নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ধংসের চক্রান্ত

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪৭

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে জঙ্গিদের সিরিজ বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান বিকেল পাঁচটায়। একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি কুড়ি মিনিটেরও বেশি সময় বক্তৃতা দেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে যখন নিচে নেমে আসতে থাকেন, ঠিক তখনই শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১৩টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১৭ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ৭ জন নিহত হন। ভয়াবহ সেই গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় ২০০ লোক আহত হয়। হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভী রহমান অন্যতম যিনি ছিলেন বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।

ভয়াল বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস ১০ বছরে পদার্পন করছে। ১০ বছর আগের সেদিনের বিকেলটি ছিল বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস হত্যাযজ্ঞের দিন। সভ্য জগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় সেদিন। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস সেদিন আক্রান্ত করে মানবতাকে। এরপর দিনে দিনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মিছিলপূর্ব সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পরিকল্পিতভাবে মানবতার শত্রু সন্ত্রাসী ঘাতকচক্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় এমন ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক নারকীয় তা-বের সৃষ্টি হয় সেদিন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রাঙ্গন সেদিন গ্রেনেড হামলার প্রচন্ডতায় মুহূর্তেই পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই হিংস্র ছোবল তথা নৃশংস বর্বরোচিত হামলায় নেতা কর্মীদের মানবঢাল ও পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও এই নিষ্ঠুর আক্রমণে শহীদ হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী। আহত হন অগণিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে আজো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এমন নির্লজ্জ পাশবিকতা মানব সভ্যতার ইতিহাসে নজিরবিহীন এক ঘটনা বলে বর্ণিত হয় দেশে-বিদেশে।

সুপরিকল্পিত এ গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রধান গণতান্ত্রিক দল আওয়ামী লীগ, যারা এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল সে দলটিকে ও দলের প্রধানকে বিনাশ করে দেওয়া। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই নৃশংস হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং প্রকৃত খুনী ও অপরাধীদের আড়াল করার হীন উদ্দেশ্যে জজ মিয়া নামের এক অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এই নারকীয় ঘটনার তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চালায়। এই ন্যক্কারজনক কাজে তদানীন্তন সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। এই লোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা দেয়াসহ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা ও আলামত নষ্ট করাসহ এমন কোনো কাজ নেই যা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। যার কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে এই গ্রেনেড হামলার মামলা কার্যক্রম এক প্রকার স্থবিরই থাকে। অবশ্য তৎকালীন জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগের কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ পরবর্তী তদন্তে তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শুধু তাই নয়, বাবরের নির্দেশে গ্রেনেড হামলার সকল আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় বিএনপি সরকারের জজ মিয়া নাটক ছিল একটি প্রহসন। বর্তমান সরকারের নির্দেশনায় ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশ বিভাগের বিশেষ সংস্থা- সিআইডি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট প্রদান করে যাতে উল্লেখ রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতায় এ নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে।



গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য ছিলো শেখ হাসিনা

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় ১৩টি শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণের পাশাপাশি গুলির ঘটনাও ঘটে। গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর যখন ঘাতকরা দেখে শেখ হাসিনা অক্ষত আছেন তখনই মূলত গুলির ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতা শেষ করে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পরপরই গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিকট শব্দের মধ্যে কিছু গুলির আওয়াজ শোনা যায়। সেসময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে মানববর্ম তৈরির মাধ্যমে আগলে রাখেন শেখ হাসিনাকে। এরপর নিরাপত্তাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে তাঁর বুলেটপ্রুফ গাড়িতে তুলে ধানমন্ডির সুধা সদনে নিয়ে যান। শেখ হাসিনা যখন বুলেটপ্রুফ গাড়িতে উঠে ধ্বংসযজ্ঞস্থল ত্যাগ করছিলেন তখন তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলি চালানো হয়। কিন্তু গাড়িটি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় শেখ হাসিনা রক্ষা পান নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে।

পরবর্তীতে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা তারেক রহমানের নির্দেশেই হয়েছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। আর এই উত্থানের পেছনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত ছিলেন। কামরুল ইসলাম আরো বলেন, খালেদা ও তারেক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিন্ন করে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিদেশে থাকা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ২১ আগস্ট জননেত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

অন্যদিকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করার লক্ষ্যেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আরও বলেন, খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমান হাওয়া ভবনে বসে সমান্তরাল সরকার সৃষ্টি করে ইতিহাসের আরেকটি জঘন্যতম হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করেছিল। সেসময় খালেদা জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও মাতৃস্নেহের কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। সুরঞ্জিত খালেদা জিয়ার প্রতি অভিযোগ করে বলেন, তিনি হত্যা, ক্যু ও সাংবিধানিক ধারাকে বন্ধ করার রাজনীতি করছেন। খালেদা জিয়া যদি জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং জনগণ যদি তাকে ক্ষমা করে, তাহলেই তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে আসতে পারেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখার আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার এখন বিচার বিভাগের হাতে। বিচারব্যবস্থার মাধ্যমেই সাংবিধানিক পন্থায় এই হামলার রায় চূড়ান্ত হবে।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যন তারেক রহমানকে দায়ী করে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই তার ছেলে তারেক রহমান এ হামলা ঘটিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ সালের মতো দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে।



২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কিত তথ্যাদি

এডিডি, প্রসিকিউশন ঢাকা এর ভাষ্যমতে-

ক. মতিঝিল থানার মামলা নং-৯৭, তারিখ : ২২.০৮.২০০৪। ধারা-১২০ বি/৩২৪, ৩২৬, ৩০২, ৩০৭, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ২১৭, ২১৮, ৩৩০, ১০৯, ৩৪ দণ্ডবিধি।

খ. সম্পূরক অভিযোগ পত্র নং-৪৬২, তারিখ : ০২.০৭.২০১১। ধারা-১২০, বি/৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ২১৭, ২১৮, ৩৩০, ১০৯, ৩৪ দ-বিধি।

গ. অভিযুক্ত আসামীর সংখ্যা- ৫২ জন

ঘ. মোট সাক্ষীর সংখ্যা- ৪৯১ জন

ঙ. তদন্তকারী সংস্থা-সিআইডি

চ. বিচারাধীন আদালত-দ্রুত বিচার-ট্রাইব্যুনাল-১, ঢাকা।

ছ. সর্বশেষ মামলার অবস্থা- ৬৯ জন সাক্ষীর জেরা শেষ হয়েছে। ৭০তম সাক্ষীর জেরা চলছে।

জ. বিচারক- সাহেদ নূর উদ্দিন

ঝ. পাবলিক প্রসিকিউটর- অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান।



২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত অন্য ধারায় দায়েরকৃত মামলা সম্পর্কিত তথ্যাদি

ক. মতিঝিল থানার মামলা নং-৯৭, তারিখ ২২.০৮.২০০৪। ধারা-১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন (সংশোধিত ২০০২) এর ৩, ৪ ও ৬ ধারা।

খ. সম্পূরক অভিযোগ পত্র নং- ৪৬৩, তারিখ ০২.০৭.২০১১। ধারা-১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন (সংশোধিত ২০০২) এর ৩, ৪ ও ৬ ধারা।

গ. অভিযুক্ত আসামীর সংখ্যা- ৫২ জন।

ঘ. মোট সাক্ষীর সংখ্যা- ৪৯৫ জন।

ঙ. তদন্তকারী সংস্থা- সিআইডি

চ. বিচারাধীন আদালত-দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১, ঢাকা।

ছ. মামলার সর্বশেষ অবস্থা- ৭০তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

জ. বিচারক- সাহেদ নূর উদ্দিন

ঝ. পাবলিক প্রসিকিউটর- অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান।



গ্রেনেড হামলায় নিহত ও আহতরা

২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতরা হলেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল মাহবুবুর রশীদ (অব.), আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসহাক মিয়া।

আহতরা হলেন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন ও মামুন মল্লিক।



গ্রেনেড হামলা মামলার সর্বশেষ অবস্থা

২৪টি হত্যাকা- ও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিপূর্বে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ঢাকা সিটি ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেপ্তার করে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ৭ বছর ও অধিকতর তদন্তের আদেশ হওয়ার প্রায় দুই বছর পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। সম্পূরক এ চার্জশিট দাখিল করতে দুই বছরে ১৪ দফা সময় নেওয়া হয়। পরবর্তীতে এ মামলার তদন্তভার ন্যস্ত হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের ওপর। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই গ্রেনেড হামলার হত্যা ও বিস্ফোরকের পৃথক দুটি মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নতুন ৩০ জনকে আসামী করা হয়। এতে এই মামলায় প্রথম এবং সম্পূরক চার্জশিটের মোট আসামী দাঁড়ায় ৫২ জনে। আসামীদের মধ্যে ৩৩ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। এদের মধ্যে একমাত্র জামিন পাওয়া আসামী হলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমান আরিফ। সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের সময় মোট ১৮ জন আসামী পলাতক ছিলেন। পরে ৬ পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পন করে কারাগারে গেলে পলাতক আসামীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ জনে।

পলাতক আসামীরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, মেজর জেনারেল এটিএম আমিন (অব.), লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (অব.), জঙ্গি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান ও সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান।

গ্রেনেড হামলার অধিকতর তদন্তকালে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা হলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম (অব.), মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আব্দুর রউফ, সাইদুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল সাইদুল ইসলাম জোয়ারদার (বরখাস্ত), আরিফুর রহমান আরিফ, মাওলানা আবদুল সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট ও আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে গোলাম মোস্তফা।

অনেকদিন ধামাচাপা থাকার পর গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন করে এ মামলার তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডি এ সংক্রান্ত মামলা দুটির প্রথম অভিযোগপত্র দেয়। তাতে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে মামলা দুটির অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আরও ৩০ জনকে আসামী করে সম্পূরক চার্জশিট দেয় সিআইডি। নতুন এই ৩০ জনসহ মামলার এখন মোট আসামী ৫২। এদের মধ্যে তারেক রহমানসহ ১২ জন পলাতক আছেন।



সম্পূরক চার্জশিটে নতুন ৩০ আসামী

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় নতুন আসামীরা হলেন- তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, মো. হানিফ, হুজি নেতা মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মুফতি আবদুর রউফ, মাওলানা আবদুল হান্নান, মাওলানা শেখ ফরিদ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম (অব.), মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (অব.), মেজর জেনারেল এটিএম আমিন (অব.), লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বরখাস্ত), লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক (অব.), মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ, মুন্সি আতিকুর রহমান, তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি) খোদা বক্স চৌধুরী।

এই ৩০ জনের মধ্যে শেষের ১১ জনকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।



কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, হত্যা মামলায় নতুন ৩০ আসামীর মধ্যে তারেক রহমান, মুজাহিদ, বাবর, হারিছ চৌধুরী, রেজ্জাকুল হায়দার, আবদুর রহিম, কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম, হানিফ ও ১০ জঙ্গি নেতাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ-এ দণ্ডবিধির ১২০বি/৩২৪/৩২৬/৩০৭/

৩০২/১০৯ ও ৩৪ ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করে।

জোট সরকার আমলের সিআইডির প্রধান ও তিন তদন্ত কর্মকর্তা খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, মুন্সি আতিক ও আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহ ও বলপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, এটিএম আমিন, সাবেক দুই আইজিপি আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, খান সাঈদ হাসান ও ওবায়দুর রহমান খানের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার জন্য দণ্ডবিধির ২১২ ও ২১৭ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এছাড়া খান সাঈদ ও ওবায়দুর রহমানের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংস করার দায়ে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

এছাড়া সিআইডি কর্মকর্তারা ২০০০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও পরের বছর সিলেটে বোমা হামলা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে হুজি নেতা মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারেন। খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমীন, মুন্সী আতিক ও আব্দুর রশিদ তখন মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেননি। মূল আসামীদের বাঁচাতে তারা তা না করে পরস্পর যোগসাজশে জজ মিয়াসহ তিনজনের কাছ থেকে বলপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেন। আদালত এই চার জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১৮ ও ৩৩০ ধারায়ও অভিযোগ গঠন করেন।



শেষ কথা

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হওয়ার পরও প্রায় আড়াই বছর ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। এই আড়াই বছরে জোট সরকার মামলার সামান্যতম অগ্রগতি করেনি। উপরন্তু জজ মিয়া নাটক, আওয়ামী লীগ কর্মী গ্রেপ্তারসহ নানা তালবাহানা করে মামলাটিকে একেবারে ফাইলবন্দি করে রেখেছিল। পরবর্তীতে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলাটি উজ্জীবিত করে এবং বর্তমান সরকার মামলাটির অধিকতর তদন্তের কাজ শুরু করে। গ্রেনেড হামলা মামলাটি এখন দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল কোর্ট-১ ঢাকা জেলা আদালতে বিচারাধীন।

দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে মামলাটির বিচার কার্যক্রম চললেও অন্যান্য দ্রুত বিচার মামলার মত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ধীরেসুস্থেই এগুচ্ছে। মামলাটির এখন যে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়েছে তাকে আইনবিদরা বলছেন এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট। এই চার্জশিটের আগে যা কিছু করা হয়েছে তাকে প্রহসনই বলা যায়। সম্পূরক চার্জশিটের বিচার প্রক্রিয়া যাতে প্রহসন দোষে দুষ্ট না হয় সেজন্য সরকার সর্বাত্মক সতর্কতা বজায় রাখছে।

আশা করা যায় সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেরিতে হলেও এ মামলার রায় প্রকাশিত হবে। রায়ে দোষীদের শাস্তি হবে। এ ধরণের ঘটনায় কেউ যেন পার পেয়ে না যেতে পারে সেজন্য সরকার এই বিচার প্রক্রিয়াটিকে সর্বোচ্চ স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করছে। আজ হোক-কাল হোক মামলা যেভাবে গুছিয়ে আনা হয়েছে এবং চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ও সাক্ষীদের জেরা করা হচ্ছে তাতে বলা যায় এ ধরণের হামলার ঘটনায় জড়িতরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। গ্রেনেড হামলার রাঘব বোয়ালরা এই মামলায় যথোপযুক্ত শাস্তি পেলে আশা করা যায় ভবিষ্যতে কেউ এ ধরণের কর্মকাণ্ড করার সাহস দেখাবে না। হত্যার রাজনীতি অনেকটাই কমে আসবে এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে। স্বস্তি পাবে আহতরা ও নিহতদের স্বজনেরা। পাশাপাশি রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩

হারকিউলিস বলেছেন: আপ্নারা বিগত পাঁচ বছর কি করলেন? আমরা সাধারণ জনগন ঐসব সকল হামলার বিচার হবে বলে আশা করেছিলাম?

গত পাঁচ বছর বৈসা বৈসা শেয়ার বাজার না চুইষা বিচার করলেই তো পারতেন?

আর যদি না পারেন তবে রাজনীতি ছাইড়া দিয়া মেয়েদের চুড়ি পরে আঙ্গুল চুষেন। =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.