নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবির : মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

২২ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:০৯

একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হলো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীবৃন্দ ও ইসলামি জামায়াত-শিবির। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় প্রদান করার সঙ্গে সঙ্গে হরতাল ও নাশকতা সৃষ্টিতে মেতে ওঠে জামায়াত-শিবির। এমনকি জামায়াতের অপরাধী নেতা ইউসুফকে গ্রেফতার করার পর তারা হরতাল পালন করল গত ১৪ মে। তার আগে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে ৯ মে ২০১৩। এরো আগে যাদের মৃত্যুদ-ের রায় হয়েছে তারা সবাই জামায়াতের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী ও ক্যাডারভিত্তিক জামায়াত-শিবির সংগঠনের নেতাকর্মীরা রায়ের পরে দেশের মধ্যে তা-ব চালিয়ে অনেক পুলিশসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। অথচ গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদীর সমর্থকদের এখনই জামায়াতের কবল থেকে বের হয়ে সুস্থ চিন্তায় নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। যারা এতোদিন নেতা হিসেবে তাদের কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে আদেশ পালন করে রগ কেটে বোমা-গ্রেনেড মেরে মুক্তবুদ্ধির মানুষদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে তাদের এখন বুঝতে হবে এসব বড় বড় অপরাধীদের পেছনে নিজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিয়ে দিনের পর দিন সময় নষ্ট করা বৃথা। তাদের সেই সব ধর্মপ্রাণ (?) নেতারা এখন জেলে, ফাঁসির অপেক্ষায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিশ্চয় সমর্থকদের নজরে এসেছে। অপরাধগুলো ভয়াবহ। জামায়াতের নেতারা কখনো বাংলাদেশ চায়নি; তাই মুক্তিযুদ্ধের পরও তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এসব মানুষ পাকিস্তান ও ইসলামের নামে বাঙালি জাতিকে চিরতরে অন্ধকারে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল; তারা ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকা-ে সহযোগিতা, প্ররোচনা এবং অনেক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে একাত্তরের নয় মাস আমাদের পবিত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। আমাদের অকুতোভয় মুক্তিসেনাদের দৃঢ়তায় তাদের সব প্রচেষ্টাই ভেস্তে যায়। দেশ স্বাধীন হয়। আর দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই জামায়াত-শিবিররাও আজ নিজেদের শিক্ষিত করার সুযোগ পেয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাচ্ছে। কেউ কেউ নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

জামায়াত নেতাদের পেছনের ইতিহাস সকলের জানা দরকার। অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকেই দেশের মধ্যে গণহত্যা, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য আল-বদরদের দায়ী করে বিচারের দাবি করা হয়েছে। একই বছর ২৫ ডিসেম্বর বেগম সুফিয়া কামাল ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনসহ ৫২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার দাবি করেন। ২৮ ডিসেম্বর (১৯৭১) ১৩ জন লেখক শিল্পী ও আইনজীবীর যুক্ত বিবৃতিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যায় যোগসাজশকারীদের খুঁজে বের করার আহ্বান ছিল। ১৯৭২ সালে কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে ঢাকা ‘শহরে বিক্ষোভ সভা ও মিছিল’ হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ ৫ জুন ১৯৭২ সালে ঘোষণা করেনÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। হত্যার তথ্য সংগ্রহে উদ্যোগী ভূমিকা পালনকারী জহির রায়হান নিখোঁজ হলে দাবির আন্দোলন কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত দাবি করে ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারবর্গ শহীদ মিনারে গণজমায়েত করেছিলেন এবং মিছিল করে বঙ্গভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঘটনা তদন্তের নির্দেশ প্রদানের কথা জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলেও ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে ৩৭ হাজার ৪৭১ জন বাঙালি-বিহারি দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭২ সালেই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদেশ জারি করা হয়েছিল। সে সময় ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৯৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৮৪৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে ৭৫২ জন দোষী প্রমাণিত হয়, ২ হাজার ৯৬ জন ছাড়া পায়। তবে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বরের দালাল আইনে আটক কিছু ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধু সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর হন্তারক খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে সাজাপ্রাপ্তসহ সবাইকে ক্ষমা ও খালাস করে দেন। জিয়ার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যৌক্তিক দাবি আবার উত্থাপিত হয়। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ জাহানারা ইমামকে সভাপতি করে ১২ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘গণআদালত’ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মরণাতীতকালের বিশাল সভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার সরকার গণআদালতের সঙ্গে জড়িত ২৪ জনকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় জড়িয়ে দেয়। নাজেহাল করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্যক্তিবর্গকে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পরে পাকিস্তানবাদী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির যে তৎপরতা শুরু হয়েছিল তারই অনিবার্য ফল হচ্ছে বিএনপির মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান। রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের অপরাজনীতি শেকড় গেড়ে বসে। উল্লেখ্য, ক্ষমতা গ্রহণের পর জেনারেল জিয়া ১৯৭৬ সালে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি উন্মুক্ত করতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন (বিশেষ অধ্যাদেশ ৪ মে ১৯৭৬ এবং বাংলাদেশ সংবিধান, ৫ম সংশোধনী, ২২ এপ্রিল ১৯৭৭)। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে জামায়াতের অপরাজনীতি শুরু হয় এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের কতিপয় নেতা ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে ঢাকায় সমবেত হয়ে পরিবর্তিত নাম ‘ইসলামী ছাত্রশিবির’ ধারণ করে নতুনভাবে কর্মকা- শুরু করে। এদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের মতো বাংলাদেশকে পরিচালনা করা। এ লক্ষ্যে শিবির দেশের ছাত্র ও যুবসমাজের মধ্যে গভীরভাবে প্রবেশের পরিকল্পনা করে। ১৯৮০-এর দশকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে আমেরিকা ও পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সহায়তা করে। এই যুদ্ধে আফগানিস্তানের পক্ষে শিবিরের সদস্যসহ বেশ কিছু বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করে। এরা পাকিস্তানে আইএসআইয়ের অধীনে এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী প্যালেস্টাইন ও চেচনিয়া যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করে। এরা প্রায় সবাই বাংলাদেশে ফিরে আসে। এসব যুদ্ধ ফেরত সদস্যরাই পরবর্তীতে বাংলাদেশে আইএসআই-তালেবান ও আল-কায়দার স্থানীয় সদস্য হিসেবে এ দেশে আইএসআই-এলইটির (লস্কর-ই-তৈয়বা) এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করে। এভাবে আশির দশকের পর জামায়াতসহ মৌলবাদী সংগঠন ও তালেবানপন্থী গোষ্ঠী সংগঠিত হয়ে রাজনীতির আড়ালে ও ইসলামের নামে জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ বাংলাদেশকে মৌলবাদী ও তালেবান রাষ্ট্র বানানোর একই অভীষ্ট লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। ১৯৯১-এ জামায়াতের সমর্থনসহ বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ১৯৯২ সালে জামায়াতের সহযোগিতায় ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ’ আত্মপ্রকাশ করে প্রকাশ্যে জিহাদের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে কথিত জিহাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামী শাসন চালুর অভিন্ন আদর্শে জামায়াত ও ইসলামী জঙ্গি সংগঠনসমূহ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের কার্যক্রম গোপনে চলতে থাকে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলেও। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরে ২০০৬ পর্যন্ত দেশজুড়ে জঙ্গিবাদের বিস্ময়কর উত্থান বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। কারণ জোট প্রশাসন জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। ২০০৪ সালে দেশব্যাপী বোমা বিস্ফোরণের কথা আমরা ভুলিনি। সে সময় বিদেশী পত্রিকা থেকে আমরা জেনেছিলাম লাদেন এ দেশে এসেছিল। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখে ‘যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক একটি দৈনিকে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে আল-কায়দা বা হামাসের সম্পর্ক খতিয়ে দেখার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আজকের কাগজের এ সংবাদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকম-লীর মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। জঙ্গিরা যে অধিকাংশই জামায়াতের সদস্য সে পরিচয় স্পষ্ট পাওয়া যায় তখন থেকেই।

বর্তমানে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই জঙ্গি মদদদাতা বিরাজ করছে প্রবল দাপটের সঙ্গে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, এদের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জড়িত ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ কায়েমের জন্য অনেকেই এক সময় গাদ্দাফির লিবিয়া থেকে অনেক টাকা পয়সা নিয়ে আসে। এক বছর আগে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে উদ্বেগজনক সংবাদ। ‘দুই ডজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নির্দেশে চলছে হিযবুত তাহরীর’ এই শিরোনামে খবরে বলা হয় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ২৪ জন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর। জঙ্গি দমন সংক্রান্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা আরো বলেছে রাজধানীর প্রায় ৯৫টি ফ্ল্যাট ও বাড়িতে বর্তমানে সংগঠনের ৯০ জন মহিলাসহ ১ হাজারের বেশি সদস্য অবস্থান করছে। হিযবুত তাহরীর নিজস্ব হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, পরিবহন ও কোচিং সেন্টারও রয়েছে।

তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। কারণ যুদ্ধকালীন সংগঠিত মানবতাবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত ব্যক্তিদের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকাটা স্বাভাবিক নানান অপতৎপরতার সঙ্গে। এজন্য বর্তমান সরকারের জঙ্গি বিরোধী তৎপরতার প্রচেষ্টাও প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জঙ্গিবাদ নির্মূল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জরুরি। কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ হবে ঐসব দেশবিরোধী ও মানবতাবিরোধী শত্রু শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসররা দিশেহারা হয়ে নিজেদের বাঁচানোর জন্য দেশে অরাজকতাসহ অস্থির অবস্থা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারই ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত দেখা গেছে এ বছর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের তা-বে। সাঈদীর রায় ঘোষণা এমনকি গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের পরে (২০১২) ঢাকায় ছাত্রশিবিরসহ জঙ্গিগোষ্ঠীর ঝটিকা আক্রমণ ও পুলিশের অস্ত্র লুটের ঘটনা এবং হত্যাযজ্ঞ ভাবনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

ধর্মীয় জঙ্গিবাদ পাকাপোক্তভাবে খুঁটি গেড়ে বসেছে দেশের মাটিতে। কারণ ২০০১ সালে জোট সরকারের আমলে ’৭১-এর রাজাকার-আল-বদরদের মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে আসন পেতে সাহায্য করেছিল বিএনপি। পাকিস্তানপ্রেমী গণধিক্কৃত যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিয়ে তাদের দলীয় সাংগঠনিক ভিত আরো শক্ত করে নিয়েছে। তারা কেউ কেউ আবার আত্মস্বীকৃতিতে ১৯৭১-এ তাদের কর্মকা- প্রচার করেছিল। জঙ্গিদের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে মাসিক নির্ধারিত বরাদ্দ প্রায় ২ কোটি টাকা। জামায়াতের বরাদ্দ করা অর্থ নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির ৫০ হাজার সদস্যকে জনপ্রতি ৪শ টাকা করে দেয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে জেএমবির জন্য বরাদ্দ করা হয় এই অর্থ। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও জেএমবি আমির মুফতি মওলানা সাইদুর রহমানের দেয়া জবানবন্দিতে জানা যায় এসব তথ্য। জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের দলীয় তহবিল, কর্মী কল্যাণ তহবিল ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা তহবিল নামে তিন স্তরে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে জামায়াত। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতেও বিশেষ বরাদ্দ তহবিল রয়েছে জামায়াতের। বর্তমান সরকার ক্ষমতা লাভের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে মাঠে থাকার শর্তে সম্প্রতি জেএমবির জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছিল জামায়াত। সরকারের সকল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের মতো অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। কারণ জামায়াত-শিবির বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা-সমর্থন দিচ্ছে বিএনপি।

উপরের ইতিহাস থেকে ছাত্রশিবির ও জঙ্গি সংগঠনের কর্মী-সদস্যদের বুঝতে হবে তাদের নেতৃত্বদানকারী প্রত্যেকেই আসলে ভয়ঙ্কর অপরাধী। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ ও ইসলামী ছাত্রশিবির পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছিল। তারা গাইডার হিসেবে তথ্য প্রদান, যুদ্ধে অংশগ্রহণ, গণহত্যা প্রভৃতি তৎপরতায় যুক্ত হয়েছিল। নিজামী-মুজাহিদরা লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি করেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে বড়শি দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলেছিল; হত্যা করেছিল নিষ্ঠুরভাবে। ধর্ষণ করেছিল পাকিস্তানিদের সহযোগী হয়ে। ইসলামি মূল্যবোধের কথা বলে হিন্দু সম্প্র্রদায়ের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। নরহত্যা করলে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর গণহত্যা করলে একটি গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উভয় ঘটনাই ঘটিয়েছে যুদ্ধাপরাধীরা। এসব নরপশুদের বিচার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে আমরা অমানব হয়ে পড়বো; নিরুত্তাপ, নিস্তেজ মনোভঙ্গি ও বিবেকবর্জিত বলে পরিগণিত হবো। অর্থাৎ একাত্তরে গণহত্যা, গণধর্ষণ, নারী ও শিশুর ওপর অত্যাচার, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিশ্চিহ্নকরণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সবই করেছিল পাকিস্তানি সেনাদের দোসর বাঙালি দালালরা; যারা জামায়াতের নেতা হিসেবে পরিচিত। স্বদেশবাসীরই ওপর তাদের সেই কাজের বিচার বানচালের বিন্দুমাত্র আলামত পেলে দেশের মানুষের প্রতিবাদ করা উচিত। সকলের ভাবনা-চেতনা ও সমাবেশ থেকে দালালদের বিপক্ষে কথা বলা এখনই খুব প্রয়োজন। অপরাধীদের রাজনীতির করতল থেকে বেরিয়ে এসে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সমগ্র দেশবাসীর কণ্ঠস্বর এক করার অঙ্গীকার গ্রহণ করা দরকার। যুদ্ধাপরাধীমুক্ত নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক জীবন শুরু হোক জামায়াতিদের। তাদের ভেতরের দ্বিধা ভেঙে এই একটি ইস্যুতে ঐক্য বড়ই প্রয়োজন। বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের স্থান হবে না। তাদের শেকড় যতো গভীরে থাকুক আমরা তা উৎপাটন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞÑ এই প্রত্যয় আমাদের সকলের।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

ইউক্লিড রনি বলেছেন: সবই তো আমরা বুঝি। কিন্তু করব কি?
অন্যদিকে আওায়ামি বিএনপি দুইটাই ক্ষমতার লাইগা পাগল। আমগো জনতার অপশন কই? :#>

২| ২২ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০০

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: জামাত শিবির আর যুদ্ধাপরাধী নিয়ে কোন মতভেদ নাই। তাদের পুরো দলই যুদ্ধাপরাধ করেছেএকাত্তরে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.