![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চলমান বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সহিংস তা-বে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে; বিশেষ করে দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সহিংস তা-বের নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু করেছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। চলছে রাস্তাঘাটে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর। বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তথাকথিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তাহীন সাধারণ মানুষ বাস করছে এক ধরনের আতঙ্কে। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় নিহত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ জনগণ। হরতালের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের ১০ লাখ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরাও। উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বন্ধ ব্যবসা-বাণিজ্য। বেসরকারি সেক্টরে চলছে চরম হতাশা। গত ৩ এপ্রিল ঢাকা চেম্বার সূত্রে জানা যায়, হরতালের আর্থিক ক্ষতি ১ দিনে ১৬০০ কোটি টাকা হিসেবে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আর ১ দিনের হিসাবে জিডিপি’র পরিমাণ ২৬৮১ কোটি টাকা, জিডিপিতে ক্ষতি ৬.৫ শতাংশ। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেবলমাত্র পোষাক খাতে ১ দিনের হরতালে ক্ষতি হয় ৩৬০ কোটি টাকা। সামগ্রিক বিবেচনায় হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের পোষাকখাত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার (৫০ কোটি ডলার) রপ্তানি আদেশ হারিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এসব অর্ডারের বেশিরভাগই প্রতিবেশী ভারতসহ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় চলে গেছে। হরতালের কারণে বিনিয়োগকারীরা নির্ধারিত সময়ে দেশে আসলেও অজানা আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় ফিরে গেছে স্বদেশে। দিনের পর দিন হরতাল থাকায় পোষাক শিল্পখাতের ৩২ লাখ নারী শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। যাদের ঘাম ঝরানো টাকায় ৩২ লাখ পরিবারের দেড় কোটি মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হচ্ছে। হরতালের কারণে বন্দরে আটকে আছে ৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির কারণে সঠিক সময়ে মালগুলো খালাস করা যাচ্ছে না। হরতাল আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াত জোটের তা-ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের বৃহত্তম সেবা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় রেলের প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। বিগত হরতালে রেল নিরাপদ থাকলেও এখন রেল আর রক্ষা পাচ্ছে না জামায়াত-বিএনপির তা-ব থেকে। জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পরবর্তী সহিংস ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় সারাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। হরতালের কারণে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থাও চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়েছে। গ্রাম থেকে উৎপাদিত ফসল শহরের বাজারগুলোতে না পাঠাতে পারায় গ্রামের কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একেকটি হরতালের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে ঝরে যাচ্ছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানিয়েছে এমন তথ্য। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা বহাল থাকলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফিরে যাবে। ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ছাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নতুন করে বিদেশিরা বিনিয়োগের ঝুঁকিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে। তারা বিকল্প বাজার খুঁজে বের করছে। দেশি কর্পোরেট হাউজগুলোও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকার ও বিরোধীদলকে হরতালের বিকল্প কর্মসূচি খুঁজে বের করার পরামর্শ দিচ্ছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসারও তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যেখানে বিরোধীদল পাবলিক পরীক্ষার ভিতর হরতাল দিচ্ছে সেখানে ব্যবসায়ীদের কান্না তাদের কানে পৌঁছুবে কীভাবে। ব্যবসায়ীরা এখন আতঙ্কিত হয়ে বিদেশে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে। দেশের মানুষ সহিংস রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ধ্বংসাত্মক ও জ্বালাও-পোড়াও-এর রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টমহল। রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী প্রজšে§র কথা ভেবে হলেও ছাড় দিতে হবে। বসতে হবে আলোচনায়। দেশ ও জনগণের স্বার্থে ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরতে হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা।
হাত ছাড়া হচ্ছে পোষাকখাত
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার (৫০ কোটি ডলার) রপ্তানি আদেশ হারিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এসব অর্ডারের বেশিরভাগই প্রতিবেশীদেশ ভারতসহ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় চলে গেছে। এই অবস্থায় আর হরতাল না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত ১ এপ্রিল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, পোশাক শিল্পের বড় ক্রেতারা প্রতিবছর অর্ডার নেগোসিয়েশন ও অর্ডার দেয়ার জন্য তাদের প্রতিনিধি এদেশে পাঠালেও এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমকে সামনে রেখে অর্ডার দেয়ার জন্য এ মুহূর্তে তারা প্রতিনিধি পাঠাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। বরং ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণ দেখিয়ে অর্ডার নেয়ার জন্য বাংলাদেশি পোশাক সরবরাহকারীদেরকে তাদের হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পোশাক শিল্পে অর্ডার ক্রমেই কমছে। অন্যদিকে ঘন ঘন হরতালের কারণে সম্প্রতি এ শিল্পের অনেক উদ্যোক্তাই সমুদ্রপথে পণ্যের জাহাজীকরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ লিড টাইম (পণ্য প্রেরণের চুক্তিবদ্ধ সময়) মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে আকাশপথে পণ্য রপ্তানি করছেন। আবার কিছু উদ্যোক্তা ইতিমধ্যেই স্টকলট (অর্ডার বাতিলকৃত তৈরি পণ্য) পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। আবার অনেক উদ্যোক্তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজীকরণ করতে না পারার কারণে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ডিসকাউন্ট, অর্ডার বাতিল বা বকেয়া (ডেফারড পেমেন্ট) পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এতে করে ঝুঁকিতে পড়ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিজিএমইএ’র মতে, গার্মেন্টস পণ্যের প্রধান গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় মন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেইসাথে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্বল অবকাঠামো খাত এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে স্থানীয় পর্যায়ে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি পণ্যের মূল্য হ্রাস, দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য হ্রাসের ফলে উদ্যোক্তাদের সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় ঘন ঘন হরতাল কর্মসূচি পোশাক শিল্পকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যাংক-বীমা, শিপিং, সেবাখাত, পর্যটন, হোটেল, পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প। পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক এ শিল্পের ওপর নিভর্রশীল। গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিলসেন লিমিটেডের সমীক্ষার বরাত দিয়ে বলা হয়, গত ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ব্যাংক ও বীমা খাতে পোশাক শিল্পের অবদান ছিলো যথাক্রমে প্রায় ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ও প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। একই সময়ে শিপিং খাতে অবদান ছিলো প্রায় ১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে ৮৩০ কোটি টাকা। সরকার স্ট্যাম্প, লাইসেন্স নবায়ন ফি প্রভৃতি বাবদ আয় করেছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। একই সময়ে এই শিল্প প্রত্যক্ষ কর হিসাবে সরকারকে ৫৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। উল্লিখিত সময়ে সেবাখাতে পোশাক শিল্পের অবদান ছিলো প্রায় ১১০ কোটি টাকা, প্রকৌশল খাতে ৪৩১ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ খাতে বিল বাবদ প্রায় ৪৪১ কোটি টাকা, গ্যাস ও ওয়াসা খাতে বিল বাবদ প্রায় ১১১ কোটি টাকা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রায় ২৯৬ কোটি টাকা, আবাসন খাতে প্রায় ৭৮৫ কোটি টাকা এবং হোটেল ও পর্যটন খাতে প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। সুতরাং জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমগ্র অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে- এমন আশংকা করছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
‘ভেরি সরি! উই আর ব্যাক টু রাশিয়া’
গত ২৭ মার্চ ঢাকায় আসার কথা ছিল রাশিয়ার কয়েকজন ক্রেতার। তারা বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শন করবেন। নতুন নতুন অর্ডার দেবেন। বিক্রেতা তো মহাখুশি। কিন্তু সারাদিনও সেই বিদেশি ক্রেতাদের সাক্ষাত পাননি বিক্রেতা। দেশে সেদিন ছিল দুদিনব্যাপী হরতালের প্রথম দিন। ভীষণ টেনশনে কাটে স্থানীয় উদ্যোক্তার। পরে একটি মেইল বার্তায় তিনি জানতে পারলেন ওই ক্রেতারা ঢাকা এসেছিলেন ঠিকই। কিন্তু হরতালের কারণে বিমানবন্দর থেকেই স্বদেশে ফিরে গেছেন। বিক্রেতাকে পাঠানো ই-মেইলে লেখা হয়েছে ‘ভেরি সরি! উই আর ব্যাক টু রাশিয়া।’ ওই ক্রেতাদল জানিয়েছেন, এ দেশে কারখানা পরিদর্শন বা ব্যবসায় আর অগ্রসর হওয়ার আপাতত সুযোগ নেই। শুধু তৈরি পোশাক খাতেই, অন্যান্য খাতের বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও একই মনোভাব। ব্যাপক সম্ভাবনাময় হলেও সবাই ‘সরি’ বলছেন। কেউ আসছেন না এখানে বিনিয়োগ করতে। রাজনৈতিক অস্থিরতার তীব্রতায় অসংখ্য বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের চিন্তা করেও তা বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গত কয়েক মাস ধরে দেশে হরতাল, অবরোধ আর সংঘাত নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিহত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অগ্নিকা- ও বোমাবাজির শিকার হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা, হয়ে পড়ছেন ঋণ খেলাপি। সব মিলিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতা এভাবে চলতে থাকলে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা বিনিয়োগ গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন; এমনটাই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও স্বস্তিতে নেই। অনেকেই তাদের বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আর যেসব নতুন বিনিয়োগকারীরা বিদেশ থেকে দেশে আসতে চাইছেন তারাও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের তীব্র সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে চাইছেন এ দেশের সস্তা শ্রম বিবেচনায়। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধাও তাদেরকে এ দেশে বিনিয়োগের চিন্তা করতে পথ দেখিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে না পারলে তা দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একদিকে দেশের কাঙ্খিত জিডিপির জন্য যে বিনিয়োগের প্রয়োজন তা প্রভাবিত হবে। অন্যদিকে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। রফতানির অর্ডার অনুযায়ী ঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। জাহাজে পণ্য পাঠাতে না পেরে অতিরিক্ত খরচ দিয়ে বিমানে পণ্য পাঠাতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ইমেজ সঙ্কটের মুখে পড়ছে রপ্তানিকারকরা। যা আগামীতে রফতানির অর্ডারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর ব্যাংকপাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিলে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন করে চিন্তার উদ্রেক করেছে। কারণ দেশের শিল্প-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু মতিঝিলের সভা সমাবেশে কোনো ধরনের সংঘাত হলে তা শিল্প ও অফিস আদালতের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের ভাবা প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।
বন্দরে আটকে আছে ৬০০০ কোটি টাকার পণ্য
গত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড়ে প্রতিদিন পণ্যভর্তি কনটেইনার খালাস হয়েছে এক হাজার ৯২৫ টি। ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৬১৫ কনটেইনার। আর মার্চে তা আরও কমে হয়েছে এক হাজার ৪৫০। দেশজুড়ে হরতাল-সহিংসতা অব্যাহত থাকায় এভাবে প্রতিদিন বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসের হার কমছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে খালাস কমলেও জাহাজ থেকে প্রতিদিন গড়ে পণ্যভর্তি কনটেইনার নামানো হয়েছে দুই হাজার ৮৫টি (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ হিসেবে)। আমদানির তুলনায় খালাসের হার কমে যাওয়ায় বন্দরে এখন কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে বন্দর চত্বর থেকে খালাস না হওয়া কনটেইনারের সংখ্যা ১৩ হাজার থেকে এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজারে। এসব কনটেইনারে আনুমানিক ছয় হাজার কোটি টাকার পণ্য পড়ে আছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. মাসুদ সাদিক বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় কাস্টম হাউসে শুধু গত মাসেই ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।
সাঈদীর রায় ঘোষণা পরবর্তী সহিংসতা
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় ৭ জন নিহত, অর্ধশত আহত ও প্রায় ২০৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ তথ্য বিআরটিসি, ফায়ার সার্ভিস, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, পর্যটন মোটেল ও পাবলিক বাস সার্ভিস-সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া। ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে পল্লী বিদ্যুতের সদর দপ্তরে জামায়াত-শিবির কর্মীরা হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি এবং প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহক অদ্যাবধি অন্ধকারে রয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় ৩২ লাখ নারী শ্রমিক
ঘন ঘন হরতাল আহবান করায় পোশাকশিল্পে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় গ্রাম থেকে আসা ৩২ লাখ নারী শ্রমিকের। এ অবস্থায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হরতাল ও অবরোধের বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা। সংগঠন দুটি মনে করেÑ যেভাবে ঘন ঘন হরতাল আহ্বান করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে বেসরকারি খাতে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী পোশাকশিল্পের ধারাবাহিকতা ও ভাবমূর্তি কোনোভাবেই ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তারা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটায় এ মুহূর্তে পোশাকশিল্পের বড় ক্রেতারা বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠাতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রতিবছর অর্ডার নেগোসিয়েশন ও অর্ডার দেওয়ার জন্য বায়ারদের প্রতিনিধি এদেশে পাঠালেও এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমকে সামনে রেখে অর্ডার দেওয়ার জন্য এ মুহূর্তে বাংলাদেশে আসছে না। পাশাপাশি ‘নিরাপত্তাজনিত’ সমস্যায় অর্ডার নেওয়ার জন্য বাংলাদেশি পোশাক সরবরাহকারীদের তাদের হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাকশিল্পের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ প্রতিবেশী দেশে চলে গেছে বলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা জানিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে পোশাকশিল্পের অর্ডার ক্রমেই কমছে। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানান, তৈরি পোশাকশিল্প এখন একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। একে তো পোশাকশিল্পের দুটি বৃহৎ বাজারÑ ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় মন্দা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনীতি, সেইসঙ্গে স্থানীয়পর্যায়ে দুর্বল অবকাঠামো খাত এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট মোকাবিলা করে উদ্যোক্তাদের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করতে হচ্ছে শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য। অন্যদিকে তাদের বিভিন্ন ধরনের চাপ, স্থানীয়পর্যায়ে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিপণ্যের মূল্য হ্রাস, সেইসঙ্গে দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য হ্রাস, একইসঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘন ঘন হরতাল কর্মসূচি পোশাকশিল্পকে পিছিয়ে দিচ্ছে, যা কাম্য নয়। তিনি মনে করেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প কোনো কারণে অস্তিত্ব হারালে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা ৩২ লাখ নারী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। যার ভার গ্রহণের সামর্থ্য এ অর্থনীতির নেই। এতে করে আর্থ-সামাজিক ভারসাম্য বিঘিœত হবে। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যাংক-বীমা, শিপিং, সেবাখাত, পর্যটন, হোটেল, পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প। পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিনিয়োগ অন্যত্র চলে যেতে পারে
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় বিদেশি বিনিয়োগ অন্যত্র চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ার পরবর্তী টাইগারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ অনেক বিনিয়োগকারী চীনের পরে বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের কথা ভাবছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চলতে থাকলে এই বিনিয়োগ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্যত্র চলে যেতে পারে। গত ৩১ মার্চ সাভারের আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানা পরিদর্শনকালে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের এ আশঙ্কার কথা জানান। ড্যান মজীনা বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে করা যায় তা রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। এ কাজটি করতে হবে এখনই। কারণ হরতালের মত পরিস্থিতি বাংলাদেশ সহ্য করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধার প্রশ্নে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা হারালে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তির সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদানের বিষয়ে দরকষাকষিতে পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জিএসপি প্রশ্নে বাংলাদেশ জোরালো উত্তর দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে বিনিয়োগে ঝুঁকি
ওদিকে গত ৩ এপ্রিল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুঁজিবাজারসহ অন্য সব খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকির কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার সৃষ্টি করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। মজিনা বলেন, যেকোনো দেশের বিনিয়োগের জন্য দরকার স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সব দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ক্ষতি ডেকে আনে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বর্তমান এ সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে মজিনা জানান, এ ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। যাতে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়।
সহিংসতার টার্গেট রেল
গত ২৭ মার্চ ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা জামালপুর কমিউটার ট্রেনের একটি বগিতে ৭/৮ জন দুর্বৃত্ত আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নেভানোর আগেই ট্রেনটির একটি বগি পুড়ে যায়। এই ঘটনায় ওই দিন রাতে তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ময়মনসিংহে বগিতে আগুন দেয়ার ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার নৃপেন্দ্র চন্দ্র সাহা ও আনসার সদস্য সেলিম রেজাকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। এভাবে ট্রেন ও সিøপারে আগুন দেয়া হচ্ছে, সিøপার তুলে ফেলা হচ্ছে, খুলে ফেলা হচ্ছে ফিসপ্লেট- এসব ঘটনায় দু’এক হাবিলদার বা আনসার সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেই দায়িত্ব শেষ করছে রেল বিভাগ। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে রেলকে রক্ষা করার ব্যাপারে এখনও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় রেলের প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। রেল কর্তৃপক্ষের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শুধু রেলেই ১১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক নাশকতার কারণে রেল মন্ত্রণালয় রেল পুলিশ ও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে থানার পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের যুক্ত করার কথা বললেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এবং দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল গঠিত। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ৯৩টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১৩টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনে আগুনের ঘটনার পর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছিলেন, বিএনপির উস্কানিতে জামায়াত-শিবির চক্র সারাদেশে টেনে নাশকতা চালাচ্ছে। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এরপরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে। এখনো ঘটছে রেল কেন্দ্রিক ঘটনা। গত ৪ এপ্রিল রেলের নাশকতার মধ্যে রেলপথ সচিব মোহাম্মদ মাহবুব উর রহমানকে প্রত্যাহার করেছে সরকার।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন
হরতালের কারণে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়েছে। গ্রাম থেকে উৎপাদিত ফসল শহরের বাজারগুলোতে না পাঠাতে পারায় গ্রামের কৃষকরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একেকটি হরতালের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে ঝরে যাচ্ছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানিয়েছে এমন তথ্য। ‘বাংলাদেশ স্ট্রাইকস্ ডিভাস্টেট রুরাল ফার্মার্স’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গত ১ এপ্রিল। প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গের কৃষকরা ১৯৯৮ সালের বন্যা-পরবর্তী সময়ে এমন দুরবস্থায় আর পড়েননি। কৃষকরা জানিয়েছেন, খাদ্যপণ্য পরিবাহিত যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হলেও কার্যত তা মানা হয় না। এ কারণে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য ক্ষেতেই পচিয়ে ফেলতে হচ্ছে। পাশাপাশি ফসল বিক্রি করতে না পারায় দিনমজুরদের খোরাকিও তাঁরা দিতে পারছেন না। এতে ভূমিহীন বর্গাচাষীরা নিদারুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও এই কৃষক-শ্রমিক-নিম্নবিত্তরাই দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন। অর্থনীতির এ গতিশীলতার কারণে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংসতা অর্থনীতির জয়রথকে আটকে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দিনকে দিন এ হরতালগুলো আরো সহিংস হয়ে উঠছে। ব্যবসায়ীরা দুই দলের প্রতিই হরতাল বন্ধের আবেদন জানালেও বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় কেউই এ আবেদনে সাড়া দেয় না। হরতালকে ‘প্লেগ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়ে প্রতিপক্ষকে বিপাকে ফেলতে এই অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের কার্যক্রম শুরু হলে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়মিত বিরতিতে হরতালের ডাক দিচ্ছে। এতে সরকার বিপাকে না পড়লেও খেটে খাওয়া লোকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার সংস্থার ক্ষতি
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জামায়াত-শিবিরের হামলায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে। নন্দীগ্রামে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ও বাঁশখালীতে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের বিষয় সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। দুর্বৃত্তরা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন মিলনায়তন, সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মেইন গেট, সামনের গ্রিল ভেঙে ফেলে ও লাইটিং সিস্টেমের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে তারা স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের নিজস্ব ভবন, বিষয়সম্পদ ও তাদের ব্যবস্থাপনাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পেয়েছেন। বগুড়ার ঘটনা সম্পর্কে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জানান, গত ৩ মার্চ জামায়াত আহূত হরতালের দিন সকাল সাড়ে ছয়টায় নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক জঙ্গি মিছিল উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে অতর্কিতে হামলা চালায়। বিভিন্ন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অফিস, বাসভবন, গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও গাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন অফিস ও এসব অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, নথিপত্র, কম্পিউটার ভস্মীভূত করে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওইসব তথ্য দেয়া হয়।
সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি
বাংলাদেশে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-। এতে ২০১৩ অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা ৬ ভাগের নিচে চলে যেতে পারে। আরও কর আরোপের মাধ্যমে আগামী দিনে রাজস্ব মজবুত করা হবে বাংলাদেশে। রাজস্ব আদায়ে এ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে। গত ২ এপ্রিল এ সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইটে ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যৌথ ওই বিবৃতি দেন আইএমএফ-এর বাংলাদেশ মিশনের বিদায়ী প্রধান ডেভিড কোয়েন ও নতুন প্রধান রড্রিগো কুবেরো। এতে বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসাও করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আইএমএফ-এর একটি মিশন ২০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা সফর করে। তিন বছর মেয়াদি সম্প্রসারিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) বিষয়ক একটি চুক্তি দ্বিতীয়বার পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসে ওই মিশন। তারা এ সময় অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, অর্থ সচিব, অন্য সিনিয়র কর্মকর্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ওই চুক্তির আওতায় প্রায় ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুমোদন করে। বাংলাদেশ সফর শেষে যৌথ বিবৃতি দেন আইএমএফের বাংলাদেশ মিশনের বিদায়ী প্রধান ডেভিড কোয়েন ও নতুন প্রধান রড্রিগো কুবেরো। এতে তারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে প্রশংসা করেন। তারা বলেন, নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ও মুদ্রানীতির সহায়তায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। অভিবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স রয়েছে শক্ত অবস্থানে। রিজার্ভ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কমে আসছে মুদ্রাস্ফীতির চাপ। এতে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পারফরমেন্সে নিরাপত্তা ও ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সুদৃঢ় করতে কর্তৃপক্ষ বিচক্ষণ নীতি গ্রহণের বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে।
দেশি বিনিয়োগও বিদেশে যাওয়ার আশঙ্কা
লাগাম টেনে ধরার এখনই সময়
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগও বিদেশে চলে যাওয়ার পথে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশি বিনিয়োগকারীরাও দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমাদের বিনিয়োগকারীদের অনেকে মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যা-, আফ্রিকা, ইটালিসহ উন্নত দেশেও নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ করছে বলে জানা গেছে। দিন দিন এ ধরনের প্রবণতা বাড়ছে। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বৈধ-অবৈধ পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে এর দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের দেশের বাইরে বিনিয়োগ করার প্রবণতা রোধে এগিয়ে আসতে হবে দেশের রাজনীতিকদেরই। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো এখনই সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি আর অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:২৭
মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: হ ভাই ,শেয়ার বাজার লুট করে আমার যে ৭-৮ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছে তা ফিরত দিতে বলেন.....