![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংবিধান সমুন্নত রেখে গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সংস্কৃতি চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে কমনওয়েলথ মহাসচিব কমলেশ শর্মার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে প্রায় ৬ হাজার নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে প্রায় ৬৪ হাজার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এতে বিরোধী দলের অনেক প্রার্থী সরকারদলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন। এসব নির্বাচনে সরকারের নিরপেক্ষতা বা ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে শেখ হাসিনার সঙ্গে কমলেশ শর্মার ওই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই।
কমনওয়েলথ মহাসচিব আগামী নভেম্বরে শ্রীলংকার কলম্বোতে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, এ সময় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে তাকে খুব ব্যস্ত থাকতে হবে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার সরকারের প্রচেষ্টার কথাও জানান কমনওয়েলথ মহাসচিবকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান এবং পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানী এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এর সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। জাতিসংঘ সফর শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দারিদ্র্য বিমোচনে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেলেন প্রধানমন্ত্রী
দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। অ্যাওয়ার্ড হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি তাঁর নয়, দেশবাসীর অর্জন।
২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ৯টার দিকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে সাউথ সাউথ নিউজের প্রধান কার্যালয়ে সাউথ সাউথ নিউজের অনারারি প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিস লোরেনজো প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫১ থেকে ২৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে দেশবাসীর সার্বিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে তাঁর সরকার কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব দেখতে চায়, যেখানে প্রতিটি মানুষ সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে।
২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকালে সাউথ সাউথ কো-অপারেশনের (এসএসসি) একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সাউথ সাউথ নিউজ নামের সংস্থাটি গঠন করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করা। বিশ্বের দেশে দেশে এমডিজি অর্জনে যারা এগিয়ে রয়েছে, তাদের কথা পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে জানানো এবং তাদেরও উৎসাহিত করাই এই সাউথ সাউথ নিউজের অন্যতম কাজ। আফ্রিকা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল এই এসএসসির আওতাভুক্ত। সাউথ সাউথ নিউজেরও কর্মপরিধি এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে। টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতেই অ্যাডভোকেসি চালিয়ে যাচ্ছে সাউথ সাউথ নিউজ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে এখন রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা এই অর্জন ধরে রাখতে চাই।’ তিনি বলেন, সাউথ সাউথ নিউজের পক্ষ থেকে এমন একটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান বাংলাদেশকে আরো অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেয়ার আগে সাইটেশনে ফ্রান্সিস লোরেনজো বলেন, জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো প্রণিধানযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে মানসম্মত কাজ নিশ্চিতকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাখাতÑ এই সবক’টি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে এবং তা থেকে বাংলাদেশ আরো সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেন লোরেনজো।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উপরোক্ত অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তুলে দেয়া হয় অ্যাওয়ার্ড। প্রধানমন্ত্রী এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য নিজের এবং দেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর ভাষণে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুুধামুক্ত উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ ও এর সংস্থাসমূহ এবং বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বলেন, ‘আমি মনে করি, এসব সংস্থার পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে এই অগ্রগতি অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে বলেই আমরা এই অর্জন নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপকভাবে তার সরকার কাজ করে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি, খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং শিক্ষার হার বাড়ানো ও মান উন্নত করাসহ বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আর এর ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এর মাধ্যমেই কেবল একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে পারব, যেখানে মানুষ শান্তিতে এবং আরো উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ পাবে।’
আপনি যা করেছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হেল্পফুল : পিটার কিং
হোটেল স্যুটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন রিপাবলিকান দলীয় প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক কমিটির সদস্য এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান পিটার কিং।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. একে আবদুল মোমেন জানান, পিটার কিং সাক্ষাতের শুরুতেই জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, আপনি যা করেছেন তা বিশ্বের জন্য ‘হেল্পফুল’, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনে তার সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ তার দলের অসংখ্য নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা ফাটানো হয়েছে। আর বিরোধী দল এসব টেররিস্টদের সাহায্য করে আসছে। তিনি বলেন, তার সরকার যতদিন থাকবে ততদিন টেররিস্টদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেবে না।
বাংলাদেশের জিডিপি ৬ দশমিক ৪ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক দিক থেকেও বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে আছে। কংগ্রেসম্যানকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার জন্য সমস্যা হলো আপনারা জিএসপি বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার আপনারা শ্রমিকদের উন্নতির কথা চিন্তা করছেন। এমতাবস্থায়, ফল হয়েছে উল্টো। জিএসপি বন্ধ করায় শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে। এই চাকরি হারানোর জন্য আপনারা দায়ী। এ সময় পিটার কিং জিএসপি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
নির্দলীয় সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পিটার কিংকে প্রশ্ন করেন, আপনি কী পদত্যাগ করে নির্বাচন করেছেন? ওবামা কী ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন করেছেন? প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ের প্রায় ছয় হাজার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার সরকার সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
বাংলাদেশ এমডিজি-১ থেকে ৬
পূরণ করেছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এমডিজি-১, এমডিজি-২, এমডিজি-৩, এমডিজি-৪, এমডিজি-৫ ও এমডিজি-৬ পূরণ করেছে অথবা পূরণ করার পথে রয়েছে। তবে এমডিজি-৭ অর্জন বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হলেও অসম্ভব নয় বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশ ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা অর্জনে আন্তঃসরকার আলোচনার জন্য রাজনৈতিক পটভূমি তৈরিতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘স্পেশাল ইভেন্ট টু ফলোআপ অ্যাফোর্টস মেড টুওয়ার্ডস অ্যাচিভিং দ্য এমডিজি’ শীর্ষক অধিবেশনে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা আয়ারল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ইয়ামন গিলমোরের সঙ্গে এই অধিবেশনে কো-চেয়ারম্যান ছিলেন।
অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি নিম্নাঞ্চলের উপকূলীয় রাষ্ট্র। এ দেশ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষে এমডিজি-৭ অর্জন খুবই কঠিন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রশমন ও অভিযোজন নীতির আলোকে আমাদের সরকার ১৩৪ দফা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেওয়া।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে সহস্রাব্দ ঘোষণার সঙ্গে তাঁর যুক্ত থাকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সে সময় আমি এখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি একটি উন্নয়ন রূপকল্প দেই এবং ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অসমতা দূরীকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও সরকারের নীতির কারণে বাংলাদেশে গড় জিডিপি স্থিতিশীল থাকে। আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশের কাছাকাছি। মাত্র দুই দশকের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
মালালার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা
জাতিসংঘে বিশ্বনেতারা শিক্ষার জন্য সমবেত হয়েছেন, শিক্ষার পক্ষে একত্রিত হয়েছেন এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে একমত হয়েছেন। এই ফোরামে বারবারই উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেফার করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন।
এই ফোরামে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মালালা ইউসুফজাই। নারী শিক্ষার পক্ষে; নারী অধিকারের পক্ষে মালালার জ্বালাময়ী বক্তৃতা বিশ্বনেতাদের মুগ্ধ করেছে, তাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ইকোসক চেম্বারে এই ইভেন্টে বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও গুরুত্ববহ। মানবতাবাদী বিশ্বনেতা ডেসমন্ড টুটু এবং জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ল্যাংল্যাংসহ অনেকেই অংশ নিয়ে এই কর্মসূচিতে কথা বলেন।
ডেসমন্ড টুটু অস্ত্রের পেছনে নয়, শিক্ষার পেছনে অর্থ ব্যয়ের আহ্বান জানান বিশ্বনেতাদের প্রতি। মালালা নারীমুক্তির জন্য শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘মেয়েরা জন্ম নিলে বাবার অধীনে থাকে, বিয়ে হলে স্বামীর অধীনে থাকে, আর সন্তান বড় হলে তার কথা মেনে চলতে হয়। এটাই নারীজীবন। আমরা এই জীবন থেকে
নারীর মুক্তি চাই। বিশ্বের প্রতিটি শিশুকে আমি শিক্ষিত দেখতে চাই। আমি জানি, আজ যেটা স্বপ্ন, আগামী দিনে তা বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালালার বক্তৃতার সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘মালালার কণ্ঠেই ধ্বনিত হলো আমার বক্তব্য, মালালাই আমাদের কণ্ঠস্বর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাহীন নারীর ভোগান্তি আমি জানি।’ বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর অস্ত্র-অস্ত্র খেলা নয়। এবার আসুন, আমরা শিক্ষার ওপর জোর দেই, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করি।’
বাংলাদেশে শিক্ষার উন্নয়নে প্রধান ৫টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, অর্থনৈতিক শক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক শিক্ষাক্রম এবং ডিজিটাল বৈষম্যের মাঝেও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বনেতাদের প্রতিশ্রুতিতে উঠে আসে মানসম্মত শিক্ষার বিষয়টি।
শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে একই কথা বলেন। বিশ্বনেতাদের প্রতি শিক্ষার পক্ষে আরো জোরদার ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
বক্তৃতায় মালালা তার অনুপ্রেরণা হিসেবে ডেসমন্ড টুটুর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে মালালাকে জড়িয়ে ধরে কপালে আশীর্বাদের চুমু খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ দরকার : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারমাণবিক অস্ত্র বর্জন করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ মানবজাতি এবং একমাত্র বসবাসের স্থান পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকায়ন প্রয়াসকে আত্মঘাতী মনোভাব বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) আয়োজিত পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রগুলোকে এখন আরও বেশি প্রাণঘাতী করার লক্ষ্যে শাণিত করা হচ্ছে এবং বিপুলসংখ্যক মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। তাই মানবজাতি এবং একমাত্র বসবাসের স্থান পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, তিনটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের নিকটে অবস্থান হওয়ার কারণে এসব মারাত্মক অস্ত্রের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ বাংলাদেশের রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র সার্বিক নিরাপত্তা ও শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, হিরোশিমা ও নাগাসাকির ভয়ঙ্কর অবস্থা মানবজাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছিল এবং সেই ঘটনার ফলে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত প্রথম জাতিসংঘ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তিনি বলেন, পরিণামের কথা চিন্তা না করে বিপুলসংখ্যক মানুষ আত্মঘাতী মনোভাব পোষণ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৮৫টি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত দেশ সর্বসম্মতিক্রমে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে। মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠের নিরাপত্তার ব্যাপারে সংবেদনশীল না হয়ে দুঃখজনকভাবে ধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অনেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ উপলব্ধি করেছিলেন। তাই, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে পারমাণবিক যুদ্ধের অভিশাপ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশ প্রচলিত কয়েকটি অস্ত্র ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপে জাতিসংঘ অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি (এটিটি) এবং ‘এক্সপ্লোসিভ রেমন্যান্টস অব ওয়্যার’ সংক্রান্ত একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে স্বাক্ষর করেন। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করল।
জাতিসংঘের আইনবিষয়ক সহকারি মহাসচিব মিগুয়েল সেরপা সোয়ারেস এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। ২০০৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রচলিত অস্ত্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে ঐতিহাসিক অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি (এটিটি) প্রস্তাব গৃহীত হয়।
ওবামা দম্পতির সান্নিধ্যে চমৎকার সন্ধ্যায় মুগ্ধ জয়
রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী মিশেল ওবামার সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক ফ্যান পেজ স্ট্যাটাসে ওবামার সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকে ‘চমৎকার সন্ধ্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন জয়।
তিনি বলেন, ‘মা এবং আমি ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা সভায় রাষ্ট্রপতি ওবামা এবং তার পতœী ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার সাথে সাক্ষাৎ করেছি। তারা দুজনেই তখন ছিলেন খুবই আন্তরিক ও বন্ধুবৎসল।’
এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনি প্রচারণায় স্ত্রী ক্রিস্টিনের অংশগ্রহণের কথা জানালে, বারাক ওবামা তাঁকে ধন্যবাদ পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেছেন বলেও জানান জয়।
‘আমি ওবামাকে জানাই, ক্রিস্টিন তাঁর নির্বাচনি প্রচারাভিযানে স্বেচ্ছাসেবী ছিল। তিনি ক্রিস্টিনকে ধন্যবাদ পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও তার স্ত্রী টেরেসা হাইঞ্জের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে জয় বলেন ‘তারা দুজনই বন্ধুসুলভ ও উষ্ণ ছিলেন। সব মিলিয়ে চমৎকার একটা সন্ধ্যা ছিল।’
©somewhere in net ltd.