![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অরাজনৈতিক সংগঠনের দাবিদার ও নিজেদের জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কহীন বলে প্রচার চালালেও মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নেতারা গোপন রাখতে পরেননি তাদের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক চেহারা। সাধারণ জনগণের কাছে হেফাজতের আসল চেহারা স্পষ্ট হয়েছে। সাধারণ মুসল্লিদের কাছে তাদের আন্দোলনকে অরাজনৈতিক আন্দোলন বলে প্রচার চালালেও বিএনপি, জামায়াত-শিবিরসহ ১৮ দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে মহাসমাবেশ করার ঘটনা আর গোপন থাকল না। হেফাজতের ব্যানারে প্রকারান্তরে ১৮ দলের কর্মসূচিই পালিত হয়েছে।
রাজধানীজুড়ে শিবিরের শোডাউন যেমন প্রকাশ্য ছিল তেমনি মঞ্চে ১৮ দলের জামায়াতি মদদপুষ্ট উগ্রবাদী দলগুলোর নেতারা উপস্থিত হয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে সেøাগান দেয়াই নয়, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জুতো তোলার মতো ঔদ্ধত্যও বের হয়ে পড়েছে হেফাজতের। যা শুধু রাজনৈতিকই নয়; যা আইন-শৃঙ্খলার প্রতি চরম অবমাননামূলক আচরণ।
মাত্র কয়েকদিন আগেই সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের আমির আহমদ শফী ঘোষণা করেছিলেন, আমাদের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। যুদ্ধাপরাধীর বিচার কিংবা গণজাগরণ মঞ্চ ও শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত রক্ষার সংগঠন অভিযোগ ওঠায় তোপের মুখেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে একই কথা প্রচার করে কেবল ধর্মীয় প্রচারণার নামে গজিয়ে ওঠা এ সংগঠনটি। সাধারণ মুসল্লিদের কাছে চেহারা লুকোতে একই সঙ্গে আমির আহমদ শফীসহ অন্য হেফাজত নেতারা ৩ এপ্রিল বুধবার লালবাগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমরা সমাবেশে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্যও দেব না, সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলতে মহাসমাবেশ ডাকিনি। কারণ আমাদের এ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। এটা কেবল মহানবীর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন ও আন্দোলন। কিন্তু গত ৬ এপ্রিল শনিবারের মহাসমাবেশে উপস্থিত নেতা ও তাদের বক্তব্য ছিল কেবলই রাজনৈতিক। পুরো মঞ্চে হেফাজতের ব্যানারে ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের উগ্রপন্থী ইসলামী দলের পরিচিত নেতারাই। আর রাজপথে সক্রিয় ছিল শিবির। এমনকি সারাদেশের শিবিরের কেন্দ্র থেকে কর্মসূচিতে আসার জন্য নির্দেশও দেয়া হয়েছিল চারদিন আগেই। হেফাজতে ইসলামের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ সমাবেশে চট্টগ্রামে জামায়াত নেতা সাঈদীর মুক্তির দাবি নিয়ে শোডাউন করেছে জামায়াত-শিবির। একই ঘটনা অন্য বেশ কিছু জায়গায়ও ঘটেছে। রাজধানীতে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা সমাবেশে ছিল অনেকটা মারমুখী অবস্থানে। তবে আয়োজকদের এ ব্যাপারে সতর্কতাও ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ছিল তৎপর। মতিঝিলে গণজাগরণ মঞ্চবিরোধী হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও যোগ দিয়েছিল। দিনভর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর চেষ্টায় উস্কানিমূলক আচরণ করে সংগঠনটির কয়েক শ’ নেতাকর্মী। এরাই অপচেষ্টা করেছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর আক্রমণের। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উস্কানিমূলক আচরণের পর হেফাজত নেতারা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিতে চাইলেও তাতে সাড়া দেয়নি শিবির। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে সকালেই মিছিল নিয়ে মতিঝিলে জড়ো হতে থাকে হেফাজত কর্মীরা। এ সময় বেশিরভাগ নেতাকর্মীর পরনে দীর্ঘ পাজামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মাথায় টুপি দেখা গেলেও মাঝে মধ্যে জিন্স প্যান্ট-শার্ট পরিহিত পরিষ্কারভাবে দাড়ি কামানো কিছু মুখও দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শুরুর পর বেলা ১১টার দিকে ইনকিলাবের মোড় থেকে সেøাগান দিতে দিতে কয়েকটি মিছিল মতিঝিলের সমাবেশে যোগ দেয়, যাদের পোশাক ছিল হেফাজত কর্মীদের চেয়ে একেবারেই আলাদা।
এ সময় তাদের হাতে কোনো ব্যানার ছিল না। নিজেদের পরিচয়ও তাঁরা জানাননি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আগেই হেফাজতের এই কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে। মতিঝিলের সমাবেশে খাবার, পানি, স্যালাইন ও শরবত সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সমাবেশে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য না দেয়ার শর্ত থাকলেও শাপলা চত্বরের এক পাশে সমাবেশ থেকে ‘ভারতের দালালরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘চলো চলো শাহবাগ চলো’সহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক সেøাগান শোনা যায়। সরকারের মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা অভিযোগ করেছেন, হেফাজতে ইসলাম আসলে জামায়াতকেই ‘হেফাজত’ করতে চাইছে। সমাবেশে ১৮ দলীয় জোটভুক্ত খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, লাখো জনতার লংমার্চ পরবর্তী মহাসমাবেশ প্রমাণ করেছে এদেশ তৌহিদী জনতার। সরকারের দুর্ভাগ্য তারা বুঝতে পারেনি। আজকের বিশাল জনস্রোত প্রমাণ করেছে এদেশ ইসলামের। এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেছেন, আজকের সমাবেশ থেকে একটি ঘোষণা দিলেই খেলাফত কায়েম হয়ে যাবে। নবুয়ত কায়েম হয়ে যাবে। আমাদের এই আন্দোলন রাজনৈতিক নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কার্যক্রম করবে না। এ সাহসও আর দেখাবেন না। খেলাফত আন্দোলনের আমির শাহ আহমদ উল্লাহ আশরাফ সরকারকে অনতিবিলম্বে সংসদে ধর্মবিরোধিতার শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে আইন পাসের আহ্বান জানান। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারকে উপযুক্ত জবাব দেবে ইনশাল্লাহ। এ সময় তিনি নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শাহরিয়ার কবিরসহ হরতাল আহ্বানকারী সংগঠনের নেতাদের বিচার দাবি করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী বলেন, সরকার নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, সরকার বলেছিল, জামায়াত-শিবির নানা নাশকতা চালাতে পারে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ লংমার্চ প্রমাণ করেছে সরকারের ধারণা ভুল। বরং সরকারের পালা-বাহিনীই লংমার্চে বিভিন্নভাবে বাধাদান করেছে। জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মুহাম্মদপুর মাদ্রাসার হাদিসের অধ্যাপক, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মামূনূল হক বলেন, আপনার নৌকা থেকে মেনন, দিলীপ, ইনুদের বের করে দিন, নইলে আপনার নৌকা আগামী নির্বাচনে ডুবে যাবে। মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, বর্তমান সরকার নাস্তিক্যবাদী সরকার। এ সরকার বাংলাদেশে থাকতে পারে না। এরা নিজেদের হেফাজত নেতা বলে দাবি করলেও প্রত্যেকেই ১৮ দলের শরিক জামায়াতপন্থী উগ্রবাদী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। আরেক নেতা মাওলানা সেলিম উল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে সেøাগান দেন। এ সময় সমাবেশে উপস্থিতরা জুতো তুলে ধরেন। এর কিছুক্ষণ পর সমাবেশ থেকে বলা হয়, সবাইকে সম্মান করতে হবে। শেখ হাসিনা এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে যে সেøাগান দেয়া হয়েছে, তা স্বাধীনতাবিরোধী সেøাগান। এ সেøাগান আমরা প্রত্যাহার করছি।
©somewhere in net ltd.