![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সংসদ সদস্যরা নিয়মিতভাবে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দেবেন। তারা সংসদের কার্যবিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। একজন সংসদ সদস্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বনপূর্বক বিল উত্থাপন করতে পারবেন। তিনি অন্য কোনো সংসদ সদস্যের উত্থাপিত বিলের ওপর ভোট দিতে পারবেন। তিনি ১৫ দিনের নোটিশ সাপেক্ষে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন। স্পিকারের অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণমূলক বক্তব্য দিতে পারবেন। একজন সংসদ সদস্য পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিতে হয়ে। তিনি একনাগাড়ে ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ হারাবেন। পদমর্যাদার দিক থেকে মন্ত্রীদের পরেই সংসদ সদস্যের অবস্থান।
উপরের সবই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের কথা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সংসদই সব আলাপ-আলোচনা ও জবাবদিহির কেন্দ্রবিন্দু হবে। জনপ্রতিনিধিদের গঠনমূলক তর্ক-বিতর্ক গণতন্ত্রের এক অপার সৌন্দর্য। বিশ্বব্যাপী তাই হয়ে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটা। যুক্তিহীনভাবে সংসদ শুধু বর্জনই হচ্ছে না, রীতিমত রেকর্ড হচ্ছে একের পর এক। সংসদ অধিবেশন বর্জনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও দেশের প্রতি অবশ্যপালনীয় এক দায়িত্ব তারা এড়িয়ে চলছেন। সংসদ বর্জনের মাধ্যমে তারা গণতন্ত্রের এক নির্মম প্রহসনের সৃষ্টি করেছেন। ভুলণ্ঠিত করছেন সংবিধান। জনগণের সঙ্গে করছেন তামাশা।
সরকারের সাড়ে চার বছরে ১৭টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৭০। সবশেষ অধিবেশন শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি সংসদে গেছে মাত্র ৫৪ দিন। আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংসদে উপস্থিতি মাত্র আট কার্যদিবস। অর্থাৎ সংসদ বর্জনে তাদেরই করা অতীত সব রেকর্ড ভেঙেছে দলটি। সংবিধানের ৬৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্পিকারের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ শূন্য হয়ে যায়। বর্তমানে তাদের অনুপস্থিতি ৮২ দিন। আর আট কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলেই সদস্যপদ হারাতে হবে। বিএনপি সে ঝুঁকি নেবে না। পদ রক্ষার জন্য যথারীতি সংসদে যাচ্ছেন তারা। দলের পক্ষ থেকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে, আগামী ৩ জুন শুরু হতে যাওয়া বাজেট অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমাদের প্রয়োজনেই আমরা সংসদে যাব। সরকারের সাড়ে চার বছর ধরেই বিএনপি জোট শুধু সদস্যপদ রক্ষার জন্য সংসদে গেছে। অধিবেশনে অংশ না নিলেও বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধার শতভাগ ঠিকই ভোগ করছেন তারা। নিয়েছেন বিদেশ ভ্রমণ ভাতা, শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল অত্যাধুনিক দামি গাড়ি।
যে কোনো সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন, সংসদীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র জাতীয় সংসদ বা আইনসভা। সংসদকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারা। প্রাণবন্ত আলোচনা, যুক্তি-তর্কে প্রণীত হয় আইন, সেই আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয় একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সংসদে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, উন্নয়ন-অগ্রগতির অর্জন, ব্যর্থতার কথাও আলোচিত হয়। জনগণ অধীর অপেক্ষায় থাকেন, তাদের প্রতিনিধি সংসদে গিয়ে কী বলছেন? ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিতে সংসদে কথা বলার চেয়ে উৎকৃষ্ট প্ল্যাটফর্ম আর নেই। গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শক্তি হলো একটি কার্যকর ও গতিশীল সংসদ। সংসদ সদস্যরা যুক্তি, পাল্টা যুক্তিতে জনগণের নানা সমস্যা-সম্ভাবনার কথা বলবেন। সমাধানের সিদ্ধান্তগুলোও আসবে তারই আলোকে। এর মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটে থাকে। সে কারণে সংসদের অধিবেশনে সব দল ও সদস্যের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ জায়গাটিতেই একটি বিস্ময় চিহ্ন হিমালয় আকার ধারণ করেছে। বিরোধী দলগুলো সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন। সংসদবিমুখ বিরোধী দল রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে জ্বালাও-পোড়াওতে বেশি আগ্রহী। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করেন তারা।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার সংসদে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিরোধী দল থেকে বলা হচ্ছে, সংসদে যাওয়ার পরিবেশ নেই। সংসদে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। সংসদে পরিবেশ নেই বললেও দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতির কারণে সদস্যপদ যখন যায়-যায় অবস্থা, তখন পদ রক্ষার জন্য তারা ওই পরিবেশেই সংসদে যাচ্ছেন। সংসদকে ‘না’ বললেও স্থায়ী কমিটির সভাগুলোতে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। পরিস্থিতি এমনই যে, পঞ্চম সংসদে বর্জনের হার ছিল ৩৪ শতাংশ, নবম সংসদে তা ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এখন দাবি উঠেছে আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করার। কিন্তু তা কি সংসদ সদস্যদের জন্য মর্যাদার হবে?
ঠুনকো অজুহাত, রেকর্ড
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে বিএনপির ৩৫, জামায়াতে ইসলামীর দুই, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একজন। চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিএনপি যোগ দেয়। সামনের সারিতে কম আসন রাখার শিশুসুলভ অভিযোগ তুলে প্রথম অধিবেশন থেকেই সংসদ বর্জন শুরু করে বিরোধী জোট। তবে ওই সময় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১৮ দলীয় জোটে না থাকায় দলটির একমাত্র সদস্য অলি আহমদ সংসদে যেতেন। সংসদ বর্জনের অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে চারটি সংসদে বিরোধী দলের কম-বেশি অধিবেশন বর্জন চলে আসছে। তবে বর্তমান সংসদের প্রায় পুরোটা সময় বিরোধী দল সংসদ বর্জনে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২৩ বছরের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিএনপিই সবচেয়ে বেশি সংসদ বিমুখ। অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি ছিল ক্ষমতাসীন দল। তখন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ৩৭৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২২৩ দিন অনুপস্থিত ছিল। সপ্তম সংসদের বিরোধী দল বিএনপি ৩৮২ কার্যদিবসের মধ্যে ১৬৩ দিন বর্জন করে। পঞ্চম সংসদে বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ৪০০ কার্যদিবসের মধ্যে ১৩৫ দিন সংসদ বর্জন করে। পঞ্চম ও অষ্টম সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে ১৩৫ ও ৪৫ কার্যদিবস। আর ষষ্ঠ ও নবম সংসদের ১৭তম অধিবেশন পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে মাত্র ২৮ ও ৮ কার্যদিবস। চলতি সংসদে বিরোধী দল ও বিরোধীদলীয় নেতার সংসদ বর্জনের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে।
বেতন ভাতা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে না নেই
সংসদ বর্জন করলেও বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে না নেই জনপ্রতিনিধিদের। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন বাবদ ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা তুলেছেন। মন্ত্রী পদমর্যাদার কারণে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। তিনি বিমান ভাড়া বাবদ এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। অন্যান্য ভাতা তুলেছেন ৫৭ লাখ টাকা। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্য হিসেবে যাতায়াত ভাতাও নিয়েছেন। কমিটির বৈঠক অনুযায়ী তারা টাকা তুলেছেন। বিদেশে গেছেন। নিয়েছেন বিদেশ ভ্রমণ ভাতা। সংসদ সদস্য হিসেবে অনেকে শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল অত্যাধুনিক গাড়ি নিয়েছেন। বিরোধী দলের সদস্যরা মোট প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন। চলতি পুরো এক বছরে তাদের পেছনে আরও ব্যয় হবে পাঁচ-ছয় কোটি টাকা। তাও তারা তুলবেন বলে আশা করা যায়।
শুভ সূচনা, অতঃপর
বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সেই সরকারের পর আসে অনেক প্রত্যাশার মহাজোট সরকার। ২০০৮ সনের ২৯ ডিসেম্বর দেশে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়। অনেক সমালোচনা থাকলেও এখন গণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ সরকার যাত্রা শুরু করে। ২৫ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত আটটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ বিদায় নিয়েছে। নানা কারণে নবম সংসদ একেবারেই ভিন্ন। প্রথম অধিবেশনে ৪৮ মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। এ সরকারের আমলে দেশে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলকে পাঁচটি সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ দেওয়া, নারী স্পিকার পদ প্রদানসহ নারীকে সংসদ উপনেতা, হুইপ ও সভাপতির পদ দেওয়া ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করা, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা, অর্পিত সম্পত্তি আইনসহ বহুল আলোচিত বিল পাস হয়। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন চালু, প্রথমবারের মতো অধিবেশনে শিশু গ্যালারি স্থাপন, সবার জন্য সংসদ ভবনের প্রবেশ দ্বার উন্মুক্ত করা, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিষয়ে সর্বসম্মতিতে সংসদে বিল পাসের মতো আলোচিত অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এগুলোর একটিতেও বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নেই।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে সংসদকে কার্যকর ও সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি ছিল। এলাকার উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা বলার জন্য সংসদ-সদস্য নির্বাচন করেন সাধারণ মানুষ। বিরোধী দলের যে কয়জন সদস্য আছেন, তাদের দিকেও চেয়ে আছেন জনগণ। কিন্তু কী প্রতিদান দিয়েছেন তারা? নির্বাচিত হওয়ার শুরু থেকেই বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের পালা চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি এক চরম বিশ্বাসঘাতকতা। নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে যেমন, তেমনি জাতির সঙ্গে চরম অবমাননা ভোটারদের সম্মানের। জাতীয় সংসদ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সরকারি দলের একচেটিয়া অধিকারভুক্তও নয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখানে কথা বলবেন তাদের জনগণের। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে তাদের মুখে। সেই জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে সংসদ বর্জন করে চলেছেন। আবার অবিবেচকের মতো, সংসদ থেকে সব সুযোগসুবিধা ভোগ করছেন। সরকারি গাড়ি নিচ্ছেন। গণতন্ত্রের জন্য এ এক অভূতপূর্ব প্রহসন। বিশ্লেষকদের মতে, সংসদ বর্জনের এ রাজনীতি মানুষ এখন আর পছন্দ করেন না। এমনকি বিএনপির ঘোর সমর্থকরাও এ প্রবণতাকে ভালো ভাবে দেখছেন না। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি সংসদে কথা বললে তা-ই তাদের জন্য ভালো হতো। জনসমর্থনও বাড়তো। কিন্তু তা না করে হঠকারী পথ বেছে নিয়েছে দলটি। দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে। দিচ্ছে একের পর এক হরতাল। এতে সহিংসতা বাড়ছে, মানুষ মরছে।
সুযোগের অপব্যবহার, আইনের সুপারিশ
সংবিধান অনুযায়ী টানা ৯০ কার্যদিবস অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকার সুযোগ পান সংসদ সদস্যরা। কিন্তু এই সুযোগের অপব্যবহার করে বিরোধী দল নিরন্তর সংসদ বর্জনের রেওয়াজ করে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধের সুপারিশ করেছে। সংস্থাটির মতে, সংসদ কার্যকর ও গণমুখী করা এবং সংসদের মালিকানায় জনগণের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিদ্যমান আইন ও চর্চাকে ঘোষণাপত্রের আলোকে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে। আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করা, আইন প্রণয়ন ও সংসদীয় কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। টিআইবি বলছে, বাংলাদেশের মতো সংসদ বর্জনের দৃষ্টান্ত বিশ্বের অন্য কোনো দেশে নেই। আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করা এবং দলগতভাবে সংসদের অধিবেশনে যোগদান থেকে সর্বোচ্চ ৩০ দিন বিরত থাকার বিধান রাখা উচিত। একাধারে সাতদিনের বেশি অনুপস্থিত থাকা যাবে না, এমন বিধানও করা যেতে পারে। সংসদ সদস্যদের আচরণবিধিকে আইনে রূপান্তরের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। টিআইবির তথ্যানুযায়ী, ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের হার ছিল শতকরা ৩৪ ভাগ। আর তা বর্তমানে ৮০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের জবাবদিহিতার অভাব থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংসদ সরকারি দলের আবাসস্থল নয় যে, তাদের আমন্ত্রণ বা আচার-আচরণের ওপর নির্ভর করে বিরোধী দল সংসদে যাবে। জনগণ তাদের ভোট দিয়েছে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। তারা সংসদে যাবেন অধিকার এবং দায়িত্ববোধ থেকে। ৯০ দিন নয়, সংসদে টানা ৩০ দিন অনুপস্থিত থাকলেই সদস্যপদ বাতিলের বিধান করা উচিত। এতে সংসদ বর্জনের প্রবণতা কমবে।’ সংসদ বর্জন বন্ধে আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও। তিনি বলেন, ‘আইন করে হলেও সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এ রীতি আমাদের বাদ দিতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে এমন আইন করতে হবে যেন, কোনো সংসদ সদস্য যদি ৩০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তার সদস্য পদ বাতিল হবে। এমনকি পরবর্তীতে সেই আসনে উপ-নির্বাচন হলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।’
ফের পদ রক্ষার যোগদান
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের স্বার্থে ও নিজেদের প্রয়োজনে আমরা আসন্ন অধিবেশনে যাব। তবে সেখানে আমরা কতো দিন থাকব, তা নির্ভর করবে সরকারি দলের আচরণের ওপর।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘ক্ষমতাসীনরা গত সাড়ে চার বছরে সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে।’ মওদুদ আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা সংসদে যাওয়ার কথা বলেছেন। আমরা কারো আহবানে নয়, জনগণের তাগিদে সংসদে যাব।’ বিএনপির অনুপস্থিতিতেই গত ৩০ এপ্রিল সংসদের সপ্তদশ অধিবেশন শেষ হয়। টানা ৭৭ দিন অনুপস্থিতির পর সর্বশেষ গত বছরের ১৮ মার্চ সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। মওদুদ বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। আমাদের নেতার বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখা হয়। এবারও যদি এ রকম অবস্থা ঘটে, তা হলে আমরা সংসদে কীভাবে থাকব?’ বিএনপির এ অন্যতম নীতিনির্ধারকের বক্তব্যেই স্ববিরোধিতা লুকিয়ে আছে। তিনি বলেছেন, জনগণের তাগিদে তারা সংসদে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, সেই তাগিদ তারা এতোদিন অনুভব করেননি কেন? অবশ্য, ‘নিজেদের প্রয়োজনে’ সংসদে যাচ্ছেন, কথাটি তিনি সঠিক বলেছেন। কারণ সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে হবে। টানা সংসদ বর্জন করে আসা বিরোধী দলের সদস্যদের অনুস্থিতি ৮২ কার্যদিবস ছুঁয়েছে। এখন পদ ও সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার তাগিদেই তারা সংসদে যাচ্ছেন।
২| ০২ রা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২৫
হুমায়ুন তোরাব বলেছেন: আওমেলিগের হিসেব দিলা না মি.....
৩| ০২ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০২
জহির উদদীন বলেছেন: আর কত পা চাটলে ও দালালি করতে পারলে আপনি ভবিষৎতে মন্ত্রী হবেন একটু জানাবেন.....
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:১১
মোমের মানুষ বলেছেন: বিরোধী দল সংসদে গেলে আপনার সমস্যা কি?