নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ম্ওদুদ ও জিয়া সমাচার...

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:০১

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বই নিয়ে তোলপাড় চলছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে। দলের স্থায়ী কমিটির এ প্রভাবশালী সদস্য খালেদা জিয়ার জন্মদিনকে বিতর্কিত বলে ওই বইয়ে উল্লেখ করেছেন। তীব্র সমালোচনা করেছেন জোট সরকারের মন্ত্রীদের। বাদ রাখেননি তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকো ও তাদের বন্ধুদেরও। ‘কারাগারে কেমন ছিলাম’ নামের এ বইটি গত ১২ মে প্রকাশের পর দলের ভেতরে বেশ চাপে রয়েছেন মওদুদ। বইটি মূলত বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তার গ্রেফতার, রিমান্ড ও কারাগারে কাটানোর দিনগুলির ডায়েরি। মওদুদের বই নিয়ে খালেদা জিয়া নিজেও বেশ ক্ষুদ্ধ বলে জানা যায়। কিন্তু দলে থিংকট্যাঙ্কের ঘাটতি থাকায় তিনি বিষয়টি আপাতত মেনে নিয়েছেন বলেই সূত্রের মত। তবে স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ ইস্যুতে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও মওদুদ দৃঢ়তার সঙ্গেই ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, তার এ বই বহু বছর পর মূল্যায়িত হবে। তিনি সম্পূর্ণ সত্য বলেছেন। দল থেকে বহিস্কার করা হলেও এ ‘সত্য জবানবন্দি’ থেকে পিছপা হবেন না। বইয়ের মুখবন্ধে বলেছেন, ‘এই বইয়ে যেসব মতামত বা অভিব্যক্তি রয়েছে তা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত। আমার রাজনৈতিক দলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’

মওদুদ আহমদ এর আগে ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশান ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি বই প্রকাশের পরও বিপাকে পড়েন। সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও আলোচনায় এলেন। নয়াপল্টনে যুবদলের নেতাকর্মীরা তার কুশপুতুল দাহ করেছেন। তাকে প্রধান অতিথি করায় নেতাকর্মীদের আপত্তির মুখে সংগঠনটির আয়োজনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা পর্যন্ত বাতিল করা হয়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন মওদুদ আহমদ। বিএনপি সরকারের সময় ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের কর্মসূচির বিরোধিতা করায় তাকে উপপ্রধানমন্ত্রী থেকে বরখাস্ত করা হয়। বেগম জিয়ার সঙ্গে ১৯৮৫ সালে কুমিল্লা সফর থেকে ফেরার সময় গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন। ঢাকায় এসে তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত ঘটনা। খালেদা জিয়া ও আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন স্বৈরাচার এরশাদ।’ হাসপাতালেও ভর্তি হন মওদুদ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনদিন পরই সেখান থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে গিয়ে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। বিগত ৪দলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার ইস্যুতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতিদের চাকরির বয়স বাড়িয়ে হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা করার আইডিয়া আসে মওদুদের মাথা থেকেই। এর মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের পথে ঠেলে দেন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের মামলা চলাকালেও বিতর্কিত হন মওদুদ। চেয়ারপারসনের সেই দুঃসময়ে তিনি ছিলেন বিদেশে।

খালেদা জিয়া আপাতত কিছু না বললেও বসে নেই বিএনপির মওদুদবিরোধী লবি। স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মওদুদ আহমদকে মুখে লাগাম ও জিহ্বা সামাল দিতে বলেছেন। জ্যেষ্ঠ নেতাদের দলের বাইরে গিয়ে মিডিয়ায় অতিরিক্ত কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা না করতে তিনি পরামর্শ দেন।’

কারাগারে কেমন ছিলাম বইটি নানা কারণেই এখন আলোচিত। মওদদু আহমদ বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের জন্ম দিলেও এ বইয়ে অনেক ‘কঠিন সত্য’ উচ্চারণ করেছেন বলে অভিমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। তিনি ২০০৮ সালের ১৫ আগস্টের দিনলিপিতে লিখেছেন, ‘আজ জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমন্ডির বাড়িতে স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে খুন হন। জাতির ইতিহাসে এ এক মহাশোকের দিন। বিতর্কিত একটি জন্মদিন হিসেবে আজ বেগম জিয়ারও ৬৩তম জন্মদিন। সঠিক হলেও আমি হলে আমার জন্মদিন বোধহয় একদিন আগে বা পরে পালন করতাম ও শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতাম। এটা একটা রুচিবোধের বিষয়। বেগম জিয়া তা করলে তিনি সকল শ্রেণীর জনগণের কাছ থেকে আরো বেশি শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারতেন। তার এই উদারতা তাকে আরো বেশী মহীয়ান করে তুলতো।’ ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর লিখেছেন, ‘আজ প্রত্যুষে বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে তাদের বাসা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর চুক্তিতে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে বেগম জিয়া নিজেকে ও দুই সন্তানকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে কিছুই বলেননি।’ ওই বছর ৩ মে লিখেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের সরকার সুশাসনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে ছিল অব্যবস্থাপনা ও অপশাসনের নমুনা। মন্ত্রী ও নিজের দপ্তরকেন্দ্রীক লোকজনের বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রী বন্ধ করতে পারেননি। তিনি হয়তো অনেক কিছু জানতেনই না। আজ গোটা জাতিকে তার মাশুল দিতে হচ্ছে।’ ২০০৭ সালের ১৫ আগস্ট লিখেছেন, ১৯৮৩ সালে আমার লেখাÑবাংলাদেশ শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালÑবইয়ে বঙ্গবন্ধুর বিশদ মূল্যায়ন করা হয়েছে। তার সমস্ত ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমি তাকে ইতিহাসের মহানতম নায়ক হিসেবে উল্লেখ করেছি। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তার সমাধি রচিত হয়নি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি প্রবাদ বাক্যের মতোই ভাস্বর হয়ে থাকবেন। আমার এ কারণে দুঃখ হয় যে, অক্লান্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমি সরকারের বিরোধিতার কারণে আপিল বিভাগে জমে থাকা সেই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মামলার শুনানি শুরু করতে পারিনি। আমি এমনও যুক্তি দেখিয়েছি যে, মুজিব যখন নিহত হন তখন বিএনপির জন্মই হয়নি। কাজেই আপিল শুরু না করে বিএনপি এর দায়ভার বহন করতে যাবে কেন? কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের আমি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। এজন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি লজ্জিত এবং নিজেকেই আমার কাছে ছোট বলে মনে হয়।’ ২০০৭ সালের ১৬ অক্টোবর লেখেন, ‘বেগম জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে বলেছেন, তার চারদিকে লোকজনের করা এতসব দুর্নীতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। অথচ আমরা এতোদিন ধরে তার উল্টোটাই শুনে আসছি। এটা এক আজব ধরনের ঘটনা। তার দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি খুব উদ্বিগ্ন।’ সাবেক এ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ২০০৭ সালের ১৭ অক্টোবর লিখেছেন, ‘১৯৯১-৯৬ সালের তুলনায় বিএনপি সরকারের রাজনৈতিক অবদান ২০০১-২০০৬ সালে ছিল নিঃসন্দেহে অনেক কম। এরপর আমরা ক্ষমতায় গেলে বিএনপির সাফল্য হয়তো হবে আরো কম। কারণ দলটির শাসন কৌশলে উন্নতির কোনো স্পর্শ লাগেনি। বিএনপির রাজনীতির রক্তধারায় আত্মোপলব্ধি এবং আত্মসংশোধন শব্দ দুটির কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্ষমতার দাপট, অর্থলোলুপতা, বিলাসবহুল জীবন যাপন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং দুর্নীতির মাত্রা বোধহয় এক পর্যায়ে থেকে যাবে। আওয়ামী লীগের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। এরপর যখনই তারা আবার ক্ষমতায় আসবে সেই শাসনকাল হবে আরো নিকৃষ্ট।’ মওদুদ আহমদ লিখেছেন, ‘বিশ্ব বিপর্যয়ে বিএনপি বন্ধুহীন হয়ে পড়া এবং রাজনীতিতে প্রান্তিক অবস্থায় চলে আসার পেছনে মূল কারণ হলো দুটি। (১) জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে গভীর সখ্যতার কারণে বিএনপিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এমন ইসলামী উগ্রবাদী শক্তির সহযোদ্ধা হিসাবে, যাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। (২) তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে থাকা লোকজনের দুর্নীতি। বিএনপি যদি এ দুয়ের গ্লানি কাটিয়ে ভারসাম্যময় মধ্যপন্থী গণতন্ত্রের ধারক বাহক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না এবং কোনো রকমে আসতে সক্ষম হলেও বেশিদিন তা ধরে রাখতে পারবে না। অন্যদিকে জাতি যদি নারী নেত্রীদের ব্যক্তিগত রাজনীতির প্রতি মোহান্ধ থেকে যায় তা হবে জাতির জন্য সমপরিমাণেরই বিবাদময়।’

বিএনপিতে এর আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নানা সময়ে মন্তব্য করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মওদুদের বই নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বর্তমান এক সদস্যকে জুতাপেটা পর্যন্ত করেছে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। সেই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আপাতত সাবধানে চলছেন মওদুদ। কিন্তু শেষ রক্ষা তার হবে কি? নেত্রীর জন্মদিনের মতো স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। খালেদা জিয়া কি তাকে এতো অল্পতেই ক্ষমা করে দেবেন?

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪৮

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: জন্মদিন তো মিথ্যা, ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় থাকার সময়ে উনি সেপ্টেম্বর মাসে জন্মদিন পালন করেছেন।

২| ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

মাইনাস এইটিন_পন্ডিত বলেছেন: মওদুদের আগের বইগুলোও এমন। তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ চমৎকার। অন্তত বই লেখার সময় তিনি নিস্পৃহ , নিরপেক্ষ থাকেন বলে মনে হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভবিষ্যতের গবেষনায় তার বইগুলো প্রয়োজন হবে।

আর, খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে কী বলব? এইটা খালেদা জিয়ার নিতান্তই ছোটলোকামী।

৩| ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

নিজাম বলেছেন: মওদুদ আহমেদ-এর লেখা বাস্তবসম্মত ও চরম সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু বহু দল বদলের সুকৌশলী, ক্ষমতালোভী, বর্ণচোর এই মওদুদ আহমেদ বিনা করণে ও বিনা স্বার্থে এগুলি লিখেছেন এমনটি আশা করা ভুল। সম্ভবতঃ আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে না পারলে তিনি দলবদলের ডিগবাজী খাওয়ার পথটা তৈরী করে রাখলেন। কারণ একাধারে বহুদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এই ধুরন্ধর রাজনীতিবিদের ধাতে সহ্য হয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.