নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাকার অভিযোগ যেগুলো... প্রমাণিত...

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:০১

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে চার অভিযোগে ফাঁসি :রায়ে প্রমাণিত সাতটি হত্যা ও গণহত্যার মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে মধ্য গহিরা শ্রী কু েশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা (৩ নম্বর অভিযোগ), সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্র ও অপর তিনজনকে হত্যা (৫ নম্বর অভিযোগ), ঊনসত্তরপাড়ায় ৬৯-৭০ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যার (৮ নম্বর অভিযোগ) অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীকে নিয়ে ঘটনাস্থল গহিরা শ্রী কু েশ্বরী ঔষধালয়ে আসেন। ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের সঙ্গে সাকা চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনারা কয়েক মিনিট কথা বলে চলে যায়। এরপর আনুমানিক ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আসামি সাকা চৌধুরী পুনরায় পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে কু েশ্বরী ভবনে প্রবেশ করেন। ওই সময় নূতন চন্দ্র সিংহ বাড়ির ভেতরে মন্দিরে প্রার্থনারত ছিলেন। আসামি সাকা চৌধুরী তাকে মন্দিরের ভেতর থেকে টেনেহিঁচড়ে সামনে নিয়ে আসেন এবং উপস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের উদ্দেশে বলেন, একে হত্যা করার জন্য বাবার নির্দেশ আছে। পরে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করার জন্য সাকা চৌধুরী উপস্থিত পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের নির্দেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ার করে। গুলিবিদ্ধ নূতন চন্দ্র সিংহ মাটিতে পড়ে ছটফট করা অবস্থায় আসামি সাকা চৌধুরী নিজে তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। সশস্ত্র অভিযান শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সাকা চৌধুরী।

৫ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে সাকা চৌধুরী কতিপয় অনুসারীকে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালান। সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার আগে আসামি সাকা চৌধুরী ও তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে সুলতানপুর গ্রামের বণিকপাড়ায় লোকজনকে কাউকে বাড়ি না ছাড়ার জন্য প্ররোচনা চালান। সেনাসদস্যরা বণিকপাড়ায় প্রবেশ করে ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে এলাকার নেপাল চন্দ্র ধর, মনীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে একত্র করে গুলি করে। এতে প্রথম তিনজন শহীদ ও শেষের জন আহত হন। হত্যার পর বাড়িঘরে আগুন দিয়ে আসামি সাকা চৌধুরী, তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী, তাদের অনুসারী ও পাকিস্তানি সেনারা সুলতানপুর গ্রাম ত্যাগ করেন।

৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টা থেকে ৫টা সাকা চৌধুরী হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালান। ওই পাড়ায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা এলাকার হিন্দু নর-নারীদের স্থানীয় ক্ষীতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে একত্র করে। পরে সাকা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ-নিরস্ত্র ও একত্রে বসানো হিন্দু নর-নারীদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।

৮ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৭ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ তার ছেলে শেখ আলমগীরসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রাইভেট কারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসছিলেন। পথে হাটহাজারী থানার খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি তিন রাস্তার মোড়ে সকাল ১১টার দিকে পেঁৗছামাত্র আসামি সাকা চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যরা তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কালক্ষেপণ করতে থাকেন। ফলে শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও শেখ আলমগীরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

২০ বছর করে সাজা :২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২ নম্বর অভিযোগে চট্টগ্রামের মধ্য গহিরায় গণহত্যা, ৪ নম্বর অভিযোগে জগৎমল্লপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ৩২ হিন্দু নারী-পুরুষকে গণহত্যা এবং ৭ নম্বর অভিযোগে রাউজান পৌরসভা এলাকার সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যার দায়ে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পাঁচ বছর দণ্ড :১৭ নম্বর অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদকে নির্যাতন এবং ১৮ নম্বর অভিযোগে মো. সালেহউদ্দিনকে অপহরণের পর নির্যাতনের দায়ে আসামিকে পাঁচ বছর করে সাজা দেওয়া হয়।

রায় :ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে সাকার বিরুদ্ধে ২৩টির মধ্যে ৯টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মানবজাতির বিরুদ্ধে এমন জঘন্য অপরাধ করার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য বলে আমরা ঐকমত্যে পেঁৗছেছি।

পর্যবেক্ষণ :রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আইনপ্রণেতা হলেও তাকে মনে রাখতে হবে, তিনি আইনের ঊধর্ে্ব নন। বিচারের প্রথমদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদালতের শালীনতা (কোর্ট ডেকোরাম) ভঙ্গ করে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা এজলাস কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। কিন্তু আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী অনেক সময় সেটা করতেন না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামি ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি একজন সংসদ সদস্য। বিচার চলাকালে তার আচরণ ছিল অসম্মানজনক। তার এমন আচরণ কখনও কাম্য হতে পারে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.