নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ॥ আশীর্বাদ না অভিশাপ ?

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ৮:১৭

সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেরার খবরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু নেতা উচ্ছ্বসিত হলেও অধিকাংশ সিনিয়র নেতা আতঙ্কিত। অনেকে উপরে উপরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, যদিও ভেতরে ভেতরে চরম ক্ষুব্ধ। তারেক রহমান ফিরছেন, দলে এমন খবর চাউর থাকলেও কেউই নিশ্চিত ছিলেন না, ঠিক কবে ফিরছেন। বিএনপির নীতিনিধারণী পর্যায় থেকেও নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে একাধিক নেতার মুখে শোনা যাচ্ছে, তারেক রহমান দেশে ফিরতে উদগ্রীব। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরছেন। প্রশ্ন হলো, নানা বিতর্কিত কর্মকা-ে সমালোচিত তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ? দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি মামলার ঘানি নিয়ে আদালতে পলাতক থাকা তারেক বিএনপিকে কী দেবেন? দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটিরইবা তার কাছ থেকে কী পাওয়ার আছে?

সিঙ্গাপুরে অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোজাম্মেল হক এ পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ‘পলাতক আসামি তারেক রহমানকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তার বিরুদ্ধে ইংরেজিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ পরোয়ানা বাস্তবায়নের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হলো।’ দুদকের আবেদনে বলা হয়, ‘মামলার অন্যতম আসামি তারেক রহমান পলাতক রয়েছেন। আরেক আসামি তার বন্ধু ও ব্যবসায়ীক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন বর্তমানে কারাগারে। কিন্তু তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এ তথ্য জানা যায়। তার অবস্থানের বিষয়ে স্বজনরাও অবগত। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এ মামলায় আত্মসমর্পণ না করে বিচারিক কার্যক্রমে ফাঁকি দিচ্ছেন। তাই তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে ইংরেজিতে পরোয়ানা জারি করা হোক।’ আন্তর্জাতিক পুলিশ বাহিনী ইন্টারপোল বা অন্য কোনো মাধ্যমে তাকে গ্রেফতারের আবেদন করে দুদক। ফৌজদারি কার্যবিধির ৮৩(১) এবং ৯৩(খ) ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির আর্জি জানানো হয়। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘তারেক রহমান পলাতক আসামি। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তারেকসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ইচ্ছা করেই তিনি আত্মসমর্পণ না করে আইন অমান্য করছেন। যে কারণে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা প্রয়োজন।’ তারেক রহমানের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে সরকারের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসা করাতে লন্ডনে যান। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।

তারেক রহমান কি সত্যিই লন্ডনে এখনো চিকিৎসাধীন? সাম্প্রতিক ঘটনাবলী কি তাই বলছে? গণমাধ্যমের খবর, লন্ডনে এখন তিনি নিয়মিত বিভিন্ন কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন। বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। সরকারের সমালোচনা করছেন। এমনকি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ একাধিক ব্যক্তিকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে নোটিশ দিয়ে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দেন, যদিও তিনি আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক। লন্ডনে বসে তারেক রহমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা। তারা তারেককে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার কথাও বলেছেন।



অর্থপাচার, চাঁদাবাজি, কমিশন

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুরে অর্থপাচার অত্যন্ত আলোচিত। রয়েছে চাঁদাবাজি, কমিশন আদায়ের অভিযোগও। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ যৌথবাহিনীর হাতে তিনি গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। তার আগে প্রায় দেড় বছর হাসপাতালের প্রিজন সেলে কাটান। গুলশান থানায় এক কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী আমিন আহমেদ চৌধুরীর দায়ের করা মামলায় তাকে চার দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ছয় দফায় ১৩ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। এ মামলায় ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। নিয়মমাফিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও ঢাকার আদালতে হাজির না হওয়ায় তাকে পলাতক দেখিয়ে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট অর্থপাচার মামলায় অভিযোগ গঠন করেন বিচারক। ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ১৭ জন, এর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সাক্ষ্য দিয়েছেন সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা বিভূতীভূষণ সরকার, সোনালী ব্যাংকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নজরুল ইসলাম, ক্যান্টনমেন্ট শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সৈয়দ এহসানুল হাফিজ, বাদী দুদকের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মামলার রেকর্ডিং অফিসার হোসনে আরা বেগম, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কর্মকর্তা মিস ডেবরা লেপরোভেট, ধোবাউড়া থানার ওসি মীর আলীমুজ্জামান, গুলশান থানার ওসি কামাল উদ্দিন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চেয়ারপারসন খাদিজা ইসলাম এবং পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ করিম। তারেককে পলাতক দেখিয়ে বিচার চলছে। ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দুদকের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় একটি ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নির্মাণ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে তারেক-মামুন অবৈধভাবে অর্থ নেন। তারা দু’জন মিলে ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরের ৬৫, চুলিয়া স্ট্রিটের ওভারসিজ চাইনিজ ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেডে (ওসিবিসি) পাচার করেছেন। আরেকটি আলোচিত অভিযোগ হলো কর ফাঁকির মামলা। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট ঢাকার বিশেষ আদালতে মামলাটি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।



একডজনেরও বেশি মামলা

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখন মোট মামলা ১৪টি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েই দায়ের করা হয় ১৩টি মামলা। সে সময় দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়। ঘুষ বা কমিশন নেওয়ার অভিযোগে হয় একটি। বর্তমানে চারটি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। বর্তমান সরকার একটি মামলা প্রত্যাহার করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমানে মোট ২৪টি মামলা রয়েছে। খালেদা জিয়া ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা পাঁচটি করে। কোকোকে অর্থপাচারের একটি মামলায় ছয় বছরের কারাদ-ও দিয়েছে আদালত। এছাড়া তারেক রহমানের স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমানকে আসামি করে দায়ের করা মামলাটির কার্যক্রমও উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।



হাওয়া ভবন কাহিনী

বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় নানা কর্মকা-ের মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দেন তারেক রহমান। তখন তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদে থাকলেও পারিবারিক রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে পুরো সরকারই নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ ওঠে। দলের ভেতরে এ নিয়ে যেমন ক্ষোভ ছিল, তেমনি হতাশা ছিল প্রশাসনে। কিন্তু কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না। কারণ প্রতিবাদ করলে শাস্তির খড়গ নেমে আসত। বিভিন্ন দুর্নীতি, তদবির-লবিংয়ে হাওয়া ভবন ঘিরে গড়ে ওঠে একটি শক্তিশালী চক্র। ওই চক্রের তরুণ সদস্যরা বিএনপির অনেকে প্রবীণ নেতাকেও পাত্তা দিতেন না। অনেকে মন্ত্রীদের দিকে আঙুল তুলে কথা বলতেন। এমনকি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনার ‘মূল’ হিসেবেও হাওয়া ভবনকে সন্দেহ করা হয়। বিদ্যুতের খাম্বা স্থাপনের হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির কেন্দ্র হাওয়া ভবন, এমন কথা ছিল মানুষের মুখে মুখে। অর্থ লোপাট করতে সেসময় অসংখ্য খাম্বা স্থাপন করা হলেও বিদ্যুৎ পাননি সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল বিদ্যুৎ প্রত্যাশীদের মধ্যে। অভিযোগ ছিল, হাওয়া ভবন থেকেই মন্ত্রী-এমপিদের যাবতীয় নির্দেশ দেওয়া হতো। সরকার পরিচালিত হতো হাওয়া ভবন থেকে। যদিও তখন বলা হচ্ছিল, হাওয়া ভবন মূলত রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

হাওয়া ভবন এতটাই বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল যে, এর মালিক আশেক আহমেদ সেটিকে ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করেছেন। তার স্ত্রী হাওয়ারুননেসার নামে ভবনটি করা হলেও বদলে ফেলা হয়েছে সে নাম। রাজধানীর বনানীতে এক সময়ের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবশালী হাওয়া ভবন আর নেই। দুইতলা বিশিষ্ট ভবনটি ভেঙে নয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। হাওয়া ভবন নয়, এবার নাম দেওয়া হয়েছে ইংরেজিতে ‘অ্যাজার’। আভিধানিক অর্থ মেঘমুক্ত নীলাকাশ। ভবনটি নির্মাণ শেষ। তবে এবার কোনো অফিস নয়, আবাসিক হিসেবে ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশেক আহমেদ ও তার স্ত্রী হুয়ারুন আহমেদ ওরফে হাওয়ারুননেসা ভবনটির মালিক। আশুক মিয়ার গ্রামের বাড়ি সিলেটের জগন্নাথপুরে, দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে লন্ডনে থাকেন। কিছুদিন আগে ঘুরে দেখে গেলেও দেশে থাকা তার এক ভাই ভবনটি দেখভাল করেন।

বিএনপি নেতা আলী আসগর লবী ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে প্রথমে হাওয়া ভবন ভাড়া নেন। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় করা উদ্দেশ্য থাকলেও সেখানে বসা শুরু করেন তারেক, মামুনসহ তরুণ নেতারা। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসে। তারপর তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে সবকিছুর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ওই নির্বাচনের পর বিএনপির এ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব দুই তলাবিশিষ্ট হাওয়া ভবনে নিয়মিত বসতেন। দ্বিতীয় তলায় তিনি এবং নিচ তলায় বসতেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দ্বিতীয় তলায় একটি ওয়েটিং ও একটি কনফারেন্স রুমও ছিল। বেশ কয়েকজন যোগ্য নেতাকে ডিঙিয়ে তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হলে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাছাড়া দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি কিংবা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিকে পাশ কাটিয়ে প্রায় সব সিদ্ধান্ত আসত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের হাওয়া ভবন থেকে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয় বরং এ ভবন থেকে সারা দেশে দল নিয়ন্ত্রণ করা হতো। তৃণমূল প্রতিনিধি সভা চলাকালে সরগরম ছিল হাওয়া ভবন। কর্মসূচি গ্রহণ, মনিটরিং এমনকি ২০০৬ সালের নির্বাচনি পরিকল্পনার সব প্রস্তুতির কেন্দ্র ছিল হাওয়া ভবন। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণও ছিল হাওয়া ভবনের কব্জায়। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা, পৌরসভা, উপজেলা-জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের তালিকা সংরক্ষিত ছিল সেখানে। তৃণমূল নেতাদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংরক্ষিত রাখা হতো বিশেষ সেলে। ত্যাগী পরীক্ষিত কোনো নেতা নয়, তারেক রহমানের সঙ্গে হাওয়া ভবনে বসতেন অনভিজ্ঞ ও সুযোগসন্ধানীরা। নিয়মিত আসতেন রকিবুল ইসলাম বকুল, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ছেলে জয়, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সিলভার সেলিম, আলী আসগর লবী, হারিছ চৌধুরী, আশিক ইসলাম, মিয়া নুরুদ্দিন অপু প্রমুখ। এদের প্রায় সবাই বিদেশে পালিয়ে আছেন।



নির্বাচনে ভরাডুবির নেপথ্যে

বিগত নির্বাচনে চার দলীয় জোটের নজিরবিহীন ভরাডুবির নেপথ্যে হাওয়া ভবন কেন্দ্রীক নেতিবাচক কর্মকা-কে দায়ী করেছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ ফোরামে এ নিয়ে চাপাস্বরে অভিযোগ তোলেন। একবাক্যে তারা বলেছিলেন, ‘হাওয়া ভবনই আমাদের ডুবিয়েছে।’ ভরাডুবিতে তারেক রহমানের বিরাট ভূমিকা থাকলেও তিনি পরে পুরস্কৃতই হয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব থেকে একলাফে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। বয়স পঞ্চাশ না পেরোলেও ষাটোর্ধ পরীক্ষিত নেতাদের উপরে বসেছেন। গণতান্ত্রিক উপায়ে নয় বরং পরিবারতন্ত্রের বদৌলতে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। অর্থাৎ এম কে আনোয়ার, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, কিংবা নাজমুল হুদা নন, তিনিই বিএনপির সেকেন্ড ইন কমান্ড!



ফের আলোচনায়

তারেক রহমান ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদেশে গিয়েছিলেন এই ওয়াদা করে যে, তিনি আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। দিব্যি দিয়েছিলেন, ভুলেও আর এ পথ মাড়াবেন না। অনেকের মুখে তখন শোনা গিয়েছিল, তার কোমড় ভেঙে গেছে। তিনি আর সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারবেন না। কিন্তু এখন ফের আলোচনায় তারেক রহমান। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরছেন। কোমড় সোজা করে দাঁড়াতেও পারছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারেক দেশে ফিরলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। দেশে ফিরিয়ে এনে তাকে বিচারের মুখোমুখি করবে সরকার। সে লক্ষ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে সরকার ও প্রশাসন। তারেক ইস্যুতে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। বিএনপিও পাল্টা ব্যবস্থার চেষ্টা করছে। তারেক যাতে নির্বিঘেœ আসতে পারেন, সেজন্য আন্তর্জাতিক মহলে চলছে জোর লবিং। একটি সূত্রের দাবি, শতাধিক কোটি টাকার বাজেট নিয়ে নেমেছে বিরোধী দল। তারেক রহমান নিজেও দেশে ফিরতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সব ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সরকারকে চাপ দিতে বিদেশি লবিস্টরা কাজ করছেন। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন। সম্প্রতি সেখানে বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফের বিতর্কের জন্ম দেন। ২০ মে পূর্ব লন্ডনের ওই অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ওপর চাপ দিতে তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। তার এ তৎপরতার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। তারেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন তারা। বিএনপির কয়েকজন নেতাও তারেকের পক্ষে পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সমালোচনা করে তারা মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি রাজপথ পর্যন্ত গড়িয়েছে। পালিত হয়েছে হরতাল পর্যন্ত।



দেশে এনে বিচারের আহ্বান

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-ীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, ‘আইনের চোখে সংবিধান অনুযায়ী সবাই সমান। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার নামে বিদেশে চলে গেছেন। তিনি সেখানে বসে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। দেশ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। সরকারকে বলব, তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের দৃষ্টিতে তিনি একজন ফেরারি, পলাতক আসামি। দেশে ফিরিয়ে আইনের আওতায় আনতে শিগগিরই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিদেশের মাটিতে বসে একজন ফেরারি আসামি সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা ধৃষ্টতামূলক। কীভাবে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা যায়, তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট কীভাবে কার্যকর করা যায়, সেটা ইন্টারপোলের মাধ্যমে হোক আর যেভাবেই হোক ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখনই সময়।’ তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান একজন ফেরারি আসামি হয়ে যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। অপরাধী যেই হোক, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ’ তারেক রহমানের পাঠানো আইনি নোটিশ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ নোটিশ রাজনৈতিক স্টান্টবাজি। এতে কোনো লাভ হবে না।’ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আসামিকে এখতিয়ারে আনা আদালতের দায়িত্ব। আদালত সেই দায়িত্ব পালন করেছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে কথা বলা দুর্ভাগ্যজনক।’



তারেক বিএনপির আশীর্বাদ না অভিশাপ

তারেক রহমানকে নিয়ে বিএনপির কিছু নেতা অতিউচ্ছ্বাসা প্রকাশ করছেন। তাকে ঘিরে আবারও হাওয়া ভবনের মতো তোষামোদকারীরা সক্রিয়। তারা তারেককে অনেক বড় করে দেখাতে সোচ্চার। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। তিনি রাখঢাক না করেই বলেছেন, ‘তারেক রহমান আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী। তার সম্পর্কে ভেবেচিন্তে কথা বলতে হবে। তিনি আমাদের মাথার তাজ হয়ে আছেন। অচিরেই দেশে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দেবেন।’ দুদু বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেবেন।’ দুদুর এ পিলে চমকানো বক্তব্যে বিএনপির অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতা হতবাক। তৃণমূল পর্যায় থেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএনপির ভেতরেও এখন আলোচনাÑতারেক রহমান বিএনপির জন্য জটিল রোগ, নাকি প্রতিষেধক? আশীর্বাদ না সর্বনাশা অভিশাপ? বিএনপির একাংশের নেতারা তারেককে দেশে এনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শামিল করতে চাচ্ছেন। তাকে দ্রুত দেশে ফেরাতে বেগম জিয়া সম্মতি দিয়েছেন। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে নয়, তারেক রহমানকেই বিএনপির কা-ারী হিসেবে আবির্ভূত করতে চান তার সমর্থকরা। অন্যদিকে, দলটির অভিজ্ঞ ও সংস্কারবাদী বড় একটি অংশ এ তৎপরতায় উদ্বিগ্ন। তারা এখন কোণঠাসা থাকলেও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। হাওয়া ভবন কেন্দ্রীক তারেক রহমানের পুরানো কার্যকলাপ, বিগত নির্বাচনে ভরাডুবি, দলের ভবিষ্যত সবকিছু নিয়েই তারা চিন্তিত। এসব নেতা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে খাল কেটে কুমির আনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তারা বলছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিগত নির্বাচনে ভরাডুবির মতোই দলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তাছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের পর দল এখনও দিশেহারা অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকা-, মামলা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোই সম্ভব হয়নি। সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলে কিছুটা প্রাণ সঞ্চারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় তারেক রহমান ফিরে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলে তা হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। বিএনপির এ অংশটি শুরু থেকেই তারেক রহমানের বিরোধিতা করে আসছে। তারা তারেকের মাইনাস চান। কারণ বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে তারেক রহমানকে তারা বিএনপির জন্য অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন সংকটের মধ্যে প্রতিষেধক নয়, তারেক রহমান নিজেই বড় এক রোগ। আমরা তারেকমুক্ত বিএনপি চাই। এতে দল আরও শক্তিশালী হবে। আর কোনো হাওয়া ভবন দেখতে চাই না।’ অভিন্ন কণ্ঠে তারা বলেন, ‘অনেক নেতাকে ডিঙিয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল অগণতান্ত্রিক। পরে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করাও অগণতান্ত্রিক। মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটিতে দায়িত্ব পালন না করে একজন ব্যক্তি ভাইস চেয়ারম্যানও নন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদ পান কী করে?’ এরপরও তারেক রহমান দলে ফিরলে আপনাদের ভূমিকা কী হবে? এমন প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা নতুন বিএনপি গড়বো।’ জানা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের মত উপেক্ষা করে তারেক রহমান দলে ফিরলে বিএনপিতে ভাঙন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। সংস্কারবাদী ওই অংশটির নেতারা আপাতত নীরব থাকলেও ভেতরে ভেতরে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সূত্রমতে, অন্তত তিনটি খ-ে ভাগ হয়ে যেতে পারে বিএনপি। অর্থাৎ তারেক রহমান প্রশ্নে এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে একাধিকবার ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক দল বিএনপি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৫৬

ক্যাপ্টেন ম্যাকক্লাস্কি বলেছেন:
তারেকের বিরুদ্ধে FBI সাক্ষ্য দিতে এসেছিল

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ৯:০৬

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ঠিক জানি না কেন, ব্যাপারটা খুব ই অস্বস্তিকর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.