেণীর মানুষের বিশ্বাস স্বাধীনতার এই ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে’ দেশের তরুণ সমাজ তথা বাঙালি জাতির জয় হবেই।
©somewhere in net ltd.