নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারপরও বাংলাদেশ এগোচ্ছে, এগোচ্ছে না?- জাতিসংঘ কী বলে?

০২ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

বাংলাদেশের জনগণের দারিদ্র্য হ্রাসের সাফল্যের বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার খবরটি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৪ জুন। এই সাফল্যের স্বীকৃতি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে যেমন আশা জাগানিয়া তেমনি সারা দুনিয়ার কাছে চমকপ্রদ হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হ্রাসের সংগ্রামে জাতিসংঘ ঘোষিত ৮টি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্থাৎ এমডিজি অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম লক্ষ্যটিই নির্ধারিত সময়সীমা ২০১৫ সালের আগেই অন্য কথায় দুই বছর আগেই অর্জন করেছে বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশ-বাংলাদেশ। সন্দেহ নেই এ অর্জন বিশ্বের উন্নয়ন চিন্তাবিদদের কাছে একটি আনন্দের খবর।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২০০০ সালের বার্ষিক অধিবেশনে ৮টি এমডিজি বা মধ্যমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গৃহীত হয়েছিল। এই ৮টি এমডিজি হল ক. অতিদারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ খ. সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন গ. জেন্ডারসাম্য অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়ন ঘ. শিশুমৃত্যুহার হ্রাস ঙ. মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন চ. এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগ নির্মূল ছ. পরিবেশগত স্থায়িত্বশীলতা অর্জন এবং জ. উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের সামর্থ অর্জন।

এই ৮টি এমডিজির প্রথমটিতে (অতিদারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ) ২০০০ সালের দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী বাংলাদেশের ৫৮ শতাংশ জনসংখ্যাকে ২০১৫ সালে ২৯ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বের মাত্র ২০টি দেশ সঠিক পথে থাকে; যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

সঠিক পথে থাকা এই ২০টি দেশকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (সংক্ষেপে এফএও) সাফল্যের ডিপ্লোমা প্রদানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গত ১৭ জুন ডিপ্লোমাটি গ্রহণ করেন। এই ডিপ্লোমা প্রাপ্তি বাংলাদেশের অর্জনÑ বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের অর্জন। এই অর্জন ২০১৫ সালের মধ্যে অন্য ৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাষ্ট্র, জনগণ ও সরকারকে অনুপ্রাণিত করবে। আশা করা যায়, ২০১৩ সালেই বাংলাদেশ যেহেতু ২৯ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে, সেহেতু সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অর্থাৎ দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে ২০১৫ সালে এ দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যা ২৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এটা এখন বড় ধরনের প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে যে জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ এ দেশটি ২০০০ থেকে ২০১৩ অর্থাৎ ১৩ বছরের মধ্যে কোন যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী দেশের ৫৮ শতাংশ জনসংখ্যাকে ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনল। আরেকটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ২০০০ সালের আগে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যা কেন অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ ছিল।

দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর আগে দিলে বলা দরকার, আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কালচার প্রতিনিয়ত সমাজে দারিদ্র্য সৃষ্টি ও পুনঃসৃষ্টি করে চলেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম মাঠপর্যায়ে গবেষণা ও তাত্ত্বিক গবেষণার ভিত্তিতে রচিত তার বই ‘দি পোভার্টি ডিসকারেজ অ্যান্ড পারটিসিপেটরি অ্যাকশন রিসার্চ ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থে মোট ১২টি প্রধান প্রক্রিয়ায় এ দেশে দারিদ্র্য সৃষ্টি ও পুনঃসৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। লেখক তার গবেষণাধর্মী বইটিতে ব্যাখ্যা করেছেনÑএ দেশে দারিদ্র্য সৃষ্টি ও পুনঃসৃষ্টির প্রধান ক্ষেত্র হল কৃষি খাত। কিভাবে, সে ব্যাখ্যাও লেখক দিয়েছেন। ব্যাখ্যাগুলোর অন্যতম কয়েকটি হলোÑভূমির মালিকানা খ-বিখ- হওয়ার মাধ্যমে কৃষি জমির আয়তন হ্রাস, ভূমিহীনতার মারাত্মক প্রাদুর্ভাব, ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের নিঃস্বায়ন ও প্রান্তিকীকরণ প্রক্রিয়া, অনুপস্থিত ভূস্বামীদের হাতে ভূমি মালিকানার পুঞ্জীভবন এবং এর ফলে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থায় বর্গাদারির ক্রমবর্ধমান বিস্তার, কৃষিজাত দ্রব্য বাজারজাতকরণে দালাল, ফড়িয়া, মহাজন, পাইকারদের মতো মধ্যস্বতভোগীদের দৌরাত্মে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে ব্যর্থতা, কৃষকের ঋণগ্রস্ততা ও মহাজনি ব্যবস্থার অব্যাহত দৌরাত্ম, বন্যা, নদীভাঙন, ঘুর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, কালবৈশাখীর কারণে কৃষকের ঘরবাড়ি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, গৃহস্থালী দ্রব্যাদি ও কৃষি উৎপাদনের বিপর্যয় এবং কৃষি উপকরণের বাজারীকরণ বৃদ্ধির কারণে কৃষিকাজ না পোষানোর সমস্যা।

ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের কৃষক সমাজ উপরোক্ত সমস্যায় বারবার জর্জরিত হয়েছে। কৃষকদের এসব সমস্যা নিরসনে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকারগুলো (জিয়া ও এরশাদের সরকার) কোনো কাজ না করে বরং সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন কালাকানুন; অর্ডিন্যান্স, সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে এসব সমস্যাগুলোকে আরো উস্কে দিয়েছে।

এই সময়কালে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই জনপদে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা অনেকটা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। বিপরীতে একই হারে বেড়েছে ভূমি মালিকানার পুঞ্জিভবন। ফলে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে বর্গাদারি। কৃষককে ফসল উৎপাদন করে তার অর্ধেক ক্ষেত্রবিশেষে তিন ভাগের দুই ভাগ তুলে দিতে হয়েছে ভূস্বামীদের হাতে। এতে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এ দেশে দারিদ্র্য সৃষ্টি হয়েছে এবং নতুন নতুন জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে নিপতিত হয়েছে। অবাক বিষয় হল, এ দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ ভাগ কৃষি সংক্রান্ত কাজের সাথে জড়িত থাকলেও এখানে যথোপযুক্ত কৃষি সংস্কার ও ভূমি সংস্কার নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি। নীতিমালার অভাবে এই জনপদে ভূমির মালিকানা খ–বিখ- হয়েছে। ফলস্বরূপ সারা দেশের কৃষি জমিতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য আইল (ভূমির চৌহদ্দি)। কৃষি ভূমির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আইলের পরিমাণ এত বেড়েছে যে, ধারণা করা হয় কৃষি জমিতে কোনো আইল না থাকলে সারা দেশের জন্য আরো এক মাসের খাদ্যশষ্য বেশি উৎপাদন করা যেত।

আশার কথা হল, কৃষি ও ভূমি সংস্কারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ৯০ দশকের পর থেকে ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় (তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর শাসনকাল ব্যতিত) এই সময়ে কৃষক সমাজের নিরবচ্ছিন্ন উন্নতি হয়েছে। কৃষিকাজ মানে ফসল ফলানোÑএই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের কৃষক সমাজ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মৎস্য এমনকি তরিতরকারি চাষের কাজে হাত দিয়েছে। এতে কৃষির পাশাপাশি দেশে অনেক কৃষি উপজাত ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্ভব হয়েছে। যা দেশের অনেক অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছে। আর এভাবেই কৃষক থেকে ‘কৃষি শ্রমিক’ শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি তৈরি পোশাকের কারণে দেশে বড় ধরনের পোশাক শিল্প শ্রমিক শ্রেণী তৈরি হয়েছে। এই শ্রেণীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। যে নারীরা এক সময় অলস সময় কাটাত কাঁথা সেলাই আর গল্পগুজব করে সে নারীরা এখন ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিকদের জন্য তৈরি করছে জিন্স-টি শার্ট-গাউন ইত্যাদি। বিনিময়ে সে যে পারিশ্রমিক পাচ্ছে তা যথাযথ না হলেও এই প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশে দারিদ্র্য সৃষ্টি ও পুনঃসৃষ্টির ধারাকে বেগবান হতে দিচ্ছে না। বলা যায়, পোশাক শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকের যৌথ প্রচেষ্টায় দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থানকারী বাংলাদেশের ৫৮ শতাংশ জনসংখ্যাকে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আর এই সূচকের সবচেয়ে বেশি গড়পড়তা উন্নতি হয়েছে গত ১৩ বছরের শেষ ৫ বছরে।

বর্তমান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি ও কৃষকবান্ধব বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত ৫ বছরে দেশের কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এই সময়ে দেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করা গেছে। পোল্ট্রি ও মাছ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হারে বেড়েছে। খাদ্যশস্যের দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। গ্রামীণ জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। আর এ সবের কারণে গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্যতা দ্রুত গতিতে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি পোশাক শিল্পের কারণে শহরাঞ্চলের শ্রমজীবী বিত্তহীন জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য নিরসনেও গতি এসেছে।

দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে গত ৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সরকারের সাফল্য হালো এই সময়ে দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ আনুপাতিক হারে প্রতি বছরই বেড়েছে। যেমন গত অর্থবছরে দেশে আসা রেমিট্যান্সের প্রবাহ ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এর আগের অর্থবছরে ছিল সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার। আর বর্তমান অর্থবছরে ধারণা করা হয় এই প্রবাহ অতিক্রম করবে ১৫ বিলিয়ন ডলারে।

গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার শিল্প খাতের চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য নিরসনে গত ৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই অর্জিত হচ্ছে এই খাত থেকে। এই খাত থেকে বাংলাদেশের নিট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই খাতের জন্য মেশিনারি, ম্যাটেরিয়ালস ও এক্সেসরিজ আমদানিতে যদি প্রতি বছর প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় না হতো তাহলে গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার খাত থেকে রপ্তানি আয় হতো ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। এর পাশাপাশি এই শিল্প প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও তা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জনগণের দারিদ্র্য হ্রাসের প্রক্রিয়ায় বিশাল অবদান রেখে চলেছে। সরকার দেশের সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর নারী সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য গার্মেন্ট শিল্পের প্রতি নিরবচ্ছিন্ন নজর রাখায় এই খাতটি দেশে একটি সামাজিক বিপ্লবের সূচনা করেছে।

লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, পেরু, নিকারগুয়া ও ইকুয়েডরের জনগণের একটি বিশাল অংশ কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে ছিল। দেশগুলো বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনে গত এক দশক বা তার কম সময়ে নাটকীয় উন্নতি করেছে। এই দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও দারিদ্র্য নিরসন, নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডারসাম্য অর্জন, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, শিশুমৃত্যুহার হ্রাস, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নসহ বিভিন্ন সূচকে প্রভূত উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। এই সূচকগুলোর উন্নয়নে ভেনিজুয়েলার প্রয়াত হিউগো সাভেজ, ব্রাজিলের লুলা ডি সিলভা, নিকারগুয়ার ওর্তেগা ও বলিভিয়ার মোরালেস এর মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম এখন দারিদ্র্য দূরীকরণ সংগ্রামে সফল রাষ্ট্রনায়কদের তালিকায়। শেখ হাসিনাসহ এসব রাষ্ট্রনায়কের সবাই নিজ নিজ দেশের জনগণের দারিদ্র্য তৈরির প্রক্রিয়াগুলো থামিয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করার কারণে বাংলাদেশ যেমন দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগণের হার ৫৮ শতাংশ থেকে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগে ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, একইভাবে ওই দেশগুলোও উন্নতি করেছে। তবে সেসব রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কদের পার্থক্য হল-লুলা ডি সিলভা, কিংবা মোরালেস যেখানে সময় পেয়েছেন বা নিয়েছেন এক দশকেরও বেশি সেখানে শেখ হাসিনা সময় পেয়েছেন বা নিয়েছেন ৫ বছরেরও কম।

ধনি ও দরিদ্রের মধ্যে ‘বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি’ অর্জনের কৌশল বাস্তবায়নের জন্য যে কোনো সফল রাষ্ট্রনায়কের অন্তত এক দশক সময় প্রয়োজন। যে কোনো একজন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক দেশ পরিচালনার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে এক দশক সময় পেলে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের মাধ্যমে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারেন। সুনির্দিষ্ট কাজগুলো হল, শিল্পখাতে বৈষম্য দূর করা, বৈষম্যমূলক চিকিৎসাব্যবস্থার বিস্তার রোধ করা এবং তৃণমূল পর্যায়ে এই ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়া, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধন্যাঢ্য গোষ্ঠীর একচেটিয়া দখল থেকে বের করে এনে সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া, রাজস্ব আয় ও ব্যয় ব্যবস্থা গণমুখী করা, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি কমিয়ে আনা, বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য নিয়ে দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।

জননেত্রী শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করতে বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক কিছু অস্থিরতা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে এসব সূচকগুলোর উন্নতিতে তাঁর সরকার কাজ করেছে বলেই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলেছে। এই স্বীকৃতি শেখ হাসিনা সরকারের এবং এ দেশের জনগণের। এই অর্জনকে আরো এগিয়ে নিতে হলে যে কোনো দেশের যে কোনো রাষ্ট্রনায়কের অন্তত এক দশক সময়ের প্রয়োজন। একজন রাষ্ট্রনায়কের এ প্রয়োজন মেটাতে পারে জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ যদি তাঁর স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন হয় তাহলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ককে এই সুযোগ দেওয়া উচিত। এই সুযোগ দেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে দিলে আশা করা যায় ২০১৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগণের সংখ্যা একজনও থাকবে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.