নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুনায়দে বাবু নগরী যা যা বললেন...

২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৩

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ২১ মে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে দোষ স্বীকার করে বলেছেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। মতিঝিলে টানা হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিতে সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের। জানা গেছে, ১৮ দলীয় জোটের ৪ মে মতিঝিলের ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম, হেফাজতের দিনভর তা-ব, হেফাজতে ইসলামের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতা-কর্মী ও ঢাকাবাসীদের খালেদা জিয়ার আহ্বান একই সূত্রে গাঁথা। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের বারবার সরকার বিরোধী আন্দোলন ব্যর্থতা, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত নেতৃত্বশুন্য ও বিধ্বস্ত। আর বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে, দলকে গ্রাস করে ফেলেছে অবিশ্বাসের কালো ছায়া। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাস, ফারাক। খালেদা জিয়া কোনো নেতাকে বিশ্বাস করতে পারেন না, এমন অবস্থা বিএনপির। আর ১৮ দলীয় জোট তো এখন নামেই। বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া বাকি দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি করার মতও কর্মী নেই। এমন অবস্থায় হেফাজতের কাঁধে ভর করে সরকার পতনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া! তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হল হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে খালেদার নির্দেশকে গ্রহণ করেনি ঢাকাবাসী। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীরাও প্রত্যাখান করেছে খালেদা জিয়ার এ নির্দেশ। এর ফলে রাতের আধারে যৌথবাহিনীর অভিযানের মুখে শিয়ালের মতো লেজগুটিয়ে পালাতে হয়েছে হেফাজতকে। বিএনপি-জামায়াতের এ ষড়যন্ত্রের খবরে সরকার তৎপর হয়ে নড়েচড়ে বসে। দ্রুত গতিতে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন রাত ১০টার মধ্যে হেফাজতকে রাজধানী ছাড়তে। নইলে সরকার বাধ্য হবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। জবাবে হেফাজত নেতারা পাল্টা হুমকি দেন সৈয়দ আশরাফকে। পালানোর রাস্তা খুঁজতে বলা হয় আওয়ামী লীগকে। পরিস্থিতি অনুধাবন করে সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাষ্ট্রের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গভীর রাতে ১০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর অভিযান চালানোর নির্দেশ আসে উচ্চ মহল থেকে। অভিযানে ভোর রাতেই খালি হয়ে যায় শাপলা চত্বর। গ্রেফতার হন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। বাকিরা আতœগোপনে চলে যান।

হেফাজত মহাসচিবের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ২১ মে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে দোষ স্বীকার করে বলেছেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। মতিঝিলে টানা হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিতে সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয় হেফাজত শীর্ষ নেতাদের। মতিঝিল এলাকায় এসআই শাহজাহান হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন তিনি। জুনায়েদ বাবুনগরীকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নেয়ার পর তাঁকে স্বেচ্ছায় জবানবন্দী দেয়ার জন্য ৩ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় বাবুনগরীর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির তা-বের সঙ্গে কারা কারা জড়িত জবানবন্দীতে তাদের নাম বলেছেন বাবুনগরী। নাশকতার ছক কারা করেছিলেন এবং কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে সব পরিকল্পনার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক শেখ মফিজুর রহমান তাঁকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার সিএমএম আদালতে এনে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন করেন।

ঢাকা অবরোধের দিন সহিংসতার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় জবানবন্দী দেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। মতিঝিল এলাকার আলিকো বিল্ডিংয়ের পাশের বহুতল কার পার্কিং ভবনের সামনে কর্তব্যরত পুলিশের এসআই শাহজাহানের মাথায় ইট, লোহার রড, চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়। তবে কারা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তাদের নাম জানাতে পারেননি তিনি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার আগে বাবুনগরীকে চিন্তা ভাবনা করার জন্য তিন ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। জবানবন্দীতে তিনি অবরোধের দিন সহিংস ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ শেষে মতিঝিলে অবস্থান নিতে থাকেন। এ সময় তারা মতিঝিল ইত্তেফাক মোড় থেকে দৈনিক বাংলার মোড় ও ফকিরাপুল এলাকায় জঙ্গী কায়দায় বাঁশের লাঠি, কাঠের লাঠি, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইট ও বোমা নিক্ষেপ করে যান চলাচলে বাধা ও বোমা ফাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন ভবন ও গাড়ি ভাঙচুর এবং ভবন, গাড়ি ও ফুটপাথের বিভিন্ন দোকানে অগ্নিসংযোগ করে তারা। এক পর্যায়ে তাঁরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন। তারপর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টি অফিস, হাউজ-বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন ও তৎসংলগ্ন ফুটপাতের দোকানপাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের সহিংস তা-ব ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ঢাকাবাসীসহ পুরো দেশ। রাজধানী ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও সংলগ্ন বঙ্গভবন ও সচিবালয়কে আশঙ্কামুক্ত করতে রাতেই দশ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানকারীদের বিতাড়িত করে। পরদিন ৬ মে রাত ৮টার দিকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গ্রেফতার করে। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ‘হুজুরকে (আল্লামা আহমদ শফী) ভুল বুঝিয়ে এই সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আরেক পক্ষ; যারা মূলত ১৮ দলীয় জোটের অনুসারী। মতিঝিলের সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ এক সময় আর হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পরিণামে যা ঘটার তাই ঘটেছে। সমাবেশে যা ঘটেছে তার সবকিছু আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়নি।’ বাবুনগরী তাদের বলেছেন, ১৮ দলীয় জোটের এক নেতা (যিনি হেফাজতে ইসলামেরও নেতা।) অপর গ্র“পের এক নেতাকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, হুজুরকে (শফী) ভুল বুঝিয়েছেন। ওই নেতাকে অভিযুক্ত করে বাবুনগরী দাবি করেছেন, তাঁর কারণেই সব পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে যায়। রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বসে পড়েন হেফাজত নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সমাবেশের দিন হেফাজত নেতারা কোন কোন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, মোবাইল ফোনে কথা বলেছে সে তথ্য ও প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। মাওলানা বাবুনগরীর দেয়া তথ্য ও গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। বাবুনগরীর সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বলেছেন, আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বড় হুজুর চোখে ভাল দেখতে পান না। এজন্য তিনি পত্রিকা পড়েন না এবং টেলিভিশনও দেখেন না। হেফাজতের একটি অংশ ভুল বুঝিয়েছে বড় হুজুরকে। এজন্য তিনি ইচ্ছে থাকার পরও সমাবেশে যেতে পারেননি। ক্ষমতায় গিয়ে মন্ত্রী হওয়ার জন্য ক্ষমতার লোভে তাঁরা এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। অবরোধ-কর্মসূচির ঘটনায় তাঁর কিছুই করার ছিল না বলে জানান। তিনি রাজনীতিবিদ অভিহিত কয়েক হেফাজত নেতার তৈরি করা ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। হেফাজতের নামে অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর, ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংস কর্মকা- করেছে জামায়াত-শিবির। বাবুনগরী জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছেন, মতিঝিলে তাদের (হেফাজতের) অবস্থানের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কিছু করতে পারেননি তাঁরা। বাবুনগরী জানান, পল্টন ও বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হেফাজতকর্মীরা ছিল না। তিনি বলেছেন, এই কাজ করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। হেফাজতে ইসলামের মূল পরিকল্পনা, অর্থ যোগানদাতা, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস এবং সরকার উৎখাতে কী পরিকল্পনা হয়েছিল সেই ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বাবুনগরী জানান, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। ১৮ দলীয় জোটভুক্ত চারটি দল হেফাজতের সঙ্গে থাকবে বলে জানানো হয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। হেফাজতের শীর্ষ নেতারা মতিঝিলে টানা অবস্থানে রাজি না হওয়ায় সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোরও প্রস্তাব দেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা বাবুনগরী জানান, বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা। পুরো সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ওই অংশটি। এরপরই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। এজন্য ১৮ দলীয় জোটে থাকা হেফাজতের নেতাদের কয়েকজন সব সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগও রেখেছিলেন। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষে শাপলা চত্বরে তাদের দীর্ঘ অবস্থানের জন্য সব ধরনের সহায়তাও দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। ক্ষমতায় গেলে তাকেসহ হেফাজত নেতাদের মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব আসে বলেও জানান মাওলানা বাবু নগরী।



টার্গেট সরকার পতন

১৩ দফা নয়, হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে অবস্থানের টার্গেট ছিল সরকারের পতন ঘটানো। এই পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অর্থ সহায়তা দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। একইসঙ্গে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থানে খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছুর দায়-দায়িত্বও নিয়েছিলেন ১৮ দলের নেতারা। জবানবন্দি দিতে গিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘৫ই মে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশস্থলে হেফাজতকর্মীরা প্ল্যাকার্ড ও কাপড়-চোপড় নিয়া আসছিল। জামায়াত-শিবির এবং ছাত্রদল-যুবদলের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন করাত দিয়া গাছ কাটিয়া রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তাহারা অগ্নিসংযোগ করিয়া পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ায়। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আমি সমাবেশস্থলের আশপাশে অগ্নিসংযোগের ফলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখিয়া বিচলিত হইয়া পড়ি। জামায়াত-শিবির অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর উপর আক্রমণ চালাইয়াছে বলিয়া আমার কাছে সংবাদ আসে। সমাবেশস্থলের ১৪ জন নেতার উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অশান্ত হইয়া উঠে।’ তিনি দাবি করেন, ‘২০১০ সালে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পর হইতে এ যাবৎ কোনো নারকীয় ঘটনা ঘটছে বলিয়া আমার জানা নাই।’ তবে না বুঝে হেফাজতের কিছু নেতাকর্মী ওইদিনের তা-বে জড়ান বলে দাবি করেন তিনি। বাবুনগরী বলেন, ‘ওইদিন দিবাগত রাত্র আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটার দিকে অর্থাৎ গত ৬ মে রাত আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হ্যান্ডমাইকে সমাবেশস্থলে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের সভাস্থল ত্যাগ করার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে তাহারা ফাঁকা আওয়াজ করিলে সবাই শাপলা চত্বর হইতে পালাইয়া যায়। আমি পড়ে গেছিলাম। আমার ছাত্ররা আমাকে ধরে লালবাগ মসজিদে নিয়া আসছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী কোনো প্রাণহানী ঘটায় নাই বা কেহ আহত হইয়াছে বলিয়াও আমি শুনি নাই। হেফাজতে ইসলামের লোকজন ও জামায়াত-শিবিরের সদস্যদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সংঘর্ষে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিহত হইয়াছে এবং তাহার অস্ত্র লুট হইয়াছে মর্মে আমি সকালবেলা লালবাগ মাদ্রাসায় আসিয়া জানতে পারি।’ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আমাদের ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ছিল। রাজধানী ঢাকার ৬টি প্রবেশপথে ভোর হইতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। পরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে আমাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু আমি লালবাগ মাদ্রাসায় অবস্থানকালীনই জানতে পারি যে, কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল জনতার সঙ্গে আমাদের কিছু ছেলে সকাল হইতে বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন ও বিজয় নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, পুলিশের ওপর হামলা, লুটতরাজসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এই খবর শোনার পর আমরা হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফিকে অবহিত করি। তিনি আমাকে কারা ওইসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তা জানার জন্য বলেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উহা বন্ধ করার জন্য বলেন। আমি জানিতে পারি, আমাদের কিছু কর্মী ছাড়াও মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং ছাত্রদল-যুবদলের কিছু প্যান্ট-শার্ট পরিহিত দাড়ি নাই এমন ছেলে এইরূপ সহিংসতা ও লুটতরাজ করিতেছে। তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে খবর আসে যে ওই সকল উচ্ছৃঙ্খল লোকজন বইয়ের দোকানসহ কোরআন শরিফ পোড়াইতেছে। এমন সংবাদ শুনিয়া আমরা বিচলিত হইয়া যাই। তখন মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনী, মোস্তফা আযাদ, মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা গোলাম মহিউদ্দীন ইকরাম, শেখ লোকমান হোসেন, মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, শামসুল আলম, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আমানুল ক্বারী ফজলুল ক্বারী জিহাদী, মুফতি হারুন এজাহারদের সাথে যোগাযোগ করি এবং ওইসব বন্ধ করার জন্য বলি। ওই সকল নেতারা সহিংসতা বন্ধ না করে চুপ থাকার কথা বলেন এবং এমন কথাও বলে যে ‘আমাদের আন্দোলন এখন আর শুধু ১৩ দফার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন এটা হবে সরকার পতনের আন্দোলন। এখন আমাদেরকে ১৮ দলের লোকজন সব ধরনের সহায়তা করবে। অর্থ দেবে, খাবার ও পানি দেবে। ১৮ দলের নেতাদের সাথে আমাদের কথা হইয়াছে।” জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “আগামীকাল (৬ মে) আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে ১৮ দলীয় জোটের নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সাহেব আমাদেরকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার সরবরাহ করিবেন। আপনি কোনো চিন্তা করিবেন না। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থান করব ইনশাল্লাহ’।



অর্থের যোগানদাতা বিএনপি-জামায়াত

রাজনীতির মাঠে নতুন খেলোয়াড় অরাজনৈতিক দলের দাবিদার হেফাজতে ইসলামের কোনো সাংগঠনিক শক্তি নেই। দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠা দেওবন্দিদের অনুসারী কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই এর মূল চালিকা শক্তি। দেশের ধর্মভীরু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দান-খয়রাতে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। সমাজের মূলধারার সঙ্গে তাদের নেই তেমন উঠাবসা। তাদের নেই অর্থনৈতিক শক্তি। এই সংগঠন গত ৬ এপ্রিল মতিঝিলে স্মরণকালের বড় মহাসমাবেশ এবং গত ৫ মে ঢাকা অবরোধের মত এতো বড় ও ব্যয়বহুল কর্মসূচি পালন করে কী করে। এ কারণে হেফাজতের সাম্প্রতিক শো-ডাউন ও কর্মকা- নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মুখে প্রচলিত রয়েছে নানা ধরনের কথাবার্তা। তবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে- হেফাজতকে ব্যবহার করে এবং তাদের ধর্মীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায় সরকার বিরোধীরা। ৬ এপ্রিলের মহাসমাবেশে বিএনপি-জামায়াত হেফাজতকে ৮৫ কোটি টাকা দিয়েছে বলে ওই সময় অভিযোগ করেছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। অবশ্য তার আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন আভাস দিয়েছিল। প্রকাশ্যে হেফাজতকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল বিএনপি ও বর্তমান মহাজোট সরকারের শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। ওই সমাবেশে তারা হেফাজতকে শুকনো খাবার ও শরবত পান করিয়েছে। একই অবস্থান ছিল ৫ মের ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিতেও। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ঢাকা অবরোধের সময় সকালে ঢাকার প্রবেশমুখে হেফাজত কর্মীদের স্বাগত জানিয়ে সমাবেশও করেছেন। অভিযোগ রয়েছে- হেফাজতের ঢাকা অবরোধের খরচ ১৮ দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও যোগান দিয়েছে। শুধু তাই নয় হেফাজতের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সংঘর্ষে জাতীয় পার্টির দুই কর্মীও নিহত হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এমন তথ্য রয়েছে, ৫ মে রাতে মতিঝিলে হেফাজত অবস্থান নিতে পারলে সকালে ফজরের নামাজে হেফাজতের সঙ্গে যোগ দিতেন দেশের দুই সাবেক রাষ্ট্রপতি। এর যে একজন জাতীয় পার্টির এরশাদ তা গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। অন্য জন বিকল্পধারার প্রধান সাবেক বিএনপি নেতা ডাক্তার একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ফলে সরকার বিরোধী অনেক শক্তিই হেফাজতকে অর্থ ও সমর্থন দিয়ে সহায়তা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হেফাজত মহাসচিব রিমান্ডে স্বীকারও করেছেন ১৮ দলীয় জোট থেকে তাদের সমর্থন-সহযোগিতা ও অর্থের যোগানের কথা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৬

মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: কোরান পড়ানোত তাদের কর্মসুচি ছিল কি বলেন সেইটা বলে নাই নাকি???

ফাইজলামির একটা সিমা আছে......

২| ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

তালপাতারসেপাই বলেছেন: "মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: কোরান পড়ানোত তাদের কর্মসুচি ছিল কি বলেন সেইটা বলে নাই নাকি???

ফাইজলামির একটা সিমা আছে......" তাহলে শিবির পুড়িয়েছে?

৩| ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:২০

মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: সব তো ভাদা পূর্বে কথা....

৪| ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩

মোমের মানুষ বলেছেন: রিমান্ডে দিন কে রাত্র, আর রাত কে দিন। আস্ত জলজ্যন্ত মানুষকে ছাগল, ছাগলকে সহজেই মানুষ বানানো যায়। রিমান্ডে নির্যাতনের মুখে ভুক্তভোগীদের দিয়ে যে কোন কিছুই স্বীকার করানো যায়

৫| ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

অভুতপূর্ব বলেছেন: স্বীকারোক্তির দরকার কি এইসব কথায় তো সেই ৫মে থেকে শুনে আসছি।

৬| ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫

রাজ হাসান বলেছেন: খুবই ............ হইলাম তয় ভাইজান আপনাদের বেবাকের কাছ থেইকা একটু জানতে চাই ,তানভীর সাহেব রানা সাহেব সহ আরও বড় বড় যত সাহেবরা আছেন তাহারা সকলে রিমান্ড এ কি কি বলছেন সেটাও জানতে বড় মুঞ্চায় কারন,কেমতে হেরা আলাউদ্দীন এর চেরাগ হাসিল করিল আমরা কেমতে হাসি করমু???তয় তারা যেই ভূল করছে আমরা সেই ভূল করতাম চাই না।

৭| ২৭ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:২০

কোবিদ বলেছেন: হেফাজতের যত ষড়যন্ত্রই থাকুক না কেন
তারা কোন মতেই মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ
পোড়ানোর দ্বায়ে অভিযুক্ত করা যাবেনা। কারণ
কোন মুসলমান সে নামাজ পড়ুক বা নাই পড়ুক,
দাড়ি রাখুক আর নাই রাখুক হেফাজত করুক আর
নাই করুক কোন অবস্থাতেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর
মতো জঘন্যতাম কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারেনা।

৮| ২৭ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: তালপাতারসেপাই -ভাই আমাকে কোন কারনে আপনার পোষ্টে কম্টেট করা থেকে বিরত রাখলেন....

আপনার মনে অজান্তে কোন কষ্ট দিয়ে থাকলে দুখিঃত.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.